3:50 pm , June 18, 2023
নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ ‘ন্যাশনাল প্রোডাকটিভিটি অ্যান্ড কোয়ালিটি এক্সিলেন্স অ্যাওয়ার্ড ২০২১’ পদক পেয়েছে ফরচুন সুজ লিমিটেড। বৃহৎ শিল্প লেদার খাতে ফরচুন প্রথম স্থান অধিকার করে। এর স্বীকৃতি হিসেবে সনদ ও ট্রফি দেওয়া হয় শিল্পপ্রতিষ্ঠানকে। শনিবার হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে আয়োজিত অনুষ্ঠানে ফরচুন গ্রুপের চেয়ারম্যান মিজানুর রহমানের হাতে পুরস্কার তুলে দেন শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন। শিল্পসচিব জাকিয়া সুলতানার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন এফবিসিসিআইয়ের জ্যেষ্ঠ সহ-সভাপতি মোস্তফা আজাদ চৌধুরী বাবু। জাতীয় অর্থনীতিতে শিল্পখাতের অবদানের স্বীকৃতি প্রদান, প্রণোদনা সৃষ্টি ও সৃজনশীলতাকে উৎসাহিত করার লক্ষ্যে বেসরকারি খাতে শিল্প স্থাপন, কর্মসংস্থান ও দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখায় সরকার ছয়টি ক্যাটাগরিতে ৩৯টি প্রতিষ্ঠানকে ‘ন্যাশনাল প্রডাকটিভিটি অ্যান্ড কোয়ালিটি এক্সিলেন্স অ্যাওয়ার্ড ২০২১’ এবং দুটি ট্রেড বডি ও অ্যাসোসিয়েশনকে ‘ইনস্টিটিউশনাল অ্যাপ্রিসিয়েশন অ্যাওয়ার্ড ২০২১’ দেওয়া হয়। ফরচুনের যাত্রা শুরু: প্রায় একযুগ আগে যাত্রা শুরু করে একটি জুতা তৈরির কারখানা। জনবল ছিল মাত্র ৪৭২ জন। সেই কারখানার জুতা এখন রপ্তানি হচ্ছে ইউরোপ, আমেরিকাসহ বিভিন্ন দেশে। তাদের বার্ষিক লেনদেনের পরিমাণ ৮০০ কোটি টাকার বেশি। এশিয়ার সেরা ২০০ প্রতিষ্ঠানের তালিকায় জায়গা করে নিয়েছে ‘ফরচুন সুজ’ নামের এই পাদুকা কোম্পানি। প্রতিষ্ঠানটির কৃতিত্বের গল্প উঠে এসেছে যুক্তরাষ্ট্রের ব্যবসা-বাণিজ্যবিষয়ক সাময়িকী ফোর্বসে। বরিশালে প্রতিষ্ঠিত এই কোম্পানি ঐকান্তিক প্রচেষ্টা, দৃঢ় মনোবল আর সততায় ভর করে বিশ্বে মাথা তুলে দাঁড়িয়েছে। সম্পূর্ণ রপ্তানিমুখী প্রতিষ্ঠানটি বর্তমানে স্পেন, জার্মানি, ভারত, ইতালি, পোল্যান্ড, যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশগুলোয় তাদের উৎপাদিত পণ্য রপ্তানি করছে। পাশাপাশি বরিশাল অঞ্চলের অবহেলিত নারী ও বেকার যুবকদের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করেছে। এরই মধ্যে কোম্পানির চেয়ারম্যান ২০১৮ সালে দেশে শ্রেষ্ঠ তরুণ শিল্পোদ্যোক্তা হিসেবে পুরস্কার পেয়েছেন। ২০২০ সালে যুক্তরাষ্ট্রের বিজনেস ম্যাগাজিন ফোর্বসের ‘এশিয়াস ২০০ বেস্ট আন্ডার আ বিলিয়ন’ প্রতিষ্ঠানের তালিকায় দেশের শীর্ষ তিন প্রতিষ্ঠানের মধ্যে বরিশালের ফরচুন সুজের নাম উঠে আসে। এছাড়া ২০২১ সালে বঙ্গবন্ধু শিল্প পুরস্কারে প্রথম স্থান অর্জন করেছে ‘ফরচুন গ্রুপ অব কোম্পানি লিমিটেড’। জানা গেছে, ২০১০ সালের ১৪ মার্চ বরিশাল শিল্পনগরীতে প্রতিষ্ঠিত হয় ‘ফরচুন সুজ লিমিটেড’। মাত্র ৪৭২ জন জনবল নিয়ে জুতা তৈরির কারখানাটি চালু হয় ২০১১ সালের ৭ সেপ্টেম্বর। ২০১২ সালের ৪ ডিসেম্বর