3:43 pm , May 25, 2023
নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন চিকিৎসা মহাবিদ্যালয় শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের অবস্থান বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের ১১ নং ওয়ার্ডের গুরুত্ব বাড়িয়েছে কয়েক গুণ। এই ওয়ার্ডে আসন্ন নির্বাচনে দুজন প্রার্থী কাউন্সিলর পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন বলে জানা গেছে। এরা হলেন, বর্তমান কাউন্সিলর মজিবর রহমান এবং দ্বিতীয়বারের মতো নির্বাচনে অংশ নেয়া প্রার্থী মারুফ আহাম্মেদ জিয়া। সিটি কর্পোরেশনের অন্য ওয়ার্ডের ন্যায় ১১নং ওয়ার্ডটিতেও রয়েছে নানা ধরনের নাগরিক সমস্যা। ওয়ার্ড এর কারো কারো দাবি বিগত দিনে ওয়ার্ডে ভালই উন্নয়ন হয়েছে। কিন্তু কেউ বলছে এই ওয়ার্ডে লক্ষনীয় তেমন কোনো উন্নয়ন তারা সাবেক মেয়র শওকত হোসেন হিরনের মৃত্যুর পরে আর দেখেননি। বৃহস্পতিবার নির্বাচনী ওয়ার্ড পরিক্রমায় পরিবর্তন প্রতিবেদক এর সাথে কথা হয় ১১ নং ওয়ার্ডের সাধারণ ভোটার ও দুই প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর সাথে। আলাপে সাধারণ ভোটার একাধিক বাসিন্দা জানায়, শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মত গুরুত্বপূর্ণ একটি স্থাপনা থাকা সত্ত্বেও ১১নং ওয়ার্ডটি সর্বদাই অবহেলিত রয়েছে। জন গুরুত্বপূর্ণ এই ওয়ার্ডটির সাধারণ বাসিন্দা ও এই ওয়ার্ডে প্রতিদিন চিকিৎসা সেবা নিতে আসা হাজারো মানুষের যে ধরনের সুবিধা প্রয়োজন তা কখনোই পরিপূর্ণ হয়নি। উল্টো নানা অব্যবস্থাপনার স্বীকার হয়ে প্রতিদিন ওয়ার্ডের বাসিন্দা সহ হাজারো মানুষকে পোহাতে হচ্ছে ভোগান্তি। এছাড়া ওয়ার্ডের নানা অসুবিধের কথা তুলে ধরেন ভোটাররা। ড্রেনেজ ব্যবস্থা, রাস্তাঘাট, বিদ্যুতায়ন, পরিচ্ছন্নতা, রোড লাইটে ওয়ার্ডে ব্যাপক সমস্যা রয়েছে বলে জানায় তারা। এগুলোর থেকেও বড় সমস্যা মাদক। ওয়ার্ডের স্টেডিয়াম কলোনীতে সব ধরনের মাদক ক্রয়-বিক্রয় ও সেবনের অভয়ারণ্য বলে কুখ্যাতি রয়েছে। সব মিলিয়ে এই ওয়ার্ডটির কোনো সামাজিক উন্নয়নই হয়নি বলে জানায় বাসিন্দারা। শেষের দিকে কিছু কাজ শুরু হলেও তা অপরিকল্পিত ও ধীরগতির বলে জানিয়েছেন তারা। আগামীতে এ সকল সমস্যার কার্যকরী সমাধান যে প্রতিনিধির কাছ থেকে পাবেন তাকে মূল্যবান মতামত দিয়ে জয়যুক্ত করার কথা বলেছেন। এ সকল বিষয়ে আলাপ হয় বর্তমান কাউন্সিলর ও নতুন প্রার্থীর সাথে।
বর্তমান কাউন্সিলর মজিবর রহমান বলেন, এবার নিয়ে মোট চারবার এই ওয়ার্ড থেকে নির্বাচনে দাঁড়াচ্ছেন। বর্তমানসহ দুবারের নির্বাচিত কাউন্সিলর তিনি। নির্বাচনে কখনই তেমনটা আগ্রহী না হলেও ওয়ার্ডে সাধারণ মানুষের দাবি প্রেক্ষিতে প্রতিবার নির্বাচনে অংশ নেয়া হয়। এবারও তার ব্যতিক্রম নয়। ১১ নং ওয়ার্ডে বেশ কিছু কাজ শুরু হয়েছে, তবে তা এখনো সম্পূর্ণ করতে পারিনি। আরশেদ আলী কন্ট্রাক্টার গলি, বাংলাবাজার সড়ক এর কাজ হয়েছে। ব্যাপ্টিস্ট মিশন রোডের কাজ চলমান রয়েছে। ওয়ার্ড এর একটি বড় সমস্যা জলাবদ্ধতা। এই জলাবদ্ধতা নিরসনে নিজের অর্থায়নে একাধিক জায়গায় কাজ করিয়েছেন। এমনকি বাস্তুহারা কলোনিতে এখনো কাজ করাচ্ছেন। টুকটাক নাগরিক সমস্যা অবশ্যই রয়েছে। এ সকল সমস্যা সমাধানের সর্বদাই আপ্রাণ চেষ্টা