3:33 pm , June 24, 2023
মতবিনিময় সভায় চরমোনাই পীরের ঘোষণা
পরিবর্তন ডেস্ক ॥ সরকার আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন দলীয় সরকারের অধীনে আয়োজন করার পাঁয়তারা করছে এবং মানুষকে ধোকা দিয়ে বোকা বানানোর চেষ্টা করে যাচ্ছে। এমতাবস্থায় আমরা আগেও বলেছি এবং এখনও বলছি- দলীয় সরকারের অধীনে কোন নির্বাচনেই ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ অংশগ্রহণ করবে না। বিএনপি, জাতীয় পার্টি, ইসলামী আন্দোলন, জামাত, এবি পাটিসহ ১৫ রাজনৈতিক দল ভোট চোর শ্বৈর শাসক এই জালেম সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচনে যাবে না। তাই সরকারের পতন এখন সময়ের দাবী। ইসলামী আন্দোলনের আমীর মুফতী সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করীম পীর সাহেব চরমোনাই’র আহবানে দেশের বিদ্যমান রাজনৈতিক সঙ্কট উত্তরণ এবং একটি সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ জাতীয় নির্বাচনের লক্ষ্যে করণীয় শীর্ষক মতবিনিময় সভা শনিবার গুলিস্তানস্থ হোটেল ইম্পেরিয়াল মিলনায়তনে সভাপতির বক্তব্যে দলের আমীর মুফতী সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করীম পীর সাহেব চরমোনাই এসব কথা বলেন। পীর সাহেব চরমোনাইর সভাপতিত্বে এতে দেশের বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের শীর্ষ পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ দিকনির্দেশনামূলক গুরুত্বপূর্ণ বক্তব্য দেন। উদ্বোধীনী বক্তব্যে পীর সাহেব চরমোনাই বলেন, স্বাধীনতার পর ৪ পদ্ধতির সরকার ব্যবস্থার মাধ্যমে জাতীয় সংসদসহ বিভিন্ন নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। একটি হচ্ছে, দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন, সামরিক সরকারের অধীনে নির্বাচন, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন এবং সেনা সর্মথিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন। পীর সাহেব বলেন, বাস্তবতা হল দলীয় সরকারের অধীনে কোন নির্বাচনই সুষ্ঠু, গ্রহণযোগ্য ও নিরপেক্ষ হয় নাই। রাষ্ট্র যন্ত্রকে ব্যবহার করে বিরোধী দলের উপর দমন পীড়ন চালিয়ে এক তরফা নির্বাচন করে ক্ষমতা দখল করাই দলীয় সরকারের মূল উদ্দেশ্য থাকে। কাজেই স্বাধীনতা পরবর্তী কোন নির্বাচনই দলীয় সরকারের অধিনে সুষ্ঠু, গ্রহণযোগ্য ও বিতর্কহীন হয় নাই। তাই ভবিষ্যতেও দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন সুষ্ঠু হওয়ার আশা করা যায় না। ১৯৭৩ সালে, ২০১৪ সালে এবং ২০১৮ সালের নির্বাচন তার বাস্তব প্রমান। রাজনৈতিক একটি বিশেষ প্রেক্ষাপটে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে প্রথম নির্বাচন হয় ১৯৯১ সালে। ঐ নির্বাচনে বিএনপি ক্ষমতায় গেলে তৎকালীন বিরোধীদল বলেছিল নির্বাচনে সুক্ষ্ম কারচুপি হয়েছে। এ অজুহাতে বিরোধী দল অনেকদিন পার্লামেন্ট বর্জন করেছিল। আবার ২য় বার ১৯৯৬ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনে আওয়ামীলীগ ক্ষমতায় গেলে ঐ সময়ের বিরোধী দল বলেছিল ভোটে স্থুল কারচুপি হয়েছে এবং তারাও লাগাতার সংসদ বর্জন করেছিল। কাজেই তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন সত্যিকারার্থে গ্রহণযোগ্য হয় না, নিরপেক্ষও হয় না।
