4:45 pm , May 24, 2023

মো: নাসির উদ্দিন খান, বাউফল ॥ বাউফল উপজেলার সেবা ক্লিনিকের বিরুদ্ধে অবশেষে তদন্ত শুরু করেছে পটুয়াখালী জেলা সিভিল সার্জন। বুধবার দুপুরের দিকে পটুয়াখালী সিভিল সার্জন গঠিত ৪ সদস্য বিশিষ্ট একটি টিম তদন্ত করেছে। তারা প্রথমে সেবা ক্লিনিকে তল্লাশী করেন। এ সময় মেয়াদ উত্তীর্ণ ৫টি ইনজেকশনসহ ফ্রিজে রাখা গরুর পচা মাংস ও মাছ পাওয়া যায়। তদন্ত পরিচালনা ও তদন্তকারী প্রধান ছিলেন ডা. কেননং। তিনি বলেন, তদন্ত কমিটির প্রধান তিনি। বাউফল হাসপাতালে এসে মৃত আখিনুর বেগমের স্বামী, শ্বশুর ও মা বাবা সহ তার পরিবারের লোকজনকে তদন্তের স্বার্থে এবং ক্লিনিক কর্তৃপক্ষকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। কিন্তু অপারেশন করা চিকিৎসক আসেননি। তদন্তের উপর ভিত্তি করে সিভিল সার্জন যথাযথ ব্যবস্থা নিবেন। এদিকে স্বজনরা জানান, গত ১৮ মে সন্ধ্যার পরে শ্বশুর বাড়ির লোকজনকে না জানিয়ে শুধু মৃত আখিনুর বেগম এর বাবা ও স্বজনরা সেবা ক্লিনিক সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের গোপন বৈঠক করে। পরে স্বামী মো. বাহাদুর বয়াতির স্বাক্ষর নিয়ে ৫ লক্ষ টাকা আখিনুর বেগম এর বাবা জালাল প্যাদার হাতে বুঝিয়ে দেন। এ ব্যাপারে জালাল প্যাদা বলেন, ঘটনা সত্য। তবে ফোনে বলা যাবে না, সামনা সামনি বলব। স্বামী মোঃ বাহাদুর বয়াতি বলেন, আমি সুস্থ নই, ঘটনার পর থেকেই আমি দিশেহারা হয়ে আছি। তবে আমার শ্বশুর জালাল প্যাদা বাদী হয়ে থানায় লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। প্রশাসন সেবা ক্লিনিক সিলগালা করে দেয়। সেবা ক্লিনিক কর্তৃপক্ষ একটা রফাদফার চেষ্টা করেছে। ৫ লক্ষ টাকার বিনিময়ে রফাদফা করা হয়। কিন্তু আমার পরিবারের কাউকে কিছু না বলে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার দিকে আমাকে আমার এক ভায়রা সহ শ্বশুর ও স্বজনরা বাউফলে নিয়ে গিয়ে একটা কাগজে স্বাক্ষর নিয়ে যায়। পরে জানতে পারি আমার শ্বশুর ৫ লক্ষ টাকা সেবা ক্লিনিক কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে নিয়েছেন। স্বামী মোঃ বাহাদুর বয়াতি আরও বলেন, যা-ই ই হয়েছে। এখন যদি ওই টাকাটা মা হারা মেয়েটার ভবিষ্যতের জন্য উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা অথবা থানার ওসি বা আমাদের স্থানীয় চেয়ারম্যানের সমন্বয়ে ব্যাংকে একটা ডিপোজিট করে রাখে তাহলে আমাদের আর কোনো অভিযোগ থাকবে না। আর যদি এমন না হয় তাহলে আমি অচিরেই সেবা ক্লিনিক কর্তৃপক্ষ সহ ডাক্তার ও নার্সের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা দায়ের করব। মৃত আখিনুর বেগম এর শ্বশুর মোঃ ফরহাদ বয়াতি বলেন, আমি আমার ছেলের সাথে একমত। নইলে আমার ছেলেকে বাদী করে পুনরায় মামলা দায়ের করব। উপজেলার কালাইয়া ইউনিয়নের ৭ নং ওয়ার্ডের বাহাদুর বয়াতির স্ত্রী আখিনুরকে প্রসবজনিত কারনে গত গত ১৪ মে বাউফল স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়। কর্তব্যরত নার্স নরমাল ডেলিভারী করার উদ্যোগ নেন। এরই মধ্যে এক দালাল ও হাসপাতালের নার্স আখিনুর ও তার স্বজনকে ভয় দেখিয়ে দ্রুত সেবা ক্লিনিকে নিয়ে সিজার করার নির্দেশ দেন। ওই দিন সন্ধ্যার পর সেবা ক্লিনিকের অপারেশন থিয়েটারে ডা. সোলায়মান আখিনুরের সিজার করে একটি কন্যা সন্তানের জম্ম দেন। দীর্ঘক্ষণ পরেও আখিনুরের জ্ঞান ফিরে না আসায় অপারেশন থিয়েটারে থাকা টিম নিশ্চিত হন তার মৃত্যু হয়েছে। পরে তড়িঘড়ি করে সেবা ক্লিনিক কর্তৃপক্ষ অখিনুরের লাশ উন্নত চিকিৎসার নামে বরিশাল শেরেবাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠায়। এরই ফাঁকে চিকিৎসক ও ক্লিনিক কর্তৃপক্ষ গা ঢাকা দেন। পরে আখিনুরকে বরিশাল শেরে বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়ার পর কর্তব্যরত চিকিৎসকরা স্বজনদের জানান অনেক আগেই তার মৃত্যু হয়েছে।