4:12 pm , May 16, 2023
নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ বরিশাল নগরীর চিত্ত বিনোদনের অতি সীমিত সুযোগও ক্রমশ বেদখলের পাশাপাশি নিয়ন্ত্রন চলে গেছে বখাটে ও কিশোর মাস্তানদের হাতে। নগর ভবনের স্বেচ্ছা অন্ধত্বে নগরীর শিশু পার্কসহ সবগুলো চিত্ত বিনোদনের আশপাশ সহ অভ্যন্তরভাগও ক্রমশ নানা ধরনের দোকানপাটে ভরে যাচ্ছে। সাথে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সুষ্ঠু নজরদারীর অভাবে সংগঠিত এবং অসংগঠিত উঠতি ও কিশোর মাস্তানের দল বেশীরভাগ চিত্ত বিনোদনের স্থানগুলোর অঘোষিত দখল নিয়েছে। ফলে নগরীর প্রায় সব চিত্ত বিনোদনের স্থানগুলোরই সুষ্ঠু পরিবেশ বিপন্ন। মাস্তানদের লাগাতার আড্ডাবাজিসহ নানা সমাজ বিরোধী কর্মকান্ডে নগরীর চিত্ত বিনোদনের স্থানগুলো এখন আর সমাজের শান্তি প্রিয় মানুষের মানষিক প্রশান্তির স্থান নেই। ফলে প্রায় বিনোদনের সুবিধাবিহীন এনগর জীবনে একটু শ্রান্তির স্থানগুলোও নারী ও শিশুদের স্বস্তি দিতে পারছে না। বিষয়টি নিয়ে বিব্রত নারী ও শিশুসহ অভিভাবক মহল। প্রায় ৬০ বর্গ কিলোমিটারের এ মহানগরীতে বঙ্গবন্ধু উদ্যান, মুক্তিযোদ্ধা পার্ক, স্বাধীনতা পার্ক, ৩০ গোডাউন এবং অতি সম্প্রতি চালু হওয়া বীর মুক্তিযোদ্ধা শাহানারা বেগম পার্কে সুস্থ সামাজিক পরিবেশের সাথে নারী এবং শিশুদের নির্বিঘেœ বিচরণ ও বিনোদনের পরিবেশ ক্রমশ বিলুপ্ত হচ্ছে। এমনকি যান্ত্রিক এবং কোলাহলপূর্ণ নগর জীবনের ক্লান্তি থেকে একটু শ্রান্তি পেতে এসব পার্কে এসে শিশু ও নারীরা প্রায়শই নানা বিড়ম্বনার শিকার হচ্ছেন।
সিটি মেয়রের মায়ের নামে নগরীর মধ্যে দিয়ে চলমান জাতীয় মহাসড়কের ওপর গড়ে তোলা বীর মুক্তিযোদ্ধা শাহানারা বেগম পার্কটিতে নগরীর বিভিন্ন এলাকার নারী ও শিশুরা শ্রান্তি বিনোদনে এলেও এখানের পরিবেশ বিপন্ন। একদিকে একটি জাতীয় মহাসড়কের ওপর এ পার্কটিতে প্রবেশ যেমনি যথেষ্ট ঝুঁকিপূর্ণ তেমনি এখানে উঠতি মাস্তান ও কিশোর মাস্তানদের বেপরোয়া কর্মকান্ড আগত নারী ও শিশুদের নিরাপত্তা বিঘিœত করায় যথেষ্ট বিব্রতকর অবস্থায় ফেলছে। এমনকি পার্কটির পাশে বিশাল লেকটির চার ধারেই এখন অবৈধ পথ খাবারের দোকানের ভীড়ে গোটা এলাকার পরিবেশ বিপন্ন। এসব পথ খাবারের অনেক দোকানে মধ্যরাত পর্যন্ত কি কেনাবেচা হয়, তা নিয়ে এলাকাবাসীরও প্রশ্ন রয়েছে। দিনরাত এখানে বখাটে ছাড়াও বিভিন্ন কলেজ ও বিশ^বিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীদের বিরামহীন আড্ডাবাজি অনেক সময় বেলেল্লাপনাকেও হার মানাচ্ছে। অভিওযোগ রয়েছে, এক প্রভাবশালী কাউন্সিলরের নাকে কতিপয় মাস্তান নিয়িমিত চাঁদাবাজী করে এখানে ভাসমান দোকান বসিয়ে পুরো লেক ও সন্নিহিত পার্কের পরিবেশ বিপন্ন করছে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, এ পার্কে আগতদের প্রায় সবাই এখানের পরিবেশ নিয়ে অসন্তুষ্ট ও ক্ষুব্ধ। এ পার্কটির অভ্যন্তরের মত পশ্চিম ও দক্ষিণÑপশ্চিম পাশের রাস্তাটিও কিশোর মাস্তানদের অবাধ বিচরন ক্ষেত্র বলে লক্ষ্য করা গেছে। এমনকি এ পার্কের আশেপাশের রাস্তা ও পথ খাবারের খুপরি দোকানে মাদক বেচা কেনারও অভিযোগ রয়েছে। এক সময়ে খেলাধুলা এবং প্রাতভ্রমন ও সান্ধ্য ভ্রমনের জন্য এ নগরীতে বঙ্গবন্ধু উদ্যানের যে নির্ভরতা ছিল তা ইতোমধ্যে নির্লজ্জ আড্ডাবাজ ও পথ খাবারের দোকানের ভীড়ে বিড়ম্বনাস্থলের রূপ নিয়েছে। উপরন্তু এ উদ্যানটিতে সরকারী নানা মেলা ও অনুষ্ঠানের আয়োজন করতে গিয়ে মূল মাঠসহ ওয়ার্কওয়ের অবস্থাও বিপন্ন। বিগত বর্ষা মৌসুমে বৃক্ষমেলা করতে মাঠটির উত্তর ও পশ্চিম-উত্তর অংশে বালু ভরাট করায় ওয়ার্কওয়ের চেয়ে মাঠের উচ্চতা বেড়ে গেছে। ফলে সামান্য বৃষ্টিতেই মাঠের পানিতে ওয়ার্কওয়ে ডুবে যাচ্ছে।
এখন মাঠের বালুতে ওয়ার্কওয়ে ঢেকে থাকছে। ফলে সুস্থ থাকতে এখানে হাটতে আসা মানুষগুলো ধুলা বালুর কারণে স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে পড়ছেন। এরসাথে আড্ডাবাজ এবং সংগঠিত ও অসংগঠিত কিশোর মাস্তান বাহিনীর উপস্থিতি একটু শ্রান্তি খুঁজতে আসা নারী-পুরুষ ও শিশুদের স্বস্তি কেড়ে নিচ্ছে।
বৃটিশ যুগে তৎকালীন জেলা ম্যাজিষ্ট্রেট বেল এর নামে প্রতিষ্ঠিত ‘বেল পার্ক’টি ১৯৭৩ সালে ‘বঙ্গবন্ধু উদ্যান’ নামে নামকরনসহ ওই বছরই মার্চে বরিশাল সফরকালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এর আনুষ্ঠানিক স্মৃতি ফলক স্থাপন করেছিলেন।
নগরীর পাশে বহমান কীর্তনখোলা নদীর পাড়ে বিআইডব্লিউটিএ’র অধুনালুপ্ত মেরিন ওয়ার্কশপের জমিতে ‘মুক্তিযোদ্ধা পার্ক’টি নগরবাসীর চিত্ত বিনোদনের অন্যতম একটি স্থান হিসেবে গড়ে তোলা হলেও কিশোর মাস্তান বাহিনীর উৎপাতে সেখানের সুস্থ পরিবেশও বিপন্ন। একই পরিস্থিতি সিএসডি গোডাউন সংলগ্ন কীর্তনখোলা নদী তীরের বধ্যভূমি এলাকা। নদীর পাড়ে কোলাহলমুক্ত একটু প্রাকৃতিক পরিবেশে সময় কাটাতে এখানে নারী-পুরুষ ও শিশুরা ভীড় করলেও কোন স্বস্তি নেই। এখানেও সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত কিশোর ও উঠতি মাস্তানদের উৎপাতে সুস্থ সামাজিক পরিবেশ বিপন্ন।
নগরীর আমতলা মোড়ে ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউট-এর জমিতে গড়ে তোলা স্বাধীনতা পার্কটির অবস্থাও একই। এখানেও দিনরাত কিশোর ও উঠতি মাস্তানদের অবাধ কর্মকান্ডে বন্দী সুস্থ সামাজিক পরিবেশ।
এ ব্যাপারে পুলিশ কমিশনার সাইফুল ইসলাম বলেন, বিষয়টি নিয়ে সংশ্লিষ্ট থানাকে বারবারই সতর্ক করা হচ্ছে। পুলিশী টহল চলছে বলে জানিয়ে এ ব্যাপারে আরো মনযোগী হবার নির্দেশ প্রদানের কথা জানান পুলিশ কমিশনার।