4:02 pm , June 11, 2023
বিশেষ প্রতিবেদক ॥ নানা উদ্বেগ-উৎকন্ঠা আর ভোটারদের উপস্থিতি নিয়ে প্রার্থীদের ¯œায়ু চাপের মাঝে বরিশাল সিটি করপোরেশনের ৫ম নির্বাচনে ভোট গ্রহন সোমবার। সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত ৫৮ বর্গ কিলোমিটারের বরিশাল মহানগরীর ৩০টি ওয়ার্ডের ১২৪টি কেন্দ্রের ৮৯৪টি বুথে ২ লাখ ৭৫ হাজার ২৬৭ নারী-পুরুষ ভোটার প্রথমবারের মত ইভিএম-এ ভোট দেবেন। তবে ভোট বর্জন করলেও এ নির্বাচনে মেয়র পদে জয় পরাজয় এখনো বিএনপি’র ভোটারদের ওপরই নির্ভরশীল। নির্বিঘেœ এ ভোট সম্পন্ন করতে নগরীর ১২৪টি কেন্দ্র ছাড়াও পুরো নগরী জুড়ে সাড়ে ৪ হাজার পুলিশ ও আনসার সদস্যের বাইরে র্যাব-৮’এর দেড় শতাধিক ফোর্স এবং ১০ প্লাটুন বিজিবি টহলে থাকছে। ১০ জন নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট এর তত্ত্বাবধানে স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে বিজিবি নগরীর বিভিন্ন এলাকায় অবস্থান গ্রহনের পাশাপাশি টহলেও থাকবে। বিজিবি’র টহল দলের বাইরে ৩০জন নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট-এর তত্ত্বাবধানে নগরীতে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর ৩০টি দল টহলে ও মজুদ ফোর্স হিসেবে সার্বক্ষনিক প্রস্তুত থাকবে বলে জানা গেছে। নগরীর ১০৬টি কেন্দ্রকে ঝুঁকিপূর্ণ বিবেচনায় নিয়ে বাড়তি পুলিশ ও আনসার সদস্য মোতায়েন করা হচ্ছে। বিজিবি ও র্যাব নগরীতে টহল শুরু করেছে।
তবে সোমবারের এ নির্বাচনকে ঘিরে গত দেড় মাসেরও বেশী সময় ধরে বরিশালে রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক তৎপরতা থাকলেও নির্বাচনী বিধি বিধান অনুসরনে কমিশনের মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তারা খুব একটা সফলতা দেখাতে পারেননি। প্রকাশ্যেই অনেক প্রার্থী কমিশনের নিয়ম ভঙ্গ করলেও তার বিরুদ্ধে তেমন কোন পদক্ষেপ ছিলোনা। অথচ এ নির্বাচনকে ঘিরে প্রধান নির্বাচন কমিশনার বরিশাল সফর করে প্রার্থী ও পুলিশ প্রশাসনের সাথে সভা করে দিক নির্দেশনা দিয়েছেন। নির্বাচন কমিশনার আহসান হাবীব খান তিনবার এ নগরীতে এসে দিক নির্দেশনা দিয়ে গেছেন।
২০০২ সালে গঠিত বরিশাল সিটি করপোরেশনের ৫ম বারের এ নির্বাচনে মেয়র পদে ৭জন ছাড়াও নগরীর ৩০টি ওয়ার্ডে ১১৬ জন সাধারন কাউন্সিলর ও ১০টি সংরক্ষিত নারী আসনে ৪২ জন মহিলা কাউন্সিলর প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতায় রয়েছেন।
ভোট গ্রহনের লক্ষ্যে নির্বাচন কমিশন ১২৬ জন প্রিজাইডিং অফিসার, ৮৯৪ সহকারী প্রিজাইডিং অফিসার এবং সম সংখ্যক পোলিং অফিসার ছাড়াও ১ হাজার ৭৮৮জন সহকারী পোলিং অফিসারের প্রশিক্ষন সম্পন্ন করে রোববার বিকেলের মধ্যে নির্বাচনী সরঞ্জাম সহ কেন্দ্রে পাঠিয়েছে।
সোমবার বরিশাল নগর পরিষদের ৫ম নির্বাচনে আওয়ামী লীগের আবুল খায়ের আবদুল্লাহ, জাতীয় পার্টির প্রকৌশলী ইকবাল হোসেন তাপস ও ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মুফতি সৈয়দ মোহাম্মদ ফয়জুল করিমমের মধ্যে ত্রিমুখি লড়াই হচ্ছে। এর বাইরেও জাকের পার্টির মিজানুর রহমান বাচ্চু এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী কামরুল আহসান রুপন ও আলী হোসেন, আসাদুজ্জামান ভোটের মাঠে রয়েছেন।
তবে গত দুমাস ধরে অনানুষ্ঠানিক ও আনুষ্ঠানিক ব্যাপক প্রচারনার পরেও দেশের প্রধান বিরোধী দল, বিএনপি বিহীন এ নির্বাচনে এখনো ভোটারদের কেন্দ্রে উপস্থিতি নিয়ে নিশ্চিত হতে পারেননি কোন দলের প্রার্থীরাই। ভোটারদের মাঝে ব্যাপক কৌতুহল থাকলেও এখনো ভোটদানে তেমন কোন আগ্রহ তৈরী হয়নি বলে মনে করছেন নির্বাচনী পর্যবেক্ষকরা।
বরিশালে আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরীণ কোন্দল দলটির নীতি নির্ধারকদের মাঝে দুঃশ্চিন্তা তৈরী করেছে। বর্তমান মেয়র ও মহানগর আওয়ামী লীগের সম্পাদক সাদিক আবদুল্লাহর পরিবর্তে তার চাচা আবুল খায়ের আবদুল্লাহকে মনোনয়ন দেয়ায় সাদেক ও তার পিতা জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবুল হাসনাত আবদুল্লাহর বেশীরভাগ অনুসারী খায়েরের পক্ষে প্রচারনাসহ নির্বাচনী কর্মকান্ডে সম্পৃক্ত হননি। এমনকি অনেকের বিরুদ্ধে দলীয় প্রার্থীর পরিবর্তে ইসলামী আন্দোলন প্রার্থীকে সমর্থন সহ পরক্ষোভাবে সহযোগীতা কারারও অভিযোগ উঠেছে। আওয়ামী লীগ সমর্থিত নগরীর ২৪ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর আনিস শরিফ সংবাদ সম্মেলন করে ‘নির্বাচন করার জন্য ইসলামী আন্দোলন প্রার্থীকে আবুল হাসনাত আবদুল্লাহ ৩ কোটি টাকা দিয়েছেন’ বলেও অভিযোগ করেছেন। পরে তাকে দল থেকে বহিস্কার করা হলেও বিষয়টি নিয়ে জনমনে সংশয় কাটেনি। ইসলামী আন্দোলনের প্রার্থীও বিষয়টি নিয়ে আদালতে মামলা করেছেন।