4:23 pm , June 6, 2023
বিশেষ প্রতিবেদক ॥ দক্ষিণাঞ্চলে ডায়রিয়া পরিস্থিতি কোনভাবেই নিয়ন্ত্রনে আসছে না। প্রতিদিনই আক্রান্তের সংখ্যা ক্রমাগত বেড়েই চলছে। সদ্য সমাপ্ত মে মাসের ৩১ দিনে দক্ষিণাঞ্চলের ৬ জেলার শুধু সরকারী হাসপাতালগুলোতেই সাড়ে ১২ হাজার ডায়রিয়া রোগী চিকিৎসা নিয়েছেন। চলতি মাসের প্রথম ৬ দিনে আক্রান্তের সংখ্যা আরো প্রায় দেড় হাজার। এ নিয়ে চলতি বছরের গত ৫ মাসে এ অঞ্চলের সরকারী হসপাতালে ডায়রিয়া আক্রান্ত প্রায় ৩৭ হাজার ডায়রিয়া রোগী চিকিৎসা গ্রহন করেছে। এর বাইরে বেসরকারী হাসপাতাল ও ক্লিনিক সহ বিভিন্ন চিকিৎসকের ব্যক্তিগত চেম্বারে আরো দ্বিগুনেরও বেশী রোগী চিকিৎসা নিয়েছে। তবে বছরের প্রথম ৫ মাসে দক্ষিণাঞ্চলে ডায়রিয়া আক্রান্ত কারো মৃত্যু হয়নি বলে নিশ্চিত করেছে স্বাস্থ্য বিভাগ।
গত বছর মার্চ থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত দক্ষিনাঞ্চলের সরকারী হাসপাতালগুলোতে ডায়রিয়া আক্রান্ত প্রায় ৭২ হাজার নারী-পুরুষ ও শিশু চিকিৎসা গ্রহণ করে। ২০২১ সালে মার্চ থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত দক্ষিণাঞ্চলের সরকারী চিকিৎসা সেবা প্রতিষ্ঠানগুলোতে ডায়রিয়া আক্রান্ত ৭০ হাজারের বেশী নারী-পুরুষ ও শিশু চিকিৎসা গ্রহণ করেছিলেন। সে সময়ে মৃত্যু হয়েছিলো ১২ জনের। তবে যে সংখ্যক ডায়রিয়া রোগী সরকারী হাসপাতালসমূহে চিকিৎসা গ্রহণ করে থাকে, তার দ্বিগুনেরও বেশী বিভিন্ন চিকিৎসক সহ বেসরকারী হাসপাতাল ও ক্লিনিকে চিকিৎসা নিয়েছেন বলে একাধিক সূত্র দাবী করা হয়েছে। বিষয়টির সাথে দ্বিমত পোষন করছেন না স্বাস্থ্য বিভাগের দায়িত্বশীল মহল।
গত মে মাসে ডায়রিয়া আক্রান্তদের মধ্যে বরিশালে প্রায় দেড় হাজার, পটুয়াখালীতে ১ হাজার ৮শ, দ্বীপজেলা ভোলাতে আড়াই হাজার, পিরোজপুরে প্রায় ২ হাজার, বরগুনাতে ১২ শ এবং ঝালকাঠীতেও সহশ্রাধিক নারী-পরুষ ও শিশু ডায়রিয়া আক্রান্ত হয়ে সরকারী হাসপাতালসমুহে চিকিৎসা নিয়েছেন।
এ নিয়ে চলতি বছরের প্রথম ৫ মাসে বরিশালের বিভিন্ন সরকারী হাসপাতালে ৬ হাজার, পটুয়াখালীতে প্রায় ৭ হাজার, ভোলাতে প্রায় ১০ হাজার, পিরোজপুরে প্রায় সাড়ে ৭ হাজার ,বরগুনাতে প্রায় ৪ হাজার এবং ঝালকাঠীর ৪টি উপজেলার বিভিন্ন সরকারী হাসপতালে প্রায় সাড়ে ৩ হাজার নারী পুরুষ ও শিশু ডায়রিয়ার চিকিৎসা গ্রহণ করে সুস্থ হয়ে ঘরে ফিরেছেন বলে জানা গেছে।
দক্ষিণাঞ্চলের ৬ জেলায় গত জানুয়ারীতে ৪ হাজার ৩৪৫ জন ডায়রিয়া রোগী বিভিন্ন সরকারী হাসপাতালে চিকিৎসা গ্রহণ করলেও ফেব্রুয়ারীতে সংখ্যাটা ৪ হাজার ৬২০ জনে উন্নীত হয়। কিন্তু মার্চে এ অঞ্চলে ডায়রিয়া রোগীর সংখ্যা এক লাফে ৬ হাজার ৭০৪ জনে উন্নীত হয়। এপ্রিলে পরিস্থিতির আরো অবনতি ঘটে। এ সময়ে সরকারী হাসপাতালে ডায়রিয়া রোগীর সংখ্যা ৯ হাজার ৬৮২ জনে উন্নীত হয়। আর সদ্য সমাপ্ত মে মাসে চলতি বছরের সর্বাধিক ১২ হাজার ৪৬৪ জন ডায়রিয়া রোগী দক্ষিণাঞ্চলের সরকারী হাসপাতালে চিকিৎসা গ্রহণ করেছেন।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের বরিশাল বিভাগীয় পরিচালক ডা. হুমায়ুন শাহিন খান জানান, গত কয়েকটি বছর করোনার সাথে ডায়রিয়া ও ডেঙ্গু নিয়ে দক্ষিনাঞ্চলের সব চিকিৎসক এবং স্বাস্থ্যকর্মীরা নিরন্তর পরিশ্রম করে চলছে। তার মতে, পানিবাহিত এ রোগ প্রতিরোধে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা অব্যাহত আছে বলেও জনান। তারমতে, ডায়রিয়া চিকিৎসায় দক্ষিণাঞ্চলে ৪১০টি মেডিকেল টিম কাজ করছে। তিনি সকলকে খাবার গ্রহণে অধিকতর স্বাস্থ্য সচেতন হবারও পরামর্শ দেন। চিকিৎসকের কিছু ঘাটতি থাকলেও ডায়রিয়া প্রতিরোধে এ অঞ্চলের সবগুলো সরকারী স্বাস্থ্য সেবা প্রতিষ্ঠান ও কর্মী প্রস্তুত রয়েছে বলে জানান বিভাগীয় পরিচালক। এমনকি ডায়রিয়া চিকিৎসায় আইভি স্যালাইন সহ কোন চিকিৎসা সামগ্রীর অভাব নেই বলে দাবী করে পরিচালক জানান, মঙ্গলবার সকাল পর্যন্ত দক্ষিণাঞ্চলের সরকারী হাসপাতালগুলোতে ১ হাজার সিসি’র প্রায় ৪৮ হাজার এবং ৫শ সিসি’র প্রায় ২৭ হাজার ব্যাগ স্যালাইন মজুদ রয়েছে। পাশাপাশি প্রয়োজনীয় ক্যাপসুল এবং ওড়াল সাসপেন্সন এর কোন সংকট নেই বলেও দাবী বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালকের।