4:14 pm , June 19, 2023
গত কয়েক বছরে প্রায় ৪০ জন কর্মকর্তা-কর্মচারীকে চাকুরি থেকে বরখাস্ত করা সহ ওএসডি’র নামে আরো বিপুল সংখ্যক কর্মীর বেতন-ভাতা পর্যন্ত বন্ধ রাখা হয়েছে। আবার অনেককে মাসের পর মাস অফিসে ঢুকতে দেয়া হচ্ছেনা। এসব কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে অনেক দক্ষ ও আন্তরিক কর্মী থাকলেও তাদের সেবা থেকে নগরবাসী বঞ্চিত হয়েছেন।
বিশেষ প্রতিবেদক ॥ বরিশালের নব নির্বাচিত নগরপিতা আবুল খায়ের আবদুল্লাহকে আগামী দিনে অনেক বিড়ম্বনা ও প্রতিকুল পরিস্থিতি অতিক্রম করেই নাগরীক সেবা নিশ্চিত সহ এ নগরীকে সুশৃঙ্খল ব্যবস্থায় ফিরিয়ে আনতে হবে। নগর ভবনকে দুর্নীতিমুক্ত ও সেবামূলক প্রতিষ্ঠানে পরিনত করতে নির্বাচনের আগে আবুল খায়ের আবদুল্লাহ যেসব প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন সেসব বিষয় তাকে বিবেচনায় রেখেই আগামী দিনে দায়িত্ব পালনে তাগিদ দিয়েছেন রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক মহল। আর নাগরিক সেবা নিশ্চিত করণে নগরপিতার সততা ও আন্তরিকতার যেমন বিকল্প নেই, তেমনি তাকে রাজনৈতিক বিবেচনা বাদ দিয়ে সব এলাকা ও নাগরিকের মেয়র হিসেব কাজ করারও পরামর্শ দিয়েছেন মহলটি।
বরিশাল মহানগরীর নাগরিক সেবা নিশ্চিত করণে নতুন মেয়রকে সব কিছুর অগে নগর ভবনে শৃঙ্খলা, সততা ও আন্তরিকতা প্রতিষ্ঠার তাগিদ দিয়েছেন সচেতন মহল। গত কয়েক বছরে কতিপয় কর্মকর্তা-কর্মচারী নগর ভবনকে নাগরিক সেবার পরিবর্তে নিপীড়নের সূতিকাগারে পরিনত করেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। গত কয়েক বছরে প্রায় ৪০ জন কর্মকর্তা-কর্মচারীকে চাকুরি থেকে বরখাস্ত করা সহ ওএসডি’র নামে আরো বিপুল সংখ্যক কর্মীর বেতন-ভাতা পর্যন্ত বন্ধ রাখা হয়েছে। আবার অনেককে মাসের পর মাস অফিসে ঢুকতে দেয়া হচ্ছেনা। এসব কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে অনেক দক্ষ ও আন্তরিক কর্মী থাকলেও তাদের সেবা থেকে নগরবাসী বঞ্চিত হয়েছেন।
নগর ভবনের চরম বিশৃঙ্খল পরিস্থিতিতে সুষ্ঠু নাগরিক সেবা যেমনি বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে, তেমনি প্রশাসনিক ও আর্থিক শৃঙ্খলারও চরম অবনতি ঘটেছে বলে অভিযোগ রয়েছে। অনেক জনগুরুত্বপূর্ণ ও স্পর্শকাতর পরিসেবার দায়িত্বে কর্মকর্তার পরিবর্তে কর্মচারীদের দিয়ে কাজ করাতে গিয়ে পরিস্থিতির অবনতি ঘটেছে। এমনকি নগর ভবনের কতিপয় কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আচরনগত সমস্যা এতটাই প্রকট আকার ধারন করেছে যে, অনেকেই অতি জরুরী প্রয়োজন ছাড়া ওই ভবনের ছায়া মাড়ান না।
মহানগরীতে বাড়ির প্লান অনুমোদন অত্যন্ত দুর্বিসহ যন্ত্রনা আর আতঙ্কের নামে পরিনত হয়েছে গত কয়েক বছরে। বিধি বহির্ভূতভাবে অতিরিক্ত ফি চাপিয়ে দেয়ার পাশাপাশি লাগাতার হয়রানির কারণে অনেকেই বর্তমান নগর পরিষদের মেয়াদে বাড়ি করার আশা ছেড়েই দিয়েছেন। বরিশাল মহানগরীতে সুষ্ঠু পরিবহন ব্যবস্থা বলতে আর কিছু অবশিষ্ট নেই। গোটা নগরী জুড়ে অবৈধ ইজিবাইক, ব্যাটারী চালিত রিক্সা, বিকট গর্জনের থ্রী-হুইলার দাপিয়ে বেড়ালেও বেশির ভাগেরই লাইসেন্স নেই। ইতোপূর্বে এ নগরীতে সিটি করপোরেশনের লাইসেন্সকৃত ১২ হাজার প্যাডেল চালিত রিক্সা ও আড়াই হাজার ইজিবাইক চলাচলের অনুমতি থাকলেও নগর ভবনের উদাসীনতায় গত কয়েক বছরে এসব যাবাহনের লাইসেন্স প্রদানের বিধান উধাও হয়ে গেছে। ফলে নগরী জুড়ে এখন হাজার হাজার অবৈধ যানবাহন নগরবাসীর দর্ঘটনার আতংক বৃদ্ধি করছে।
