4:24 pm , June 25, 2023
রিয়াজুল ইসলাম বাচ্চু, ঝালকাঠি ॥ কলকাতা খ্যাত ঐতিহ্যবাহী ঝালকাঠির কোরবানীর হাটে বাহারী রকমের গরুর সমাহার দেখা যাচ্ছে। ব্যবসায়ী, ফড়িয়া, ক্রেতা ও বিক্রেতাদের গরুর হাটে ভীড় লক্ষ করা যায়। গতবারের চেয়ে এবছর গরুর দাম একটু চড়া রয়েছে। বেচাকেনা উল্লেখযোগ্যভাবে না হলেও গরুর দাম হাকিয়ে বসে আছেন বিক্রেতারা। বাজার ঘুরে দেখা যায় নীচে পৌনে ১ লাখ টাকা থেকে সর্বোচ্চ ৫ লাখ টাকা পর্যন্ত দামের গরু দাম চাইতে দেকা যায়। অন্যতম ধর্মীয় উৎসব পবিত্র ঈদুল আজহাকে সামনে রেখে ঝালকাঠি জেলায় এ বছর কোরবানীর বাজারে বিক্রির জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে প্রায় ২০ হাজার পশু।এ জেলায় বাণিজ্যিকভাবে উল্লেখযোগ্য খামার না থাকলেও পারিবারিকভাবে অনেকেই পশুপালন করছেন। জেলা প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর সূত্র জানায়, জেলায় কোরবানির পশুর চাহিদা রয়েছে ১৮ হাজার ১২১টি। আর প্রস্তুত রয়েছে ১৮ হাজার ৮৬২টি। এসব গবাদি পশুর মধ্যে ষাড় ৮ হাজার ১১১টি, বলদ ৩ হাজার ২৩১টি, গাভী দুই হাজার ১৮৮টি, মহিষ ৩৭টি, ছাগল পাঁচ হাজার ২৯৬টি ও ১৭টি ভেড়া প্রস্তুত করা হয়েছে। জেলায় ছোট বড় মিলিয়ে পারিবারিক খামারি রয়েছেন তিন হাজারেরও বেশি।কিন্তু দু:সংবাদ হলো ঈদের আগে বেড়েই চলেছে গো-খাদ্যের দাম। বর্তমানে খামারিদের প্রতিদিন গো-খাদ্যে খরচ বেড়েছে ২০ থেকে ২৫ ভাগ। এরমধ্যে মৌসুমী ব্যবসায়ীরা ভারত থেকে গরু আমদানি করলে ন্যায্যমূল্যে গরু বিক্রি করতে না পারলে এসব খামারিদের লোকসান গুনতে হবে অনেক।
সদর উপজেলার ডুমুরিয়া এলাকার কঙ্কন ব্যাপারী জানান, ১২টি গরু নিয়ে তিনি পারিবারিক খামার গড়ে তুলেছেন। এরমধ্যে ৪টি দুগ্ধ উৎপাদনকারী গাভী এবং ৫টি কোরবানির জন্য। বাকিগুলো বিক্রির অনুপযোগী। তবে যে পরিমাণে গো-খাদ্যের দাম বাড়ছে তাতে খরচ পুষিয়ে লাভ করাটা খুবই কষ্টসাধ্য।
পারিবারিক খামার পরিচালনাকারী সুজন সরকার বলেন, গো-খাদ্যের মূল্যবৃদ্ধি পেয়েছে। ৩৭ কেজি ওজনের এক বস্ত গমের ভুসির বর্তমান বাজার মূল্য ২ হাজার ২০০ টাকা, যা আগে ছিল ১ হাজার ৮০০ টাকা। ৭৪ কেজির এক বস্তা খৈল এখন ৩ হাজার ৪০০ থেকে ৩ হাজার ৬০০ টাকা, যা গত বছর ছিল ২ হাজার ৮০০ টাকা। ৫০ কেজি ধানের কুঁড়ার দাম ৯০০ টাকা, গত বছর ছিল ৭০০ টাকা। প্রতি কেজি খড় এখন ১৫ টাকা, আগে ছিল ১০ টাকা। এছাড়া খেসারি ও ছোলার ভুসির দাম বেড়েছে কেজিতে ১০ টাকা। গত কয়েক বছরে ৭ থেকে ৮ দফা গো-খাদ্যের দাম বেড়েছে।
অন্যান্য খামারিরা বলেন, পশু খামারে শ্রমিকদের দুই বছর আগে বেতন ছিল প্রতিদিন ৫০০ টাকা। এখন প্রতিদিন ৭৫০ টাকায় কাজ করাতে হচ্ছে। পশু পালনে খরচ বেড়ে যাওয়ায় বাণিজ্যিকভাবে কেউ খামার করতে আগ্রহী হচ্ছেন না। পাশাপাশি ব্যাংক ও এনজিওর ঋণের অতিরিক্ত সুদ পরিশোধ করতে গিয়ে খামারিরা খুব একটা লাভের মুখ দেখছেন না।
জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা কৃষিবিদ ডা. মো. ছাহেব আলী জানান, এর ইমধ্যে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্দেশনা মোতাবেক আমরা জেলার বিভিন্ন ব্যাংকের সঙ্গে কথা বলেছি। প্রতিটি হাটে ব্যাংকের লোক থাকবে। গবাদি পশু ক্রেতা এবং বিক্রেতারা যেকোনো ব্যাংকের অ্যাকাউন্ট এবং কিউআর কোড ব্যবহার করে ই-ব্যাংকিংয়ে লেনদেন সেবা গ্রহণ করতে পারবেন। জেলায় প্রায় ১৯ হাজার পশু ক্রয় বিক্রয় হবে বলে আমরা আশা করছি। আমরা জেলার ৪ উপজেলার প্রতিটি খামার পরিদর্শন করে প্রয়োজনীয় পরামর্শসহ ওষুধপত্র দিচ্ছি। আমাদের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা কোরবানীর পশুর জন্য আলাদাভাবে সতর্কতা অবলম্বন করছেন।
সচেতন মহল মনে করেন গো খাদ্যের উচ্চ মূল্যের কারণে এ বছর কোরবানীর বাজারে গরুর মূল্য বেশী হতে পারে।