4:45 pm , June 1, 2023
বিশেষ প্রতিবেদক ॥ আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী আবুল খায়ের আব্দুল্লাহ খোকন সেরনিয়াবাত এর পক্ষে নৌকা প্রতীকের লিফলেট বিতরণ করেছেন বরিশাল সিটি করপোরেশন (বিসিসি) এর চাকরিচ্যুত কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা। পাশাপাশি তারা ভোটারদের হাত ধরে বলছেন, খোকন সেরনিয়াবাত মেয়র হলে আমরা আমাদের চাকরি ফিরে পেতে পারি। তিনি আমাদের আশ্বাসও দিয়েছেন। আপনারা তাকে ভোট দিয়ে জয়ী করুন। জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর ভাগ্নে তিনি খুবই ভদ্র বিনয়ী ও ভাল মানুষ। ১ জুন বরিশালের চাঁদমারী বঙ্গবন্ধু কলোনীতে এভাবেই লিফলেট বিতরণের পাশাপাশি খোকন সেরনিয়াবাত এর জন্য ভোট চাইতে দেখা গেছে বিসিসির চাকুরীচ্যুতদের। প্রায় ৬০/৭০ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী মানবেতর জীবনযাপন করছেন গত তিন-চার বছর ধরে। এদের মধ্যে পারিবারিক স্বচ্ছলতা যাদের আছে তারা ছাড়া বাকী প্রায় সবাই খুব কষ্টে দিনানিপাত করছেন। স্বামী স্ত্রী দুজনেই চাকুরীচ্যুত হয়ে একজন মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছেন। প্রতিবন্ধী সন্তান নিয়ে অর্থনৈতিক সংকটে দিশেহারা কেউ কেউ। এরা সবাই জড়ো হয়েছেন বরিশালের আমীর কুটিরে। নিজস্ব উদ্যোগে খোকন সেরনিয়াবাত এর জন্য প্রচারণা ক্যাম্প বানিয়ে নিজেরাই ঐক্যবদ্ধ ভাবে চালিয়ে যাচ্ছেন প্রচারণার কাজ।
সরেজমিনে তাদের অফিস ও কার্যক্রম দেখতে গেলে চাকুরীচ্যুত বিদ্যুৎ শাখার প্রকৌশলী মনিরুল ইসলাম স্বপন, হিসাব রক্ষণ কর্মকর্তা মশিউর রহমান, ট্রেড সুপারিনটেনডেন্ট আজিজুর রহমান, হাট-বাজার শাখার নুরুল ইসলাম, প্রকৌশল শাখার উপ-সহকারী প্রকৌশলী আবুল কালাম আজাদ, আহসান হাবিব, মামুন অর রশীদ, এবিএম শাহিন, ডা: আব্দুল মতিন, প্রকৌশলী জহিরুল ইসলামের সাথে আলোচনায় জানা যায়, বরিশাল সিটি করপোরেশন এর চাকরীচ্যুত কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের আজও পুনর্বহালের সুযোগ রয়েছে। মেয়র বা সিইও ইচ্ছে করলেই তাদের চাকুরী ফিরিয়ে দিতে পারেন। এতে করে তারা নিজেরাও দায়মুক্ত হবেন বলে মতামত ব্যক্ত করেছেন চাকরীচ্যুত প্রায় অর্ধশত সদস্য।
নৌকা প্রতীকের লিফলেট বিতরণরত অবস্থায় হাঁটতে হাঁটতে তারা জানান, ২০১৮ সালে মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহ দায়িত্ব গ্রহণের পর ক্রমান্বয়ে প্রায় ৬০-৭০ জন কর্মকর্তা-কর্মচারীকে চাকুরীচ্যুত, ওএসডি ও বরখাস্ত করে। যা সম্পূর্ণ অবৈধ ও অনৈতিকভাবে করা হয়েছিলো।
সর্বশেষ গত ৩০ জানুয়ারি দায়িত্ব অবহেলা, সুবিধা পাইয়ে দেয়ার নামে উৎকোচ আদায়সহ গুরুতর বেশ কয়েকটি অভিযোগে বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের দুই প্রকৌশলীসহ ৬ জনকে চাকরিচ্যুত করা হয়।
চাকরিচ্যুতরা হলেন : বরিশাল সিটি করপোরেশনের সহকারী প্রকৌশলী (চুক্তিভিত্তিক) বাকি উল্লাহ, উপ-সহকারী প্রকৌশলী আরিফুল ইসলাম, স্টিমেটর (চুক্তিভিত্তিক) শাওন আকন, কার্য সহকারী (অস্থায়ী) শাহ জালাল, কর আদায় সহকারী নূর হোসেন ও শাহিন হোসেন। এর আগে সিটি মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহ এই সংক্রান্ত একটি লাইভ ভিডিও করে অভিযুক্তদের জেরা করেন এবং লাইভেই তাদেরকে চাকরি থেকে বিতাড়িত করার ঘোষণা দেন। ২০২১ সালের জুলাইয়ে ১২ জনকে চাকুরীচ্যুত করেন মেয়র। চাকরিচ্যুতরা হলেন : প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা আব্দুল মতিন, নির্বাহী প্রকৌশলী হুমায়ুন কবির, বিদ্যুৎ বিভাগের প্রকৌশলী কাজী মনিরুল ইসলাম, মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার কমল কৃষ্ণ দাস ও জহিরুল ইসলাম, চীফ অ্যাসেসর মুশফিক আহসান আজম, জনসংযোগ কর্মকর্তা আহসান উদ্দিন রোমেল, হিসাবরক্ষক মো. মাইনুদ্দিন, সম্পত্তি শাখার এস্টেট অফিসার মাহাবুবুর রহমান শাকিল, আইন সহকারী রফিকুল ইসলাম, হিসাব সহকারী আব্দুস সালাম ও হাট বাজার শাখার স্টল সহকারী আতাউর রহমান।
