কোরবানি উপলক্ষে প্রাণ ফিরেছে লঞ্চে: ফাঁকা নেই কোনো কেবিন কোরবানি উপলক্ষে প্রাণ ফিরেছে লঞ্চে: ফাঁকা নেই কোনো কেবিন - ajkerparibartan.com
কোরবানি উপলক্ষে প্রাণ ফিরেছে লঞ্চে: ফাঁকা নেই কোনো কেবিন

4:16 pm , June 25, 2023

বিশেষ প্রতিবেদক ॥ পবিত্র ঈদুল আজহা উপলক্ষে ঢাকা বরিশাল রুটের লঞ্চগুলোতে প্রাণ ফিরে এসেছে। প্রায় সব লঞ্চের ই অগ্রিম টিকিট বিক্রি হয়ে গেছে। ফাঁকা নেই কোন কেবিন। লঞ্চ মালিকরা বলছেন এই ধারাবাহিকতা বজায় থাকলে টিকে যাবে লঞ্চ ব্যবসা। তবে ঈদের পর আবারো মন্দায় ফিরে যাওয়ার আশঙ্কা বেশিরভাগ মালিকের। যদিও নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষ বলছেন, এখন থেকে মন্দাভাব কাটিয়ে উঠবেন ব্যবসায়ীরা। রোববার সন্ধ্যায় বরিশাল নৌ-বন্দর ঘুরে ৭টি লঞ্চ ঢাকার পথে যাত্রার জন্য প্রস্তুত পাওয়া গেছে। বন্দর কর্মকর্তা আবদুর রাজ্জাক জানালেন, ঢাকা থেকেও বরিশালের উদ্দেশ্যে ৭ টি লঞ্চ ছেড়ে আসবে। এই মুহূর্তে মোট ১৪ টি লঞ্চ রোটেশন করা হয়েছে। প্রয়োজনে এ সংখ্যা আরো বাড়বে। তবে বরিশাল অংশে যাত্রীচাপ তুলনামূলক অনেক কম। এর আগে গত বৃহস্পতিবার পর্যন্ত বরিশাল নৌ বন্দর থেকে দুইটি করে মোট চারটি লঞ্চ রোটেশন করা হয়েছিল। কোরবানির ঈদকে কেন্দ্র করে ঢাকা সদরঘাটে চাপ বাড়তে শুরু করায় গত ২৩ জুন শুক্রবার থেকে পাঁচটি করে ১০ টি লঞ্চ রোটেশন করা হয়। ২৫ জুন থেকে এ সংখ্যা আরো বৃদ্ধি করা হয়েছে বলে জানান আব্দুর রাজ্জাক। সরেজমিনে বরিশাল অংশে যাত্রী চাপ কিছুটা কম দেখা গেলেও ডেক ও কেবিন পরিপূর্ণই চোখে পড়েছে।
এদিকে টিকেট কাউন্টারগুলো ঘুরে জানা যায়, ২৭ জুন থেকে ২ জুলাই পর্যন্ত কোনো লঞ্চেই কেবিন ও সোফা ফাঁকা নেই। সুন্দরবন নেভিগেশন কোম্পানির একজন পরিচালক মো. আকতার হোসেন জানান, বরিশাল রুটে তিনটি, ঝালকাঠি দুটি ও পটুয়াখালী দুটি মোট সাতটি সুন্দরবন কোম্পানির লঞ্চ ঈদ উপলক্ষে চলাচল করছে। একটিতেও ২ জুলাই পর্যন্ত কোনো কেবিন ফাঁকা নেই বলে জানান তিনি।
তবে কীর্তনখোলা ১০ এর মালিক মঞ্জুরুল আহসান ফেরদৌস জানালেন, তার লঞ্চের কেবিন এখনো খালি আছে, কারো প্রয়োজন হলে কীর্তনখোলা ১০ এর বেলাল সাহেবের সাথে যোগাযোগ করতে বলেন তিনি। এসময় তিনি ক্ষোভের সাথে বলেন, এতোটা ক্ষতির সম্মুখীন লঞ্চ ব্যবসা যে কীর্তনখোলা বিক্রি করে দেয়ার কথা ভাবছি।
ডেক যাত্রীদের অনেকে অভিযোগের সুরে বললেন, ভাড়া সহনশীল হলে বরিশাল অঞ্চলের বেশিরভাগ যাত্রী নৌপথেই স্বাচ্ছন্দ বোধ করেন। কিন্তু আমাদের জন্য ৩০০ টাকার বেশি ভাড়া দেয়া জুলুম হয়ে যায়।
এসময় চরকাউয়া এলাকার যাত্রী মনিরুল ইসলাম বলেন, লঞ্চ মালিক কর্তৃপক্ষ ভাড়াটা ৩০০ টাকায় সীমাবদ্ধ রাখলে তাদের যাত্রীর অভাব হবেনা।
এসময় কীর্তনখোলা লঞ্চের সুপারভাইজার বেলাল হোসেন বলেন, তেলের দাম বৃদ্ধির কারণে সরকার নির্ধারিত ভাড়া সাড়ে চারশত টাকা। আমরা তার চেয়েও কম নিচ্ছি। কিন্তু কেবিন বেশিরভাগ ফাঁকা থাকলে আমাদের চলাচল অসম্ভব।
শুভরাজ এর মালিকপক্ষের প্রতিনিধি ও সহকারী সুপারভাইজার আব্দুর রাজ্জাক জানালেন, পদ্মা সেতুর কারণে গতপ্রায় একবছর ধরেই লঞ্চে যাত্রী শূন্যতা চলছে। অবস্থা এমন হয়েছে যে গত প্রায় তিনমাস ধরে মালিক সমিতি ও বিআইডব্লিউটিএর কর্মকর্তারা বৈঠকে রোটেশন করে দুটি করে লঞ্চ চালু রাখতে বাধ্য হয়েছেন।
