3:50 pm , June 7, 2023
নৌকার প্রার্থী খোকন সেরনিয়াবাতের নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণা
নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ একটি উন্নত, সমৃদ্ধ, পরিবেশ বান্ধব স্মার্ট ও মানবিক শহর গড়ে তোলার প্রত্যাশা করে শতভাগ নিষ্ঠা, সততা, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার সাথে বরিশাল সিটি কর্পোরেশনকে পরিচালনার প্রতিশ্রুতি দিয়ে ৩৫ দফার ইশতেহার ঘোষনা করেছেন আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী আবুল খায়ের আব্দুল্লাহ খোকন সেরনিয়াবাত। বুধবার বেলা ১২ টায় নগরীর বগুড়া রোডের একটি করভেনশন হলে এ ইশতেহার ঘোষনা করেন তিনি। শুরুতে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে খোকন সেরনিয়াবাত বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বরিশাল সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন দিয়েছেন। তার নৌকা প্রতীকের প্রতি সমর্থন জানিয়ে ইতোমধ্যে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও পেশাজীবী সংগঠন মেয়র পদে নির্বাচিত করার লক্ষ্যে আন্তরিকভাবে প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। বঙ্গবন্ধুর মন্ত্রীসভার সদস্য শহীদ আব্দুর রব
সেরনিয়াবাতের কনিষ্ঠ পুত্র জানিয়ে খোকন বলেন, ১৯৭৫ সালের ১৫ আগষ্ট ইতিহাসের ভয়াবহ নির্মম হত্যাকান্ডের একজন প্রত্যক্ষদর্শী আমি।
ইতিহাসের নারকীয় হত্যাকান্ডের ঘটনায় ঘাতকের বুলেটবিদ্ধ হয়ে আজও আমি বেঁচে আছি।
তার বাবা শহীদ আব্দুর রব সেরনিয়াবাতের আদর্শ বুকে ধারণ করে নিজেকে বরিশাল নগরবাসীর সেবক হিসেবে সম্মানের সাথে কাঙ্খিত সেবা দেয়ার উদ্দেশ্য নিয়ে মেয়র প্রার্থী হয়েছেন জানিয়ে খোকন সেরনিয়াবাত বলেন, দীর্ঘদিন উন্নয়ন বঞ্চিত বরিশাল নগরবাসীকে কাঙ্খিত উন্নয়নসহ বরিশাল সিটি কর্পোরেশনকে আধুনিক জনবান্ধব প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে তুলতে আমি দৃঢ় প্রতিজ্ঞ। নগরবাসীকে সিটি কর্পোরেশনের মাধ্যমে সব ধরনের হয়রানি মুক্ত দ্রুত সেবা প্রদানের দৃঢ় অঙ্গীকার ব্যক্ত করেছেন তিনি।
তার নির্বাচনী শ্লোগান “নতুন বরিশাল গড়ার অঙ্গীকার জয় হোক শেখ হাসিনার” জানিয়ে বলেন, তাকে নির্বাচিত করলে দীর্ঘদিন উন্নয়ন বঞ্চিত বরিশাল নগরীর উন্নয়নে নগর পরিকল্পনাবিদ, স্থপতিসহ অন্যান্য বিশেষজ্ঞগণের সমন্বিত পরামর্শ ও দিক নির্দেশনায় মহা-পরিকল্পনা গ্রহণ করে একটি উন্নত জনবান্ধব বরিশাল নগর গড়বেন।
অনাকাঙ্খিত ও অযৌক্তিক হোল্ডিং ট্যাক্স পুনঃমূল্যায়ন করে কর ব্যবস্থায় শৃঙ্খলা আনায়ন এবং ট্রেড লাইসেন্স প্রদান সহজীকরণ করে অনলাইন সেবা চালু করবেন।
নাগরিক মতামত গ্রহণ করার মাধ্যমে বাড়ীর প্ল্যান অনুমোদন সহনীয়, হয়রানি ও ভীতিমুক্ত করবেন।
এছাড়াও ইমারত নির্মাণ বিধিমালা অনুসরণ করে দ্রুত সময়ের মধ্যে প্ল্যান অনুমোদনের কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।
নগরীর জলাবদ্ধতা দূরীকরণে বিদ্যমান ড্রেনেজ ব্যবস্থা সংস্কারসহ নতুন ড্রেনেজ ব্যবস্থা নির্মান করা হবে।
নগরীর খালসমূহ খননের বিষয়ে বিশেষ উদ্যোগ গ্রহণ করবেন। বর্ধিত এলাকায় পানি ও বিদ্যুতের সমস্যা অগ্রাধিকার ভিত্তিতে সমাধান, রাস্তাঘাটের সংস্কার ও নতুন রাস্তা নির্মাণ করবেন।
নগর ভবনে জন্ম-মৃত্যু নিবন্ধনসহ সকল ধরনের নাগরিক সেবা প্রদানের ক্ষেত্রে চলমান অনলাইন ওয়ান-স্টপ সার্ভিস ব্যবস্থায় শৃঙ্খলা আনবেন।
প্রতিটি ওয়ার্ডের ময়লা আবর্জনা যথাসময়ে অপসারণ এবং পচনশীল বর্জ্য সংগ্রহ করে জৈব সার, বায়োগ্যাস উৎপাদন এবং মশক নিধনে কার্যকর ব্যবস্থা নেবেন।
পানি সরবরাহ ব্যবস্থাপনায় লাইন চার্জ সহনীয় করে শতভাগ বিশুদ্ধ, নিরাপদ ও সুপেয় পানি সরবরাহের ব্যবস্থা করবেন।
খোকন সেরনিয়াবাত বলেন, নগরীর রিক্সা ও ব্যাটারিচালিত যানবাহনসমূহ চলাচলে সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনায় আনা হবে। প্রতিটি সড়কে পর্যাপ্ত বাতির ব্যবস্থা করবেন।
জবাবদিহিতা নিশ্চিতকরণে ‘জনতার মুখোমুখি মেয়র’ শীর্ষক নিয়মিত মতবিনিময়ের মাধ্যমে ওয়ার্ড ভিত্তিক সমস্যার সমাধান নিশ্চিত করবেন।
‘সবার বরিশাল’ নামে একটি এ্যাপের মাধ্যমে নগরবাসীর কাছ থেকে নাগরিক সমস্যার অভিযোগ গ্রহণ করবেন জানিয়ে বলেন, সার্বক্ষনিক তদারকির মাধ্যমে সমাধান পূর্বক নাগরিক সুবিধা নিশ্চিত করবেন।
বরিশাল সিটি কর্পোরেশনকে সন্ত্রাস, চাঁদাবাজ, দুর্নীতি ও মাদকমুক্ত নগর হিসেবে গড়ে তুলবেন।
পরিকল্পিত বৃক্ষরোপনের মাধ্যমে বরিশাল নগরীকে গ্রীন সিটি হিসেবে গড়ে তোলা হবে।
আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সংশ্লিষ্ট সকল সংস্থার সাথে সমন্বয়ের মাধ্যমে কার্যকরী উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে। বিভিন্ন কলোনীবাসীদের নাগরিক সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করা হবে। ওয়ার্ড ভিত্তিক নগরীর বিভিন্ন সড়ক উন্নয়নে কার্যকর উদ্যোগ নেয়া হবে।
নগরীর বেলতলা ও রূপাতলী এলাকায় নির্মান করার পর অকেজো হয়ে পড়ে থাকা ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্টে বিদ্যুৎ সংযোগ প্রদানের মাধ্যমে পূর্ণরুপে চালু করা হবে।
হকারদের পুনর্বাসন ও কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা হবে। নগরীতে নারী-পুরুষ, শিশু, বৃদ্ধ নির্বিশেষে সকলের জন্য পর্যাপ্ত আধুনিক পাবলিক টয়লেট নির্মাণ করা হবে।
তারুণ্যকে অনুপ্রাণিত করতে প্রতিটি এলাকায় সাংস্কৃতিক কেন্দ্র স্থাপন এবং বিদ্যমান কমিউনিটি সেন্টারগুলোর আধুনিকায়নের মাধ্যমে
বহুমুখী ব্যবহার নিশ্চিত করা হবে। বরিশাল নগরীতে গ্যাস সংযোগ প্রদানের ক্ষেত্রে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে। প্রতিটি ওয়ার্ডকে সিসি ক্যামেরার আওতায় নিয়ে আসার মাধ্যমে বরিশালকে ডিজিটাল নগরী হিসেবে গড়ে তোলা হবে। বয়স্ক ও প্রতিবন্ধীদের সহায়তা প্রদানসহ সরকার প্রবর্তিত সকল ধরণের ভাতা যথাযথভাবে বন্টন করা হবে।
মুক্তিযোদ্ধা ও বিশিষ্ট ব্যক্তিদের নামে নগরীর রাস্তার নামকরণ করা হবে। সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের অধিকার নিশ্চিত করার মাধ্যমে অসম্প্রদায়িক নগর প্রতিষ্ঠা করা হবে। তরুন সমাজের জন্য আইটি নগরী প্রতিষ্ঠাসহ ফ্রিল্যান্সিং এর মাধ্যমে নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা হবে। নদী ভাঙ্গনে ক্ষতিগ্রস্ত নাগরিকদের পুর্নবাসনের ব্যবস্থা করা হবে। নগরীর বিদ্যমান স্বাস্থ্য সেবা কেন্দ্রসমূহের আধুনিকায়ন এবং ইনফেকশাস ডিজিস নিরাময় সেন্টার স্থাপনের মাধ্যমে নাগরিকদের স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত করা হবে। নগরীর স্কুল, কলেজসহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সার্বিক উন্নয়ন নিশ্চিত করা হবে। নগরীর সকল মসজিদ ও মাদ্রাসার উন্নয়নে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। নগরীর সকল মন্দির ও গীর্জার উন্নয়নে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। ইউএনডিপির অর্থায়নে পুনরায় সিডিসি কার্যক্রম চালু করা হবে। শিশুদের শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য বিকাশ নিশ্চিত করার লক্ষ্যে নগরীতে বিনোদন কেন্দ্র ও পার্ক নির্মাণ করা হবে। বরিশালকে শিল্প, বাণিজ্য ও পর্যটন নগরী হিসেবে গড়ে তোলা হবে।
আগামী ১২ জুন কেন্দ্রে গিয়ে নৌকা প্রতীকে ভোট দিয়ে জয়যুক্ত করে ইশতেহারের অঙ্গীকার বাস্তবায়নের মাধ্যমে বরিশাল সিটি কর্পোরেশনকে একটি উন্নত ও আদর্শ কর্পোরেশনে রুপ দিতে সহায়তা চেয়েছেন খোকন সেরনিয়াবাত।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন, নির্বাচন পরিচালনা কমিটির সদস্য এ্যাড. আফজালুল করিম, এ্যাড. বলরাম পোদ্দার, লস্কর নুরুল হক, আনিসউদ্দিন আহম্মেদ শহীদ, মাহমুদুল হক খান মামুন প্রমুখ।