3:35 pm , June 2, 2023
নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ মৃত্যুর ৯ বছর পরও সাবেক মেয়র শওকত হোসেন হিরণকে ভুলতে পারেনি বরিশালের মানুষ। আর তাই এই সিটি নির্বাচনে সাধারণ মানুষ থেকে প্রার্থী পর্যন্ত সবার মুখে মুখে হিরণের নাম। অনেক প্রার্থী তো তার নির্বাচনী প্রচারণায় হিরণের গুনগান করছেন, নিজের সঙ্গে তার সম্পর্কের কথাও তুলে ধরছেন। বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান ও নির্বাচন বিশ্লেষক মো. সোহেল রানা বলেন, সাবেক মেয়র প্রয়াত শওকত হোসেন হিরণ গণতান্ত্রিক ধারার রাজনীতির মৌলিক যে স্ট্যান্ডার্ড সেটিকে গ্রহণ করবার ক্ষেত্রে আন্তরিক প্রচেষ্টা চালিয়েছিলেন। মেজোরিটারিয়ান ডেমোক্রেসির প্রক্রিয়ায় একজন নির্বাচিত প্রার্থীকে ওঠতে হয় সকলের প্রতিনিধি হয়ে। আমাদের রাজনীতিকগণ যতদিন না এই ইতিবাচকতা ধারণ করতে শিখবেন ততদিন দেশের প্রকৃত মালিক জনগণের মুক্তি নেই। মেয়র হিরণের মধ্যে এই ইতিবাচকতা চর্চার মনোভাব পরিলক্ষিত হয়েছিল।
আধুনিক নগর সভ্যতায় যা যা প্রয়োজন সে-সম্পর্কে তার স্পষ্ট ধারণা ছিল বলেই মনে করি জাতীয় পার্টির লাঙ্গল প্রতীক প্রার্থী প্রকৌশলী ইকবাল হোসন তাপস বলেন, হিরন ভাইকে দেখেই আমার রাজনীতিতে আসা। ব্যবসায়ীক ও পারিবারিক কারণে বন্ধুবর এই মানুষটির সঙ্গে দীর্ঘদিন থেকেছি, তাকে খুব কাছ থেকে দেখেছি। তিনি বেঁচে থাকলে আজ এই বরিশালকে অনন্য এক জায়গায় পৌঁছে দিতেন। তার মৃত্যুর পর আর কেউ বরিশালকে এগিয়ে নিতে পারেনি, এমনকি তৈরি হয়নি কোনো নেতৃত্বও। তাই নিজের মন থেকেই এই অতৃপ্ত বরিশালের মানুষের সেবায় নিজেকে নিয়োজিত করতে সিটি নির্বাচনে মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছি।
যদিও খোদ আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীক প্রার্থী আবুল খায়ের আব্দুল্লাহ (খোকন সেরনিয়াবাত) তার নির্বাচনী প্রচারণায় গত ১০ বছরে বরিশালের কোনো উন্নয়ন হয়নি সে বিষয়টিকে মূখ্য হিসেবে বলে যাচ্ছেন। যার হিসেবটা স্পষ্ট করে তিনি বলছেন শওকত হোসেন হিরণের মৃত্যুর পর বরিশালের উন্নয়ন হয়নি।
আর গেলো দুই পরিষদে বরিশালে মানুষের ভাগ্যের উন্নয়ন যে হয়নি, এমনটিই শুধু নয় মেয়রের সঙ্গে থাকা কাউন্সিলরদেরও তিক্ত অভিজ্ঞতা হয়েছে এ সময়টাতে। বর্তমান পরিষদ থেকে তো ১০ জন কাউন্সিলর মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহর কাছ থেকেই ঘোষণা দিয়ে দূরে সরে গেছেন।
২২নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর প্রার্থী আনিছুর রহমান দুলাল বলেন, আমরা ৫ বছর পিছিয়েছি শওকত হোসেন হিরণকে মেয়র না বানাতে পেরে। আর ৫ বছর পিছিয়েছি সাদিক আব্দুল্লাহকে মেয়র বানিয়ে। পুরো এ সময়টাতে নগরবাসী তাদের কাঙ্খিত উন্নয়ন চোখে দেখেনি। তবে এবার দল (আওয়ামী লীগ) যাকে মনোনয়ন দিয়েছেন তিনি নির্বাচনে জয়ী হলে বরিশালের উন্নয়ন হবে এটা নিশ্চিত।
নগরের বর্ধিত এলাকা খ্যাত ২৬ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ও সিটি নির্বাচেন কাউন্সিলর প্রার্থী হুমায়ুন কবির বলেন, এখন সাধারণ মানুষ সবকিছু বোঝে। শওকত হোসেন হিরণের পর কেন কি কারণে, গত দুই মেয়রের আমলে উন্নয়ন হয়নি তা সবাই বোঝে। বর্ধিত এলাকার উন্নয়নে একমাত্র শওকত হোসেন হিরণ কাজ করে গেছেন, আর এখন আমরা আশাবাদি খোকন ভাই বিজয়ী হলে কাজ করবেন।
এই ওয়ার্ডের বাসিন্দা ও ভোটার ওবায়দুর রহমান বলেন, টানা ৯ বছরের বেশি সময় ধরে বর্ধিত এলাকার মানুষ হিসেবে আমরা অবহেলিত। শওকত হোসেন হিরণ আমাদের রাস্তাঘাটগুলো করে দিয়ে গেছিলেন। এরপর সংস্কারের অভাবে সেগুলোর বেশিরভাগ এখন জরাজীর্ন।
আর রসুলপুর কলোনির বাসিন্দা সবুজ বলেন, এখানকার মানুষের জীবনমান শওকত হোসেন হিরণের সময় যা ছিল তাই আছে। এ কারণে মানুষ এখনও হিরণেই আবদ্ধ রয়েছেন।