4:10 pm , May 19, 2023

নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ জাকির হোসেন জেলাল থাকাকালীন সময় কখনো চিন্তা করিনি এই ওয়ার্ড থেকে নির্বাচন করবো। ১৫ নং ওয়ার্ডের জনগণকে তিনি মন থেকে বুঝতেন। সব সময় তাদের কাছে যেতেন। তার মৃত্যুর পর এই ওয়ার্ডে একজন যোগ্য প্রতিনিধির শূন্যতা তৈরি হয়েছে। এই শূন্যতা পূরণ করে জনগণের পাশে থাকার উদ্দেশ্যেই নির্বাচনে অংশ নেয়া। গতকাল নির্বাচনী ওয়ার্ড পরিক্রমায় ১৫নং ওয়ার্ড থেকে কাউন্সিলর পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় আসা জেলা আওয়ামী লীগের প্রচার ওপ্রকাশনা সম্পাদক মো. মোয়াজ্জেম হোসেন চুন্নু এ কথাগুলো বলেন। এ সময় তিনি আরো বলেন, জনসেবার তাগিদ থেকে এবার প্রথম নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন। বর্তমান কাউন্সিলর এই ওয়ার্ডে কোন কাজই করতে পারেননি। ১৫ নং ওয়ার্ডটি একটি বৈচিত্রময় ওয়ার্ড জানিয়ে চুন্নু বলেন, অন্য পাঁচটি ওয়ার্ডের মতো নয় এই ওয়ার্ডটি। এই ওয়ার্ডে ধনী, গরীব, হিন্দু, মুসলিম,খ্রিষ্টান সব ধরনের মানুষের আধিক্য রয়েছে। তাই এই ওয়ার্ডে প্রতিনিধিত্ব করতে হলে চৌকস সমাজ সেবক হতে হবে। তিনি ৩৫ বছর রাজনীতির সাথে জড়িত। এই ওয়ার্ডে তার মাকে ছেলেবেলা থেকেই সাধারণ মানুষের জন্য কাজ করতে দেখেছেন। তাই নির্বাচিত হয়ে ওয়ার্ডের বাসিন্দাদের প্রয়োজন মোতাবেক তা পূরণের চেষ্টা করবেন। চুন্নু বলেন, বর্তমান সমাজে নীতি নৈতিকতা নেই। ভূঁইফোররা এসে স্থান দখল করে নেয়। তাই ওয়ার্ডবাসীর স্বার্থেই তাদের জন্য প্রতিনিধিত্ব করার প্রয়াস ব্যক্ত করেছেন।নির্বাচিত হলে পঞ্চায়েত ব্যবস্থার মাধ্যমে ওয়ার্ডে তত্ত্বাবধান ও উন্নয়ন কার্য পরিচালনা করার চিন্তা ভাবনা আছে বলে জানান তিনি। কারণ এই ব্যবস্থার মাধ্যমে গড়ে তোলা যায় সামাজিক আন্দোলন। বিগত সময়ে এই ওয়ার্ডে কোন কাজই হয়নি। বরিশালের বাসিন্দারা যে আশা নিয়ে একজন মেয়র নির্বাচিত করেছিলেন সেই আশা পূরণ হয়নি। ১৫ নং ওয়ার্ডের প্রধান সমস্যা জলবদ্ধতা। নির্বাচিত হলে প্রথমেই এই সমস্যা দূরীকরণে কাজ করবেন বলে জানান। সকল ব্যর্থতার গ্লানি মুছে একটি আধুনিক উন্নত ওয়ার্ড তৈরি করবেন। গতকাল নির্বাচনী ওয়ার্ড পরিক্রমায় ১৫ নং ওয়ার্ডে গিয়ে দেখা যায় মোয়াজ্জেম হোসেন চুন্ন সহ মোট ছয় প্রার্থী নির্বাচনে অংশ নিয়েছেন। এদের মধ্যে সকলের সাথে আলাপ হলেও কোন ধরনের কথা বলতে বা প্রচার প্রচারনায় আসতে রাজি হননি এক প্রার্থী। এই ওয়ার্ডের সাবেক জনপ্রিয় কাউন্সিলর জাকির হোসেন জেলালের সাথে বিগত দিনে ভোটে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় আসা শক্তিশালী প্রার্থী হওয়া সত্ত্বেও প্রচারে নিজেকে বিমুখ রেখেছেন। তবে কথা হয়েছে অন্যান্য সকল প্রার্থীর সাথেই। প্রার্থীরা হলেন : সামজিদুল কবির বাবু, আলহাজ্ব আব্দুল কাদের শামীম, মো. সিদ্দিকুর রহমান এবং মো মকিবুর রহমান।
