4:21 pm , June 3, 2023
নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ নতুন প্রার্থীদের দাবি বিগত ২০ বছরেও ৪ নং ওয়ার্ডে হয়নি কোন উন্নয়নমূলক কাজ। সামগ্রিক উন্নয়নের অংশ হিসেবে ওয়ার্ড এর প্রধান সড়কগুলো তৈরি করা হলেও শাখা সড়কগুলো রয়েছে আগের মতই। ওয়ার্ডের জলাবদ্ধতা নিরসনে কোন পদক্ষেপ না নেয়ায় সামান্য বৃষ্টিতেই হয় ভয়ংকর অবস্থা । এছাড়াও রয়েছে মাদক ও প্রভাবশালীদের মদদে চাঁদাবাজি ও সন্ত্রাসী কর্মকা-ের মতো ঘটনা। এগুলো সমাধান করে পরিবর্তনের নতুন ধারা আনতে নতুন প্রার্থীদের নির্বাচনে অংশগ্রহণ করা। তাদের দাবি বিগতরা পারলে তাদের এখন প্রার্থী হিসেবে সামনে আসতে হতো না। বিগতদের কারো উপরই জনগণের আস্থা নেই। অন্যদিকে উন্নয়নমূলক কাজের ব্যর্থতা অকপটে স্বীকার করে সাধারণ নাগরিক সুবিধা সমূহ শতভাগ নিশ্চিত করতে পেরেছেন বলে দাবি বর্তমান দের। পুনরায় নির্বাচিত হলে উন্নয়নমূলক কাজের দৃষ্টান্ত স্থাপন করবেন বলে আশাবাদী তারা। গতকাল নির্বাচনী ওয়ার্ড পরিক্রমায় দৈনিক আজকের পরিবর্তন প্রতিবেদক গিয়েছিল নগরীর ৪ নং ওয়ার্ডে। এই ওয়ার্ডে বর্তমান ,সাবেক ও নতুন মিলিয়ে মোট চার প্রার্থী নির্বাচনে অংশ নিয়েছেন। এরা হলেন : বর্তমান কাউন্সিল তৌহিদুল ইসলাম বাদশান (লাটিম), সাবেক দুবারের কাউন্সিলর (টিফিন ক্যারিয়ার বাটি) মো. ইউনুস, জেলা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও নতুন প্রার্থী (ঠেলাগাড়ি) সৈয়দ শামসুদ্দোহা আবিদ এবং নতুন মুখ (ঘুড়ি) মোঃ আরিফুল আলম সম্রাট।
প্রার্থীদের সাথে আলাপের পূর্বে সাধারণ ভোটারদের সাথে কথা বলা হয়। তারা জানান, বেশ বড় একটি ওয়ার্ড এটি। দশ হাজারের বেশি ভোটারের অবস্থান। তবে সিটি কর্পোরেশনের অবহেলিত ওয়ার্ডগুলোর তালিকা করলে এই ওয়ার্ডের অবস্থান হবে প্রথমদিকে ।পৌরসভা থেকে সিটিতে উন্নয়নের পরেও এই ওয়ার্ডের সুযোগ-সুবিধা অনেক বছর রয়ে গেছে পৌরসভার মত । যেখানে অধিকাংশ নি¤œ আয়ের মানুষের ঘনবসতিপূর্ণ ওয়ার্ড ৫ নং এ হয়েছে অভাবনীয় উন্নয়ন সেখানে বরিশালের অনেক প্রভাবশালী নেতাদের অবস্থানের এই ওয়ার্ডটি তে মিলছে না সামান্যতম নাগরিক সুবিধা। বছরের পর বছর কেটে গেলেও তেমন কোন কাজ হয়নি এই ওয়ার্ডে। প্রধান রাস্তা ব্যাতীত ওয়ার্ডে শাখা সড়কগুলোর বেহাল দশা। মান্দাতার আমলের ড্রেনেজ ব্যবস্থা জনবহুল এই এলাকার পয়:নিষ্কাশনের জন্য এখন আর উপযোগী নয়। তাই জলাবদ্ধতায় নাকাল হতে হয় এলাকাবাসীকে। এছাড়াও রয়েছে মাদক, সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি সহ নানা সমস্যা। বর্তমান ও সাবেক কাউন্সিলর দুজনই এবারেরও প্রার্থী। তবে তাদের কেউই ওয়ার্ডের মানুষের জন্য তেমন কিছুই করতে পারেনি বলে জানায় বাসিন্দারা। টুকটাক নাগরিক সুবিধা দিলেও লক্ষণীয় কোন উন্নয়নমূলক কাজ তাদের কেউই করতে পারেনি বলে নিশ্চিত করেছেন। এছাড়াও তাদের বিরুদ্ধে বিতর্কিত কর্মকান্ডের অভিযোগ রয়েছে। আসন্ন ভোটে এমন প্রার্থী দেখে তারা ভোট দেবেন যে কিনা ওয়ার্ডের সর্বস্তরের মানুষকে সাথে নিয়ে কাজ করবে। বিপদে-আপদে প্রয়োজনে পাশে দাঁড়াবে। সিঙ্গাপুরে পরিণত করতে না পারলেও কমপক্ষে ওয়ার্ডে সকল নাগরিক সুবিধা নিশ্চিত করবে। বাসিন্দাদের পর পর্যায়ক্রমে আলাপ করা হয় চার প্রার্থীর সাথে। লাটিম মার্কার প্রার্থী বর্তমান কাউন্সিলর তৌহিদুল ইসলাম বাদশা বলেন, এবার নিয়ে পঞ্চম বারের মতো নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন। এর আগে ২০০৮ থেকে ১৩ এবং ২০১৮ থেকে বর্তমান পর্যন্ত নির্বাচিত কাউন্সিলর হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন এই ওয়ার্ডে। বিগত সময়ে ওয়ার্ডে কোন কাজ করতে পারেননি বলেন বাদশা । তবে ওয়ার্ডের বাসিন্দাদের কাউন্সিলর কেন্দ্রিক সুবিধার প্রায় পুরোটাই বন্টন করেছেন। ওয়ার্ডের প্রধান রাস্তাঘাটের অবস্থা ভালো তবে শাখা রাস্তাগুলো বেহাল দশায় রয়েছে বলে স্বীকার করেন বাদশা। ওয়ার্ডে সমস্যার অন্ত নেই । রাস্তাঘাট , জলাবদ্ধতা নিরসনে ওয়ার্ডে দরকার মাস্টার ড্রেনেজ ব্যবস্থা। নির্বাচিত হলে প্রথমে এসব কাজ করার আশাবাদ ব্যক্ত করেন। তবে তার নির্বাচিত হওয়ার আগে তিনি নৌকার প্রার্থীর বিজয়কে প্রাধান্য দিচ্ছেন বলে জানান। তিনি বলেন, আগে নৌকা তারপরে সব। প্রধানমন্ত্রী মনোনীত প্রার্থী খোকন সেরনিয়াবাত কে নির্বাচিত করা তাদের মূল লক্ষ্য । তিনি নির্বাচিত হলে ওয়ার্ডে সবচেয়ে বেশি উন্নয়ন করতে পারবেন বলে জানান এই প্রার্থী। বাসিন্দা ও অন্য প্রার্থীদের কিছু অভিযোগের বিষয়ে বাদশা বলেন, তার জনপ্রিয়তায় ঈর্ষান্বিত হয়ে প্রতিদ্বন্দ্বীরা অপকৌশলী হয়ে উঠছেন। প্রকৃত বাসিন্দারা নয়, প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের সমর্থকরা ভিত্তিহীন অভিযোগ ছড়াচ্ছে ।আসন্ন ভোটে ওয়ার্ড এর পাঁচটি কেন্দ্রের তিনটি কেন্দ্র কে তিনি ঝুঁকিপূর্ণ বলে মনে করেন। কেন্দ্রগুলো হলো : টাউন স্কুল,মাহমুদিয়া সরকারি বিদ্যালয় এবং ইসলামিয়া কলেজ। বরাবরের ন্যায় এবারও ভোটারদের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণে শতভাগ বিজয়ী হওয়ার আশাবাদ ব্যক্ত করেন এই প্রার্থী।
দুই বারের নির্বাচিত সাবেক কাউন্সিলর মো. ইউনুস বলেন, তিনিও পঞ্চম বারের মত নির্বাচনে অংশ নিয়েছেন। বর্তমান কাউন্সিলর কোন কাজই করতে পারেনি তাই ওয়ার্ড এর বিভিন্ন স্থানে জলাবদ্ধতা এখন প্রধান সমস্যা। বর্ধিত এলাকায় জলাবদ্ধতায় মানুষের ভোগান্তির শেষ নেই। রাস্তা ও ড্রেন প্রয়োজনের কিছুই নেই এই ওয়ার্ড। এবারে নির্বাচিত হলে সবার আগে ওয়ার্ড এর বিভিন্ন স্থানে মাস্টার ড্রেন নির্মাণ করবেন বলে জানান। এই ওয়ার্ডের বর্তমান পরিস্থিতিতে জলাবদ্ধতা কমাতে মাস্টার ড্রেনের বিকল্প নেই। তিনি কাউন্সিলর থাকাকালীন সময় প্রজেক্ট দিয়েছিলেন। কিন্তু তখন তা বাস্তবায়ন সম্ভব হয়নি। এছাড়াও ওয়ার্ডে মাদক, সন্ত্রাস চাঁদাবাজি কোন সমস্যা সমাধান দিতে পারেনি বর্তমান কাউন্সিল। নির্বাচিত হয়ে একে একে সব সমস্যা ধরে ধরে সমাধান করবেন বলে জানান তিনি। দায়িত্বকালীন সময়ে কাজ না করে জমি ব্যবসায় মনোনিবেশের অভিযোগের বিষয় এই প্রার্থী বলেন, কেউ যদি তার বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ দিয়ে থাকে তাহলে সে মোনাফেক। নিজের জমি ছিলো বিক্রি করেছি এবং তা বিক্রি করে একটি নতুন জমি ক্রয় করেছি। এতে কিভাবে আমি জমি ব্যবসার মধ্যস্থকারী ব্যবসায়ী হলাম জানিনা। ওয়ার্ডে নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণায় তাকে বিভিন্ন বাধা প্রদান করা হচ্ছে। নানা অভিযোগ তুলে অপকৌশলে ব্যর্থ হয়ে এখন তার পোস্টার ব্যানার ছিড়ে ফেলা হচ্ছে। জনগণ তাকে চায়। সুষ্ঠু ভোট হলে পুনরায় নির্বাচিত হওয়ার আশাবাদী তিনি। ১২তারিখ ভোটের দিন ওয়ার্ডের সবকটি কেন্দ্রকে ঝুঁকিপূর্ণ বলে মনে করেন তিনি।
জেলা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ শামসুদ্দোহা আবিদ বলেন, ওয়ার্ডে প্রথম রাস্তা ব্যতীত শাখা রাস্তাগুলো খারাপ। ড্রেনেজ ব্যবস্থা খারাপ আছে মাদকের প্রাদুর্ভাব। বিগত কাউন্সিলররা যেমন পারেনি উন্নয়ন করতে তেমনি নিয়ন্ত্রণ করতে পারেনি ওয়ার্ডের সার্বিক পরিস্থিতিও। হাবিব বলেন, বিগত ২০-২৫ বছরে এই ওয়ার্ডে কোন উন্নয়নমূলক কাজই হয়নি। কোন কাজই করতে না পারা সাবেক ও বর্তমানদের নামে রয়েছে নানা ধরনের প্রমাণিত অভিযোগ। ওয়ার্ডের বাসিন্দারা তাদের একের পর এক সুযোগ দিয়ে দেখেছে। কিন্তু তারা তাতে ব্যর্থ হয়েছে। তাই এখন পরিবর্তনের সময় এসেছে। জনগণের ব্যাপক সাড়া পাচ্ছেন বলে জানান আবিদ। নির্বাচিত হলে এলাকার সর্বস্তরের জনগণকে সাথে নিয়ে বছরের পর বছর থমকে যাওয়া এই ওয়ার্ডের উন্নয়নের সার্বিক কার্যক্রমকে সম্পূর্ণ করবেন। নানাভাবে উস্কানিমূলক আচরণ করা হলেও সরাসরি কেউ প্রচারণায় বাধা দিচ্ছেনা বলে জানান তিনি। ঘুড়ি মার্কার নতুন প্রার্থী মোহাম্মদ আরিফুল আলম সম্রাট বলেন , এই প্রথম নির্বাচনে অংশ নিয়েছেন। রাস্তাঘাট, ড্রেনেজ ব্যবস্থা ,মাদক এই তিন সমস্যাই ভুগছে ওয়ার্ডের বাসিন্দারা। বিগত সময়ে ওয়ার্ডের বাসিন্দাদের যেকোনো ধরনের সনদ নিতেও চরম ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে। তিনি নির্বাচিত হলে ওয়ার্ড এর বিভিন্ন শ্রেণির বাসিন্দাদের নিয়ে আলাদা আলাদা কমিটি করবেন। এরপরে তাদের মাধ্যমে তৃণমূলে যাচাই বাছাই করে ওয়ার্ডের বাসিন্দাদের সকল সমস্যা সমাধান করবেন বলে জানান। উন্নয়নমূলক কাজের ক্ষেত্রে তিনি বলেন, নির্বাচিত হলে এলাকার সকলের মতামতের ভিত্তিতে প্রয়োজনীয় উন্নয়ন কাজ সম্পাদন করবেন। ৪ নং ওয়ার্ডটি সত্যিই একটি অবহেলিত ওয়ার্ড। ২০-২৫ বছর না হলেও বিগত ১০-১৫ বছরে এই ওয়ার্ডে হয়নি কোন ধরনের উন্নয়ন। মাদক সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেছে এই ওয়ার্ডে। সাবেক ও বর্তমান প্রতিনিধিরা এই ওয়ার্ডের একাধিকবার নির্বাচিত প্রতিনিধি। তাদের জনগণ সুযোগ দিয়ে দেখেছে। তারা বিতর্কিত হওয়ার কারণে আজ নতুনদের নির্বাচনে অংশ নিতে হয়েছে বলে জানান এই প্রার্থী। জনগণের বেশ সাড়া পাচ্ছেন। সুষ্ঠু, সুন্দর ও নিরপেক্ষ ভোট হলে আশাবাদী তিনি।
উল্লেখ্য ,৪ নং ওয়ার্ডে মোট ভোটার সংখ্যা ১০ হাজার ৫৪১। পাঁচটি কেন্দ্রে ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে।