জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের নামে নগরীতে সড়কের নামকরণের দাবী জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের নামে নগরীতে সড়কের নামকরণের দাবী - ajkerparibartan.com
জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের নামে নগরীতে সড়কের নামকরণের দাবী

4:44 pm , May 24, 2023

বিশেষ প্রতিবেদক ॥ জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের জন্মবার্ষিকীতে তার স্মৃতি বিজড়িত বরিশালে এবারো তেমন কোন কর্মসূচী নেই। শুধুমাত্র নজরুল স্মৃতি সংসদ জাতীয় কবির জন্ম ও মৃত্যুবার্ষিকীতে যেন তেনভাবে নগরীতে একটি অনুষ্ঠানের আয়োজন করে দায়িত্ব সম্পাদন করে থাকে। এবারো তার ব্যতিক্রম হচ্ছে না। এমনকি নগরীতে কবির দেখা ও লেখার স্মৃতিগুলোর অস্তিত্ব ইতোমধ্যে প্রায় বিলুপ্ত হলেও তা নিয়ে কোন আরোচনা বা দাবী নেই। জাতীয় কবির স্মৃতিকে ধরে রাখতে  নগরীতে তার নামে একটি নামকরণ হয়নি আজও। বৃটিশÑভারত যুগে কবি নজরুল দুবার বরিশালে এসে নগরীর অপরূপ প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে মোহিত হয়েছিলেন। কবি বরিশালে এসে কীর্তনখোলার কাছে বান্দরোডের পাশের ঝাউ বাগান দেখে মুগ্ধ হয়ে তার অমর উপন্যাস ‘মৃত্যু ক্ষুধা’য় কীর্তনখোলা নদী ও তার পাশের বান্দরোডের ধারে ঝাউ বাগানের বর্ণনা দিয়ে বরিশালকে তুলে ধরতে ভোলেননি।
নজরুলের বরিশালে এখনো রূপসী বাংলার চিরায়ত কিছু রূপ চোখে পড়লেও অব্যাহত নগরায়নে  নগরীতে কবির দেখা ঝাউ ও পাম গাছ সহ প্রকৃতির অনেক কিছুই বিলুপ্ত হয়েছে ইতোমধ্যে। দলবাজ সুশীল সমাজ ও দলদাশ বুদ্ধিজীবী সহ কথিত পরিবেশবাদীরাও গত কয়েক বছরেও এসব বিষয়ে সরব হবার সময় পাননি। দাবীও তোলেন না কবির স্মৃতিকে ধরে রাখার। এমনকি গত কয়েক বছরে নগরীতে সবুজায়নের সম্প্রসারণের পরিবর্তে আরো ধ্বংস করা হয়েছে। অতি সম্প্রতি  নগরীতে প্রায় ৬ কোটি টাকা ব্যয়ে বরিশালÑফরিদপুর-ঢাকা জাতীয় মহাড়কের একাংশ দখল করে একটি পার্ক নির্মানের নামে বেশ কিছু পাম গাছ কেটে ফেলেছে নগর ভবন। কিন্ত কেউ টু শব্দটিও করেননি।
নগরীর বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা হাতে গোনা কয়েকটি পাম গাছ এখনো তাদের অস্তিত্বের জানান দিলেও গাছের সারি বিলুপ্ত হয়েছে অনেক আগেই।
নগরীর পাশে বহমান কীর্তনখোলা নদীর পাড়ে মুক্তিযোদ্ধা পার্ক, আমতলার মোড়ের স্বাধীনতা পার্ক, গোড়াচাঁদ দাশ রোডের খৃষ্টান গোরস্থান এবং বিসিক রোডের কাছে মহাশ্মশানের পাশে ঝাউগাছের যে বনায়ন হয়েছিল বিগত নগর পরিষদের  সময়ে এখন আর তার কোন যতœ নেই।
আমাদের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বৃটিশ যুগে অবিভক্ত বাংলার গভর্ণর শের ই বাংলা একে ফজলুল হকের সাথে প্রথম বরিশালে এসেছিলেন ১৯২০ সালে। বরিশালের সন্তান ফজলুল হকের সাথে সেবার তিনি বিভিন্ন এলাকায় নির্বাচনী সভায় দেশাত্ববোধক গান পরিবেশন করেন। পরবর্তীতে ১৯৩০ সালের দিকে তিনি নোয়াখালী হয়ে আরো একবার বরিশালে এসে নগরীর প্রকৃতির শোভায় মোহিত হয়ে তার অমর উপন্যাস  ‘মৃত্যু ক্ষুধা’য় বরিশাল শহরের প্রাকৃতিক শোভার সংক্ষিপ্ত বর্ণনাও দিয়েছেন। কবি নাসির উদ্দিনের সম্পাদনায় ‘মাসিক সওগাত’ পত্রিকায় মৃত্যু ক্ষুধা উপন্যাসটি বাংলা ১৩৩৪-এর অগ্রহায়ন থেকে ‘৩৬ সালের ফাল্গুন পর্যন্ত প্রকাশিত হয়েছিল। কবি বৃটিশ যুগে এ শহরের পাশে প্রবাহমান কীর্তনখোলা নদী তীরে সুরকীর রাস্তা আর গাছ গাছালীর কথাও উল্লেখ করতে ভোলেননি ।
