4:04 pm , June 11, 2023
আরিফ আহমেদ, বিশেষ প্রতিবেদক ॥ একজন মেয়র প্রার্থীর পোস্টারে দড়ি বেধে তা সড়কের দুপ্রান্তে বাধার জন্য চারজন কর্মী রীতিমতো যুদ্ধ করছিলেন নগরীর বাংলা বাজার থেকে বটতলার সরকারি পলিটেকনিক কলেজ সড়কে। এ কাজের জন্য প্রত্যেকে পাবেন ৫০০ করে। আর যারা লিফলেট বিতরণ করছেন বিভিন্ন দুয়ারে তারা পাচ্ছে ২০০ টাকা। এরকম হাজার কর্মী রয়েছে সব মেয়র প্রার্থীর। আবার লাঙ্গলের ও নৌকার কিংবা টেবিল ঘড়ি প্রতীকেরও রয়েছে এরকম অসংখ্য কর্মী। যারা বরিশাল নগরীর ৩০ ওয়ার্ডের অলিগলিতে ব্যানার-ফেস্টুন পোস্টার লাগিয়েছেন। সবমিলিয়ে নগরীতে ব্যানার পোস্টার নিয়ে ব্যস্ত প্রায় ১০ হাজার কর্মী। পাশাপাশি কাউন্সিলর প্রার্থীদেরও রয়েছে প্রতিটি ওয়ার্ডে। এরকম আরো প্রায় পচিশ হাজার কর্মীর কাজের ব্যবস্থা। গড়ে একটি ওয়ার্ডে চারজন প্রার্থীর কম হলেও ২০০ করে কর্মী রয়েছে বলে জানা গেছে এবং প্রত্যেক কর্মীকে ২০০ টাকা করে প্রদান করা হচ্ছে বলে জানা গেছে।
এদিকে ১২ জুন বরিশাল সিটি করপোরেশন বিসিসি নির্বাচনকে কেন্দ্র করে শতকোটি টাকার বাণিজ্য হয়েছে বরিশালে। ২৭ মে থেকে ১২ জুন পর্যন্ত বরিশাল মহানগরী ছিলো অনেকটাই ঈদ উৎসব আমেজে। বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ, ইলেক্ট্রনিক্স মিডিয়া ও সংবাদ কর্মীদের উপস্থিতিতে আবাসিক হোটেলগুলো যেমন পরিপূর্ণ ছিলো, তেমনি পরিপূর্ণ বেচাকেনা হয়েছে রেষ্টুরেন্টগুলোতেও। খাবারের চাহিদা বৃদ্ধির পাশাপাশি কাঁচা বাজারসহ মাছ-মাংসের বাজারেও বেড়েছে ভীড়। আবার কমবেশি নির্বাচনকে ঘিরে স্বল্প আয়ের মানুষেরা, কলোনীর বেকার যুবক-যুবতী এবং সাধারণ রাজনৈতিক কর্মীরা হয়েছেন স্বাবলম্বী। বরিশাল অর্থনীতি সমিতির পরিসংখ্যান অনুযায়ী এই নির্বাচনে রাজনৈতিক কর্মী কিংবা সাধারণ বস্তিবাসী বেকার যুবক বা যুবতী প্রতিদিন গড়ে ২০০ টাকা উপার্জন করেছেন সিটি করপোরেশন নির্বাচনকে ঘিরে। এছাড়াও নির্বাচনের উপকরণ ব্যানার, পোস্টার, লিফলেট তৈরির জন্য, কম্পিউটার ও প্রেস, বিতরণ ও বণ্টনের কাজে নিয়োজিত প্রায় অর্ধ লক্ষ মানুষের কর্মসংস্থান বেড়েছে নির্বাচনের উৎসবমুখর আয়োজনকে ঘিরে। এমনকি এককাপ রং চাও বিক্রি হয়েছে ১০ টাকা দরে। যার বিস্তার ঘটেছে সবক্ষেত্রেই। নির্বাচন কমিশন সুত্রমতে, একজন মেয়র প্রার্থী ১৫ লাখ টাকা এবং কাউন্সিলর প্রার্থী ৫ লাখ টাকা খরচ করতে পারবেন। ফলে বরিশালে ৭ মেয়র প্রার্থী ও ১১৬ জন সাধারণ ও ৪২ জন সংরক্ষিত কাউন্সিলর প্রার্থীর মোট নির্বাচনী দৃশ্যমান ব্যয় ৮ কোটি ৯৫ লাখ হলেও বাস্তবতা ভিন্ন বলে মনে করেন অর্থনীতি সমিতির সভাপতি কাজী মিজানুর রহমান। তিনি বলেন, বাস্তবে একশ কোটির বেশি টাকার লেনদেন হয়েছে এই নির্বাচনে।
কাজী মিজানুর রহমান এভাবেই পরিসংখ্যানের মাধ্যমে বিসিসি নির্বাচনের প্রার্থীদের নির্বাচনী ব্যয় ও পাশাপাশি নগরীতে এর প্রভাব তুলে ধরে বলেন, এটা সাময়িকভাবে বরিশালের অর্থনীতিকে চাঙা করলেও প্রকৃতপক্ষে এটি ক্ষতিকর প্রভাব ফেলবে নির্বাচন পরবর্তী জীবনে।
তিনি বলেন, কেননা, যে মোটেও কিছু উপার্জন করেনি সে হঠাৎ বিভিন্ন উপায়ে নির্বাচনী শ্রম বিক্রি করে টাকা পেয়েছে এবং খরচ করতে অভ্যস্ত হয়েছে। নির্বাচন কালে সবসময়ই এভাবে কিছু উড়ো টাকার উপার্জন হয়, এটা কখনোই ধরে রাখা যায়না বা এটাকা সঞ্চয়ও করা যায়না। চা-বিড়ি, খাবার, পোশাক ইত্যাদি খাতে ব্যয় হয়ে যায়। বেকার যুবক-যুবতী সে কিন্তু নির্বাচন শেষেও এই খরচের অর্থ জোগাড়ের চেষ্টা করবে যেকোনো উপায়ে। এতে বস্তি এলাকার যুবসমাজের ক্ষতি সবচেয়ে বেশি এতে। উপার্জনের জন্য অনৈতিক পথ বেছে নেয়া অস্বাভাবিক নয় বলে জানান কাজী মিজান।
গত পনেরদিনে তিনমাসের বেচাকেনা হয়েছে দাবি করে বরিশালের উল্লেখযোগ্য একটি রেষ্টুরেন্টের মালিক বলেন, বিগত নির্বাচনে শুধু একটি অংশের মানুষের মুখই দেখেছি। এবারের নির্বাচনে সব শ্রেণি পেশার মানুষের উপস্থিতি ঘটেছে আমার এখানে। খুব ভালো বেচাকেনা হচ্ছে এখনো। তিনি আরো বলেন, এবারের নির্বাচনে বহিরাগতদের উপস্থিতি বেশি মনে হয়েছে। তারাই মূলত আমার গত ১০ দিনের নিয়মিত খদ্দের।