4:16 pm , May 28, 2023

বিশেষ প্রতিবেদক ॥ অনাবৃষ্টি, অতিবৃষ্টি আর ঘূর্ণিঝড় ‘মোখা’র চোখ রাঙানীর পরেও প্রায় নির্বিঘেœই লক্ষ্যমাত্রা অতিক্রম করে ১৭ লক্ষাধিক টন বোরা চাল ঘরে তুললেন বরিশাল কৃষি অঞ্চলের কৃষি যোদ্ধারা। সদ্য সমাপ্ত রবি মৌসুমে দক্ষিণাঞ্চলের প্রায় ৩ লাখ ৬৭ হাজার ৬৮০ হেক্টরে আবাদ লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে ৩.৭০ লাখ হেক্টরেরও বেশী জমিতে আবাদ সম্পন্নের কথা বলেছে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর-ডিএই। আবাদ লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী এ অঞ্চলে বোরো ধান থেকে উৎপাদন লক্ষ্য ছিলো সাড়ে ১৬ লাখ টনের কিছু বেশী। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের পরিসংখ্যান অনুযায়ী ইতোমধ্যে বরিশাল কৃষি অঞ্চলের ১১ জেলার শতভাগ বোরা ধান কর্তন সম্পন্ন হয়েছে। আর মাঠের হিসেব অনুযায়ী বরিশাল কৃষি অঞ্চলের ১১ জেলায় এবার হাউব্রিড, উফশী ও স্থানীয় জাতের ধান মিলিয়ে গড় উৎপাদন হয়েছে হেক্টর প্রতি ৪.৬ টনের সামান্য বেশী চাল। এ হিসেবে দক্ষিণাঞ্চলের ১১ জেলায় সদ্য সমাপ্ত রবি মৌসুমে ১৭ লাখ ১১ হাজার ৩৮৭ টন বোরো চাল উৎপাদন হয়েছে। যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে প্রায় ৪০ হাজার টন বেশী।
অপরদিকে খরিপ-১ মৌসুমে দক্ষিণাঞ্চলজুড়ে প্রায় আড়াই লাখ হেক্টরে আউশের আবাদও শুরু হয়েছে। যা থেকে অন্তত ৭ লাখ টন চাল পাবার আশাবাদী কৃষিবীদরা। ইতোমধ্যে প্রায় ৩৫ ভাগ জমিতে আউশের আবাদ সম্পন্ন হয়েছে বলে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর-ডিএই জানিয়েছে।
তবে গত বছর ডিজেলের মূল্য বৃদ্ধির কারণে এবার বোরো ধানের উৎপাদন ব্যয় মণ প্রতি প্রায় ৯শ টাকায় উন্নীত হয়েছে বলে জানিয়েছেন দক্ষিণাঞ্চলের কৃষকরা। পাশাপাশি গত বছর ও এবছর দু দফায় সব ধরনের সারের দাম কেজি প্রতি ১০ টাকা বৃদ্ধির ফলেও উৎপাদন ব্যয় আরো বেড়েছে। উপরন্তু সেচাবাদে ব্যবহৃত বিদ্যুতের ওপর ২০০২ সাল থেকে সরকার ২০ ভাগ ভর্তুকী দিলেও ডিজেলের ক্ষেত্রে তা এখনো অনুপস্থিত। অথচ এবারো দক্ষিণাঞ্চলে সেচাবাদকৃত ৩.৭০ লাখ হেক্টর বোরো ধানের অন্তত ৭৫ ভাগ জমির সেচ ব্যবস্থাই ডিজেল চালিত পাম্পের ওপর নির্ভরশীল ছিলো। ফলে সারাদেশের তুলনায় দক্ষিণাঞ্চলে বোরো উৎপাদন ব্যয় অন্তত ২৫ ভাগ বেশী। কিন্তু মিল মালিকদের নিয়োজিত ফরিয়া সিন্ডিকেটের কারণে ধানের দামে কৃষকের ভাগ্যের পরিবর্তন হচ্ছে না।
প্রতিবছরই দক্ষিণাঞ্চলে খরিপ-১, খরিপ-২ ও রবি মৌসুমে ঘূর্ণিঝড় ‘ইয়াশ’,‘অশণি’ ও ‘সিত্রাং’এর মত ভয়াবহ প্রাকৃতিক দুর্যোগের বিরুদ্ধে লড়াই করেই ধানসহ সব ফসল উৎপাদন করতে হচ্ছে কৃষি যোদ্ধাদের। একের পর এক প্রাকৃতিক দুর্যোগ কৃষকদের ক্ষতির সাথে দুশ্চিন্তাকে বৃদ্ধি করে চললেও বরিশাল কৃষি অঞ্চলের ১১ জেলায় এবার ৩টি মৌসুমে দানাদার খাদ্য ফসল উৎপাদন ৫০ লাখ টন অতিক্রম করেছে। ফলে প্রায় ১৪ লাখ টন খাদ্য উদ্বৃত্ত দক্ষিণাঞ্চলে এবার তা প্রায় ১৭ লাখ টনে উন্নীত হতে পারে বলে আশাবাদী মাঠ পর্যায়ের কৃষিবীদরা।
বিগত শীত মৌসুম শুরুর আগেই দক্ষিণাঞ্চল জুড়ে তাপমাত্রার পারদ স্বাভাবিকের নিচে নামায় বেশ কিছু বোরো বীজতলা ‘কোল্ড ইনজুরী’র শিকার হয়। আবার আগাম শীত বিদায়ের পরে মৃদু থেকে মাঝারী তাপ প্রবাহে বোরো ধান আগে পাকতে শুরু করে। তবে এবার বড় ধরনের কোন কালবৈশাখী সহ অতি ভারী বর্ষন বিপর্যয় ডেকে না আনলেও ঘূর্ণিঝড় ‘মোখা’র গতি প্রকৃতি নিয়ে শংকিত ছিলো দক্ষিণাঞ্চল সহ উপকূলের কৃষি যোদ্ধারা। তবে দুর্যোগ থেকে বেঁেচ গেছে বিশাল কৃষি সম্পদ।
এদিকে বিগত খরিপ-২ মৌসুমে দক্ষিণাঞ্চলে ৮ লাখ ৫৭ হাজার ১৩৮ হেক্টর জমিতে আমন আবাদ লক্ষ্য অর্জিত হয়। ফলে এ অঞ্চলে প্রায় ২০ লাখ ৫৬ হাজার টন চাল উৎপাদন লক্ষমাত্রাও অতিক্রম হয়েছে বলে মনে করছে ডিএই। বিগত খরিপ-১ মৌসুমেও এ অঞ্চলে আবাদকৃত আউশ থেকে প্রায় ৬ লাখ টন চাল পাওয়া গেছে।
সদ্য সমাপ্ত রবি মৌসুমে দেশে ৪৯ লাখ ৭৭ হাজার ৬৬০ হেক্টরে বোরো আবাদের লক্ষ্যমাত্রা অতিক্রমের ফলে ২ কোটি ১০ লাখ টন চাল উৎপাদনে দৃঢ় আশাবাদী ডিএই সহ কৃষি মন্ত্রণালয়।