3:29 pm , June 27, 2023
নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ টিকে থাকার সংগ্রাম করছে বরিশালের দুই চামড়া ব্যবসায়ী। এক সময়ের নগরীর ৪০ জন চামড়া ব্যবসায়ীদের মধ্যে পুজি হারাতে হারাতে মাত্র দুই জন টিকে রয়েছেন। বর্তমানে নগরীতে দুই আড়তকে ঘিরে চলছে চামড়ার বানিজ্য। তাদের অবস্থাও নিভু নিভু করছে বলে জানিয়েছেন চামড়া ব্যবসায়ী মো. নাসির।
তিনি জানান, নগরীর পদ্মাবতি এলাকায় চামড়া ব্যবসার মুল মোকাম। চামড়া ব্যবসায়ীদের একটি সংগঠনও ছিলো। বরিশাল হাইড অ্যান্ড স্ক্রিন অ্যাসোসিয়েশন নামের ওই সংগঠনের এখন অস্তিত্ব নেই।
মো. নাসির বলেন, লালবাগ পোস্তার আড়তদারদের কাছে পুজি হারাতে হারতে টিকে রয়েছেন মাত্র দুই জন। এর মধ্যে তার (নাসির) আড়তটি নগরীর ইলিশ মোকাম পোর্ট রোড বাজারের বিপরীতে পোর্ট রোড খালের অপর তীরে। অন্যজন হলেন হাজী মো. বাচ্চু মিয়া। তার আড়ত নগরীর হাটখোলা মরিচপট্টি এলাকায়।
নাসির বলেন,গত ৭ বছর ধরে পোস্তার দুই তিনটি আড়তের কাছে বকেয়া রয়েছে কোটি টাকারও বেশি। কিন্তু তারা টাকা পরিশোধ করে না।
এরপরে নগদ দেয়ার কথা জানিয়ে চামড়া নিয়ে যাওয়ার পর আর টাকা না দেয়ারও ঘটনা রয়েছে বলে জানিয়ে নাসির বলেন, বকেয়া টাকার জন্য মন্ত্রনালয়ে অভিযোগ দিয়ে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছেন।
তিনি বলেন, তিন বছর পূর্বে মন্ত্রনালয় একটি কমিটি করে ট্যানারী মালিকদের কাছ থেকে বকেয়া আদায় করে দেয়ার উদ্যোগ নেয়। কমিটি ট্যানারী মালিকদের সাথে মিটিং করে ঘোষনা দেয় মালিকরা দেউলিয়া হয়েছে।
নাসির বলেন, মন্ত্রনালয় এ ঘোষনার পর ট্যানারী মালিকরা আরো কঠিন হয়েছে। এখন তাদের কাছে বকেয়ার কথা বলা যায় না।
নাসিরের অভিযোগ সরকার চামড়া ব্যবসায়ীদের রক্ষা করেনি। উল্টো ক্ষতি করেছে। চামড়া ব্যবসায়ীদের জন্য কোন ব্যাংকও এগিয়ে আসে না জানিয়ে বলেন, সব কিছু ট্যানারী মালিকদের জন্য করা হচ্ছে।
তারা চামড়া ব্যবসায়ীদের টাকা খাচ্ছে, ব্যাংকের টাকা খাচ্ছে আবার সরকারের সকল সুবিধাও তারা নেয়।
কোন ব্যাংক ঋন না দেয়ায় ধার-দেনা করে ২৫ লাখ টাকা নিয়ে কোরবানীর চামড়া কিনছেন জানিয়ে নাসির বলেন, যে দামে চামড়া কেনা হয়, সেই চামড়া প্রক্রিয়াজাত করনে বেশি খরচ হয়।
তিনি জানান, সর্বনি¤œ ২শ’ থেকে সর্বোচ্চ ৬০০ টাকা দরে গরুর চামড়া ক্রয় করেছেন। ছাগল ভেড়ার চামড়ার কোন মুল্যে নেই।
নাসির বলেন, কোরবানীর গরুর ৫ হাজার চামড়া কিনে সংরক্ষন করা হয়েছে। নদীর তীরে ভাল কোন স্থানে চামড়ার আড়ত করার জন্য প্রশাসনের সহযোগিতাও চেয়েছেন তিনি।
হাটখোলা মরিচা পট্টির চামড়ার আড়তদার হাজী মো. বাচ্চু মিয়া বলেন, আগে প্রতি বছর ১০ থেকে ১৫ হাজার পিস চামড়া কিনতেন। কিন্তু এ বছর মাত্র সাড়ে ৪ থেকে ৫ হাজার পিস চামড়া সংগ্রহ করেছেন।
হাজী বাচ্চু বলেন, পোস্তার আড়তদারদের কাছে দেড় কোটি টাকা পাওনা রয়েছে। বর্তমানে পুজি সংকটে চামড়া কেনা কমিয়ে দিয়েছেন।
তিনি বলেন, পোস্তার আড়তদাররা ট্যানারি মালিকদের কাছে বাকি বিক্রি করে। তাদের কাছ থেকে বকেয়া যা আদায় করে তার অর্ধেক দেয়। এভাবে টাকা বকেয়া পড়তে পড়তে পুজি আটকে গেছে।
হাজী বাচ্চু বলেন, তাদের চামড়া কিনতে হলে নগদ টাকা দিতে হয়। কিন্তু আড়তদাররা বাকি নিয়ে তাদের পুজি আটকে দেয়। এখন সরকার যদি উদ্যোগ নিয়ে তাদের বকেয়া পরিশোধের ব্যবস্থা না করেন তাহলে তাকে ব্যবসা বন্ধ করে দিতে হবে।
তিনি জানান, এ বছর মাদ্রাসার কাছ থেকে একেকটি চামড়া সর্বনি¤œ ৪ থেকে সর্বোচ্চ সাড়ে ৬শ’ টাকা দরে কিনেছেন। তার কেনা চামড়া সিংহভাগ মাদ্রাসার। চামড়ার মূল্য কম হওয়ার মৌসুমী ব্যবসায়ীরাও আগের মতো বাড়ি বাড়ি গিয়ে চামড়া সংগ্রহ করে না। যারা কোরবানী দেয় তারা স্থানীয় মাদ্রাসায় বিনামূল্যে দিয়ে দেন। তাদের কাছ থেকে কেনেন তারা বলেন হাজী বাচ্চু। তিনি আরো বলেন, এখন অনেক বড় বড় মাদ্রাসা তাদের কাছে চামড়া বিক্রি করেন না। এর কারন হলো, তাদের টাকা নগদ পরিশোধ করতে হয়। কিন্তু পুজি না থাকায় বরিশালের বাইরে থেকে ব্যবসায়ীরা কিনে নেয়। তার দাবি সরকার যদি ট্যানারী মালিকদের কাছ থেকে বকেয়া আদায় করে দেয়ার ব্যবস্থা করে দেয়, তাহলে ব্যবসা পূর্বের মতো জমজমাট হবে।