পাঁচ প্রার্থীর প্রচারনায় জমজমাট পাঁচ প্রার্থীর প্রচারনায় জমজমাট - ajkerparibartan.com
পাঁচ প্রার্থীর প্রচারনায় জমজমাট

3:56 pm , May 31, 2023

নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ নগরীর বাণিজ্যিক এলাকা ৬ নং ওয়ার্ডে পাঁচ কাউন্সিলর প্রার্থীর প্রচার প্রচারণায় মুখরিত। প্রায় সব ধরনের নাগরিক সমস্যায় জর্জরিত এই ওয়ার্ডটিতে সাবেক, বর্তমান, জনপ্রিয়, নতুন ও তরুণ কাউন্সিলর প্রার্থীরা নির্বাচনী মাঠ দখলে দিনরাত ছুটছেন ভোটারদের দ্বারে দ্বারে। বিগত সময়ে বিরাজমান সমস্যা দশ ভাগ সমাধান করতে না পারলেও, কারো দাবি সমাধান হয়েছে আশি শতাংশ। অন্যদিকে সাবেক জনপ্রিয়দের দাবি এই সময় কাজের হয়নি ছিটে ফোটাও। তাদের সময়ের উন্নয়ন পর্যন্তই থমকে আছে। উন্নয়ন না হলেও নানা অনিয়ম দুর্নীতির অভিযোগ উঠে এসেছে। অপরদিকে তরুণদের দাবি সাবেক বর্তমান সকলের উপর ভরসা হারিয়েছে জনগণ। ভোটাররা তারুণ্যে বিশ্বাসী। তারা পরিবর্তন চায়। বুধবার নির্বাচনী ওয়ার্ড পরিক্রমায় দৈনিক আজকের পরিবর্তন প্রতিবেদক গিয়েছিল নগরীর ৬ নং ওয়ার্ডে। ওয়ার্ডটি থেকে এবারের নির্বাচনে অংশ নেয়া পাঁচ কাউন্সিলর প্রার্থীরা হলেন, ঘুড়ি মার্কা নিয়ে নির্বাচনে অংশ নেয়া বর্তমান কাউন্সিলর খান মো. জামাল হুসাইন, লাটিম মার্কা নিয়ে এবার নির্বাচনে অংশ নেয়া ওয়ার্ডের সাবেক দুবারের জনপ্রিয় কাউন্সিলর মো. হাবিবুর রহমান টিপু, তৃতীয়বারের মতো নির্বাচনে অংশ নেয়া ঠেলাগাড়ি মার্কার মো. আখতার উজ্জামান, তরুণ প্রার্থী মিষ্টি কুমড়া মার্কার মো. সোহেল সিকদার (প্রিন্স মাহমুদ) এবং টিফিন ক্যারিয়ার মার্কার মো আব্দুস সালাম খান (মনু)। সাধারণ একাধিক ভোটারদের সাথে আলাপে জানা যায়, এই ওয়ার্ডটিতে অধিকাংশ মধ্যম ও নি¤œ আয়ের  শ্রমজীবী মানুষের বসবাস। ওয়ার্ডে রয়েছে প্রায় সকল ধরনের সমস্যা। এদের মধ্যে প্রধান মাদক। এছাড়াও রয়েছে জলাবদ্ধতা ,অপর্যাপ্ত গৃহায়ন, বেহাল দশার শাখা সড়ক, বিশুদ্ধ পানির অভাব, অপরিচ্ছন্নতা, শিক্ষার অভাব সহ সকল সমস্যা। ভোটাররা জানায় বর্তমান কাউন্সিলর তার দায়িত্বকালীন সময়ে তেমন কোন উন্নয়ন কাজ করতে পারেনি। জনবিচ্ছিন্নতা তার একটি বড় সমস্যা ছিল। ওয়ার্ডে যেটুকু উন্নয়নমূলক কাজ হয়েছে তা সার্বিক নগর উন্নয়ন কাজের অংশ হিসেবেই হয়েছে। কাউন্সিলরের ব্যক্তিগত কোন কৃতিত্ব  তাতে দেয়া যায় না। এছাড়া তার নাম জড়িয়ে ওয়ার্ডে কিছু অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগও রয়েছে। ভোটাররা জানায় এই ওয়ার্ডের নি¤œ আয়ের মানুষের জীবনযাত্রার মান খুবই শোচনীয়। শিশু পার্ক কলোনি ও কলা পট্টি কলোনিতে এখনো জোয়ারে তলিয়ে যায় বাসিন্দাদের ঘর বাড়ি। ভোটে তারা এমন ব্যক্তিকে বেছে নেবেন যে সর্বদা তার