4:31 pm , June 20, 2023
আরিফ আহমেদ, বিশেষ প্রতিবেদক ॥ ‘সব ভালো যার-শেষ ভালো তার’ বরিশাল বিভাগীয় সাহিত্য মেলার প্রথম দিনের সমাপনী ছিলো চরম বিশৃঙ্খলা দিয়ে। বিকালের পর্বে কবি সাহিত্যিকদের উপস্থিতি ছিলো হাতেগোনা। সভাপতি কবি মুহাম্মদ নুরুল হুদা চলে যাওয়ার কারণে তার সাথে সাথেই চলে যান দূর-দূরান্ত থেকে আগত কবি-সাহিত্যিকের অনেকেই। এর উপর বিকালের পর্বে ছিলোনা কবিদের জন্য কোনো আয়োজন। যে কারণে সভাপতির দায়িত্ব পালনে এসে বিব্রত অবস্থায় পড়েন অধ্যাপক ও প্রাবন্ধিক শিপ্রা সরকার। এর আগে সকালের শুরুটাও হয়েছে নির্দিষ্ট সময়ের অনেক পরে। বেলা সাড়ে এগারোটায় শুরু হয় প্রথম পর্বের আনুষ্ঠানিকতা।
প্রথম পর্ব
নদী ভরাট হয়ে গেলে নদীর নাব্যতা দূরীকরণের জন্যে যেমন ড্রেজিং করতে হয়, সাহিত্যকে চলমান রাখতে তার নাব্যতা দূরীকরণে বইমেলা হচ্ছে সেই ড্রেজিং। তাই নিয়মিত বইমেলার আয়োজনের আহ্বান জানিয়ে জাতিসত্ত্বার কবি ও বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক কবি মুহাম্মদ নুরুল হুদা বরিশালে বিভাগীয় সাহিত্য মেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন। ২০ জুন মঙ্গলবার বরিশালের জেলা শিল্পকলা একাডেমি মিলনায়তনে বিভাগীয় এই সাহিত্য মেলার আয়োজন করেছিলো সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের পৃষ্ঠপোষকতায় এবং বরিশাল বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়ের সহযোগিতায় বাংলা একাডেমি। বরিশালের ছয় জেলা থেকে আগত শতাধিক কবি সাহিত্যিক এতে অংশগ্রহণ করেন। দুই দিনব্যাপী এই সাহিত্যের মিলনমেলার প্রথমদিন সকালটা ছিলো উদ্বোধন পর্ব। দুপুরের পর দ্বিতীয় পর্বে আলোচনা ও কবিতাপাঠ। ২০ ও ২১ জুন মঙ্গল ও বুধবার দুই দিনব্যাপী এই সাহিত্য মেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব খলিল আহমদ। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বিভাগীয় কমিশনার মোঃ আমিন উল আহসান। এসময় বিশেষ অতিথি ছিলেন উপাচার্য ড. মোঃ ছাদেকুল আরেফিন এবং প্রধান বক্তা ছিলেন কবি মুহাম্মদ নুরুল হুদা। শুরুতে ফিতা কেটে বেলুন ফেস্টুন উড়িয়ে অনুষ্ঠানের শুভ উদ্বোধন করেন অতিথিবৃন্দ। অতিথিদের উত্তরীয় পরিয়ে দেওয়া হয়। পরে সংক্ষিপ্ত এক আলোচনায় অতিথিরা বিভাগীয় সাহিত্য মেলার বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিষয় তুলে ধরে আলোচনা করেন। পরিশেষে জেলা শিল্পকলা একাডেমির পরিবেশনায় মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়। অতিথিরা বইয়ের স্টল পরিদর্শন করেন।
দুপুরের খাবার পরিবেশন শেষে দ্বিতীয় পর্ব শুরু হয় সাড়ে তিনটায়। বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক প্রাবন্ধিক সঞ্জয় কুমার সরকার বরিশাল বিভাগের সাহিত্য ও সংস্কৃতি সনাক্তযোগ্য বিষয় ও প্রবণতা শীর্ষক প্রবন্ধ পাঠ করেন। এখানে প্রধান আলোচক ছিলেন রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ড. বিশ্বজিৎ ঘোষ। কবি মুহাম্মদ নুরুল হুদার সভাপতিত্বে আলোচনায় অংশ নেন অমৃত লাল কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ ছড়াকার তপংকর চক্রবর্তী। উপস্থিত ছিলেন পটুয়াখালী, ঝালকাঠি, পিরোজপুর, ভোলা ও বরিশালের শতাধিক কবি সাহিত্যিক। এ পর্বটি সমাপ্ত হবার আগেই বেলা চারটায় চলে যান সভাপতি কবি মুহাম্মদ নুরুল হুদা। তার সাথে সাথে চলে যান দূর-দূরান্তের বেশ কয়েকজন কবি সাহিত্যিক। ফলে দর্শক সারিতে কবিতা পাঠের অধীর আগ্রহে বসে ছিলেন হাতেগোনা কজন কবি। যা দেখে প্রধান আলোচক ড. বিশ্বজিৎ ঘোষ বলেন, এতো চমৎকার একটা আয়োজন শুধু আয়োজকদের অব্যবস্থাপনায় নষ্ট হলো। আয়োজকদের কাউকেই কেন মঞ্চে বা আশেপাশে পাওয়া গেল না তা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক এই উপাচার্য।
আর সভাপতির দায়িত্ব প্রাপ্ত শিপ্রা সরকার ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, কাদের উদ্দেশ্যে প্রবন্ধ আলোচনা হলো, কাদের সামনে কবিতা পাঠ হবে। সেই দর্শক-শ্রোতা কোথায়? এভাবে একটা সাহিত্যমেলা হতে পারেনা।