দেড় হাজার ইজিবাইক শহরে চলার স্টিকার পেলেও রাস্তায় নেই কেউ দেড় হাজার ইজিবাইক শহরে চলার স্টিকার পেলেও রাস্তায় নেই কেউ - ajkerparibartan.com
দেড় হাজার ইজিবাইক শহরে চলার স্টিকার পেলেও রাস্তায় নেই কেউ

4:26 pm , May 25, 2023

বিশেষ প্রতিবেদক ॥ গত দুই মাসে প্রায় দেড় হাজার ইজিবাইক চালকদের শহরে চলার অনুমোদন দিয়েছে বরিশাল সিটি করপোরেশন। যদিও দুই ঘন্টার অনুসন্ধানে এই অনুমোদিত একটি ইজিবাইকও খুঁজে পাওয়া যায়নি নগরীতে। বেশিরভাগ ইজিবাইক শহরের বাইরের ও শ্রমিক নেতা পরিমল চন্দ্র দাসের পরিচিতজনদের বলে নিয়মিত চালকদের অভিযোগ। বরিশাল মহানগরীতে চলাচলের জন্য এভাবে ৫ হাজার ২শ  ইজিবাইক অনুমোদন দেয়া হবে বলে জানা গেছে।
বৃহস্পতিবার সরেজমিন অনুসন্ধানে উঠে এসেছে এসব তথ্য। শ্রমিক নেতা পরিমল চন্দ্র দাস জানান, বারো হাজারের বেশি আবেদনের বিপরীতে সিটি করপোরেশন এলাকায় চলাচলের লাইসেন্স পাবে ৫ হাজার ২শ ইজিবাইক। আর ইতিমধ্যেই গত দুইমাসে লাইসেন্স ও  পোশাক বাবদ যানবাহন শাখার দায়িত্বশীল কর্মকর্তাকে ৭৫০ টাকা এবং  ব্যাংকে ৫৭৫০ টাকা জমা দিয়েছেন প্রায় দেড় হাজার ইজিবাইক চালক।
তবে কতজন টাকা জমা দিয়েছেন তার সঠিক তথ্য পরিমলের কাছে নেই। তিনি বলেন, সঠিক তথ্য সিটি করপোরেশনের যানবাহন শাখার লোকরা বলতে পারবে। আমি জানি ১২ হাজারের বেশি আবেদন পড়েছিল। তাদের স্টিকার দিয়েছিলাম আমরা।
তিনি আরো বলেন, এই চালকদের যারা টাকা জমা দিয়েছেন তাদের গাড়ির পিছনে লাল কালিতে সিটি লিখে দেয়া হয়েছে।
সিটি করপোরেশনের মূল ভবনের যানবাহন শাখা বলে এখন আর কিছু নেই। সেটা এনেক্স ভবনে ইজিবাইকের লাইসেন্স দেয়ার কাজ হচ্ছে বলে জানান একজন সহকারী। বেশিরভাগ কর্মকর্তা ও কর্মচারী এখানে চুক্তিভিত্তিক বা আউটসোর্সিং কর্মী হিসেবে নিয়োগপ্রাপ্ত বলেও জানান নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সিটি করপোরেশনের যানবাহন শাখার সাবেক একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা। তিনি বলেন, এভাবে ৫ হাজার ২শ ইজিবাইককে লাইসেন্স ও ব্লুবুক দেয়া হবে। যদি দেড় হাজার ইজিবাইক ইতিমধ্যে পেয়ে থাকে তাহলে প্রায় এককোটি টাকা পেয়ে গেছেন তারা। এই টাকা ব্যাংকে আছে কিনা তার তদন্ত আগে করার দাবী বরখাস্তকৃত এই কর্মকর্তার।
এদিকে এনেক্স ভবনে ইজিবাইক রেজিষ্ট্রেশনের দায়িত্বরত আউটসোর্সিং কর্মী মূলত একজন পরিচ্ছন্ন বিভাগের কর্মী। তিনি বলেন, আমাকে যখন যা করতে বলা হয়, আমি তা পালন করি শুধু। এ বিষয়ে প্রশাসনিক কর্মকর্তা বা জনসংযোগ কর্মকর্তা আপনাকে তথ্য দেবেন।
এনেক্স ভবনে দায়িত্বরত আউটসোর্সিং এর আরেকজন কর্মী বলেন, আমি শুধু জানি যারা টাকা জমা দেবে তাদের ফোন করে ডাকা হয়। ড্রাইভিং লাইসেন্স, কাগজপত্র যাচাই-বাছাই করে ব্যাংকে ৫ হাজার টাকা জমা দিতে হয়। এসময় অন্যজন বাধা দিয়ে বলেন, না না ৫ হাজার নয়, ৫ হাজার ৭৫০ টাকা জমা দিতে হয় বলে একটি রিসিভও দেখান তিনি। বলেন, যারা ফোন পাবেনা বা টাকা জমা দেয়নি তারা তাহলে নগরীতে চলতে পারবেনা। তিনিও প্রশাসনিক কর্মকর্তার কাছে যাওয়ার পরামর্শ দেন।
বিভিন্ন সুত্র ও আউটসোর্সিং কর্মী থেকে জানা গেছে, এখন পর্যন্ত প্রায় দেড় হাজার লাইসেন্স ইস্যু হয়েছে।