জনসংযোগ কর্মকর্তা স্বপন কুমার দাস ওই সময় সংবাদ মাধ্যমকে জানান, চাকরিচ্যুতদের কাউকে কাউকে আগে বরখাস্ত ও ওএসডি (বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা) করা হয়েছিল। সতর্ক করার পরও সংশোধন না হওয়ায় তাদের চাকরি থেকে চূড়ান্তভাবে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে। ১৯ জুলাই সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সৈয়দ ফারুক আহম্মদ ওই ১২ জন কর্মকর্তা-কর্মচারীর অব্যাহতি আদেশে স্বাক্ষর করেন। ১০ দিন পর ২৯ জুলাই চিঠিতে অফিস স্মারক নম্বর দেয়া হয়। এরপর ১৩ আগস্ট অফিস সহকারীদের মাধ্যমে তাদের হাতে চিঠি পৌঁছে দেয়া হয়।
তবে চাকরিচ্যুত ব্যক্তিদের দাবি, অনিয়মতান্ত্রিকভাবে তাদের চাকরিচ্যুত করা হয়েছে। তিন মাসের যে বেতন দেয়ার কথা বলা হয়েছে তাও তারা আজ পর্যন্ত পাননি।
সিটি করপোরেশনের পানি শাখার হিসাব সহকারী আব্দুস সালাম বলেন, ২০২১ সালের আগস্টের ১৩ বা ১৪ আগস্ট ‘বৃহস্পতিবার রাত ১০টার দিকে সিটি করপোরেশনের একজন লোক বাসায় এসে চিঠি দিয়ে যায়। চিঠিতে বলা হয়েছে, তিন মাসের বেতন পরিশোধ করা হয়েছে। কিন্তু সেই টাকা আমি আজ পর্যন্ত পাইনি। তা ছাড়া সিটি করপোরেশনের কাছে আমার ১৫ মাসের বেতন বকেয়া ছিলো তখন।
বিদ্যুৎ বিভাগের সহকারী প্রকৌশলী কাজী মনিরুল ইসলাম বলেন, ‘আমার বিরুদ্ধে যে দুর্নীতির অভিযোগ আনা হয়েছে তা সঠিক নয়। অনিয়মতান্ত্রিকভাবে আমাকে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে।’
একই অভিযোগে পরবর্তীতে তারা মামলাও করেন, যা বর্তমানে চলমান রয়েছে।
২০২০ সালে সেপ্টেম্বরে অর্থ আত্মসাত ও দুর্নীতির দায়ে বরিশাল সিটি করপোরেশনের চার কর্মকর্তাকে চূড়ান্তভাবে চাকরি থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়। ২৯ সেপ্টেম্বর বিসিসি’র প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ইসরাইল হোসেন স্বাক্ষরিত পৃথক অফিস আদেশে অভিযুক্তদের চাকরি থেকে চূড়ান্তভাবে অব্যাহতি দেয়া হয়। এরা হলেন: বাজেট কাম হিসাব রক্ষণ কর্মকর্তা মশিউর রহমান, ট্রেড সুপারিনটেনডেন্ট আজিজুর রহমান, হাট-বাজার শাখার নুরুল ইসলাম এবং প্রকৌশল শাখার উপ-সহকারী প্রকৌশলী আবুল কালাম আজাদ।
এই চাকুরীচ্যুতরা নির্বাচনী প্রচারণা চালাচ্ছেন শুনে ইতিমধ্যেই বিষয়টিকে স্বাগত জানিয়ে তাদের কাছে প্রচারণার লিফলেট পাঠিয়েছেন খোকন সেরনিয়াবাত।
খোকন সেরনিয়াবাত এর পক্ষে তার নির্বাচন পরিচালনা কমিটির দুই সদস্য কেবিএস আহম্মেদ কবীর ও আনিস উদ্দীন শহীদ এসে লিফলেট দিয়ে যান। তাদের সাথে মতবিনিময় হয়েছে বলে জানান, কাজী মনিরুল ইসলাম স্বপন। তিনি বলেন, আমরা বিসিসি এসআর গ্রুপ এর উদ্যোগে এই প্রচারণা শুরু করেছি। গত ২৮ মে বটতলা থেকে চৌমাথা, ২৯ মে কাকলীর মোড় থেকে নগরভবন, ৩০ মে জিলাস্কুল থেকে আমতলা মোড়, ৩১ মে জেলাখানা মোড় থেকে নথুল্লাবাদ এবং ১ জুন চাঁদমারী থেকে রাজ্জাক কলোনীতে প্রচারণা চালিয়েছি।
তিনি বলেন, আমরা আশাবাদী জয়ী হলে খোকন সেরনিয়াবাত আমাদের প্রতি ন্যায় বিচার করবেন। তিনি আমাদের চাকুরীতে ফিরিয়ে নেবেন এই বিশ্বাস নিয়ে আমরা প্রচারণা চালাচ্ছি।