একই কথা বললেন মানামি সুপারভাইজার শাহদাত হোসেন শুভ। তিনি আরো বলেন, তেলের দাম না কমালে ঈদের পর হয়তো অনেক লঞ্চ ব্যবসা গুটিয়ে নেবে। প্রতিটি ট্রিপে একটি লঞ্চের চার লাখ টাকা তেল বাবদ বরাদ্দ রাখতে হয় বলে জানান তিনি।
এ সময় লঞ্চ মালিক সমিতির সহসভাপতি ও সুন্দরবন শিপিং এর চেয়ারম্যান আওয়ামী লীগ নেতা সাইদুর রহমান রিন্টু বলেন, ব্যাংকে কোটি কোটি টাকা ঋন আছে, শ্রমিকদের বেতন, রক্ষণাবেক্ষণ খরচ, সবমিলিয়ে প্রচন্ড ক্ষতির মুখে আছে লঞ্চ ব্যবসা। ঈদ উপলক্ষে কিছুটা অবস্থায় পরিবর্তন ঘটলেও তা শুধু সবমিলিয়ে একসপ্তাহ। এরপর কি হবে?
রিন্টু আরো বলেন, এভাবে রোটেশন করে করে কতদিন চলা সম্ভব? এই ঈদ-পার্বণে আগে যেখানে ৩০-৪০টি লঞ্চ প্রতিযোগিতা দিত, সেখানে এখন সর্বোচ্চ সাতটি লঞ্চ চলাচল করবে। এ থেকেই লঞ্চ ব্যবসার ভবিষ্যৎ স্পষ্ট হয়ে ওঠে। তেলের দাম কমার পাশাপাশি সরকারের সহযোগিতা কামনা করেন সুন্দরবন নামের ১৫-২০টি লঞ্চের এই মালিক।এদিকে বেসরকারি এক জরিপে দেখা গেছে, নৌপথে বরিশালমুখী যাত্রী সংখ্যা কমলেও ঈদুল আজহা উপলক্ষে ঢাকাসহ আশপাশের জেলাগুলোর প্রায় ৩০ লাখ মানুষ নৌপথে গন্তব্যে যাবেন। ঈদযাত্রীদের মধ্যে তিন লাখ নারায়ণগঞ্জ নদীবন্দর হয়ে যাবেন। বাকি ২৭ লাখ যাবেন সদরঘাট টার্মিনালসহ ঢাকা নদীবন্দরের বিভিন্ন ঘাট হয়ে। তাই এবারও সদরঘাটের ওপর অস্বাভাবিক চাপ পড়বে বলে মনে করছে বেসরকারি সংগঠন নৌ, সড়ক ও রেলপথ রক্ষা জাতীয় কমিটি। গত ১৮ জুন ঈদপূর্ব পর্যবেক্ষণ ও জরিপ সংক্রান্ত এক প্রতিবেদনে এ তথ্য প্রকাশ করে সংগঠনটি। নৌযান স্বল্পতার কথা উল্লেখ করে প্রতিবেদনে বলা হয়, কাগজে-কলমে ঢাকা থেকে বিভিন্ন গন্তব্যের নৌপথ ৪১টি। তবে তীব্র নাব্যতা সংকট ও যাত্রী স্বল্পতার কারণে বড় আয়তনের ও বিলাসবহুল লঞ্চ চলাচল না করায় অন্তত ১৫টি নৌপথ দৃশ্যত ইতোমধ্যে পরিত্যক্ত হয়ে পড়েছে। বাকি ২৬টি নৌপথে বিভিন্ন কোম্পানির প্রায় ৭০টি লঞ্চ নিয়মিত আসা-যাওয়া করে। ঈদের আগে লঞ্চের সংখ্যা বেড়ে প্রায় ১৮০টি হবে। এরমধ্যে ৯০টি লঞ্চ প্রতিদিন সদরঘাট থেকে বিভিন্ন গন্তব্যের উদ্দেশে ছেড়ে যাবে এবং বিভিন্ন স্থান থেকে সদরঘাটে আসবে ৯০টি।
বিআইডব্লিউটিএর চেয়ারম্যান কমোডর আরিফ আহমেদ মোস্তফা জানান, ঈদুল আজহা উপলক্ষে নৌ যান চলাচলে কোনো বাধানিষেধ নেই। রুটপারমিট আছে এমন সব লঞ্চই ঈদ উপলক্ষে চলাচল করতে পারবে।
তিনি আরো বলেন, ঢাকা বরিশাল রুটে বিলাসবহুল লঞ্চ চলাচলে কিছুটা সংকট তৈরি হলেও ভোলা, চাঁদপুর, পটুয়াখালী ইত্যাদি রুটে কোনো সমস্যা নাই। মালিকপক্ষ চাইলে তারা রুট পরিবর্তন করে নিতে পারবে, সে সুযোগ তাদের রয়েছে বলে জানান বিআইডব্লিউটিএর চেয়ারম্যান।

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন    
সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী মিরাজ মাহমুদ
 
বার্তা ও বানিজ্যিক কার্যালয়ঃ কুশলা হাউজ, ১৩৮ বীরশ্রেষ্ঠ ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর সড়ক,
সদর রোড (শহীদ মিনারের বিপরীতে), বরিশাল-৮২০০।
© প্রকাশক কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
Developed by NEXTZEN-IT