পাশে থেকে সকল সমস্যার কার্যকরী সমাধান এনে দেবে। এ সকল বিষয়ে আলাপ করা হয় প্রার্থীদের সাথে। দুইবারের জনপ্রিয় কাউন্সিলর মো হাবিবুর রহমান টিপু বলেন, ২০০৩ থেকে ২০০৮ সালে এই ওয়ার্ড থেকে বিপুল ভোটে নির্বাচিত হন। দ্বিতীয়বার ২০১৩ থেকে ২০১৮ সালে পুনরায় বিপুল ভোটে নির্বাচিত হন তিনি। ১৮ থেকে ২৩ এর ভোটে জনগণের ভোট দেয়ার পরেও জোর করে তাকে হারানো হয়। এবার নিয়ে চতুর্থবারের মতো নির্বাচন অংশ নিয়েছেন। নির্বাচিত হয়ে প্রথম কাজ হিসেবে করবেন ওয়ার্ডের মাদক নির্মূল। মাদক সেবিদের স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনার দায়িত্ব নেবেন। মধ্য ও নি¤œ আয়ের মানুষ বেশি। বিগত পাঁচ বছরে ওয়ার্ডের মধ্যে ও নি¤œ আয়ের বাসিন্দাদের ওয়ার্ল্ড ভিশন ও রেড ক্রিসেন্ট জীবন উন্নয়নে প্রচুর আর্থিক সহায়তা দিয়েছে বলে জানান তিনি। তবে সেখানে দুর্নীতি হয়েছে বলে অভিযোগ করেন। আর্থিক সহায়তার টাকা মূলত যাদের প্রাপ্য তারা পায়নি। আর যারা পেয়েছে তাদের কে দিতে হয়েছে অনুদানে ৫০০০ টাকা করে ঘুষ। এই ঘুষ নিয়েছে বন্টনের দায়িত্বে থাকা প্রতিনিধিরা ও তাদের লোকজনেরা। এমন অভিযোগের সত্যতা অনুসন্ধানেও মিলেছে। এ বিষয়টি নিয়ে অভিযোগ হয়েছে। নির্বাচিত হলে এ ধরনের অনিয়ম ওয়ার্ড থেকে দূর করা হবে বলে জানান টিপু। টিপু বলেন,তার দায়িত্বকালীন সময়ে সিডিসি প্রজেক্ট ছিল। এতে খেটে খাওয়া মানুষের স্বাবলম্বী হওয়ার সুযোগ ছিল। বিগত পাঁচ বছর সেটি বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। লাটিম মার্কা নিয়ে ভোটে নির্বাচিত হতে পারলে এই প্রজেক্টটি পুনরায় চালু করা হবে। উন্নয়ন প্রসঙ্গে টিপু বলেন, ১৩ থেকে ১৮ সালে ৪৮ টি রাস্তার সমাপ্ত করেছেন। যার টাকা সিটি কর্পোরেশনে এখনো তার পাওনা। উত্তর আমানতগঞ্জে ও বেশ কিছু রাস্তার কাজ করিয়েছেন। গত পাঁচ বছরে বর্তমান কাউন্সিলর কোন কিছুই করেনি। রয়ে গেছে পূর্বের হেরিংবন। নির্বাচিত হলে অসম্পূর্ণ এ কাজগুলো সম্পন্ন করবেন। এবারে এই ওয়ার্ড থেকে নির্বাচনে নমিনেশন কেনার আগেই তাকে হুমকি দেয়া হয়েছিল বলে অভিযোগ করেন টিপু। এখন হুমকি দিচ্ছে সেন্টারে ঢুকতে দেয়া হবে না বলে। তার প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী এমন হুমকি দেয়ার সাথে সাথে তার কর্মীদের প্রচার-প্রচারণায় বাধা দিচ্ছেন বলেও জানান তিনি। টিপু এই ব্যাপারে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও নির্বাচন কমিশনের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন। ওয়ার্ডের পাঁচটি কেন্দ্রে চারটি কে ঝুঁকিপূর্ণ বলে মনে করেন টিপু। তবে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ ভোট হলে এবারও বিপুল ভোটে জয়লাভ করবেন বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন এই প্রার্থী।
তৃতীয়বারের মতো নির্বাচনে অংশ নেয়া ঠেলাগাড়ি মার্কার মো আখতার উজ্জামান বলেন, বর্তমান কাউন্সিলর বিগত পাঁচ বছরে কিছুই করতে পারেনি। ওয়ার্ডে রয়েছে প্রায় সব ধরনের নাগরিক সমস্যা। সমাজসেবা তার পুরনো কাজ। নির্বাচিত হতে পারলে প্রধানমন্ত্রী মনোনীত মেয়র প্রার্থী খোকন সেরনিয়াবাতের কাছ থেকে সর্বোচ্চ উন্নয়ন কার্যক্রম এনে দেবেন এলাকাবাসীর জন্য। তার নির্বাচনী কার্যক্রমে কোন ধরনের সমস্যা নেই বলে জানান এই প্রার্থী। সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ ভোট ইভিএম পদ্ধতিতে সম্পন্ন হওয়ার আশাবাদ ব্যক্ত করেন। সেই ভোটে শতভাগ নির্বোধিত হওয়ার ব্যক্ত করেন তিনি। তরুণ ও নতুন প্রার্থী মিষ্টি কুমড়া মার্কা নিয়ে নির্বাচনে অংশ নেয়া মো সোহেল সিকদার (প্রিন্স মাহমুদ) বলেন, এই প্রথম নির্বাচনে অংশ নিয়েছেন। ওয়ার্ডের ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দীর্ঘদিন দায়িত্ব পালন করছেন। তাদের এই ওয়ার্ডে শ্রমজীবী নি¤œ আয়ের মানুষই বেশি। ওয়ার্ডে শিক্ষার মান খুব খারাপ। রয়েছে মাদকের প্রকট সমস্যা। প্রধান প্রধান সড়ক মোটামুটি চলাফেরার মত থাকলেও শাখা সড়ক গুলোর অবস্থা খুবই খারাপ। বর্তমান কাউন্সিলর বিগত পাঁচ বছরে কোন কাজই করতে পারেনি তাই ওয়ার্ডের ভোটাররা পরিবর্তন চায়। ভোটাররা তারুণ্যের উপর বিশ্বাসী। তাদের এই বিশ্বাসেই তিনি নির্বাচনে অংশ নিয়েছেন। নির্বাচিত হতে পারলে হোয়াট ইস শ্রমজীবী শিশুদের শিক্ষার উপর গুরুত্ব দেবেন বলে জানান এই প্রার্থী ।শ্রম দিবে শিশুদের জন্য নৈশ স্কুল খোলার মহৎ  উদ্দেশ্যের কথা জানান তিনি। সেখানে মানসম্মত স্বেচ্ছা শ্রমি শিক্ষকদের দ্বারা তাদেরকে পাঠদান করানোর ব্যবস্থা করবেন। এলাকায় মাদকের পুকুর রুখতে জনসচেতনতা বৃদ্ধির কথা বলেন সোহেল সিকদার। এছাড়া মাদক সেবীদের কাউন্সিলিং এর মাধ্যমে স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনা ও তাদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থার কথাও বলেন তিনি। নির্বাচিত হলে আরও একটি সমস্যার বিষয় গুরুত্ব দেবেন বলে জানান সোহেল ,ওয়ার্ডের শিশু পার্ক কলোনি ও কলা পট্টি কলোনিতে এখনো জোয়ারে পানি ওঠে ঘরবাড়িতে। এই কলোনীতে প্রায় পাঁচ হাজার মানুষ বসবাস করে। নির্বাচিত হলে পরিকল্পিত উপায়ে তাদের এই সমস্যা লাগবে চেষ্টা করবেন। ওয়ার্ডে বিশুদ্ধ পানির অভাব রাখবেন না বলে জানান। জনগণের ভালো সাড়া পাচ্ছেন, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ ভোট হলে শতভাগ জয়ী হওয়ার আশাও ব্যক্ত করেন এই তরুণ প্রার্থী। নির্বাচনে অংশ নিলেও মোঃ আব্দুস সালাম খান মনু নামের টিফিন ক্যারিয়ার মার্কার প্রার্থীর ওয়ার্ডে তেমন কোন প্রচারনা লক্ষ্য করা যায়নি। দুই তিন নির্বাচনী কার্যালয়ে দেখা গেলেও আলাপের জন্য যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তাকে পাওয়া যায়নি।