২০০৭ সালে অনেক চড়াই উৎরাই পেরিয়ে গঠিত হয় সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের মেয়াদ ৩ মাসের পরিবর্তে ২ বছর স্থায়ী হয়ে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। সে নির্বাচনে আওয়ামীলীগ ক্ষমতায় গেলে তৎকালীন বিরোধী দল বলেছিল সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার নির্বাচনে মারাত্মক পক্ষপাতিত্ব করেছে। পীর সাহেব বলেন, সময়ের পরিপ্রেক্ষিতে আমরা দেখতে পাই দলীয় সরকার, সামরিক সরকার, তত্ত্বাবধায়ক সরকার ও সেনাসমর্থিত সরকারের অধীনে কোন নির্বাচনই নিরপেক্ষ ও গ্রহণ যোগ্য হয় নাই। তাই আমরা বিজ্ঞ রাজনীতিবিদ, বুদ্ধিজীবী, আলেম-ওলামাগণের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলতে চাই- বর্তমানে রাজনৈতিক প্রেক্ষিতে এবং বিগত পদ্ধতির নির্বাচনগুলোর ত্রুটির কারণে একটি সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের জন্য নিবন্ধিত সকল দলের পরামর্শক্রমে এবং অংশগ্রহণে জাতীয় সরকার গঠন করে তার অধীনে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলে নির্বাচনটি অবাধ, সুষ্ঠু এবং সকল দলের কাছে গ্রহণযোগ্য হবে বলে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ মনে করে। পীর সাহেব জাতীয় সরকারের প্রস্তাবিত রূপরেখা ঘোষণা করেন। রূপরেখা হচ্ছে, আপিল বিভাগের একজন বিজ্ঞ, সৎ যোগ্য গ্রহণযোগ্য বিচারপতিকে প্রধান করে নিবন্ধিত দলগুলোর প্রতিনিধি নিয়ে জাতীয় সরকার গঠন হবে।যারা জাতীয় সরকারে থাকবেন তারা জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে পারেবেন না। জাতীয় সংসদের মেয়াদ পূর্ণ হওয়ার পূর্বেই জাতীয় সরকার গঠন করতে হবে। জাতীয় সরকার গঠিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই বর্তমান জাতীয় সংসদ ভেঙ্গে দিতে হবে। সংসদ ভেঙ্গে দেয়ার পাশাপাশি বর্তমান প্রধানমন্ত্রী নির্বাচনকালীন জাতীয় সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করবেন। জাতীয় সরকার গঠিত হওয়ার পরবর্তী ৩ মাসের মধ্যে জাতীয় নির্বাচন আয়োজন করবেন। কোনো কারণে তা সম্ভব না হলে পরবর্তী ৩ মাসের মধ্যে অবশ্যই নির্বাচন দিয়ে নির্বাচিত প্রতিনিধিদের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে হবে। জাতীয় সরকার গঠিত হওয়ার পর নির্বাচন কমিশন ভেঙ্গে দিয়ে নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন করতে হবে। বর্তমান মন্ত্রীসভার কেউ‘ই নির্বাচনকালীন জাতীয় সরকারে থাকতে পারবেন না। সকল দলের প্রতিনিধিদের নিয়ে জাতীয় ঐকমত্যের ভিত্তিতে জাতীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন হলে নির্বাচনটি সকল দলের কাছে গ্রহণযোগ্য হবে বলে আমাদের বিশ্বাস। অনেক দলই নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার বা দলীয় সকারের অধীনে নির্বাচনের কথা যেহেতু পূর্ব থেকে বলে আসছেন, তাই হয়তো এ পদ্ধতিগুলো তারা পরিবর্তন করতে চান না। আমরা বলি নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারও তো সময়ের প্রেক্ষিতে এসেছে। ১৯৯১ সালের আগে কোনো দিনই তত্ত্বাবধায়ক সরকার নামে কোনো সরকার ছিল না এবং এ নামে নির্বাচনও অনুষ্ঠিত