4:24 pm , June 20, 2023
অগ্নি নিরাপত্তা-ঝুঁকিতে নগরীর কলোনী
বিশেষ প্রতিবেদক ॥ এখনো নিরাপত্তা ঝুঁকিতে রয়েছে নগরীর প্রায় সবগুলো বস্তি এলাকা। আর মহা ঝুঁকিতে আছে ৬ নং ওয়ার্ডের মোহম্মদী ইলেকট্রনিক্স প্রোডাক্ট (এমইপি) গগনগলিসহ আশেপাশের বস্তিবাসী। একেতো ফুটপাতহীন সড়কের যত্রতত্র দোকানপাট, ছাগল, হাস-মুরগীর খোঁয়াড়, তারউপর রয়েছে গায়েগায়ে লাগানো বাড়িঘর। নগরীর ২২টি কলোনী বা বস্তির যে কোনোটিতে যেকোনো মুহূর্তে আবারও বড় ধরনের দূর্ঘটনার আশংকা নগর চিন্তাবিদ ও ও ফায়ার সার্ভিস কর্মকর্তাদের। রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও নগর চিন্তাবিদ কাজী মিজানুর রহমান বলেন, নগরীর সুবিন্যাস এখন খুবই জরুরী। বাণিজ্যিক এলাকার আশেপাশে বস্তিবাসীর বসবাস যেমন বিপদজনক তেমন বিপদজনক ফুটপাতহীন সড়ক। এছাড়াও ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় অগ্নিঝুঁকি মুক্ত রাখতে পদক্ষেপ নিতে হবে। গায়ে গায়ে লাগানো বাড়িঘরগুলো নিয়ে ভাবতে হবে সিটি করপোরেশন কর্তৃপক্ষকে। সোমবার দুপুরে বরিশাল সিটি করপোরেশনের ৬ নং ওয়ার্ডের আগুনে পুড়ে যাওয়া ঘরগুলো দেখতে গিয়ে কঠিন পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হলো প্রতিবেদককে। জিলা স্কুলের সামনে থেকে রিকশা নিয়ে হাটখোলা গগনগলিতে যেতে চাইলে পোর্ট রোডে বিশাল ট্রাক ও ইজিবাইকের জটলায় রাস্তা বন্ধ পাওয়া গেল। ঘুরে চকবাজার রোডে প্রবেশ করেই আটকে যেতে হলো দীর্ঘ যানজটে। নগরী জুড়ে যেন বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি। প্রতিটি সড়কে যানজট ক্রমশ বেড়েই চলছে। প্রায় ঘন্টা পার করে হাটখোলার ভিতর দিয়ে এমইপি নামের শিল্প কারখানার সামনে দিয়ে রিকশা চালক পৌঁছে দিলেন গগনগলিতে। এখানে এমইপি কারখানার চার নম্বর গেট বরাবর একটি গলিতেই অনেকগুলো বস্তি। খোঁজ নিয়ে জানা গেল এমইপি বরিশালের বেশ নামি-দামি শিল্প প্রতিষ্ঠান এবং প্রায় আড়াই হাজার শ্রমিক তাদের। এই শ্রমিকদের বেশিরভাগ অংশের বসবাস এই বস্তি এলাকায়। এক কথায় বলা যায় এই এমইপিকে কেন্দ্র করেই এখানে চারপাশে বস্তি সংখ্যা বেড়েছে। এমইপি এর দেয়াল ঘেঁষেও গড়ে উঠেছে অসংখ্য বস্তিঘর। আর এসব বস্তিগুলোর মালিক স্থানীয় প্রভাবশালী নেতা কিংবা কাউন্সিলর। এই বস্তিবাসী অতিরিক্ত উপার্জনের আশায় এখানের সড়কে বিভিন্ন পসরা খুলে বসে রাস্তা আটকে রাখার কারণে অগ্নিকা-ের সময় বাধাগ্রস্ত হয়েছে ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি। মাত্র দুদিন আগেই এখানে অগ্নিকা-ে পুড়ে ছাই হয়েছে পাঁচ-ছয়টি ঘর। পোড়া ঘরগুলো এখনো সাক্ষী ও জনশূন্য হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। এখনো প্রশাসনিক কোনো সহযোগিতা আসেনি বলে জানালেন বাসিন্দারা। বয়োবৃদ্ধ দোকানদার সরুপ আলী জানালেন, ‘হঠাৎ করেই আগুন আগুন বলে চিৎকার শুনে ঘটনাস্থলে ছুটে যান তিনি। যেখানে আগুন লেগেছে সেটা ঘনবসতিপূর্ণ এলাকা। ফলে মুহূর্তের মধ্যেই আগুন এক ঘর থেকে অন্য ঘরে ছড়িয়ে পড়ে। ফায়ার সার্ভিস কর্মীরা ঘটনাস্থলে পৌঁছানোর আগেই আগুনে অনেক ঘর পুড়ে যায়।’
আর সংবাদ পেয়েই গত ১৭ জুন রাত আটটায় ছুটে আসা বরিশাল সদর ফায়ার সার্ভিস এন্ড সিভিল ডিফেন্সের সহকারী পরিচালক বেলাল হোসেন বলেন, ‘আগুনে বেশ কিছু বসতঘর একেবারে পুড়ে গেছে। এছাড়া আগুন নিয়ন্ত্রণের সময় দমকলের পানিতে আর বেশ কয়েকটি বসতঘর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ওখানের সড়কে প্রবেশ করতে আমাদের খুব বেগ পেতে হয়েছে। বঙ্গবন্ধু কলোনীর চেয়েও খারাপ অবস্থা গগন গলিতে। সড়কের অর্ধেক দখল করে ছিলো ভ্যান, রিকশা, অটোসহ বিভিন্ন দোকানপাট। মুরগী ও ছাগলের ঘরও ছিলো। কোনো ফুটপাত না থাকায় সড়কটিকে বারান্দা বানিয়েছেন অনেকে। এটা স্থানীয় কাউন্সিলরদের দেখা উচিত বলে জানান বেলাল হোসেন। এসময় তিনি আরো বলেন, সত্যি বলতে নগরীর বঙ্গবন্ধু কলোনী, নতুন বাজার, গগনগলিসহ সব বস্তিগুলোই প্রচন্ড নিরাপত্তা ঝুঁকিতে রয়েছে। এরা সবাই প্রচ- ভাবে অসচেতন। তাই আমরা ঠিক করেছি খুব শীঘ্রই স্থানীয় কাউন্সিলর ও গণ্যমান্যদের সাথে নিয়ে দলমত নির্বিশেষে একটি মতবিনিময় ও অগ্নি নির্বাপক প্রশিক্ষণ কর্মশালা করবো এই বস্তিবাসীদের মাঝে।
গগনগলিতে উল্লেখযোগ্য একটি বাণিজ্যিক শিল্প কারখানা মোহাম্মদী ইলেকট্রিক প্রোডাক্ট (এমইপি)। এটির পূর্ব ও পশ্চিমপাশে দেয়াল ঘেঁষে ঘরবাড়ি এবং উত্তর ও দক্ষিণ পাশে দুটি সড়কের একটি গগনগলি। দুটি সড়কই সরু এবং পাশাপাশি দুটি গাড়ি চলাচলের অনুপযোগী। পূর্বপাশের প্রতিষ্ঠানের গা ঘেষে তৈরি হওয়া টিনের ছাপড়াগুলো বৈধ না অবৈধ তা জানেন না এমইপি কর্মকর্তারাও। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন কর্মকর্তা জানালেন, এ জন্য আমাদের দায়ী করাটা ভুল হবে, কারণ আমাদের অধিকাংশ কর্মচারী আশেপাশের বস্তির বাসিন্দা হলেও আমরা কখনোই তাদেরকে এমইপির আশেপাশেই থাকতে হবে এমন পরামর্শ দেই নি। বরং আমাদের তিনটি গেটই গগনগলিতে। পণ্য পরিবহনে আমারাও সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছি এই সড়ক আটকে থাকার কারণে। এ নিয়ে বেশ কয়েকবার প্রশাসনের কাছে অভিযোগ করেও কোনো লাভ হয়নি। বিষয়টি নিয়ে কথা বলতে স্থানীয় কাউন্সিলর জামাল হোসেন খানকে ফোনে কয়েকবার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়ে তার ঘরে হাজির হলে দেখা যায় তার নিজের ঘরটিও একই রকম সরু গলিতে ও প্রচ- ঝুকিপূর্ণ এলাকায়। পাশাপাশি দুজন মানুষও পাশ কাটাতে গেলে একজনকে কাত হয়ে চলতে হবে। তবে তিনি দালানে থাকেন এটাই পার্থক্য এখানে। কাউন্সিলর কথা না বললেও বরিশাল সিটি করপোরেশনের নবনির্বাচিত মেয়র খোকন সেরনিয়াবাত ফোনে জানিয়েছেন, তিনি মহানগর যুবলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক খান মামুনের মাধ্যমে তাৎক্ষণিক আগুনে ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য সহযোগিতা পাঠিয়েছেন। তিনি বলেন, আমি দায়িত্ব গ্রহণের পর বস্তিবাসীদের নিয়ে বৈঠক করবো এবং তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে করনীয় সবকিছু করবো ইনশাআল্লাহ।