করেছেন বলে জানান মজিবর রহমান। বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজ করতে গিয়ে নানা ধরনের বিতর্কে জড়াতে হয়েছে। শিকার হতে হয়েছে অপপ্রচার ও প্রতিহিংসার। তারপরেও জনসেবা থেকে পিছিয়ে যাননি। তিনি বলেন, তার পুনরায় কাউন্সিলর নির্বাচিত হতে হবে এমন কোন কথা নেই। কারণ কাউন্সিলর পদটি তার পৈত্রিক সম্পত্তি নয়। সাধারণ জনগণের পাশে যে থাকবে সেই নির্বাচিত হবে। শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বিষয়ে মজিবর রহমান বলেন, একটা সময়ে হাসপাতালের বাহ্যিক ব্যবস্থাপনার অনেক কিছুই নিয়ন্ত্রণ করতেন। কিন্তু হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কারণে এখন আর তা করেন না। কর্তৃপক্ষের ব্যবস্থাপনার কারণে শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজের মত একটি স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠানে সেবা নিতে আসা মানুষকে পোহাতে হয় নানা ধরনের ভোগান্তি। স্থানীয় জনপ্রতিনিধি হওয়া সত্ত্বেও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তাদের সাথে কোন ধরনের সমন্বয় করে না। কোন ধরনের ঝামেলায় পড়লে আসে। কিন্তু সার্বিক উন্নয়ন কর্মকান্ডে ডাকে না। আর সমন্বয় না থাকায় অসংখ্য সমস্যার তৈরি হয় যাতে ভুক্ত হয় সাধারণ মানুষ। মজিবর রহমান সর্বশেষ বলেন, এলাকার সাধারণ মানুষের দাবিতে তিনি নির্বাচনে এসেছেন।
অপরপ্রার্থী মারুফ আহাম্মেদ জিয়া বলেন, শওকত হোসেন হিরনের মৃত্যুর পরে এই ওয়ার্ডে কোন কাজ হয়নি। ওয়ার্ডে রয়েছে ড্রেনেজ ব্যবস্থা, রাস্তাঘাট, বিদ্যুতায়ন, শিক্ষা ব্যবস্থার উন্নয়ন সহ সকল ক্ষেত্রেই সমস্যা। ওয়ার্ডের বাসিন্দাদের অনুন্নত সামাজিক জীবনমান উন্নয়নের লক্ষ্যে দ্বিতীয়বারের মতো নির্বাচনে অংশ নিয়েছেন। এই ওয়ার্ডের বড় দুটি সমস্যা মাদক ও বেকারত্ব। যা একে অপরের পরিপূরক। ওয়ার্ডে শিক্ষিত ও অশিক্ষিত উভয়ের শ্রেণীর বেকার যুবকের সংখ্যা অনেক। যারা বেকারত্বে হতাশাগ্রস্ত হয়ে মাদকের সাথে জড়িয়ে পড়ছে। নির্বাচিত হতে পারলে সর্বপ্রথম এ সকল যুবকদের জন্য কর্মসংস্থানের সুযোগ করার কথা বলেন জিয়া। একই সাথে ওয়ার্ডের অস্বচ্ছল প্রতিটি পরিবারে শিক্ষা ব্যবস্থার যে ঘাটতি রয়েছে তা পূর্ণ করার চেষ্টা করবেন। শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বিষয়ে জিয়া বলেন, এত বড় স্বনামধন্য একটি প্রতিষ্ঠান হওয়া সত্ত্বেও চরম অব্যবস্থাপনায় ডুবে আছে। ১১ নং ওয়ার্ডের প্রভাবশালীরা শেরে বাংলা মেডিকেল কলেজের যাবতীয় ব্যবস্থাপনারএকটি বড় অংশ নিয়ন্ত্রণ করে। নির্বাচিত হলে সকল অব্যবস্থাপনা দূর করে সাধারণ সেবা গ্রহীতাদের জন্য একটি সুন্দর পরিবেশ তৈরি করার চেষ্টা করবেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কর্তৃক মেয়র মনোনয়ন প্রাপ্ত খোকন সেরনিয়াবাদ নিঃসন্দেহে একজন যোগ্য ও ভালো মানুষ। আসন্ন নির্বাচনে তিনি মেয়র নির্বাচিত হলে তার দিকনির্দেশনায় ১১ নং ওয়ার্ড টি ঢেলে সাজানোর আশাবাদ ব্যক্ত করেন জিয়া। সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ ভোট হলে শতভাগ জয়ী হওয়ার কথাও বলেন তিনি। উল্লেখ্য , ১১ নং ওয়ার্ডে মোট ভোটার সংখ্যা ৯৬২২ জন। চারটি কেন্দ্রে ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে।