দুই প্রার্থীর প্রচারনায় মুখর ৫ নং ওয়ার্ড দুই প্রার্থীর প্রচারনায় মুখর ৫ নং ওয়ার্ড - ajkerparibartan.com
দুই প্রার্থীর প্রচারনায় মুখর ৫ নং ওয়ার্ড

4:43 pm , June 1, 2023

নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ নগরীর ৫নং ওয়ার্ড সিটি কর্পোরেশনে অন্যতম ঘনবসতি পূর্ন একটি ওয়ার্ড। সংখ্যাগরিষ্ঠ নিম্ন আয়ের মানুষের বসবাস এই ওয়ার্ডে। জীবন যাত্রার মানও তুলনামূলক অনুন্নত। তবে বেশ চোখে পড়ার মত উন্নয়ন মূলক কাজ হয়েছে এই ওয়ার্ডটিতে। সিটি কর্পোরেশনের অন্য সকল ওয়ার্ড প্রায় উন্নয়ন শূন্য অবস্থায় থাকলেও এই ওয়ার্ডটিতে দেখা গেছে ব্যতিক্রম চিত্র। প্রধান সড়ক সহ ওয়ার্ডের বেশ কিছু শাখা সড়কের কাজ সম্পন্ন হয়েছে। চলমানও রয়েছে অনেক কাজ। সংস্কার হয়েছে ড্রেনেজ ব্যবস্থার। তবে সন্ত্রাস ও মাদক নিয়ন্ত্রন করতে ব্যর্থ হয়েছে ওয়ার্ডের বর্তমান কাউন্সিলর। এই ওয়ার্ড থেকে বর্তমান ও নতুন মিলিয়ে ৩ জন কাউন্সিলর প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। গত ২৬ মে আনুষ্ঠানিক প্রচারনা শুরুর পর থেকে জমজমাট প্রচারনা চালাচ্ছে মিষ্টিকুমরা প্রতীক নিয়ে বর্তমান কাউন্সিলর মো. কেফায়েত হোসেন রনি, ঠেলাগাড়ির নিয়ে ৪র্থ বারের মত শেখ মো. আনোয়ার হোসেন ছালেক এবং ঘুড়ি প্রতীকের নতুন প্রার্থী মো. হোসেন শিকদার। ঘুড়ি প্রতীক নিয়ে অংশ নেয়া প্রার্থী টুকটাক প্রচারনা চালালেও হাড্ডাহাড্ডি চলছে অপর দুই প্রার্থীর মাঝে। একে অপরের ত্রুটিগুলো তুলে ধরে চালাচ্ছেন কৌশলী নির্বাচনী প্রচার-প্রচারনা। তবে সাধারন বাসিন্দাদের ভাষায়, লোক নয়, কাজ দেখে আগামী ভোটে প্রতিনিধি বাছাই করবেন। বৃহস্পতিবার নির্বাচনী ওয়ার্ড পরিক্রমায় দৈনিক আজকের পরিবর্তন প্রতিবেদক গিয়েছিলো নগরীর ৫নং ওয়ার্ডে। সেখানের চিত্র ঠিক এমনটাই। আলাপে একাধিক সাধারন ভোটার জানায়, নগরীর অন্যতম ঘনবসতি পূর্ন এই এলাকাটিতে পূর্বে জলাবদ্ধতা, বিশুদ্ধ পানির অভাব, ভাঙাচোরা রাস্তাঘাট, ঝুকিপূর্ন বৈদ্যুতিক সংযোগ ব্যবস্থা, অপরিকল্পিত উন্নয়ন, মাদক, সন্ত্রাস, ছিনতাই-চাদাবাজি সব সমস্যাই ছিলো। বিগত ৫ বছরে এই সমস্যাগুলোর সব সমাধান না হলেও হয়েছে চলাচলের জন্য সিসি, আরসিসিনহ বেশ কয়েকটি রাস্তা। ড্রেনেজ ব্যবস্থার হয়েছে উন্নয়ন। টিউবয়েল গুলোকে সাবমার্সিবল রূপ দান করে সামাধান হয়েছে বিশুদ্ধ পানির সমস্যা। সর্বাপেক্ষা বেশি কলোনিযুক্ত এই ওয়ার্ডটিতে পূর্বে প্রতিদিন ব্যবহারের পানি নিয়ে ঝগড়া লেগেই থাকতো। যা এখন আর নেই। তবে মাদকের সয়লাব পুরো ৫নং ওয়ার্ড। আছে সন্ত্রাসী কর্মকান্ডও। আসন্ন ভোটে এমন প্রতিনিধিকেই বেছে নিবেন যে এই দুই সমস্যার কার্যকরি সমাধান দেবে। একই সাথে ওয়ার্ডের অবশিষ্ট উন্নয়ন কার্যক্রম সঠিক ভাবে সম্পন্ন করবে। বর্তমান কাউন্সিলর এর বিষয়ে ওয়ার্ডের বাসিন্দারা জানায়, নারী সংক্রান্ত একটি মামলায় কেফায়েত হোসেন রনির নাম জড়ানোর কথা তারা শুনেছেন। সত্য-মিথ্যা প্রমানের বিষয় সম্পূর্নই আদালতের হাতে। এটি তার এলাকাবাসীর প্রতি দায়িত্ব বোধকে মূল্যায়ন করা মানদন্ড হতে পারে না। প্রতিনিধি হিসেবে ওয়ার্ডের মানুষের জন্য সর্বোচ্চ কাজ করেছে রনি। বির্তকটি সম্পূর্ন তার ব্যক্তিগত বিষয়।
