ক্রেতা শূন্য বরিশালের পশুর হাট আজ হতে পারে জমজমাট ক্রেতা শূন্য বরিশালের পশুর হাট আজ হতে পারে জমজমাট - ajkerparibartan.com
ক্রেতা শূন্য বরিশালের পশুর হাট আজ হতে পারে জমজমাট

4:32 pm , June 26, 2023

বিশেষ প্রতিবেদক ॥ পবিত্র ঈদুল আজহা উপলক্ষে বরিশালে কোরবানির পশুর হাট বসানো হয়েছে সবমিলিয়ে ৬২টি। এরমধ্যে সিটি করপোরেশনের স্থায়ী একটি এবং অস্থায়ী দুটি মিলিয়ে মোট ৩টি এবং জেলা প্রশাসনের স্থায়ী-অস্থায়ী মিলিয়ে জেলায় ৫৯টি হাটের অনুমতি দিয়েছে কর্তৃপক্ষ। তবে এখনো কোথাও বেচাকেনা তেমন একটা জমেনি। ঈদের আগেরদিন জমজমাট হবে বলে আশাবাদী বিক্রেতা ও ইজারাদাররা। সরেজমিনে ২৬ জুন সোমবার সিটি করপোরেশন এলাকার তিনটি হাট ঘুরে এবং উপজেলার সবচেয়ে বড় স্থায়ী পশুর হাটের ইজারাদারের সাথে কথা বলে জানা গেছে, এখন পর্যন্ত প্রচুর দর্শকের উপস্থিতি টের পেলেও কোরবানির জন্য কোনো পশু বিক্রি হচ্ছে কম। তবে খামার ও অনলাইন ক্রেতার চাপ বেড়েছে বলে জানান অনেকে। যদিও এবার অনলাইনেও ক্রেতা কম বলে জানালেন বাবুগঞ্জ উপজেলার এমইপি এগ্রো ফার্মের পরিচালক মোঃ রাফিউর রহমান। গতবছরের মতো এবারও তিনি কেজি দরে গরু বিক্রি করছেন। তিনি বলেন, গতবছর এই সময়ের মধ্যে সব গরু বিক্রি হয়ে গিয়েছিল। এবার অর্ধেকও বিক্রি হয়নি।
এদিকে বরিশাল সদরের সবচেয়ে বড় পশুর হাটটি চরমোনাই ইউনিয়নে। এখানের গরু ব্যবসায়ী বশির সিকদার বলেন, বরিশালের মধ্যে সবচেয়ে বড় পশুর হাট এটি। এখানে প্রতিদিনই অনেক লোক আসছেন। কিন্তু সে তুলনায় পশু তেমন বিক্রি হচ্ছে না। মানুষ এখনো পশু দেখছেন। ঈদের একদিন আগে আগামীকাল হয়তো বিক্রি জমে উঠতে পারে। এই হাটের ভিন্নতা হচ্ছে, এখানে কোথাও কোনো পশু বিক্রির জন্য খাজনা বা হাসিল দিতে হয়না।
২৬ জুন বিকালে বরিশালের বানারীপাড়া উপজেলার বাইশারি ও বাওয়ালিতে দুটো পশুরহাটে ঘুরে আসা সিটি করপোরেশন এলাকার খান সড়কের বাসিন্দা দুই ভাই সোহাগ ও মুরাদ বলেন, পশু-বিক্রেতারা সর্বনি¤œ ৮০ থেকে সর্বোচ্চ সাড়ে ৩ লাখ টাকা দামের ষাঁড় বাজারে তুলেছেন। তারমধ্যে কুষ্টিয়া ও ঝিনাইদহ অঞ্চলের পশুর সংখ্যাই বেশি। এছাড়া স্থানীয় খামারীদের ষাঁড়ও দেখা গেছে বাজারে। এরমধ্যে ৭০-৮০ হাজার থেকে দুই লাখ ২০ হাজার টাকা মূল্যের ষাঁড়ও কিছু রয়েছে।