সামজিদুল কবির বাবু বর্তমানে তরুন সমাজের মাঝে ব্যাপক সাড়া ফেলেছেন। ভোটারদের মাঝেও ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করেছেন তিনি। দৈনিক আজকের পরিবর্তনকে সামজিদুল কবির বাবু জানান, দীর্ঘদিন অবহেলিত এই ওয়ার্ডটি মানুষের জীবনমান উন্নয়ন করতেই তিনি ভোটে দাঁড়িয়েছেন। জনগণের জন্য কাজ করা ছাড়া তার আর কোন উদ্দেশ্য নেই। নির্বাচিত হয়ে তিনি এই ওয়ার্ডের সাবেক জননন্দিত কাউন্সিলর জাকির হোসেন জেলালের অসমাপ্ত কাজ সমাপ্ত করতে চান। তিনি দাবী করেন ৭৫ শতাংশ ভোটার বর্তমানে তাকেই প্রতিনিধি হিসেবে চায়। ওয়ার্ডে জলাবদ্ধতার মতো গুরুতর সমস্যা থাকলেও তার সমাধান মেলেনি। এই সমস্যায় ওয়ার্ডের সকল বাসিন্দারা ভুগলেও তাদের মেলেনি ন্যূনতম নাগরিক সুবিধা। যারা রাজনীতি করে তারা এ সকল সুবিধা কাউন্সিলর এর মাধ্যমে তাদের পরিচিতজনদের দিয়েছেন। তাই জনপ্রতিনিধি ও প্রয়োজনে একজন রাজনীতিবিদ হয়ে এ সকল সুবিধা সকলের দোরগোড়ায় পৌঁছাতে চান। বাবু জানান, রাজনীতি না করলেও এই ওয়ার্ডের মানুষের সেবা তার বাবাও করেছেন। তিনিও একজন সেবক হিসেবে তার কাজ চালিয়ে যাবেন।
কাউন্সিলর নির্বাচিত হতে পারলে জনগণের জন্য আরো কাজ করার চেষ্টা করবেন বলে জানান তিনি।
প্রার্থী আলহাজ্ব আব্দুল কাদের শামীম বলেন, এর পূর্বে ২০০১ সালে তিনি নির্বাচন করেছিলেন। নাগরিক সমস্যায় জর্জরিত এই ওয়ার্ডের সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রার মানে উন্নয়ন প্রয়োজন। পুরো ওয়ার্ডে সন্ত্রাস নেই তবে মাদকের উপদ্রব রয়েছে। আছে রাস্তাঘাট ড্রেন ও পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থার সমস্যা। এই ওয়ার্ডে মশার উপদ্রব ব্যাপক বলে জানান তিনি। বিগত সময়ে উন্নয়নের প্রশ্নে তিনি বলেন, প্রকৃতপক্ষে একজন মেয়র যদি না পারে, তবে কাউন্সিলরদের করার কিছুই থাকে না। তাই বর্তমানে মেয়র প্রার্থী মূলত প্রধানমন্ত্রীর মনোনীত। তিনি পারবেন বরিশালের উন্নয়ন করতে। খোকন সেরনিয়াবাত নির্বাচিত হলে এই শহরের উন্নয়ন হবে। তার অধীনে থেকে একটি সুন্দর ও তিলোত্তমা নগরী গড়া সম্ভব। শামীম বলেন, নির্বাচিত হতে পারলে তিনি তার মাসিক সম্মানী ভাতা নিজে না নিয়ে ১৫ নং ওয়ার্ডের প্রকৃত সুবিধাভোগী নি¤œ বিত্ত ও নি¤œ মধ্যবিত্তদের মাঝে বন্টন করবেন। এই ওয়ার্ডে তার কোন অপবাদ নেই জানিয়ে শামীম আরো বলেন, একজন জনপ্রতিনিধিকে শতভাগ ক্লিন ইমেজের হতে হয়। এজন্য তিনি পুরোপুরি যোগ্য। কিছু প্রার্থী টাকা দিয়ে ভোট কিনছেন বলে অভিযোগ করেন আব্দুল কাদের শামীম।