হয়নি। এ পদ্ধতিও শেষ পর্যন্ত অবিতর্কিত থাকেনি। আর দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন তো স্বাধীনতার পর কোনো কালেই গ্রহণযোগ্য হয়নি। সামরিক সরকারের অধীনে নির্বাচন ছিল ফরমায়েশী নির্বাচন। সামরিক সরকার জনমতের তোয়াক্কা’ই করে নাই। তাই জাতীয় সরকারের অধীনে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য আমরা রাজনীতিবিদ, বুদ্ধিজীবী, শিক্ষাবিদ ও আলেম-ওলামাগণের নিকট এ ব্যাপারে সুচিন্তিত মতামত প্রদানের অনুরোধ জানাচ্ছি। ইতিপূর্বে আমরা অনেক বুদ্ধিজীবী, শিক্ষাবিদ, রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব ও ওলামায়ে কেরামের সাথে পরামর্শ করে ইতিবাচক সাড়া পেয়েছি। সর্বোপরি জাতীয় এবং রাজনৈতিক সঙ্কট নিরসনে দলীয় সরকারের অধীনে নয়; বরং জাতীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন, সংখ্যানুপাতিক পতিনিধিত্ব (চজ) পদ্ধতিতে সংসদে প্রতিনিধিত্ব এবং সিইসি’র পদত্যাগের দাবিতে সকল দেশপ্রেমিক দল ও জনগণকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার দাবী জানাচ্ছি। দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা গাজী আতাউর রহমানের সঞ্চালনায় মতবিনিময় সভায় অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন, বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান বরকতুল্লাহ বুলু, বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, বাংলাদেশ জমিয়তুল মুছলেহীনের আমীর প্রিন্সিপাল মাওলানা খলিলুর রহমান নেছারাবাদী, বাংলাদেশ কল্যান পার্টির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম বীর প্রতীক, জাপার প্রেসিডিয়াম সদস্য ও সাবেক রাষ্ট্রদূত গোলাম মসীহ, ইসলামী আন্দোলনের প্রেসিডিয়াম সদস্য প্রিন্সিপাল মাওলানা সৈয়দ মুহাম্মদ মোসাদ্দেক বিল্লাহ আল মাদানী, সিনিয়র নায়েবে আমীর ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ এবং বরিশাল সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র প্রার্থী মুফতী সৈয়দ মুহাম্মদ ফয়জুল করীম শায়খে চরমোনাই, ইসলামী আন্দোলনের প্রেসিডিয়াম সদস্য অধ্যাপক আশরাফ আলী আকন, ইনসাফ পার্টির সদস্য সচিব সাংবাদিক নেতা শওকত মাহমুদ, ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক পার্টির চেয়ারম্যান ববি হাজ্জাজ, খেলাফত মজলিসের মহাসচিব অধ্যাপক ড. আহমদ আবদুল কাদের, এবি পার্টির সদস্য সচিব মজিবুর রহমান মঞ্জু, মুসলিম লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য আতিকুল ইসলাম, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মহাসচিব প্রিন্সিপাল হাফেজ মাওলানা ইউনুছ আহমাদ,বাংলাদেশ ন্যাপ মহাসচিব গোলাম মোস্তফা ভূইয়া, বাংলাদেশ মসজিদ মিশন ও সেন্ট্রাল মসজিদ মিশন সেক্রেটারি ড. মাওলানা খলিলুর রহমান মাদানী, মোকামিয়া দরবারের পীর সাহেব মাওলানা মাহমুদুল হাসান ফেরদৌস, খেলাফতে রব্বানী পার্টির চেয়াম্যান মুফতী ফয়জুল হক জালালাবাদী, পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি ড. আবদুল লতিফ মাসুম। এতে আরো উপস্থিত ছিলেন, দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য আল্লামা নুরুল হুদা ফয়েজী, খন্দকার গোলাম মাওলা।