4:29 pm , June 23, 2023
বিশেষ প্রতিবেদক ॥ পবিত্র ঈদুল আজহা উপলক্ষে ঢাকা বরিশাল রুটে ৭টি করে ১৪টি লঞ্চ চলাচল করবে বলে জানিয়েছে লঞ্চ মালিকপক্ষ। তবে বিআইডব্লিউটিএ কর্তৃপক্ষ বলছেন, রুট পারমিট আছে এমন লঞ্চ প্রয়োজনে চলাচল ও যাত্রী পরিবহন করতে পারবে। শুক্রবার বরিশাল নৌ বন্দর ঘুরে ঘাটে পাঁচটি লঞ্চ দেখা গেছে। শুক্রবার থেকে পাঁচটি এবং ২৫ জুন থেকে ৫ জুলাই পর্যন্ত সাতটি করে লঞ্চ রোটেশন করা হয়েছে বলে জানান বরিশাল বিআইডব্লিটিএ‘র উপপরিচালক আব্দুর রাজ্জাক। সরেজমিনে বৃহস্পতিবার রাতে বরিশাল নৌবন্দরে গিয়ে দেখা যায় বরিশাল থেকে ঢাকার পথে মাত্র দুটি লঞ্চ শুভরাজ ও মানামি যাত্রী ধরার প্রতিযোগিতা করছে। দুটি লঞ্চেরই ডেকে মোটামুটি যাত্রী চোখে পড়লেও কেবিন ও সোফা প্রায় সবই ফাঁকা। শুভরাজ এর মালিকপক্ষের প্রতিনিধি ও সহকারী সুপারভাইজার আব্দুর রাজ্জাক জানালেন, পদ্মা সেতুর কারণে গতপ্রায় একবছর ধরেই লঞ্চে যাত্রী শূন্যতা চলছে। অবস্থা এমন হয়েছে যে গত প্রায় তিনমাস ধরে মালিক সমিতি ও বিআইডব্লিউটিএ‘র কর্মকর্তারা বৈঠকে রোটেশন করে দুটি করে লঞ্চ চালু রাখতে বাধ্য করেছেন।
একই কথা বলেন মানামির সুপার ভাইজার শাহাদাত হোসেন শুভ বলেন, তেলের দাম না কমালে ঈদের পর হয়তো অনেক লঞ্চ ব্যবসা গুটিয়ে নেবে। প্রতিটি ট্রিপে একটি লঞ্চের চার লাখ টাকা তেল বাবদ বরাদ্দ রাখতে হয় বলে জানান তিনি। লঞ্চ মালিক সমিতির সহসভাপতি সাইদুর রহমান রিন্টু বলেন, ব্যাংকে কোটি কোটি টাকা লোন আছে, শ্রমিকদের বেতন, রক্ষণাবেক্ষণ খরচ, সবমিলিয়ে প্রচন্ড ক্ষতির মুখে আছে লঞ্চ ব্যবসা।
রিন্টু আরো বলেন, এভাবে রোটেশন করে কতদিন চলা সম্ভব? এই ঈদ-পার্বণে আগে যেখানে ৩০-৪০টি লঞ্চ প্রতিযোগিতা করতো, সেখানে এখন সর্বোচ্চ সাতটি লঞ্চ চলাচল করবে। এ থেকেই লঞ্চ ব্যবসার ভবিষ্যৎ স্পষ্ট হয়ে ওঠে। তেলের দাম কমার পাশাপাশি সরকারের সহযোগিতা কামনা করেন রিন্টু।
এদিকে বেসরকারি এক জরিপে দেখা গেছে, নৌপথে বরিশালমুখী যাত্রী সংখ্যা কমলেও ঈদুল আজহা উপলক্ষে ঢাকাসহ আশপাশের জেলাগুলোর প্রায় ৩০ লাখ মানুষ নৌপথে গন্তব্যে যাবেন। ঈদযাত্রীদের মধ্যে তিন লাখ নারায়ণগঞ্জ নদীবন্দর হয়ে যাবেন। বাকি ২৭ লাখ যাবেন সদরঘাট টার্মিনালসহ ঢাকা নদীবন্দরের বিভিন্ন ঘাট হয়ে। তাই এবারও সদরঘাটের ওপর অস্বাভাবিক চাপ পড়বে বলে মনে করছে বেসরকারি সংগঠন নৌ, সড়ক ও রেলপথ রক্ষা জাতীয় কমিটি। গত ১৮ জুন ঈদপূর্ব পর্যবেক্ষণ ও জরিপ সংক্রান্ত এক প্রতিবেদনে এ তথ্য প্রকাশ করে সংগঠনটি। নৌযান স্বল্পতার কথা উল্লেখ করে প্রতিবেদনে বলা হয়, কাগজে-কলমে ঢাকা থেকে বিভিন্ন গন্তব্যের নৌপথ ৪১টি। তবে তীব্র নাব্য সংকট ও যাত্রী স্বল্পতার কারণে বড় আয়তনের ও বিলাসবহুল লঞ্চ চলাচল না করায় অন্তত ১৫টি নৌপথ দৃশ্যত ইতোমধ্যে পরিত্যক্ত হয়ে পড়েছে। বাকি ২৬টি নৌপথে প্রায় ৭০টি লঞ্চ নিয়মিত আসা-যাওয়া করে। ঈদের আগে লঞ্চের সংখ্যা বেড়ে প্রায় ১৮০টি হবে। এরমধ্যে ৯০টি লঞ্চ প্রতিদিন সদরঘাট থেকে বিভিন্ন গন্তব্যের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যাবে এবং বিভিন্ন স্থান থেকে সদরঘাটে আসবে ৯০টি।
বিআইডব্লিউটিএ‘র চেয়ারম্যান কমোডর আরিফ আহমেদ মোস্তফা জানান, ঈদুল আজহা উপলক্ষে নৌ যান চলাচলে কোনো বাধানিষেধ নেই। রুটপারমিট আছে এমন সব লঞ্চই ঈদ উপলক্ষে চলাচল করতে পারবে।তিনি বলেন, ঢাকা বরিশাল রুটে বিলাসবহুল লঞ্চ চলাচলে কিছুটা সংকট তৈরি হলেও ভোলা, চাঁদপুর, পটুয়াখালী ইত্যাদি রুটে কোনো সমস্যা নাই। মালিকপক্ষ চাইলে তারা রুট পরিবর্তন করে নিতে পারবে, সে সুযোগ তাদের রয়েছে। কমোডর আরিফ আরো বলেন, ঈদুল আজহা উপলক্ষে নৌপথেও যাত্রী চাপ হবে। যেহেতু এটা আষাঢ় মাস, বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। তাই লঞ্চ মালিকদের আবহাওয়া পরিস্থিতি বুঝে নৌযান চলাচলের অনুরোধ জানান তিনি।