3:51 pm , June 7, 2023
নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ একটি রাষ্ট্রে নাগরিকের চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কোন পদ নেই এই স্লোগানে বরিশাল সিটি করপোরেশন নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বীকারী প্রার্থীদের তথ্য উপস্থাপন এবং অবাধ, নিরপেক্ষে ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন অনুষ্ঠানের আহবানে বরিশালে সংবাদ সম্মেলন করেছে সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন)। বুধবার দুপুরে বরিশাল নগরের সিটি কলেজ সংলগ্ন কীর্তনখোলা মিলনায়তনে সুজন বরিশাল জেলা ও মহানগর কমিটি এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে। সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) কেন্দ্রীয় সমন্বয়কারী দীলিপ কুমার সরকার লিখিত বক্তব্যে বলেন, আমাদের প্রত্যাশা, আমরা প্রার্থীদের তথ্যের যে বিশ্লেষণ তুলে ধরছি, গণমাধ্যমে প্রচারিত ও প্রকাশিত হবে এবং ভোটাররা কী ধরনের প্রার্থী নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বী করছেন সে সম্পর্কে ধারণা পাবেন। একইসাথে মেয়র প্রার্থীসহ স্ব স্ব এলাকার কাউন্সিলর প্রার্থীদের তথ্য সম্পর্কে তারা জানবেন এবং প্রার্থীদের সম্পর্কে ভালভাবে জেনে, শুনে ও বুঝে সৎ, যোগ্য ও জনকল্যাণে নিবেদিত প্রার্থীদের স্বপক্ষে ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন।
তিনি বলেন, এবারের বরিশাল সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ১৬৮ জন প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর মধ্যে ৪ জন প্রার্থী ধর্মীয় সংখ্যালঘূ সম্প্রদায় থেকে প্রতিদ্বন্দ্বীতা করছেন। আর সংরক্ষিত ওয়ার্ডে ৪২ জন নারী কাউন্সিলর প্রার্থীর সাথে ৩ জন নারী সাধারণ ওয়ার্ডে পুরুষদের পাশাপাশি প্রতিদ্বন্দ্বীতায় রয়েছেন।
২০১৮ সালে অনুষ্ঠিত নির্বাচনের সাথে তুলনা করলে সেইবারের থেকে এবারে স্বল্পশিক্ষিত প্রার্থীর হার কমেছে। ২০১৮ সালে স্বল্প শিক্ষিতের হার ছিলো ৫৭.৩৫%, যা এবার ৪৬.৭%। অপরদিকে উচ্চ শিক্ষিত প্রার্থীর হার কিছুটা বৃদ্ধি পেয়েছে। ২০১৮ সালের ২৬.৪৭% থেকে ২০২৩ সালের নির্বাচনে এই হার দাঁড়িয়েছে ৩৪.১৩%। উল্লেখ্য মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের গ-ি অতিক্রম করেননি এমন প্রার্থীর প্রতিদ্বন্দ্বীতা করা হ্রাস পেয়েছে। ২০১৮ সালে এই হার ছিলো ৩৭.৫০% এবারের নির্বাচনে যা দাঁড়িয়েছে ২৮.৭৪%। এক কথায় স্বল্প শিক্ষিতের হার হ্রাস পাওয়া এবং উচ্চ শিক্ষিত প্রার্থীর হার বৃদ্ধি পাওয়া নিঃসন্দেহে ইতিবাচক।
তিনি বলেন, বিশ্লেষনে অন্যান্য নির্বাচনের মতো বরিশাল সিটি নির্বাচনেও ব্যবসায়ীদের প্রাধান্য লক্ষ করা যাচ্ছে। এই প্রবণতা নির্বাচনে অর্থের ব্যবহার বৃদ্ধির লক্ষণ বলে অনেকে মনে করেন। পাশাপাশি ক্রমবর্ধমান ব্যবসায়ীদের আধিক্য এবং অন্যান্য পেশার প্রতিনিধিত্ব হ্রাস পাওয়া ইতিবাচক নয়, যা গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার জন্যও মঙ্গলজনক নয়।
২০১৮ সালে অনুষ্ঠিত নির্বাচনের তুলনায় ২০২৩ সালের নির্বাচনে ফৌজদারি মামলা সংশ্লিষ্ট প্রার্থীর সংখ্যা কিছুটা হ্রাস পেয়েছে। ২০১৮ সালে প্রার্থীদের বিরুদ্ধে বর্তমান মামলা ছিল ২৭.২০%, এবারের নির্বাচনে তা ২১.৫৬%। আর অতীত মামলার ক্ষেত্রে এই হার ছিল ৩৬.৭৬%, এবারে তা ৩৪.১৩%। এই প্রবণতা নিঃসন্দেহে ইতিবাচক।