আনুষ্ঠানিকভাবে যাত্রা শুরু করে। অনুন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা আর দক্ষ শ্রমিকের অভাব থাকলেও ধীরে ধীরে এগিয়ে চলা প্রতিষ্ঠানটির উৎপাদিত পণ্য পশ্চিমা দেশগুলোয় বেশ জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। এর ধারাবাহিকতায় সম্পূর্ণ রপ্তানিনির্ভর এ প্রতিষ্ঠান ২০১৫ সালের ১৪ জানুয়ারি পাবলিক লিমিটেড কোম্পানিতে রূপান্তরিত হয়। বর্তমানে প্রতিষ্ঠানটিতে ১৪ হাজার জনবল কাজ করছে। যারা পেলেন পুরস্কার: বৃহৎ শিল্প ক্যাটাগরিতে ইস্পাত ও প্রকৌশল খাতে প্রথম পুরস্কার পেয়েছে এইচএমসিএল নিলয় বাংলাদেশ। দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্থানে রয়েছে যথাক্রমে বিআরবি কেবল ইন্ডাস্ট্রিজ ও বিএসআরএম স্টিলস। ওষুধ শিল্পে প্রথম পুরস্কার পেয়েছে স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস। এছাড়া বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস দ্বিতীয় ও সাইনোভিয়া ফার্মা তৃতীয় পুরস্কার পেয়েছে। বৃহৎ শিল্পের আরেকটি খাত সিরামিকে শেলটেক সিরামিকস প্রথম, মীর সিরামিকস দ্বিতীয় ও ডিবিএল সিরামিকস তৃতীয় পুরস্কার পেয়েছে। টেক্সটাইল ও স্পিনিং শিল্পে প্রথম পুরস্কার পেয়েছে কোটস বাংলাদেশ। মতিন স্পিনিং মিলস দ্বিতীয় ও সিম ফেব্রিক্স তৃতীয় পুরস্কার পেয়েছে। আর তৈরি পোশাক শিল্পে প্যাসিফিক জিন্স প্রথম এবং স্নোটেক্স আউটারওয়্যার দ্বিতীয় স্থান অর্জন করেছে। খাদ্যে স্কয়ার ফুড অ্যান্ড বেভারেজ প্রথম ও অলিম্পিক ইন্ডাস্ট্রিজ দ্বিতীয় পুরস্কার পেয়েছে। এগ্রোপ্রসেসিং পণ্যে আব্দুল মোনেম সুগার রিফাইনারি পেয়েছে প্রথম পুরস্কার। দ্বিতীয় অবস্থানে আছে প্রাণ ডেইরি। সেবা খাতে পুরস্কার পেয়েছে আইটিএস ল্যাবটেস্ট বাংলাদেশ ও মীর আক্তার হোসেন লিমিটেড। এছাড়া প্লাস্টিকে ন্যাশনাল পলিমার ইন্ডাস্ট্রিজ ও অলপ্লাস্ট বাংলাদেশ পুরস্কার পেয়েছে। মাঝারি শিল্প ক্যাটাগরির খাদ্য খাতে ইস্পহানি ফুডস পেয়েছে প্রথম পুরস্কার। দ্বিতীয় অবস্থানে আছে আরলা ফুডস বাংলাদেশ। একই ক্যাটাগরির টেক্সটাইল ও স্পিনিং খাতে মাসকো পিকাসো, সেবা খাতে ফেয়ার ডিস্ট্রিবিউশন, প্লাস্টিকে বেঙ্গল উইন্ডসোর থার্মোপ্লাস্টিকস, ইস্পাত ও প্রকৌশল শিল্পে গঙ্গা ফাউন্ড্রি পেয়েছে জাতীয় উৎপাদনশীলতা পুরস্কার। ক্ষুদ্র শিল্প ক্যাটাগরির সেবা খাতে সেবা টেকনোমিডিয়া, টেক্সটাইল ও স্পিনিংয়ে মাসকো ওভারসিজ,এগ্রোপ্রসেসিং পণ্যে প্যারামাউন্ট এগ্রো, চামড়া খাতে কুসুম কলি সু ফ্যাক্টরি, মাইক্রো শিল্প ক্যাটাগরিতে এ.কে. হাউজিং, কুটির শিল্পে আয়োজন, হাসান হস্তশিল্প, রাষ্ট্রায়ত্ত শিল্পে খুলনা শিপইয়ার্ড, প্রগতি ইন্ডাস্ট্রিজ ও যমুনা ফার্টিলাইজারকে পুরস্কার দেওয়া হয়েছে। এছাড়া ইনস্টিটিউশনাল অ্যাপ্রিসিয়েশন অ্যাওয়ার্ড পেয়েছে জাতীয় ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প সমিতি এবং বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন।