4:00 pm , June 5, 2023
বিশেষ প্রতিবেদক ॥ কয়লার অভাবে পায়রা তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রটির ২য় ইউনিটটিও সোমবার দুপুর সাড়ে ১২ টার দিকে বন্ধ করে দেয়ায় জাতীয় গ্রীডে সংকট বৃদ্ধির সাথে দক্ষিণাঞ্চল সহ সমগ্র পশ্চিম জোনে ভোল্টেজ সমস্যায় শিল্প,বানিজ্য ও আবাসিক গ্রাহকদের দুর্ভোগ বাড়লো। আরো দু মাস আগে থেকেই ভোলাতে গ্যাস ভিত্তিক ২২৫ মেগাওয়াটের একটি বেসরকারী কম্বাইন্ড সাইকেল পাওয়ার স্টেশন বন্ধ রয়েছে জরুরী রক্ষনাবেক্ষনের নামে। ফলে বিদ্যুৎ সংকটের চেয়ে ভোল্টেজ সংকট আরো বাড়ছে। এমনকি ভোল্টেজ সংকটে পশ্চিম জোনের ২১ জেলার প্রায় ৩০ লাখ গ্রাহকের হাজার হাজার কোটি টাকার বৈদ্যুতিক সামগ্রীর সুষ্ঠু ও নিরাপদ পরিচালনও অনিশ্চিত হয়ে পড়ছে। গত ২৪ এপ্রিল পায়রা তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রটির প্রথম ইউনিটটি বন্ধ করে দিতে হয়েছে কয়লার অভাবেই। দুটি ইউনিট পূর্ণ লোডে চালু রাখতে প্রতিদিন সাড়ে ১১ হাজার থেকে ১২ হাজার টন উন্নতমানের কয়লার প্রয়োজন।
ডলার সংকটে সময়মত এলসি খুলতে না পারায় দেশের অন্যতম বৃহৎ এ তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি বন্ধ হয়ে গেলেও আমামী ২৬ জুন থেকে ২টি ইউনিটই উৎপাদনে ফিরবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন কেন্দ্রটির তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী (অপারেশন)। আগামী ১৬ দিনের মাথায় দেশে কয়লা পৌঁছবে বলে জানিয়ে তিনি বলেন, জাহাজ থেকে কয়লা আনলোড সহ তা তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রটির স্টক ইয়ার্ডে পৌঁছান এবং কোল ফায়ারের ১৬-১৮ ঘন্টা পরে ইউনিট দুটি উৎপাদনে আসবে। সে হিসেব ২৫ বা ২৬ জুনের মধ্যেই পায়রা তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রের দুটি ইউনিটই পূর্ণ উৎপাদনে ফিরবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।
দেশের অন্যতম বৃহৎ এ তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রটির দুটি ইউনিট জাতীয় গ্রীডে যুক্ত হওয়ায় বিদ্যুৎ ব্যবস্থা স্থিতিশীল হতে ব্যাপক সহায়ক ভূমিকা পালন করছিলো। পাশাপাশি দক্ষিণাঞ্চল সহ পশ্চিম জোনের ২১ জেলায় বিদ্যুতের ভোল্টেজ ব্যবস্থাও পরিপূর্ণ অবস্থায় থাকায় শিল্প-বানিজ্য ও আবাসিক গ্রাহকদের বৈদ্যুতিক সামগ্রীর সুরক্ষা নিশ্চিত হয়। কিন্তু এ দুটি উৎপাদন ইউনিটই বন্ধ হয়ে যাওয়ায় বিদ্যুৎ সংকটের সাথে জাতীয় গ্রীড সহ সরবরাহ ও বিতরণ লাইনগুলোতে ভোল্টেজ সমস্যা বেড়েছে। এমনকি ৩৩ কেভি লাইনে ভোল্টেজ কোন কোন স্থানে ৩০ হাজারেও নেমে গেছে। গ্রাহক পর্যায়ে লো-টেনশন লাইনে ২২০ ভোল্টের স্থলে তা ২শ ভোল্টের নিচেও নেমে যাচ্ছে সান্ধ্য পিক ও ডে-পিক আওয়ারে।
তবে পায়রা তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রের দায়িত্বশীল মহল এ সংকটকে মেনে নিয়ে অন্তত ২০ দিন অপক্ষো করার পরামর্শ দিয়েছেন।
বাংলাদেশ ও চীনের দুটি রাষ্ট্রীয় কোম্পানীর সমান মালিকনায় প্রায় ১৯ হাজার ৫শ কোটি টাকা ব্যয়ে পায়রা তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি নির্মানে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের সাথে ২০১৬ সালের ২৯ মার্চ চুক্তি স্বাক্ষর হয়। চুক্তি অনুযায়ী ২০২০-এর ফেব্রুয়ারীতে পরীক্ষামূলক উৎপাদন শুরুর পরে ওই বছরের ১৫ মে প্রথম ইউনিট এবং ৮ ডিসেম্বর ২য় ইউনিট বানিজ্যিক উৎপাদন শুরু করে। তবে গ্রীড লাইন নির্মানের অভাবে পায়রা তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রের উৎপাদিত বিদ্যুৎ পরীক্ষামূলক ভাবে জাতীয় গ্রীড যুক্ত হয় গত বছরের ১৪ ডিসেম্বর। ১৭ ডিসেম্বর থেকে বানিজ্যিকভাবে পায়রা ও রামপাল তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রের বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রীডে যুক্ত হয় । এর আগে গত বছর ২১ মার্চ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশের অন্যতম বৃহৎ পায়রা তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রটির আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেছিলেন।
পিডিবি এবং পিজিসিবি’র দায়িত্বশীল সূত্রের মতে দেশে বর্তমানে সান্ধ্যপীক আওয়ারে প্রায় সাড়ে ১৩ হাজার মেগাওয়াট চাহিদার বিপরীতে ১২ হাজার মেগাওয়াটের কিছু বেশী বিদ্যুৎ উৎপাদন হচ্ছে। বিদ্যুৎ ও জ¦ালানী প্রতিমন্ত্রী রোববার এক সংবাদ সম্মেলনে দেশে প্রায় আড়াই হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ ঘাটতির কথা জানিয়ে আগামী দু সপ্তাহের মধ্যে সংকট কেটে যাবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
পায়রা’র পাশাপাশি তালতলী ৩৫৫ মেগাওয়াট ক্ষমতার অপর তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রটির বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রডে পৌঁছাতে বাংলাদেশ সরকার ও পাওয়ার গ্রীড কোম্পানী-পিজিসিবি’র যৌথ অর্থায়নে প্রায় ২ হাজার ৮শ কোটি টাকা ব্যয়ে ১৬৩ কিলোমিটার দীর্ঘ পায়রা-বরিশাল-গোপালগঞ্জ ৪ লাখ ভোল্টেজের ডাবল সার্কিট সঞ্চালন লাইনটি নির্মান করা হয়েছে। ২০১৭ সালে শুরু হয়ে ২০২০-এর জুনের মধ্যে ওই লাইন নির্মান শেষ হয়। নির্মিত লাইনের মাধ্যমেই বরিশাল সহ সমগ্র দক্ষিনাঞ্চল ছাড়াও পশ্চিম জোন ও ঢাকার আমীন বাজার সাব-স্টেশন হয়ে জাতীয় গ্রীডে পায়রা ও তালতলীর বিদ্যুৎ পৌঁছছে।
এদিকে কয়লা সংকটে পায়রা তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রের দুটি ইউনিটই বন্ধের আরো দু মাস আগে থেকেই ভোলায় ২২৫ মেগাওয়াটের গ্যাস ভিত্তিক একটি তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্র বন্ধ রয়েছে। জরুরী মেরামত ও রক্ষনাবেক্ষনের নামে সাময়িক বন্ধের দুমাস পরেও বেসরকারী ইউনিটটি নির্ধারিত সময়ে উৎপাদনে ফেরেনি। ফলে দক্ষিণাঞ্চলের গ্রীড লাইন সহ গ্রাহক পর্যায়ে ভোল্টেজ সংকট আরো তীব্রতর হচ্ছে।