মেয়র প্রার্থী ও কাউন্সিলরদের পদচারণায় মুখরিত বরিশালের বৃদ্ধাশ্রমটি মেয়র প্রার্থী ও কাউন্সিলরদের পদচারণায় মুখরিত বরিশালের বৃদ্ধাশ্রমটি - ajkerparibartan.com
মেয়র প্রার্থী ও কাউন্সিলরদের পদচারণায় মুখরিত বরিশালের বৃদ্ধাশ্রমটি

4:39 pm , May 24, 2023

আরিফ আহমেদ, বিশেষ প্রতিবেদক ॥ বরিশালের কাউনিয়ার বৃদ্ধাশ্রমটি এখন মুখরিত মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীদের পদচারণায়। বরিশালসিটি করপোরেশনের নির্বাচনে যারাই প্রচারণার জন্য নগরীর ২ ও ৩ নং ওয়ার্ডে যাচ্ছেন, তারাই ছুটে যাচ্ছেন বৃদ্ধাশ্রমটিতে। কিছুটা সময় কাটাচ্ছেন অসহায় বৃদ্ধ-বৃদ্ধাদের  সাথ। দিচ্ছেন বিভিন্ন প্রতিশ্রুতি।
এখানে যারা বসবাস করেন একদিন তারাও ছিলেন আর দশজন সাধারণ মানুষের মতোই। ছিলো সাজানো গোছানো সংসার। আজ তারাই নিঃসঙ্গ, নিঃসন্তান। যে বয়সে ছেলে মেয়ের সংসারে নাতি-নাতনীদের সাথে খেলা করে সময় পার করার কথা সেই বয়সে এসে সন্তানদের বোঝা হয়েছেন তারা। হয়েছেন  আত্মীয় পরিজন হারা। এমনই কয়েকজন অসহায় বয়ষ্ক নারী ও পুরুষদের জন্য বরিশালের কাউনিয়ার একটি ভাড়া বাড়িতে সাখাওয়াতের বৃদ্ধাশ্রমটি চোখে জল এনেছে। এখানে যারা আছেন তাদের সবাই অসহায়। পুত্রবধূ ও নাতনীরা নির্যাতনের পরে ফেলে রেখে যায় রাস্তায়।  তাদের সবার স্থান হয়েছে এই বৃদ্ধাশ্রমে। আসন্ন বরিশাল সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে এই বৃদ্ধাশ্রমটিও। মেয়র প্রার্থীদের ভোটারদের আকৃষ্ট করার একটি অন্যতম মাধ্যম হয়ে উঠেছে এই বৃদ্ধাশ্রম। ঈদের দিন মনীষা চক্রবর্তীর পরে গত সোমবারে আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী খোকন সেরনিয়াবাত এর সহধর্মিণী লুনা আব্দুল্লাহ ঘুরে গেছেন এখানে। এসেছেন জাতীয় পার্টির মেয়র প্রার্থী প্রকৌশলী ইকবাল হোসেন তাপসের সহধর্মিণী ইসমত আরা ইকবালও। ইসমত আরা ইকবালের আগমনটা নিরবে হলেও লুনা আব্দুল্লাহর আগমনের সংবাদটা ছড়িয়ে পরে চারিদিকে। গণমাধ্যমেও উঠে আসে সাখাওয়াত হোসেন পরিচালিত এই বৃদ্ধাশ্রমের নাম। মেয়র নির্বাচিত হলে খোকন সেরনিয়াবাত এই আশ্রমের জন্য কিছু করবেন আশ্বাসে উচ্চকিত সাখাওয়াত হোসেন ও তার সহকর্মীরা। তারা  জানালেন, শুধু মেয়র প্রার্থীই নয়, ২ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থীরাও এখন নিয়মিত খোঁজ খবর নিচ্ছেন এই বৃদ্ধাশ্রমের। যা দেখে আমরা আশাবাদী, খুব শীঘ্রই হয়তো এই মায়েদের সেবার জন্য নিজস্ব জমিসহ একটি ভবন আমাদের হবে।  ২০১৫ সালে সাখাওয়াত হোসেন নামের এক যুবক নিজেরই বাবা-মাকে সাথে নিয়ে প্রথম বরিশালের বাকেরগঞ্জে এই বৃদ্ধাশ্রমটির যাত্রা শুরু করেণ। বাবা-মা সহ আরো তিনজন অসহায় বৃদ্ধাকে নিয়ে সম্পূর্ণ নিজস্ব আয়ে টানছিলেন এই বৃদ্ধাশ্রমটি। ২০১৭ সালে সরকার এটিকে অনুমোদন দিলেও ২০২১ সাল পর্যন্ত সরকারি কোনো সহযোগিতা পাননি। বরিশালের আজকের পরিবর্তন ও সাহিত্য বাজার পত্রিকাসহ বেশ কিছু গণমাধ্যমে সংবাদ পরিবেশন ও সাহিত্য বাজার পত্রিকার গুণীজন সম্মাননা পাওয়ার পর ২০২২ সালের ডিসেম্বর থেকে কিছুটা সরকারি সহযোগিতা পাওয়া শুরু হয় বলে জানান সাখাওয়াত হোসেন।