3:51 pm , June 18, 2023
কলেজ ছাত্র হত্যায় জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবী
নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ বিএম কলেজছাত্র মাইনুল ইসলাম হত্যার বিচারের দাবীতে নগরীতে বিক্ষোভ সমাবেশ হয়েছে। রোববার কলেজের সমাজকর্ম বিভাগের সাধারন শিক্ষার্থীদের উদ্যোগে ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে বিক্ষোভ করা হয়। শনিবার দুপুরে কলেজের ফ্লাইট সার্জেন্ট ফজলুল হক (মুসলিম) ছাত্রবাসের পরিত্যক্ত একটি কক্ষ থেকে সমাজ কল্যান বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী মাইনুলের অর্ধগলিত ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। মুসলিম হলের ১৩৪ নম্বর কক্ষের আবাসিক ছাত্র মাইনুল বরিশালের হিজলা উপজেলার বাউশিয়া এলাকার আব্দুর রহিমের ছেলে। সহপাঠিদের বরাতে বিএম কলেজের অধ্যক্ষ গোলাম কিবরিয়া জানিয়েছেন, ১৫ জুন সন্ধ্যার পর হলের কক্ষ থেকে বের হয়েছিলো মাইনুল। এরপর সে আর কক্ষে ফেরেনি। শনিবার হলের ১৪১ নম্বর পরিত্যক্ত কক্ষ থেকে দুর্গন্ধ বের হওয়ার পর অর্ধগলিত মাইনুলের লাশ উদ্ধার ও সনাক্ত করা হয়।
বিক্ষোভের আয়োজক সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্ট নেতা বিজন সিকদার বলেন, বিষয়টি আত্মহত্যা বলে সকলে বলছে। কিন্তু এটা আত্মহত্যা হতে পারে না।
বিজন সিকদারের দাবি করেন, মাইনুলকে হত্যা করা হয়েছে। স্বপক্ষে যুক্তি তুলে ধরে তিনি বলেন, মাইনুলের মুখমন্ডলে আঘাতের চিহৃ রয়েছে। তার একটি চোখ উপড়ানো ছিলো। গলায় ফাঁস দেয়া অবস্থায় ঝুলন্ত থাকলেও তার হাটু মেঝেতে ছিলো। যে আড়ার সাথে ঝুলানো ছিলো,সেটিও ভাঙ্গা। তাই ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত করে দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শান্তির দাবিতে বিক্ষোভ করা হয়েছে।
তিনি জানান, বেলা ১১ টায় কলেজের জিরো পয়েন্টে সাধারণ শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। বিক্ষোভ সমাবেশে বক্তব্য রাখেন ব্রজমোহন কলেজ শিক্ষার্থী তরিকুল ইসলাম সুজন, বিজন সিকদার, সাদমান খান, অমি মিয়া, কানিজ ফাতিমা, সাইফুল ইসলাম প্রমুখ।
সমাবেশ শেষে একটি মিছিল কলেজ প্রদক্ষিণ করে প্রশাসনিক ভবনের সামনে এসে শেষ হয়।
এদিকে একই দিন বরিশাল সদর উপজেলার চরকাউয়া ইউনিয়নের চরআইচা গ্রামের একটি ঘের থেকে উদ্ধার করা হয় রিকশা চালক হাসানের লাশ। তাকে হত্যা করে রিকশা ছিনতাই করা দুই জনকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব। রোববার বেলা ১২টায় সংবাদ সম্মেলন করে এ তথ্য জানিয়েছেন র্যাব-৮ এর ১ নম্বর সিপিএসসি কমান্ডার মেজর মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম।
গ্রেপ্তারকৃত দুই খুনী হলো- পটুয়াখালীর চরবিশ্বাস এলাকার সেলিম হাওলাদারের ছেলে রুবেল হাওলাদার (৩৫) ও বরিশাল নগরীর চাঁদমারী এলাকার মৃত কালু তালুকদারের ছেলে মামুন তালুকদার (৩৬)।
ভোলার তজুমদ্দিন উপজেলার আড়ালিয়া গ্রামের মৃত আব্দুল হাকিম ওরফে হাদির ছেলে হাসান গত ১৫ জুন যাত্রী নিয়ে বরিশালের ভোলা সড়কের উদ্দেশ্যে বের হয়ে নিখোঁজ ছিলো। শনিবার দুপুরে স্থানীয়রা চরআইচা গ্রামের সোহরাব ডাক্তারের ঘেরে লাশ ভেসে থাকতে দেখে স্থানীয়রা। পুলিশ লাশ উদ্ধার করার পর হাসানকে শনাক্ত করা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে ১ নম্বর সিপিএসসি কমান্ডার মেজর মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম বলেন, গত ১৫ জুন রাত ১১টায় হাসান মোবাইলে বোনকে জানিয়েছে দুই যাত্রী নিয়ে নগরীর বাংলাবাজার থেকে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশে ভোলা রোডে যাচ্ছে। রাত আড়াইটার দিকে তার মোবাইলে কল দিয়ে বন্ধ পেয়েছে। হাসানকে খুঁজে না পেয়ে ১৭ জুন কাউনিয়া থানায় সাধারন ডায়েরী করেন। ওই দিন বিকালে চরআইচা ভোলা রোডের পাশে সোহরাব ডাক্তারের পুকুরে একটি লাশ ভেসে থাকতে দেখে স্থানীয়রা। সংবাদ পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে লাশ উদ্ধার এবং পরে হাসানের স্বজনরা লাশ শনাক্ত করে। এ ঘটনায় বন্দর থানায় হাসানের বোন বাদী হয়ে মহানগর পুলিশের বন্দর থানায় হত্যা মামলা করেছে।
জাহাঙ্গীর আলম বলেন, মরদেহ উদ্ধারের ৮ ও ১০ ঘন্টার ব্যবধানে মামুন ও রুবেলকে গ্রেফতার করা হয়েছে। সেইসাথে নিহতের ছিনতাই হওয়া ব্যাটারিচালিক রিকশা, হত্যার কাজে রশি ও মোবাইল ফোন উদ্ধার করা হয়।
আসামীদের বরাতে র্যাব কর্মকর্তা বলেন, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে উভয়ে ঘটনার সাথে জড়িত থাকার বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। তারা জানিয়েছে হাসান পুরনো রিকশাটি কেনার পর থেকেই তাকে ফাঁদে ফেলানোর চেষ্টা করে। ১৫ জুন হাসানকে রিকশাসহ ভোলারোডে নিয়ে গলায় ফাঁস লাগিয়ে হত্যা করে ডোবায় ফেলে দেয়, আর রিকশাটি নিয়ে পালিয়ে যায়।
তিনি জানান, প্রাথমিক তদন্তে ঘটনার সাথে এ দুজন জড়িত রয়েছে বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে। বাকী বিষয়গুলো পুলিশ তদন্ত করে দেখবে। আর গ্রেফতারকৃতদের আলামতসহ থানা পুলিশের নিকট হস্তান্তর করা হয়েছে।