তার টাকা নেই কিন্তু নির্বাচিত হতে পারলে ২৪ ঘন্টা জনগণের সেবায় পাশে থাকবেন বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
মো. সিদ্দিকুর রহমান বলেন, সাধারণ মানুষের চাহিদার প্রেক্ষিতেই তিনি নির্বাচনে এসেছেন। নানা ধরনের সমস্যা যেমন জলাবদ্ধতা,পর্যাপ্ত সড়ক বাতির অভাব, বিশুদ্ধ পানির অভাব, খারাপ ড্রেনেজ ব্যবস্থা,মাদক,অন্যায় অনিয়ম ইত্যাদি নিয়ে ওয়ার্ডের বাসিন্দারা ভুগলেও তা সমাধানে দীর্ঘদিন কোন পদক্ষেপ গৃহীত হয়নি। ওয়ার্ডের অধিকাংশ এলাকায় বৃষ্টিতে পানি ওঠে। এই ওয়ার্ডের প্রধান সমস্যা জলাবদ্ধতা। সাবেক ওয়ার্ডের জননন্দিত কাউন্সিলর জাকির হোসেন জেলালের অসমাপ্ত কাজ কিছুই সমাপ্ত হয়নি। নির্বাচিত হয়ে প্রথমে এগুলো সমাপ্ত করার ইচ্ছা আছে তার। সুষ্ঠু ভোট হলে জয়ী হওয়ার আশারদ ব্যক্ত করেন তিনি। আর জয়ী হলে সকল নাগরিক সুবিধা নিশ্চিত করবেন বলে জানান। ওয়ার্ডের বেকারত্ব দূরীকরণে কর্মসংস্থান তৈরিতে গুরুত্ব দেবেন।
অপর প্রার্থী মো. নকিবুর রহমান জানান, এইবার নিয়ে তৃতীয়বারের মতো নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন। এবার জয়ী হতে না পারলে বনবাসে যাবেন তিনি। ওয়ার্ডের প্রধান সমস্যা জলাবদ্ধতা দূর করনে কোন ব্যবস্থা ইতিপূর্বে গ্রহণ করা হয়নি। উল্টো অপরিকল্পিত উন্নয়ন সাধনের মাধ্যমে এই সমস্যাটি আরো প্রকট আকার ধারণ করেছে। যা এখন সমাধান অনেকটাই কঠিন। ওয়ার্ডে অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আছে নানা সমস্যা। নির্বাচিত হলে এ সকল সমস্যা সমাধান করবেন। এলাকায় যুবকরা যাতে মাদক থেকে দূরে সরে আসে এজন্য এলাকায় নিয়মিত খেলাধুলার আয়োজন করবেন। কারণ খেলাধুলার ব্যবস্থা না থাকায় এলাকার কিছু যুবসমাজ দিন দিন মাদকে আসক্ত হচ্ছে। জনগণ যদি তাকে নির্বাচিত করে তবে প্রতিশ্রুতি রক্ষা করে সর্বদা জনগণের পাশে থাকার আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
মাকসুদ আলম চঞ্চল প্রয়াত জনপ্রিয় কাউন্সিলর সৈয়দ জেলালের সাথে প্রতিদ্বন্ধিতা করে দ্বিতীয় হন। এবারেও তার অবস্থান ভালো।
বাসিন্দারা জানান, দলমত নির্বিশেষে এই সমস্যা গুলোর সমাধান যে দেবেন তাকেই মূল্যবান ভোট দিয়ে নির্বাচিত করা হবে। যিনি জাকির হোসেন জেলালের মতো হবেন তাকে সাদরে গ্রহণ করবেন তারা।