এছাড়া ২০১৮ সালের নির্বাচনের তুলনায় ২০২৩ সালের নির্বাচনে স্বল্প আয়ের প্রার্থীর হার কিছুটা হ্রাস পেয়েছে। ২০১৮ সালে এই হার ছিল ৭৫%, এই নির্বাচনে তা হ্রাস পেয়ে হয়েছে ৬৫.৮৭%। পক্ষান্তরে, বছরে কোটি টাকার অধিক উপার্জনকারী প্রার্থী বিগত নির্বাচনে ০% থাকলেও এবারের নির্বাচনে তা ১,৮০% (৩ জন)-এ দাড়িয়েছে। বিশ্লেষণে বলা যায় যে, নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় স্বল্প আয়ের প্রার্থীদের অংশগ্রহণ হ্রাস পাচ্ছে এবং পাশাপাশি অধিক আয়ের প্রার্থীদের অংশগ্রহণ ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে। অর্থাৎ ধীরে ধীরে টাকা ওয়ালাদের প্রভাব বাড়ছে নির্বাচনে।
অপরদিকে ২০১৮ সালের নির্বাচনের তুলনায় কম সম্পদের মালিকদের প্রতিদ্বন্দ্বীতা হ্রাস পেয়েছে। ২০১৮ সালের নির্বাচনে ৫৮.০৮% প্রার্থী ছিলেন ৫ লক্ষ টাকার কম সম্পদের মালিক। এবারের নির্বাচনে এই হার ২৯.৩৪%। অপরদিকে বিগত নির্বাচনে কোটিপতির হার ৮.০৮% থাকলেও, এবারের নির্বাচনে তা বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে ১১.৩৭%। বিশ্লেষণে বলা যায় যে, নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বীতায় স্বল্প সম্পদের মালিকদের হার যেমন হ্রাস পাচ্ছে, তেমনই অধিক সম্পদের মালিকদের হার বৃদ্ধি পাচ্ছে।
উল্লেখ্য, প্রার্থীদের সম্পদের হিসাবের যে চিত্র উঠে এসেছে, তাকে কোনোভাবেই সম্পদের প্রকৃত চিত্র বলা যায় না। কেননা, প্রার্থীদের মধ্যে অধিকাংশই প্রতিটি সম্পদের মূল্য উল্লেখ করেন না, বিশেষ করে স্থাবর সম্পদের। আবার উল্লেখিত মূল্য বর্তমান বাজার মূল্য না; এটা অর্জনকালীন মূল্য। বিষয়টি সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়ার পরেও আমরা হলফনামার ভিত্তিতে শুধুমাত্র মূল্যমান উল্লেখ করা সম্পদের হিসাব অনুযায়ী তথ্য তুলে ধরলাম। অধিকাংশ প্রার্থীর সম্পদের পরিমাণ প্রকৃত পক্ষে আরও অনেক বেশি বলে আমরা মনে করি।
এদিকে বরিশালে দায়-দেনাগ্রস্ত প্রার্থীর হার বিগত নির্বাচনের চেয়ে কিছুটা বৃদ্ধি পেয়েছে। ২০১৮ সালের নির্বাচনে দায়-দেনার হার ছিল ১১.৭৬%; এবারের নির্বাচনে যা ১৬.৭৭%।
বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের ৭ জন মেয়র প্রার্থীর মধ্যে সর্বশেষ অর্থ বছরে সর্বোচ্চ ১৭ লাখ ২৯ হাজার ৬৮০ টাকা কর প্রদান করেছেন জাতীয় পার্টির প্রার্থী মোঃ ইকবাল হোসেন। এছাড়া ১১৮ জন সাধারণ ওয়ার্ড কাউন্সিলর প্রার্থীর মধ্যে ৪৯ জন (৪১.৫৩%) আয়কর প্রদান করেছেন। এরমধ্যে সর্বোচ্চ ১১ নং ওয়ার্ডের মজিবর রহমান ১৮ লাখ টাকার ওপরে আয়কর প্রদান করেছেন। ৪২ জন সংরক্ষিত ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থীর মধ্যে আয়কর প্রদান করেছেন ৮ জন (১৯.০৫%)। এই ৮ জনের মধ্যে ৭ জনই (৮৭.৫০%) কর প্রদান করেন ৫ হাজার টাকা বা তার কম। সংরক্ষিত ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থীর মধ্যে সর্বোচ্চ ৪৫ হাজার ৩৮৬ টাকা কর প্রদান করেছেন ৫ নং ওয়ার্ডের ইসরাত জাহান।
তুলনা করলে দেখা যায় যে, বিগত নির্বাচনের চেয়ে আয়কর প্রদানকারীর হার বৃদ্ধি পেয়েছে। ২০১৮ সালে আয়কর প্রদানকারীর হার ছিল ২৭.১৮%। এবারের নির্বাচনে তা দাঁড়িয়েছে ৩৭.১৩%। এই প্রবণতা ইতিবাচক। সংবাদ সম্মেলনে সুজন বরিশাল জেলা ও মহানগর কমিটির সদস্যবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।