4:42 pm , June 15, 2023
নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ বরিশালে আকস্মিক দমকা ঝড়ে গাছ পড়ে একজন নিহত হয়েছেন। এছাড়াও নদীতে পড়ে এক জেলে নিখোঁজ রয়েছে। আহত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন নিখোঁজ জেলের বাবা। ঝড়ো হাওয়ার কবলে পড়ে তলা ফেটে একটি লঞ্চ অর্ধনিমজ্জিত হয়েছে। বৃহস্পতিবার সকালে এ ঝড় হয় বলে বরিশাল আবহাওয়া অফিসের জ্যেষ্ঠ পর্যবেক্ষক প্রনব কুমার রায় জানিয়েছেন। নিহত শেখ মোহাম্মদ রজিৎ বিহারী (৭৫)। সে বরিশাল সদর উপজেলার চরবাড়িয়া ইউনিয়নের রাঢ়ীমহল গ্রামের বাসিন্দা। নিখোঁজ কিশোর জেলে হলো : হিজলা উপজেলার চরকিল্লা গ্রামের আবুল কালাম রাঢ়ীর ছেলে মাসুদ রাঢ়ী (১৮)। হিজলা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন রয়েছেন বাবা আবুল কালাম রাঢ়ী। জ্যেষ্ঠ পর্যবেক্ষক প্রনব কুমার রায় জানান, সকাল ৬ টা ৫৫ মিনিট থেকে দমকা বাতাস বইতে শুরু করে। সকাল ৭ টা ১০ মিনিট পর্যন্ত দমকা বাতাসের সাথে বৃষ্টি ও বজ্রবৃষ্টি হয়েছে। এ সময় ঘন্টায় ৪৬ কিলোমিটার বেগে ঝড়ো বাতাস হয়েছে। ২৯.৬ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। উত্তর পশ্চিম দিক থেকে ঝড়ো বাতাস বয়েছে।
বরিশাল সদর উপজেলার চরবাড়িয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মাহতাব হোসেন সুরুজ, ৫ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য ফিরোজ গাজী ও রাঢ়ী মহল গ্রামের বাসিন্দা সোলায়মান আরিফ বলেন, ফজরের নামাজ পড়ে নিজের টিনের ঘরে ঘুমিয়ে ছিলেন বৃদ্ধ রজিৎ বিহারীসহ স্ত্রী ও দুই ছেলে। ঝড়ে ঘরের উপর একটি চাম্বল গাছ উপড়ে পড়ে। এতে চাঁপা পড়ে ঘটনাস্থলে মারা গেছে রজিৎ। তবে স্ত্রী ও দুই সন্তান অক্ষত রয়েছে।
হিজলা উপজেলার প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা আবিদ হাসান বলেন, মাছ শিকার করতে মেঘনা নদীতে গিয়েছিলো বাবা কালাম ও ছেলে মাসুদ। ঝড়ো বাতাসে নৌকা উল্টে নদীতে পড়ে বাবা ও ছেলে। বাবাকে আহত অবস্থায় উদ্ধার করে অন্য জেলেরা হাসপাতালে ভর্তি করেছে। তবে ছেলে নিখোঁজ রয়েছে।
তিনি আরো জানান, ঝড়ে উপজেলার ২৫ ঘর বিধ্বস্ত হয়েছে। এছাড়াও বেশকিছু গাছ ভেঙ্গে পড়েছে। রাস্তার উপর গাছ পড়ে থাকায় বরিশালের সাথে বাস চলাচল বন্ধ রয়েছে। বিদ্যুতের তার ছিড়ে যাওয়ায় বিদ্যুত সরবরাহ বন্ধ রয়েছে।
পিআইও আবিদ বলেন, ঝড়ে গাছ পড়ে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স চত্বরে থাকা একটি এ্যাম্বুলেন্স দুমড়ে গেছে। হাসপাতাল চত্বরের বেশ কিছু গাছ ভেঙ্গে গেছে। হাসপাতালে এসি ভেঙ্গে গেছে।
সকাল সাতটার দিকে প্রবল বাতাস ও বৃষ্টিতে উপজেলার বড়জালিয়া ইউনিয়নের খুন্না গোবিন্দপুর, বাউশিয়া সহ বিভিন্ন এলাকা ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।
ঝড়ের ঘর ভেঙ্গে যাওয়া ক্ষতিগ্রস্ত ভ্যান চালক সালাউদ্দিন হাওলাদার কান্নায় ভেঙ্গে পড়ে বলেন, আমার একমাত্র মাথা গোঁজার ঠাঁইটুকু ঝড়ের কবলে ভেঙ্গে যায়।এখন নতুন করে ঘর করার সামর্থ্য নাই।
বড়জালিয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান এনায়েত হোসেন হাওলাদার জানান, যে পরিমাণের ক্ষতি হয়েছে তার একটি তালিকা উপজেলা প্রকল্প ব্যস্তবায়ন কর্মকর্তাকে দিয়েছি।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা কর্মকর্তা মাজেদুল হক কাওসার বলেন, বন্যায় যে পরিমাণ ক্ষতি হয়েছে দ্রুত সমাধান না করলে রোগীদের চিকিৎসা দিতে বিঘœ ঘটতে পারে।
মেহেন্দিগঞ্জের কাজীরহাট থানার ওসি জুবাইর আহমেদ জানান, এমভি ইনজাম লঞ্চটি সকালে হিজলার টেক বন্দর ঘাট থেকে ১৫-২০ জন যাত্রী নিয়ে কাজিরহাটের লতা ঘাটের উদ্দেশ্যে রওয়ানা দেয়। সেখান থেকে বরিশাল নৌ-বন্দরের উদ্দেশ্যে যাওয়ার কথা ছিলো। লতা ঘাটে পৌঁছানোর পূর্বে হঠাৎ আবহাওয়া খারাপ হয়।
লঞ্চটিকে পূর্ব ভাঙ্গা সংলগ্ন নদীর চরে উঠিয়ে দেয় এর চালক। এরপর যাত্রীরা লঞ্চটি থেকে নিরাপদে নেমেও যায়। কিছুক্ষন পর ঝড় শুরু হলে এটি কাত হয়ে ডুবে যায়। বর্তমানে আংশিক ডুবে যাওয়া লঞ্চটিকে উদ্ধারে কাজ করছে সংশ্লিষ্টরা।এমভি ইনজাম লঞ্চের সুকানি নিজাম জানান, সকাল সাড়ে ৬ টার দিকে হিজলা থেকে ১৬ জন যাত্রী নিয়ে বরিশালের উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করেন। সকাল সাড়ে ৭ টার দিকে কোন কিছু বুঝে ওঠার আগেই ঝড় শুরু হয়।
এতে লঞ্চের তলা ফেটে যায়। দ্রুত নোঙর করে যাত্রীদের নিয়ে নেমে পড়েন তারা। এতে কোন হতাহতের ঘটনা ঘটেনি। সবাই নিরাপদ।
তিনি আরো বলেন, আশা করছি আজকের মধ্যে লঞ্চ মেরামত করে কালকের মধ্যে বরিশালে পৌঁছাতে পারবো।
বরিশাল নদী বন্দর কর্মকর্তা আব্দুর রাজ্জাক বলেন, কোন হতাহতের ঘটনা ঘটেনি। লঞ্চটি থেকে যাত্রীরা নিরাপদে পাড়ে নেমেছে। ঝড়ে লঞ্চটির পিছনের অংশ ডুবে গেছে।
ডুবে যাওয়া অংশ তুলতে এরই মধ্যে ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।