এর আগে প্রতিকূল পরিবেশ, লোকবল ও টাকার অভাবে কিছুদিন বন্ধও ছিলো প্রতিষ্ঠানটি। পরে ২০২০ সালে  এটিকে  বরিশালের কাউনিয়া হাউজিং এলাকায় পুনরায় চালু করেন। এখানে একটি দ্বিতল ভবনের নীচতলায় দুটি ইউনিট ভাড়া নিয়ে বৃদ্ধাশ্রমটিকে বাকেরগঞ্জ থেকে বরিশাল সদরে স্থানান্তর করেছেন সাখাওয়াত। ক্লিনার ইনচার্জ রুবি জানান, পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন এই বৃদ্ধাশ্রমের পরিবেশটি আরো চমৎকার হতে পারতো যদি আমাদের নিজস্ব ভবন ও একটু হাঁটাচলার জায়গা থাকতো। অসহায় মায়েদের নিয়ে নিরিবিলি প্রাকৃতিক পরিবেশে ঘুরতে পারলে তাদেরও ভালো লাগতো, আমরাও কাজে আনন্দ পেতাম। প্রতিষ্ঠাতা সাখাওয়াত হোসেন বলেন, আমার মা মারা যাওয়ার পর থেকে বাবা আমার কাছেই থাকেন। বাবা এখানে থাকেন বলেই অন্য আশ্রিতদের প্রতি আমার ভালোবাসা বাবা মায়ের মতোই তৈরি হয়েছে। তবে সমস্যা একটাই আমার চাকুরি চলে যাওয়ার পর থেকে এই বৃদ্ধাশ্রম চালাতে খুব কষ্ট হচ্ছে। ৪০ থেকে ৫০ মনের মত সদস্য রয়েছে এখানে।  আরো ২০-২৫ জন বাবা-মা এখানে আসতে চান। আমরা আর কাউকেই জায়গা দিতে পারবো না এখানে। কারণ থাকার জায়গার অভাবতো আছেই সাথে  ভালো-মন্দ খাবারও দিতে পারিনা সবসময়। তাই এখনই তাদের আনছিনা। আপনারা আমাদের সাহায্য করলে হয়তো এই বৃদ্ধাশ্রমটি বাঁচবে। আমরা আরো বড় পরিসরে সেবা দিতে সক্ষম হবো। সাখাওয়াত আরো বলেন, ইতিপূর্বে বিসিসির ৩ নং ওয়ার্ড এর কাউন্সিলর আন্তরিকতার সাথে কয়েকবার এসেছেন। তার ওয়ার্ড এর মধ্যে  আশ্রমটি তাই তার সুদৃষ্টি পাচ্ছি সবসময় । এছাড়া  মনীষা চক্রবর্তী  গত ঈদে শুভেচ্ছা বিনিময় ও দুপুরে খাবার দিয়ে গেছেন। কিন্তু বরিশালের বর্তমান সিটি করপোরেশনের মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহ কখনোই কোনো খোঁজতো নেননি উল্টো তার সাথে দেখা করার চেষ্টা করেও কয়েকবার ব্যর্থ হয়েছি। এখন নির্বাচনের হাওয়া বইছে। তাই গত সোমবার আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী খোকন সেরনিয়াবাত এর সহধর্মিণী লুনা আব্দুল্লাহ এখানে এসেছিলেন। তিনি বৃদ্ধাশ্রমে ঘুরে দেখেছেন ও বৃদ্ধাদের সাথে অনেকটা সময় কাটিয়েছেন খুবই আন্তরিকতা নিয়ে। দিয়েছেন পাশে থাকার প্রতিশ্রুতি।

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন    
সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী মিরাজ মাহমুদ
 
বার্তা ও বানিজ্যিক কার্যালয়ঃ কুশলা হাউজ, ১৩৮ বীরশ্রেষ্ঠ ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর সড়ক,
সদর রোড (শহীদ মিনারের বিপরীতে), বরিশাল-৮২০০।
© প্রকাশক কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
Developed by NEXTZEN-IT