বানারীপাড়ার গুয়াচিত্রা বাজারে গতবারের ইজারাদার ও এবারে গুরু বিক্রেতা মোর্শেদ আলম মুঠোফোনে বলেন, বাইশারি বাজারে এবার গরু গতবারের তুলনায় কম। কুষ্টিয়া এবং ঝিনাইদহ থেকে কিছু গরু বিক্রির জন্য আনা হয়েছে। তবে প্রতি বছরের তুলনায় তুলনামূলক অনেক কম। বর্তমানে ক্রেতা নেই। হয়তো মানুষের টাকা পয়সায় সমস্যা আছে। তিনি বলেন, ২৭ জুন মঙ্গলবার বাজারে জমে ওঠার সম্ভাবনা আছে। কেননা কাল থেকে লোকজন ছুটি কাটাতে বাড়িতে আসতে শুরু করবে। আমরা আশা করি শেষ দুইদিনে  বেচা-বিক্রি হতে পারে।
তিনি আরো বলেন, আমাদের এখানে বাইশারি ও বাওয়ালি বাজারে এবারও গরু বিক্রির খাজনা ধরা হয়েছে গরু প্রতি ১ হাজার টাকা। এবারও দুটি ভাগে বাজার সাজানো হয়েছে। স্থানীয়দের গরু বিক্রির জন্য একভাগ আলাদা। এছাড়া দূর থেকে আসা ও বড় ব্যবসায়ীদের জন্য আলাদা শেড করে দেওয়া হয়েছে।
বানারীপাড়ার ইউএনও ফাতিমা আজরিন তন্বী জানান, গুয়াচিত্রা বাজারটিকে আর পশুর হাট রাখা হয়নি। ওটি এখন নিয়মিত বাজার। বানারিপাড়ায় দুটি গরুর হাটে এখন পর্যন্ত বেচাকেনা সেভাবে শুরু হয়নি তবে বুধবারের মধ্যে জমজমাট হয়ে উঠবে বলে আশাপ্রকাশ করেন ইউএনও।
এদিকে বাকেরগঞ্জের চরামদ্দি, কামারখালি, দাঁড়িয়াল, শিয়ালগুনি ও দুধল মাদ্রাসা বাজারে গরুর হাট বসেছে বলে জানা গেছে। যদিও সেখানকার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কোনো তথ্য দিতে পারেননি।
বরিশাল সিটি করপোরেশন আওতাধীন কাশিপুরের বাঘিয়া স্থায়ী পশুর হাটে হাতেগোনা কয়েকটি গরুর দেখা পাওয়া গেল। তবে সব গরুই স্থানীয়ভাবে পালিত ও দেশীয় গরু। দামও খুব চড়া। লাখের নীচে কোনো গরু নেই বাজারে। মোটামুটি সাইজের একটি গরু ১ লাখ ৬০ হাজারে কিনে ঘরে ফিরছেন বরিশালের অক্সফোর্ড মিশন রোডের বাসিন্দা কাজী মিজান। তিনি জানালেন, মধ্যবিত্তের ঈদ শেষ। এই বাজারে সাত জনে মিলেও একটি গরু কোরবানি দেয়া অসম্ভব প্রায়।
এদিকে সিটি করপোরেশন এলাকার রূপাতলী অস্থায়ী পশুর হাটের কোনো গরুই দেখা যায়নি সোমবার দুপুরে। ইজারাদার জানালেন, এটা জমতে আরও একদিন সময় লাগবে। বিগত দিনেও ঈদের আগের দিন আমাদের হাট জমছে। এবারও তার ব্যতিক্রম হবে না। তবে টেক্সটাইল বালুর মাঠে কয়েকটি গরুর দেখা পাওয়া গেছে। দুপুরে তা ছিলো ক্রেতা শূন্য।
সিটি করপোরেশনের জনসংযোগ কর্মকর্তা স্বপন কুমার দাস জানান, তিনটি হাটের মধ্যে বাঘিয়া এলাকার স্থায়ী একটি হাটের পাশাপাশি রূপাতলী ও কাউনিয়া টেক্সটাইল বালুর মাঠ এলাকায় একটি করে অস্থায়ী হাট বসার অনুমোদন হয়েছে। এগুলোর নির্মাণ শেষ। পশু উঠতে শুরু করেছে হাটগুলোতে।
বরিশালের জেলা প্রশাসক মোঃ জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, জেলায় আমরা ৫৯টি হাটের অনুমতি দিয়েছি। এ ছাড়া হাটে ক্রেতা হয়রানি বন্ধে ভিজিলেন্স টিম কাজ করছে। থাকবে জাল টাকা শনাক্তকরণ মেশিন।