গত ২৬ মার্চ থেকে বরিশাল সিটি করপোরেশন কর্তৃপক্ষ তাদের এনেক্স ভবন কার্যালয়ে এই অনুমোদন নম্বর হিসেবে নম্বরপ্লেট ও ব্লুবুক  বিতরণ করা শুরু করে। গড়ে প্রতিদিন ৩০টি করে লাইসেন্স ও ব্লু বুকের জন্য স্লিপ কাটা হচ্ছে। যারা ব্যাংকে স্লিপ ও টাকা জমার রশীদ দেখাচ্ছেন তাদের গাড়িতে লাল রং দিয়ে সিটি ও সিরিয়াল নম্বর লিখে দেয়া হচ্ছে। পরে তাদের লাইসেন্স ও ব্লু বুক দেয়া হবে বলে জানা গেছে।
বিষয়টিকে একটি গভীর চক্রান্ত ও অর্থ হাতিয়ে নেয়ার অপকৌশল দাবী করে সমাজতান্ত্রিক দলের (বাসদ) বরিশাল জেলা শাখার সদস্য সচিব ও ব্যাটারিচালিত রিকশা-ভ্যান-ইজিবাইক চালক সংগ্রাম পরিষদের কেন্দ্রীয় উপদেষ্টা মনীষা চক্রবর্তী বলেন, সংগ্রাম পরিষদের নেতৃত্বে গত ১১ বছর ধরে ব্যাটারিচালিত যানবাহনের আধুনিকায়ন, নীতিমালা প্রণয়ন ও বিআরটিএ কর্তৃক লাইসেন্স প্রদানের দাবিতে সারাদেশে ধারাবাহিক আন্দোলন চলছে। এই আন্দোলনের ফলাফল হিসেবে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয় থেকে নীতিমালা হয়েছে। সংগ্রাম পরিষদের পক্ষ থেকে উচ্চ আদালতে আপিলের পরি প্রেক্ষিতে ২০২২ সালে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ মহাসড়ক ব্যতীত সর্বত্র ইজিবাইক চলাচলে বৈধতা দিয়ে রায় দেন। এই প্রাথমিক সাফল্যের পর অনেকেই নানা উদ্দেশ্যে ব্যাটারিচালিত যানবাহনের ব্যাপারে উৎসাহী হয়ে ওঠেন। যার কিছু লক্ষন ইতিমধ্যেই দৃশ্যমান হয়েছে।
মনীষা চক্রবর্তী বলেন, বরিশাল সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে সড়কে শৃঙ্খলা রক্ষার কথা বলে ইজিবাইকের অনুমোদন দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। ২৬ মার্চ থেকে অনুমোদন নম্বর হিসেবে নম্বরপ্লেট ও ব্লু বুক বিতরণও শুরু করেছে সিটি  করপোরেশন। কিন্তু এই নম্বরপ্লেট আসলে কাদের মধ্যে বিতরণ করা হবে, সে বিষয়ে কোনো সুস্পষ্ট প্রক্রিয়া অনুসরণ করা হয়নি।
মনীষা বলেন, ‘আমাদের দাবি, বিআরটিএ এসব যানের অনুমোদন দেবে। এতে শুধু সিটি করপোরেশন নয়, নগরের বাইরের এমনকি সারাদেশের তিন চাকার যান বৈধতা পাবে। কিন্তু সিটি করপোরেশন তিন চাকার যানের চালকদের মধ্যে রাজনৈতিক বিভাজন সৃষ্টির জন্য এই পদক্ষেপ নিয়েছে। তাছাড়া ২৬ মার্চ থেকে এখন পর্যন্ত কয়টি লাইসেন্স ও ব্লু বুক দেয়া হয়েছে তাও পরিষ্কার নয় বলে জানান মনীষা চক্রবর্তী।
উল্লেখ্য গেলো বছরের মে মাসে মেয়র ঘোষণা দিয়েছিলেন তিন মাসের মধ্যে বরিশাল মহানগরীতে চলাচলরত ব্যাটারিচালিত অটোরিকশার লাইসেন্স প্রদানের।  সেই সাথে অটোরিকশার চালকদের প্রশিক্ষণ ও লাইসেন্স প্রদান এবং তাদের জন্য আলাদা পোশাকের ব্যবস্থা করবেন বলে প্রতিশ্রুতি দেন তিনি। নগরীর বঙ্গবন্ধু উদ্যানে বরিশাল জেলা ও মহানগর ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা (ইজিবাইক) শ্রমিক কল্যাণ সংগঠনের আয়োজনে শ্রমিক সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি এই প্রতিশ্রুতি দেন।

এই বিভাগের আরও খবর

আর্কাইভ

সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি রবি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০৩১  
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন    
সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী মিরাজ মাহমুদ
 
বার্তা ও বানিজ্যিক কার্যালয়ঃ কুশলা হাউজ, ১৩৮ বীরশ্রেষ্ঠ ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর সড়ক,
সদর রোড (শহীদ মিনারের বিপরীতে), বরিশাল-৮২০০।
© প্রকাশক কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
Developed by NEXTZEN-IT