জাতীয় কবি লিখেছেন, ‘বরিশাল। বাংলার ভেনিস। আঁকাবাঁকা লাল রাস্তা। শহরটি জড়িয়ে ধরে আছে ভুজ-বন্ধের মত করে। রাস্তার দু-ধারে ঝাউ গাছের সারি। তারই পাশে নদী। টলমল টলমল করছেÑবোম্বাই শাড়ী পরা ভরা-যৌবন বধুর পথ-চলার মত করে।  যত না চলে, অঙ্গ দোলে তার চেয়ে অনেক বেশী। নদীর ওপারে ধানের ক্ষেত। তারও ওপারে নারকেল-সুপারী কুঞ্জঘেরা সবুজ গ্রাম, শান্ত নিশ্চুপ। সবুজ শাড়ী-পরা বাসর-ঘরের ভয়-পাওয়া ছোট্ট কনে-বৌটির মত। এক আকাশ হতে আর-আকাশে কার অনুনয় সঞ্চারন করে ফিরছে। বৌ কথা কও, বৌ কথা কও। আঁধারে চাঁদর মুড়ি দিয়ে তখনো রাত্রী অভিসারে বোরোয়নি। তখনো বুঝি তার সন্ধ্যা প্রসাধন শেষ হয়নি। শঙ্কায় হাতের আলতার শিশি সাঁঝের আকাশে গড়িয়ে পড়েছে। পায়ের চেয়ে আকাশটাই রেঙে উঠেছে বেশী। মেঘের কালো খোপায় ভূতীয়া চাঁদরে গো’ড়ে মালাটা জড়াতে গিয়ে বেঁেক গেছে। উঠোনময় তারার  ফুল ছড়ানো। …..।’
তবে নজরুলের দেখা ‘বাংলার ভেনিস’ বরিশালকে এখন আর খুঁজে পাওয়া যায়না। অপরিকল্পিত নগরায়নে জাতীয় কবির বরিশাল থেকে বেশীরভাগ খাল বিলুপ্ত হয়েছে অনেক আগেই। ফলে নগরীতে এখন আর জোয়ারÑভাটার পানি আসা যাওয়া করে না। খাল ভরাট করে ড্রেন নির্মিত হয়েছে। তাতে পানি চলাচলের পরিবর্তে ময়লার ভাগারে ঠাসা। ফলে এক ঘন্টার বৃষ্টিতে ড্রেনের পানি রাস্তাকে সয়লাব করে দিচ্ছে। অপরদিকে নদী বন্দর সচল রাখার নামে অপরিকল্পিত ড্রেজিং-এ কীর্তনখোলার পলি আবার নদীতেই ফেলায় নদী মোহনায় খালের মুখগুলোর তলদেশ ভরাট হয়ে নগরী ক্রমাগত জলাবদ্ধতার কবলে।
তবে বিবেকহীন নানা কর্মকান্ডে এ নগরী থেকে প্রকৃতির অনেক দান বিলুপ্ত হলেও তাকে রক্ষা করা সহ ফিরিয়ে আনার সময় এখনো আছে বলে মনে করছেন পরিবেশবীদরা।
অপরিকল্পিত ও বিবেকহীন নগরায়নের ধাক্কায় গত কয়েক যুগে নগরীর বান্দ রোডের দুধার থেকে প্রকৃতির দান বিলুপ্ত হয়েছে। এ নগরীতে কোন পাম গাছেরই অস্তিত্ব আর চোখে পড়ছেনা। কীর্র্তনখোলা তীরের ঝাউ বাগান পুরোপুরি বিলুপ্ত হবার পরে বছর দশেক আগে মুক্তিযোদ্ধা পার্কে যেসব ঝাউগাছ লাগানো হয়েছিল তা এখন মাথা উঁচু করে অতীত স্মৃতির জানান দিচ্ছে। তবে বান্দ রোডে বঙ্গবন্ধু উদ্যানের পাশে যে কয়টি পাম গাছ সর্বশেষ তাদের অস্তিত্বের জানান দিচ্ছিলো তা কয়েক বছর আগে কেটে ফেলা হয়েছে কথিত নিরাপত্তার অজুহাতে। যদিও বঙ্গবন্ধু উদ্যানের কোল ঘেষে বান্দ রোডের ধারে কিছু সোনালু গাছ এখনো রঙ ছড়াচ্ছে। চোখ জুড়াচ্ছে ছোট-বড় সবার।
হিমনীড়-এর ‘পদ্ম পুকুর’এর পদ্ম ফুলের বংশ সমূলে ধ্বংস করারও একটি কর্মযজ্ঞ ইতোমধ্যে পরিচালিত হলেও সেখানে প্রকৃতিকে শেষ করা যায়নি। পদ্ম পুকুরের স্বেত পদ্ম’রা আবার ফিরে এসেছে। এ পদ্ম পুকুর আর ফুল দেখতে এখনো দূর দুরান্ত থেকে বহু মানুষ প্রতিদিন ছুটে আসেন।

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন    
সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী মিরাজ মাহমুদ
 
বার্তা ও বানিজ্যিক কার্যালয়ঃ কুশলা হাউজ, ১৩৮ বীরশ্রেষ্ঠ ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর সড়ক,
সদর রোড (শহীদ মিনারের বিপরীতে), বরিশাল-৮২০০।
© প্রকাশক কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
Developed by NEXTZEN-IT