লোডশেডিং-এ নাকাল নগরবাসী লোডশেডিং-এ নাকাল নগরবাসী - ajkerparibartan.com
লোডশেডিং-এ নাকাল নগরবাসী

4:13 pm , June 17, 2023

বিশেষ প্রতিবেদক ॥ ভয়াবহ বিদ্যুৎ ঘাটতির মধ্যে শনিবার রাতের প্রথম প্রহরে নগরীর রূপাতলী ৩৩/১১ কেভি সাব-স্টেশনের বারবার ট্রিপ করায় নগরবাসী চরম দূর্ভোগের শিকার হয়েছে। ফলে মহানগরীর বিশাল এলাকা ছাড়াও পুরো ঝালকাঠী জেলা শনিবার রাত ১টা ২২ মিনিট থেকে অন্ধকারে নিমজ্জিত হয়। এমনকি বরিশাল শের-ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও ঝালকাঠী জেনারেল হাসপাতাল ছাড়াও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স গুলোতেও অন্ধকার নেমে আসে। তবে বিতরন কোম্পানী ‘ওজোপাডিকো’র কর্মীদের চেষ্টায় প্রায় ২০ মিনিটের মধ্যে সাব-স্টেশনটির বেশীরভাগ ১১ কেভি লাইন পূণর্বহাল হলেও বরিশাল সহ দক্ষিণাঞ্চল জুড়ে সকাল প্রায় ৪টা পর্যন্তই লোডশেডিং অব্যাহত ছিল। গত ১২ জুন বরিশাল সিটি নির্বাচনের পর থেকেই সান্ধ্য পীক আওয়ারের লোডশেডিং মধ্যরাত পেরিয়ে ভোররাত পর্যন্ত প্রলম্বিত হচ্ছে। সোমবার বরিশাল সিটি করপোরেশনের ভোট পর্ব শেষ হবার পরে রাজনৈতিক নেতাদের মত এ নগরীবাসীকেও ভুলে গেছে বিদ্যুৎ বিভাগ। লোডশেডিং পুরো মাত্রায় জাকিয়ে বসেছে নগরী জুড়ে। নগরবাসীর অভিযোগ, ‘ভোট নেয়া শেষ হবার পরেই বিদ্যুৎ তার পুরনো আদলে ফিরেছে’। ফলে এখন রাতের প্রথম প্রহর থেকে সকাল পর্যন্ত খোদ মহানগরীতেই বিদ্যুৎ সংকটে নাকাল নগরবাসী। এরসাথে বিতরন ও সরবরাহ ব্যবস্থার পুরনো গলদ এ নগরীর মত পুরো বরিশাল বিভাগের মানুষের দূর্ভোগকে চরম সীমায় নিয়ে যাচ্ছে। গত বৃহস্পতিবার ভোরের বজ্রবৃষ্টিতে গোটা নগরীতে বিদ্যুৎ ব্যবস্থা আরো একবার বিপর্যস্ত হলে অল্প কিছুক্ষন আগে লোডশেডিং মূক্ত এলাকাও আবার অন্ধকার নেমে আসে। মহানগরী সহ দক্ষিনাঞ্চলে সান্ধ্য পীক আওয়ারে প্রায় সোয়া ৪শ মেগাওয়াট এবং ডে-পীক আওয়ারে পৌনে ৪শ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ চাহিদার বিপরীতে গত কয়েক দিনে ঘাটতির পরিমান প্রায় ৩৫-৪০ভাগেও উন্নীত হচ্ছে। এ ঘাটতি সামাল দিতে প্রতিনিয়ত বরিশালের গ্রীড সাব-স্টেশন ও ৩৩/১১ কেভি সাব-স্টেশনের কর্মীরা হিমশিম খাচ্ছেন। কিন্তু এ অবস্থাতেই ‘সেন্ট্রাল লোড ডেসপাস সেন্টার-সিএলডিসি’ থেকে বরিশালের বিভিন্ন ৩৩/১১ কেভি সাব-স্টেশনের পুরো সরবরাহ ব্যবস্থাই দুর নিয়ন্ত্রিত ব্যবস্থায় বন্ধ করে দেয়া হচ্ছে। আবার এসব বিড়ম্বনার মধ্যেও ঘাটতি হিসেব করে বিদ্যুতের সম বন্টন নিয়ে নানা অভিযোগ উঠছে। সাথে দূর্বল বিতরন ও সরবরাহ ব্যবস্থায় মহানগরী সহ দক্ষিণাঞ্চলের বেশ কিছু এলাকার মানুষ বিদ্যুৎ নিয়ে প্রতিনিয়ত দুঃসহ বিড়ম্বনার শিকার।
তবে এসব বিড়ম্বনার মধ্যেও মহানগরীর কালিজিয়া ফিডারে হিসেব মাফিক লোডশেডিং না করে অন্য ফিডারে বাড়তি বিড়ম্বনা চাপিয়ে দেয়ারও অভিযোগ উঠেছে। ঐ ফিডার এলাকায় বিতরন কোম্পানী-ওজোপাডিকো’র দুজন প্রকৌশলী কর্মকর্তা বাস করেন বিধায় খুব বড় সংকট তৈরী না হলে সেখানের রেশনিং অন্য এলাকায় চাপিয়ে দেয়ার অভিযোগ রয়েছে। এমনকি বৃহস্পতিবার রাতের প্রথম প্রহরে নগরীর হাতেম আলী কলেজ ফিডারে লোডশেডিং বিশাল এলাকার মানুষের ঘুম কেড়ে নিলেও রাত পোহাবার আগেই সকাল ৫টার দিকে পুনরায় লোডশেডিং করা হয় একই ফিডারে। প্রায় পৌনে ১ ঘন্টা পরে ঐ ফিডারে বিদ্যুৎ ফিরলেও আধঘন্টার মধ্যেই মেঘের গর্জনের সাথে বৃষ্টিতে আবার একই পরিস্থিতির শিকার হন ঐ এলাকার মানুষ। তবে বৃহস্পতিবার সকালের ঐ বজ্র বৃষ্টি পুরো নগরীর বিদ্যুৎ সরবরাহ ও বিতরন ব্যবস্থাকেও আরো একবার বিপর্যস্ত করে দেয়। এমনকি গত ১২ জুন সিটি নির্বাচনের দিন দুপুর আড়াইটা থেকে নগরীতে বৃষ্টি সহ দমকায় ৪৮ কিলোমিটার বেগের বজ্রঝড়ে পুরোনা নগরীর বিদ্যুৎ সরবরাহ ও বিতরন ব্যবস্থা লন্ডভন্ড হয়ে গেলে দুপুর ৩টার পরে নগরীর বেশীরভাগ কেন্দ্রে ভোটগ্রহন নির্ধারিত সময়ের এক ঘন্টা আগেই শেষ হয়ে যায়।
অপরদিকে গত ৫ জুন থেকে কয়লার অভাবে পায়রা তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রটির ২য় ইউনিটটিও বন্ধ করে দেয়ায় জাতীয় গ্রীডে বিদ্যুৎ সংকট বৃদ্ধির সাথে দক্ষিণাঞ্চল জুড়ে ভোল্টেজ সমস্যায় শিল্প, বানিজ্য ও আবাসিক গ্রাহকদের দূর্ভোগ আরো একদফা বেড়েছে। আরো দু মাস আগেই ভোলাতে গ্যাস ভিত্তিক ২২৫ মেগাওয়াটের একটি বেসরকারী কম্বাইন্ড সাইকেল পাওয়ার স্টেশনও বন্ধ করে দিতে হয়েছে জরুরী রক্ষনাবেক্ষনের নামে। এর আগে গত ২৪ এপ্রিল পায়রা তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রটির ১ম ইউনিটটিও বন্ধ করে দিতে হয়েছে কয়লার অভাবেই। ফলে এ অঞ্চলে বড় মাপের ৩টি উৎপাদন ইউনিট বন্ধ থাকায় বিদ্যুৎ সংকটের চেয়ে ভোল্টেজ সংকটে শিল্প, বানিজ্য ও অবাসিক গ্রহকদের দূর্ভোগ চরম সীমায়।
এমনকি ভোল্টেজ সংকটে দক্ষিণাঞ্চল সহ পশ্চিম জোনের ২১ জেলার প্রায় ৩০ লাখ গ্রাহকের হাজার হাজার কোটি টাকার বৈদ্যুতিক সরঞ্জামের সুষ্ঠু ও নিরাপদ পরিচালনও অনিশ্চিত হয়ে পড়ছে। ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে পানির পাম্প ছাড়াও টিভি, ফ্রিজ, এয়ারকুলার সহ সব ধরনের বৈদ্যুতিক সরঞ্জামও। ফলে জাতীয় গ্রীড থেকে বিদ্যুৎ সরবারহ নিয়ন্ত্রনের সাথে ভোল্টেজ সংকটেও নাকাল বরিশাল মহানগরী সহ পুরো দক্ষিণাঞ্চলবাসী।

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন    
সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী মিরাজ মাহমুদ
 
বার্তা ও বানিজ্যিক কার্যালয়ঃ কুশলা হাউজ, ১৩৮ বীরশ্রেষ্ঠ ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর সড়ক,
সদর রোড (শহীদ মিনারের বিপরীতে), বরিশাল-৮২০০।
© প্রকাশক কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
Developed by NEXTZEN-IT