বাসিন্দাদের সাথে আলাপের পর একে একে আলাপ করা হয় তিন প্রার্থীর সাথে। সর্বপ্রথম আলাপে ৪র্থ বারের মত নির্বাচনে অংশ নেয়া ঠেলাগাড়ি মার্কার প্রার্থী মো. আনোয়ার হোনেস ছালেহ বলেন, ২০০৮ সালে প্রথম নির্বাচনে অংশ নিয়েছিলেন। বিভিন্ন উপায়ে তাকে হারানো হলেও নির্বাচনী মাঠ ছাড়েননি এখনো। ওয়ার্ডে সবচেয়ে বড় সমস্যা মাদক। বিগত সময়ে বর্তমান কাউন্সিলর দৃশ্যমান কোন উন্নয়ন করতে পারেনি বলে দাবী করেন এই প্রার্থী। ওয়ার্ডে কাচামাটির রাস্তা যার প্রমান। ওয়ার্ডে প্রশাসনের হস্তক্ষেপের কোন স্থান রাখেনি বর্তমান কাউন্সিলর। তাই আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। কেফায়েত নির্বাচিত হওয়ার পর মাদকের ছড়াছড়ি চলছে। ছালেক বলেন বিগত ৫বছরে ওয়ার্ডে সিটি কর্পোরেশন ও জার্মান প্রযেক্ট মিলিয়ে ৪০-৪২ কোটি টাকার কাজ এসেছে। তবে সেই টাকা দিয়ে করা হয়েছে অপরিকল্পিত উন্নয়ন। যে উন্নয়নের দরকার নেই তা করে বাদ দেয়া হয়েছে প্রয়োজনীয় উন্নয়ন মূলক কাজ। রনি নির্বাচিত হয়েছে জড়িয়ে পরেছে নারী কেলেঙ্কারিতে। তাকে কোন সমস্যায় এলাকার সাধারন বাসিন্দারা পাইনি। দলীয় লোকের ডাকে সাড়া দিলেও রনির সাড়া মেলেনি ওয়ার্ডের সাধারন বাসিন্দার ডাকে। রনির বিরুদ্ধে নির্বাচনি আচারন বিধি ভঙ্গ সহ তার কর্মীদের উস্কানিমূলক কথাবার্তা বলার অভিযোগ করেছে এই প্রার্থী। এছাড়াও ভোটে মতিনপূর স্কুল ও জাহানারা মাদ্রাসা কেন্দ্র দুটিকে ঝুকি পূর্ন দাবী করেছেন তিনি। এলাকার বাসিন্দাদের যথেষ্ট সাড়া পাচ্ছেন। সুষ্ঠু সুন্দর ভোট হলে বিশাল জয় লাভের পর ওয়ার্ডে বেকারত্ব দূর করার মাধ্যমে মাদক নির্মূলের চেস্টা করবেন বলে অশাবাদ ব্যক্ত করেন ছালেক।
নতুন প্রার্থী ঘুরি মার্কা নিয়ে নির্বাচনে অংশ নেয় মো. হোনেস শিকদার বলেন, ৫নং ওয়ার্ডে সিমাবদ্ধতার নির্বাচন চলে আসছে বছরের পর বছর ধরে। ২-৩ জন ব্যক্তির বাইরে কেউ এই ওয়ার্ড থেকে নির্বাচন করতে পারতো না। এই ধারা ভাঙতে তিনি এবার নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন। হয়তো জিতবো না হয় শিখবো। এলাকার বিগত ৫ বছরে বেশ উন্নয়ন মূলক কাজ হয়েছেন বলে জানান তিনি। তবে মাদক সন্ত্রাস ওয়ার্ডের প্রধান সমস্যা। মাদক র্নিমূলে প্রতিনিধিদের কোন সহযোগীতা না পাওয়ায় এই সমস্যা দিনদিন বড় হচ্ছে। নির্বাচনে প্রতিদন্ধি প্রার্থীদের পক্ষ থেকে কোন বাধানা আসলেও তাদের সমর্থকরা প্রতিহিংসা মূলক আচার আচরন করে থাকে। সে কারনে তার প্রচারনায় ওয়ার্ডের সাধারন বাসিন্দারা অংশ নিতে সাহস পায় না। তবে সুষ্ঠু সুন্দর ভোটে প্রতিদন্ধিতায় ভালো অবস্থানে থাকার আশাবাদি তিনি। নির্বাচিত হতে পারলে এলাকার মুরুব্বিদের সাথে নিয়ে সকল উন্নয়ন মূলক কাজ প্রচারনা করবেন। মাদক সন্ত্রাস র্নিমূল করবেন। শুধু দলীয় লোকজনকেই নয়, প্রকৃত দরিদ্র লোকদের সহায়তা করবেন।