সর্বশেষ আলাপ করা হয় বর্তমান কাউন্সিলর বর্তমানে ঘুড়ি মার্কা নিয়ে নির্বাচনে অংশ নেয়া খান মো. জামাল হুসাইনের সাথে। তিনি বলেন, বিগত পাঁচবার নির্বাচনে অংশ নিয়েছেন। তার ওয়ার্ডটি একটি বাণিজ্যিক এলাকা। দুটি কলোনিতে জলাবদ্ধতা একটি নিয়মিত সমস্যা। খাল গুলোর সঠিক তত্ত্বাবধায়ন না, হওয়ায় এই সমস্যা হচ্ছে। সব সময় এই সমস্যা ছিল না। কারণ তখন খালে জলপ্রবাহ ছিল। খাল ভরাট হওয়ার কারণে জোয়ারের পানি নামতে না পেরে কলোনি দুটিতে এই সমস্যা হচ্ছে প্রতিনিয়ত। প্রধান সড়কে কোন সমস্যা না থাকলেও কিছু শাখা সড়কের সমস্যা আছে। বিগত পাঁচ বছরে তার ওয়ার্ডের আশি শতাংশ কাজ সম্পন্ন করতে পেরেছেন বলে দাবি করেন এই প্রার্থী। বিশ্ব দশ কাজ বাকি আছে যা পুনরায় নির্বাচিত হলে সম্পূর্ণ করবেন। মাদকের সমস্যা পূর্বের ছিল।তিনি নির্বাচিত হয়ে মাদকের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি অবলম্বনের মাধ্যমে এই সমস্যা অনেকটাই কমিয়ে এনেছেন। এখনো রয়েছে তবে আগের মত নেই বলে দাবি এই প্রার্থী। ওয়ার্ডে পর্যাপ্ত পরিমাণ বিশুদ্ধ পানির যোগান এর ব্যবস্থা সিটি কর্পোরেশন এর মাধ্যমে তিনি করিয়েছেন। পরে অন্যান্য প্রার্থীদের অভিযোগের বিষয়ে তিনি বলেন, এনজিওর ওয়ার্ডের বাসিন্দাদের মধ্যে বিতরনে ঘুষ গ্রহণের বিষয়টি তার কানেও এসেছে। বিষয়টি সত্যতা ও রয়েছে বলে স্বীকার করেন এই প্রার্থী। তবে এ বিষয়ে তিনি কিছুই জানেন না। তবে কারা জড়িত তা তদন্ত করে বের করা হবে। তার বিরুদ্ধে যারা বিভিন্ন ধরনের অভিযোগ তুলছে তারা মূলত এই ওয়ার্ডের বিপদে কখনোই ঝাঁপিয়ে পড়েন নি। কোন দুর্যোগেই জনগণ তাদেরকে পাশে পায়নি। নির্বাচনী অপকৌশল হিসেবে তাকে হেয় প্রতিপন্ন করার উদ্দেশ্যে নানা ধরনের অভিযোগ তুলছে। সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ ভোট হলে শতভাগ আশাবাদী তিনি। কোন কেন্দ্র কি তিনি ঝুঁকিপূর্ণ বলে মনে করেন না। এমনকি তার নির্বাচনী কাজে কোন ধরনের বাধা-বিপত্তি ও নেই বলে জানান। উল্লেখ্য ,৬ নং ওয়ার্ডে মোট ভোটার ১১০৪৫ জন। পাঁচটি কেন্দ্রে ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে।

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন    
সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী মিরাজ মাহমুদ
 
বার্তা ও বানিজ্যিক কার্যালয়ঃ কুশলা হাউজ, ১৩৮ বীরশ্রেষ্ঠ ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর সড়ক,
সদর রোড (শহীদ মিনারের বিপরীতে), বরিশাল-৮২০০।
© প্রকাশক কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
Developed by NEXTZEN-IT