আজ বিশ্ব জাদুঘর দিবস: বরিশালে চোখের আড়ালে চমৎকার স্থাপনা আজ বিশ্ব জাদুঘর দিবস: বরিশালে চোখের আড়ালে চমৎকার স্থাপনা - ajkerparibartan.com
আজ বিশ্ব জাদুঘর দিবস: বরিশালে চোখের আড়ালে চমৎকার স্থাপনা

4:27 pm , May 17, 2023

বিশেষ প্রতিবেদক ॥ আজ ১৮ মে বৃহস্পতিবার বিশ্ব জাদুঘর দিবস। প্রতিবছরই একটি স্লোগনকে সামনে রেখে দিবসটির তাৎপর্য তুলে ধরা হয়। যেন ছাত্র, শিক্ষক, গবেষক ও প-িত ব্যক্তিদের গবেষণার সুযোগ সৃষ্টি হয় এবং বিশ্ব নাগরিকরা জাদুঘর ও তার আপন ঐতিহ্য সম্পর্কে ভাবতে শেখে। ‘পাওয়ার অব মিউজিয়াম’ প্রতিপাদ্যে এ বছর দিবসটি উদযাপিত হচ্ছে বাংলাদেশের প্রতিটি জাদুঘরে। বরিশালও তার ব্যতিক্রম নয়। দিবসটি উপলক্ষে আলোচনা সভা, স্মৃতিচারণসহ দিনব্যাপী কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন বরিশাল বিভাগীয় জাদুঘরের সহকারী কাস্টডিও আরিফুর রহমান। তিনি জানান জাদুঘরের প্রয়োজনীয়তা সাধারণ মানুষের কাছে তুলে ধরতে বরিশালের বিশিষ্টজনদের নিমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। জাদুঘর প্রাঙ্গণে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিচারণও রাখা হয়েছে।
আরিফুর রহমান আরো বলেন, ইন্টারন্যাশনাল কাউন্সিল অব মিউজিয়ামসের আহ্বানে ১৯৭৭ সাল থেকে বিশ্বব্যাপী দিবসটি পালিত হচ্ছে। ১৯৪৬ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় আইসিওএম। এর সদস্য হিসেবে বর্তমানে ১০৭ দেশের ২৮ হাজার জাদুঘর যুক্ত রয়েছে বলে জানান তিনি।
বরিশাল সিটি করপোরেশন ভবন বা জেলা পরিষদের পুকুর পাড়ে দাঁড়িয়ে বিপরীতে প্রধান সড়কে দৃষ্টি দিলেই চোখ আটকে যায় বিভিন্ন ব্যানার পোস্টারের আড়ালে ঢেকে থাকা বরিশাল জাদুঘর লেখা সাইনবোর্ডটিতে। বাহির থেকেই একটা অবহেলা ও অবজ্ঞার ছাপ স্পষ্ট। পোস্টার ব্যানার ও বিভিন্ন তারের ফাঁক দিয়ে উঁকি দেয়া সাইনবোর্ডটি যেন প্রতিবাদ করে জানান দিচ্ছে তার উপস্থিতি। ডাকছে পথচারী ও দর্শনার্থীদের। বলছে ‘এসো একটু ঘুরে যাও, জেনে যাও তোমার পূর্বপুরুষদের বীরত্বগাঁথা, ঐতিহ্যের না জানা ইতিহাস’।
এখানে ভিতরে প্রবেশের জন্য দুটি সদর দরজা রয়েছে । একটি প্রধান ডাকঘরের সামনে দিয়ে ঘুরে, অন্যটি ফজলুল হক এভিনিউতেই। রিকশা ও ইজিবাইক জট ঠেলে জাদুঘরে প্রবেশ করতে কিছুটা ভোগান্তি পোহাতে হয় সবাইকে। তবে বেলা শেষে ঘর্মাক্ত শ্রমিকের সব কষ্ট যেমন মুছে যায় দক্ষিণের বাতাসের আদরে, ঠিক তেমনি বরিশাল জাদুঘরের সিঁড়ি বেয়ে দোতালায়  ভিডরে উঁকি দিয়ে জুড়িয়ে গেল প্রাণ। এ যেন ভিন্ন এক বরিশালের চিত্র। এতোটা চমৎকার ও মনোরম পরিবেশ যে মন থেকে কৃতজ্ঞতা উঠে এলো সাবেক সাংস্কৃতিক মন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর এমপি ও ঐ সময়ের বরিশালের প্রশাসনের প্রতি। বৃহত্তর বরিশালের ইতিহাস ও ঐতিহ্য সংগ্রহ, সংরক্ষণ, প্রদর্শন ও গবেষণার জন্য একটি প্রাণবন্ত পরিসর গড়ে তোলার লক্ষে ২০১৫ সালের ৮ই জুন বরিশাল বিভাগীয় জাদুঘরের উদ্বোধন করেন তৎকালিন সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর,এমপি।
১৮০১ সালে জেলা সদর বাকেরগঞ্জ থেকে বরিশালে স্থানান্তর করা হয় এই জাদুঘরটি।
