4:28 pm , June 10, 2023
আরিফ আহমেদ, বিশেষ প্রতিবেদক ॥ শেষ হলো সব প্রচার প্রচারণা। ১০ জুন রাত আটটার পর বরিশালে নেমে এসেছে শুনশান নীরবতা। ১২ জুন বরিশাল সিটি করপোরেশন নির্বাচনকে ঘিরে প্রচার প্রচারণার সমাপ্তি হলো। কাল সকালে ভোটের লাইনে দাঁড়িয়ে ইভিএম পদ্ধতিতে ভোট দেবেন নগরীর দুই লক্ষ পচাত্তর হাজার আটশত ভোটারদের অনেকেই। তবে বিএনপি ও বাসদ এই নির্বাচন বর্জন করেছেন। শেষ মুহুর্তের গণসংযোগে ছিলো আকুতি আর প্রতিশ্রুতি রক্ষার ওয়াদা। বেলা বাড়ার সাথে সাথে বরিশাল সিটি করপোরেশন নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নামা ৭ মেয়র প্রার্থী ও ১৭৭ কাউন্সিলর প্রার্থীর তুমুল প্রচার প্রচারণা, মাইকিং ও শ্লোগানে কম্পিত হয়ে ওঠে ৫৮ বর্গকিলোমিটার এলাকা। ৩০ টি ওয়ার্ডের প্রতিটি ওয়ার্ডেই চার-পাঁচ জন কাউন্সিলর প্রার্থীর মাইকিং চলছিল। কান ঝালাপালা হবার জোগাড় হলেও সাধারণ মানুষ এটা মেনে নিয়েছেন। কারণ এইতো শেষ এরপর আবার হয়তো পাঁচ বছর পর দেখা হবে আবার। নগরীর ১৫ নং ওয়ার্ডের কয়েকজন ভোটার বলেন, এই কাউন্সিলরদের জন্যই এবার ভোট দিতে যাবো। যদি দেখি ভোটের পরিবেশ ভালো তবে পছন্দের মেয়র প্রার্থীকেও ভোট দেব আমরা।
সরেজমিনে ১০ জুন শনিবার বরিশাল সিটি করপোরেশনের ৩০টি ওয়ার্ডের কয়েকটি ঘুরে পাওয়া গেছে এই চিত্র। রিশাল জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক রফিকুল ইসলাম খোকন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন। মেয়র প্রার্থীদের মধ্যে নগরবাসীর কাছে ইতিমধ্যেই আলোচিত হয়ে উঠেছেন চারজন। এই চারজনের মধ্যে আবার ২ জনকে শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বি করতে চলছে তুমুল বিচার বিশ্লেষণ। সামাজিক আন্দোলনের নেতা ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক কাজী মিজানুর রহমান বলেন, চুলচেরা বিশ্লেষণ করতে হচ্ছে। আমাদের ভাবতে হচ্ছে কে বরিশালের উন্নয়নের জন্য মূখ্য ভূমিকা পালন করতে বেশি যোগ্য। তিনি বলেন, যেহেতু বিগত পাঁচ বছর সম্পূর্ণভাবে উন্নয়ন বঞ্চিত ছিলো বরিশাল সিটি করপোরেশন, তাই চলতি মেয়াদে যে মেয়র নির্বাচিত হবেন তাকে দিয়ে সবটাই পুষিয়ে নিতে হবে। তাই এক্ষেত্রে আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী খোকন সেরনিয়াবাতই যোগ্য বলে দাবী কাজী মিজানুর রহমানের। তার যুক্তি হচ্ছে, যেহেতু আওয়ামী লীগের সরকার, তারউপর প্রধানমন্ত্রীর আত্মীয় তাই তাকেই এই সুযোগটা দেয়া উত্তম হবে।
কিন্তু এখানে তার যুক্তিকে খ-ন করে বীর মুক্তিযোদ্ধা ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক এনায়েত হোসেন চৌধুরী বলেন, আওয়ামী লীগ সরকারের মেয়াদতো আর মাত্র ছয়মাস হয়তো। এরপর জাতীয় নির্বাচন দিতে হবে। সেই নির্বাচনে যদি আওয়ামী লীগ সরকার গঠনে ব্যর্থ হয় তাহলেতো আবার সেই একই অবস্থা হবে বরিশালবাসীর। তিনি আরো বলেন, দল নয়, এখানে ব্যক্তি গুরুত্ব পেলেই ভালো ফলাফল আসবে। আসলে আমার মতে স্থানীয় সরকার নির্বাচনটা দলীয়করণ না করলেই ভালো হতো।
কাজী মিজানুর রহমান, এনায়েত হোসেন চৌধুরী, সুজনের রফিকুল আলম, সনাক সভাপতি শাহ সাজেদাসহ নগর চিন্তাবিদদের সাথে কথা বলে এটা স্পষ্ট যে তাদের বিশ্লেষণে ইসলামি আন্দোলন বাংলাদেশ ও চরমোনাই পীরজাদার হাতপাখা ও জাতীয় পার্টির লাঙ্গল নৌকা প্রতীকের প্রার্থীর জন্য হুমকী হতে পারে যদি তাদের দলীয় বিভক্তি অব্যাহত থাকে। তাদের বিশ্লেষণে উঠে আসে স্বতন্ত্র প্রার্থী টেবিল ঘড়ি প্রতীকের কামরুল আহসান রুপন হুমকি হতো যদি সে বিএনপির সমর্থন পেত। বিএনপি ইসলামি আন্দোলন বা হাতপাখাকেও পছন্দ করবে না এটা শতজন স্বীকৃত। এমনকি আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানকও এটা বলে বারবার সতর্ক করেছেন দলীয় নেতাকর্মীদের। কিন্তু তাদের দলীয় বিশ্লেষণ ভিন্ন। সেখানে হাতপাখাকেই অধিক গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।
নগর চিন্তাবিদদের ধারণা হাতপাখা নয়, বরং জাতীয় পার্টির প্রার্থী প্রকৌশলী ইকবাল হোসেন তাপস কিংবা ইসলামী আন্দোলনের মুফতি ফয়জুলই আওয়ামী লীগের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী হবেন। নগরীতে আওয়ামী লীগের সমর্থক ও কর্মীদের ৪০ ভাগ ভোট রয়েছে । বরিশাল সিটি করপোরেশনের আওতাধীন ৫২ হাজার হোল্ডিং এবং মোট ভোটার ২ লাখ ৭৪ হাজার ৯৯৫ জন। এদের মধ্যে নারী ভোট?ার ১ লাখ ৩৮ হাজার ৭১ জন এবং পুরুষ ভোটার ১ লাখ ৩৬ হাজার ৯২৪ জন। অর্থাৎ প্রায় তিন লাখ ভোটারের মধ্য থেকে ১ লাখ ভোট আওয়ামী লীগের। বাকী প্রায় দুই লাখ থেকে একলাখ ভোটার নিরব ভূমিকা পালন করলে পচাত্তর হাজার ভোট থাকবে সকলের জন্য। আর এই পচাত্তরের ভূমিকাই প্রধান্য পাবে এবারের সিটি নির্বাচনে। কেননা, আওয়ামী লীগেরও একটি অংশ ভোট দেয়া থেকে বিরত থাকার সম্ভাবনা খুবই বেশি বলে মনে করছেন নগরীর সাধারণ মানুষও।