সর্বশেষ আলাপে বর্তমান কাউন্সিলর মিষ্টি কুমড়া মার্কা নিয়ে নির্বাচনে অংশ নেয়া কেফায়েত হোসেন রনি বলেন, এবার নিয়ে ২য় বার নির্বাচনে অংশ নিয়েছেন। ওয়ার্ডে কি উন্নয়ন হয়েছে তা একবার পুরো ওয়ার্ড ঘুরে যাচাই করার অনুরোধ করেন এই প্রার্থী। বিগত ৫ বছরে কেএফডাব্লিউ প্রযেক্ট সক মোট ৩৫ কোটি টাকার উন্নয়ন মূলক কাজ হয়েছে ৫নং ওয়ার্ডে। যে সকল কাজের ৭০-৮০ শতাংশ সম্পূর্ন হয়েছে। যেটুকু বাকি রয়েছে তাও চলমান। ১৪ কোটি টাকার ড্রেনের কাজ হয়েছে ও চলমান রয়েছে। ২০ কোটি টাকার সিসি, আরসিসি ও বিসি টাইপ রাস্তা নির্মান করা হয়েছে। যারা বলে কাজ হয়নি তারা আসলে কি বলছে তা বোধগম্য নয় বলে মন্তব্য করেন তিনি। সবকিছুই দৃশ্যমান। এখানে লুকানের মত কিছুই নেই। শুধু উন্নয়নই নয়, করোনা কালীন সময়ে ওয়ার্ডের প্রতিটি ঘরে ৪-৬ বার প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম পৌছে দেয়া হয়েছে। ৫ হাজারের উপর টিসিবি কার্ড বিতরন করা হয়েছে ওয়ার্ডে। নির্মিত হয়েছে একটি পাম্প হাউজ, যা ঘন্টায় ২৬ হাজার গ্যালন পানি উৎপাদন ক্ষমতা সম্পন্ন। বন্ধ নগর স্বাস্থ কেন্দ্রের কাজ পূনরায় চালু করা হয়েছে। এর চাইতে বেশি কিছু তার পক্ষে এই সময়ে করা আর সম্ভব হয়নি বলে জানান এই প্রার্থী। তবে মাদক নিয়ন্ত্রনে কিছু সীমাবদ্ধতা রয়েছে। সর্বাপেক্ষা বেশি কলোনি থাকায় এই ওয়ার্ডে সম্পূর্ন প্রশাসনের কঠিন হস্তক্ষেপ ছাড়া সম্পূর্ন মাদক নিয়ন্ত্রন করা কোন প্রতিনিধির পক্ষে সম্ভব নয় বলে জানান কেফায়েত হোসেন রনি। তিনি কাউকে বাধা দিচ্ছেন না। যদি কেউ এমন অভিযোগ করে থাকে তবে তা অবশ্যই নির্বাচনি অপকৌশল। উল্টো মনে প্রানে নৌকা নিয়ে প্রচার প্রচারনায় এগোলেও তাদের নামে নৌকার বিরোধিতা করার অপপ্রচার করা হচ্ছে বলে দাবী তার। আসন্ন নির্বাচনে জয়লাভে নিজের কাজের উপর বিশ্বাস রেখে আশাবাদি তিনি।
উল্লেখ্য ৫নং ওয়ার্ডে ১৫ হাজারের কিছু বেশি ভোটার রয়েছে। ৬টি কেন্দ্রে ভোট গ্রহন অনুষ্ঠিত হবে।

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন    
সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী মিরাজ মাহমুদ
 
বার্তা ও বানিজ্যিক কার্যালয়ঃ কুশলা হাউজ, ১৩৮ বীরশ্রেষ্ঠ ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর সড়ক,
সদর রোড (শহীদ মিনারের বিপরীতে), বরিশাল-৮২০০।
© প্রকাশক কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
Developed by NEXTZEN-IT