বিশ বছর পর ১৮২১ সালে দ্বিতল বিশিষ্ট এই কালেক্টরেট ভবন নির্মিত হয়। এর প্রায় দুইশত বছর পর ১৯৯০ সালে নতুন কালেক্টরেট ভবনে দপ্তর স্থানান্তর হলে “পুরাতন কালেক্টরেট ভবন” নামে পরিচিতি পায় বর্তমানের এই জাদুঘর ভবনটি। এর আগেই ১৯৮৪ সালে ভবনটি পরিত্যক্ত ঘোষণা করেছিলো তৎকালীন প্রশাসন । ২০০৪ সালে ভবনটি সংরক্ষিত পুরাকীর্তি ঘোষণার বিজ্ঞপ্তি জারির পর বরিশাল পুরাতন কালেক্টরেট ভবন এখন সরকারের প্রতœতত্ত্ব অধিদপ্তরের অধীনে প্রয়োজনীয় সংস্কার এবং সংরক্ষণ শেষে জাদুঘরে রুপান্তর করা হয়েছে। প্রথম কক্ষে প্রবেশ মাত্র দৃষ্টিনন্দন একটি খাট ও বরিশাল অঞ্চলে ব্যবহৃত রেশমী কাপড়সহ বেশকিছু ছবি চোখে পড়বে। ভিতরে শোভা পাচ্ছে ঔপনিবেশিক স্থাপত্য ও ঐতিহ্যের স্মারক হাতিয়ার, অলংকার, কুটির শিল্প, মসজিদ মন্দির, দেব-দেবীর বেশকিছু নিদর্শন। এ অঞ্চলের নয়, কুমিল্লা, ময়মনসিংহ থেকে সংগৃহীত স্থাপত্যেও রয়েছে কিছু। রয়েছে ব্রজমোহন দত্ত, অশ্বিনী কুমার ও শেরেবাংলা একে ফজলুল হকসহ বরিশালের গর্বিত জনদের নাম পরিচয় ও ছবি।
জাদুঘর হিসাবে সংরক্ষিত এই ভবনটিই কিন্তু বাংলাদেশে নির্মিত প্রথম প্রশাসনিক ভবন। এই জাদুঘরে ভবনের ইতিহাস, স্থাপত্যিক বৈশিষ্টের বিবরণ, আলোকচিত্র ও নির্মাণ উপকরণসহ বিভিন্ন ধরনের নিদর্শন উপস্থাপন করা হয়েছে।
বরিশাল নামের আগে বাকলা-চন্দ্রদ্বীপের ইতিহাস ঐতিহ্য,  সামাজিক, অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে এখানের জালের মতো বিস্তীর্ণ নদ-নদীগুলোর প্রচ্ছন্ন প্রভাব চিহ্নিত করা হয়েছে ম্যাপের মাধ্যমে। বরিশাল বিভাগীয় জাদুঘরে বিভাগের ভৌগলিক ও প্রাকৃতিক পরিচিতি উপস্থাপন করা হয়েছে। বিভাগের কীর্তিমান ব্যক্তিবর্গের তথ্য ও আলোকচিত্র প্রদর্শন করা হয়েছে। যা আমাদের গর্বিত পরিচয়ের ধারক। সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ও শিল্পকলায় বরিশালের রয়েছে গৌরবময় সমৃদ্ধ ইতিহাস। ভবনের দোতালায় সজ্জিত ৯ টি গ্যালারিতে ফারসি হরফে উৎকীর্ন মুসলিম যুগের শিলালিপি, গুপ্ত যুগের পোড়ামাটির নিদর্শন, প্রস্তর নির্মিত পালযুগের বুদ্ধমূর্তি, পদ্মখচিত সুলতানি যুগের পোড়ামাটির ফলকচিত্র, মাটির সামগ্রী, তৈজসপত্র, গ্রামোফোন রেকর্ডার, আসবাবপত্র , শিবলিঙ্গ, মারীচী মূর্তি, কৃষ্ণ মূর্তি, হরগৌরি মূর্তি, মহাদেব মূর্তি, ব্রোঞ্চ এর বদনা, পাথরের মালাসহ অনেক মূল্যবান, দুস্প্রাপ্য ও আকর্ষনীয় নিদর্শন প্রদর্শনের ব্যবস্থা করা হয়েছে অত্যন্ত রুচিশীল দক্ষতায়। ভিতরের এতটা সৌন্দর্য ও দৃষ্টিনন্দন কারুকার্য পুরোটাই উপেক্ষিত স্থানীয় প্রশাসনের উপেক্ষা ও অবহেলায়। এই জাদুঘরের বাহিরের পরিবেশ পরিচ্ছন্ন করার পাশাপাশি দর্শকদের কাছে এটির প্রচারণা প্রয়োজন বলে মনে করেন বরিশালের সাংস্কৃতিক নেতৃবৃন্দ। প্রয়োজনে এখানে নিয়মিত সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আয়োজনেরও দাবী জানান তারা। এছাড়াও নির্দিষ্ট একটি দিনে স্কুল কলেজের শিক্ষার্থীদের জন্য জাদুঘর ভ্রমণ বাধ্যতামূলক করার পরামর্শ দিলেন বরিশাল সাংস্কৃতিক সংগঠন সমন্বয় পরিষদের সাবেক সভাপতি নজমুল হোসেন আকাশ।

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন    
সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী মিরাজ মাহমুদ
 
বার্তা ও বানিজ্যিক কার্যালয়ঃ কুশলা হাউজ, ১৩৮ বীরশ্রেষ্ঠ ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর সড়ক,
সদর রোড (শহীদ মিনারের বিপরীতে), বরিশাল-৮২০০।
© প্রকাশক কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
Developed by NEXTZEN-IT