৫৮ বর্গ কিলোমিটারের এ নগরীতে প্রায় দেড়শ কিলোমিটার ড্রেনের বেশীরভাগই নিয়মিত পরিস্কার হচ্ছে না। ফলে ঘন্টায় ৫ মিলিমিটার বৃষ্টি হলে এ নগরীর বেশীরভাগ এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। নগরীর পাকা ড্রেনগুলোর চেয়েও আরো করুন অবস্থা খালগুলোর।
নগরীর ৭টি খাল খননে পানি সম্পদ মন্ত্রনালয় ১০ কোটি টাকা বরাদ্দের পরে পানি উন্নয়ন বোর্ড দরপত্র আহবান করলেও নগর ভবনের বাঁধার মুখে কাজ শুরু করতে পারেনি। ইতোমধ্যে সে দরপত্র বাতিল করে নতুন প্রস্তাব আহবান করা হয়েছে।
নগরীর প্রধান রাস্তাগুলো ফিটফাট থাকলেও একটু পাশের রাস্তাঘাটের সমস্যা দেখার কেউ নেই। এ নগরীর বর্জ্য ব্যবস্থাপনা সহ বেশীরভাগ জনগুরুত্বপূর্ণ পরিসেবাই বিপর্যস্তকর অবস্থায়। এ নগরীর বর্জ্য ব্যবস্থাপনা আধুনিক ও মানসম্মত দূরের কথা, লাগসই বা পরিবেশ অনুকুল ব্যবস্থায় নেয়ার লক্ষ্যে তেমন কোন কর্ম পরিকল্পনা নেই। দীর্ঘদিনের পুরনো ‘ময়লা খোলা’ এলাকায় প্রতিদিন ৩ শতাধিক টন বর্জ্য ফেলা হচ্ছে যা মোটেই স্বাস্থ্য ও পরিবেশ বান্ধব নয় বলে পরিবেশ অধিদপ্তরের দাবী।
বরিশাল সিটি করপোরেশনের কাছে বিদ্যুৎ বিভাগের বকেয়া প্রায় ৬৫ কোটি টাকা। গত এক বছরে দু দফায় বিদ্যুৎ বিতরন কোম্পানী-‘ওজোপাডিকো’ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করলেও নগর ভবন থেকে বকেয়া পরিশোধে কোন উদ্যোগ নেই। বিষয়টি বিদ্যুৎ ও জ¦ালানী মন্ত্রনালয় সহ সরকারের উচ্চ পর্যায়ের নজরেও রয়েছে। কিন্তু নগর ভবন থেকে বকেয়া পরিশোধ দূরের কথা চলতি বিদ্যুৎ বিল পরিশোধেও ন্যূনতম কোন উদ্যোগ নেই।
বিশুদ্ধ পানি সমস্যা সমাধানে ২০০৪-০৫ অর্থ বছরে দুটি ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্লান্ট ও প্রায় ৫০ কিলোমিটার পাইপ লাইন স্থাপনের প্রকল্প হাতে নেয়া হয়। সরকারের প্রয় ৩২ কোটি টাকার নিজস্ব তহবিলের ওই প্রকল্পটি বাস্তবায়ন সম্পন্ন হয় ২০১৮-১৯ সালে। কিন্তু সরকারী বিপুল অর্থ ব্যয়ের সেই প্রকল্পের সুফল এ নগরবাসী আর পায়নি। ট্রিটমেন্ট প্লান্ট দুটি মুখ থুবড়ে পড়ে আছে।
এসব বিরুপ পরিস্থিতির মধ্যেই আগামী ১৪ নভেম্বরের মধ্যে যেকোন দিন নব নির্বাচিত নগর পরিষদ নিয়ে নতুন নগরপিতা আবুল খায়ের আবদুল্লাহর দায়িত্ব গ্রহনের কথা রয়েছে। কারণ, ২০১৮-এর ৩০ জুলাই বরিশাল সিটির ৪র্থ ভোট গ্রহন পর্ব শেষে ওই বছরের ১৪ নভেম্বর নগর পরিষদের প্রথম সাধারন সভা অনুষ্ঠিত হয়। নিয়ম অনুযায়ী প্রথম সাধারন সভা থেকে পরবর্তী ৫ বছর বর্তমান নগর পরিষদের মেয়াদ থাকছে।
তবে বর্তমান মেয়র সাদিক আবদুল্লাহ বিগত দু মাসেরও বেশী সময় ধরে বরিশালে অনুপস্থিত। তিনি নির্বাচনের দিন দলীয় প্রার্থী আপন চাচাকে ভোট দিতেও বরিশালে আসেননি। মেয়র হিসেব কবে আবার এ নগরীতে ফিরবেন তা অনেকটাই অজ্ঞাত।