তিনি আরো বলেন, বরিশাল জেলার ১০ উপজেলায় মোট ২২টি স্থায়ী পশুর হাট রয়েছে। এছাড়া বাকি ৪৯টি অস্থায়ী হাটের অনুমতি দেওয়া হয়েছে।
গরুর হাটের সার্বিক নিরাপত্তার বিষয়ে বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার মোঃ সাইফুল ইসলাম বলেন, পশুর হাটে সর্বোচ্চ নিরাপত্তা প্রদান করা হয়েছে। প্রতিটি হাটে পুলিশের ক্যাম্প স্থাপন করা হয়েছে। এছাড়া জাল নোট প্রতিরোধ করতে প্রতিটি হাটে জাল নোট সনাক্তকরন মেশিনের ব্যবস্থা করা আছে। তিনি আরো বলেন, ২৬ জুন বিকেলে এ বিষয়ে সমন্বয় সভা ডাকা হয়েছে। সেখানে বিস্তারিত আলোচনা ও সিদ্ধান্ত দেওয়া হয়েছে।
বরিশাল জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. নুরুল আমিন বলেন, চাহিদার চেয়ে বেশী পশু রয়েছে। তবে পশু খাদ্যের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় গরুর দামও বৃদ্ধি পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এছাড়া সুস্থ পশু বিক্রির জন্য প্রতিটি হাটে পশু চিকিৎসকের টিম রয়েছে বলে জানান তিনি।
তিনি আরো বলেন, নগরীসহ জেলায় ৯৯ হাজার ৩৮৪টি চাহিদার বিপরীতে পশু রয়েছে ১ লাখ ৮ হাজার ৭০৪টি। এর মধ্যে গরু ৮৬ হাজার ৫৯২টি, মহিষ ৬৪৪, ছাগল ২১ হাজার ৪১৮টি এবং ভেড়া ৬০টি।
এবারও বাজারে ভারতীয় গরু কোথাও চোখে পড়েনি। আমদানি নিষিদ্ধ হওয়ায় খামারিদের চাহিদা বেড়েছে, ফলে ইচ্ছে মতো দাম বাড়িয়ে বিক্রি করছে বলে অভিযোগ ক্রেতাদের। তবে খামারিদের দাবি ১ লাখ ৬০ হাজার বা ৮০ হাজারেও লাভের মুখ খুবই সামান্য। কেউ কেউ কোনো লাভ না করেই বোঝা কমাচ্ছেন বলে জানান।  তারা বলেন, বাজারে সবকিছুর দাম বাড়তি। একটি গরু লালন-পালন করতে প্রতিদিন গরুর জাত ভেদে ৩শ টাকা থেকে ৫শ টাকা খরচ করতে হয়। একবছর পর যা দাম পাওয়া যায় তা খুবই সামান্য। কেউ কেউ বিক্রি না হলে আগামী বাজারের জন্য তুলে রাখবেন বা নিজেরাই ভাগা বিক্রি করবেন বলে জানান।

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন    
সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী মিরাজ মাহমুদ
 
বার্তা ও বানিজ্যিক কার্যালয়ঃ কুশলা হাউজ, ১৩৮ বীরশ্রেষ্ঠ ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর সড়ক,
সদর রোড (শহীদ মিনারের বিপরীতে), বরিশাল-৮২০০।
© প্রকাশক কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
Developed by NEXTZEN-IT