4:33 pm , May 10, 2023
নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ অভিযোগ, আত্মসাফাই ও পাল্টা অভিযোগের মধ্য দিয়ে সিটি কর্পোরেশনের ২১ নং ওয়ার্ডে আসন্ন নির্বাচনে কাউন্সিলর প্রার্থীদের চলছে প্রচার প্রচারণা। বর্তমান কাউন্সিলর এর বিরুদ্ধে নানা ধরনের অভিযোগ তুলে ধরে নতুন প্রার্থীরা বলেছেন উন্নয়নের ছিটে ফোটাও করতে পারেনি ওয়ার্ড এর জন্য। শুধু স্বেচ্ছাচারিতা, অনিয়ম ও অপরাধমূলক কর্মকা- করেই কাটিয়েছে বিগত পাঁচ বছর। ওয়ার্ডবাসীর উন্নয়ন করতে না পারলেও নিজে করেছে ভোগ বিলাসের বিশাল রাজত্ব। সব প্রার্থীর দাবী তারা নির্বাচিত হলে জনগণের সাধারণ নাগরিক সুবিধা গুলো এনে দেবেন। যা বিগত পাঁচ বছরে হাতে গোনা কিছু মানুষ ছাড়া কেউই পায়নি। অন্যদিকে বর্তমান কাউন্সিলর এ সকল অভিযোগ কে নিছক নির্বাচনী অপকৌশল বলে আখ্যা দিয়েছেন। তিনি বলেন, অন্যান্য ওয়ার্ডের চেয়ে এই ওয়ার্ডে অনেক বেশি কাজ হয়েছে। নগরীর গুরুত্বপূর্ণ এই ওয়ার্ডটি তে কিছু সমস্যা থাকলেও বিগত পাঁচ বছরে তা সমাধানের চেষ্টা করেছেন শতভাগ বলে দাবি বর্তমান কাউন্সিলরের। আসন্ন নির্বাচন নিয়ে ওয়ার্ড পরিক্রমায় গতকাল দৈনিক আজকের পরিবর্তন প্রতিবেদক গিয়েছিল ২১ নং ওয়ার্ডে। সাধারণ ভোটারদের সাথে আলাপে জানা যায়, ৯০ ভাগের বেশি শিক্ষিত জনগোষ্ঠীর এই ওয়ার্ডটিতে নগরীর বর্ধিত ওয়ার্ড গুলোর ন্যায় নানা সমস্যা জর্জরিত হয়ে রয়েছে। মেয়াদের শেষের দিকে এসে দুই একটি রাস্তা ও ড্রেনের অপরিকল্পিত উন্নয়ন শুরু হলেও গত পাঁচ বছর চলেছে লিপিস্টিক মার্কা উন্নয়ন দিয়ে। এছাড়া ওয়ার্ডে বেশ উপদ্রব রয়েছে কিশোর গ্যাং ও মাদক ব্যবসায়ীদের। সাধারণ ভোটাররা উদাহরণ দিয়ে বলেন, এই ওয়ার্ডে উন্নয়নের চিত্র বিগত বন্যায় স্পষ্ট হয়েছে পুরো বরিশাল বাসীর কাছে। বর্তমান কাউন্সিলর এর কাছে হাতে গোনা কিছু ঘনিষ্ঠজন ছাড়া তেমন উপকার কেউই পায়নি বলে জানায় তারা। পূর্বে ২১ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর আলতাফ মাহমুদ শিকদার থাকাকালীন সময়ে এই ওয়ার্ডের বাসিন্দারা অনেক ভালো ছিল। আহা মরি উপকার না পেলেও বিপদে-আপদে তাকে সর্বদা পাশে পেয়েছে ওয়ার্ডের সকল স্তরের বাসিন্দারা। সার্বিক বিষয়গুলোতে আলাপ করা হয় ওয়ার্ড এর সম্ভাব্য কাউন্সিলর প্রার্থীদের সাথে। এদের মধ্যে একাধিক প্রার্থী তুলে ধরেন নানান অভিযোগ। গতবার নির্বাচনে অংশ নেয়া মো শাহরিয়ার সাচিব (রাজিব) প্রার্থী যিনি এবারো নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন। তিনি বলেন, শিক্ষিত জনবসতি এই ওয়ার্ডটিতে বিগত পাঁচ বছরে কোটি কোটি টাকা ট্যাক্স আদায় করা হলেও হয়নি কোনো উন্নয়ন। রাস্তা ও ড্রেনের কিছু কাজ হলেও তা অপরিকল্পিত। রাজিব বলেন, বর্তমান কাউন্সিলর শেখ সাঈদ আহমেদ মান্নার সাথে ঘন্টার পর ঘন্টা অপেক্ষা করেও সাধারণ বাসিন্দারা দেখা করতে পারে না। এলাকায় বিগত পাঁচ বছরে বেড়েছে কিশোর গ্যাং ও সাবেক শীর্ষ সন্ত্রাসীদের উপদ্রব। গত পাঁচ বছরে এই ওয়ার্ডে সাধারণ বাসিন্দাদের অনেকেই ভয়েও কাউন্সিলরের কাছে যেতে পারেনি। যারা কাউন্সিলরের ঘনিষ্ঠ তারা ছাড়া কেউ ভবন নির্মাণের প্লান পায়নি এই ওয়ার্ডে। ওয়ার্ডে রয়েছে মাদকের ব্যাপক সমস্যা। কমপক্ষে সাতটি স্পটে বিভিন্ন ধরনের মাদকের বেচাকেনা চলে বলে জানায় রাজীব। রাজিব বলেন, এই ওয়ার্ডটিতে কেউ স্বাধীনভাবে মতামত প্রকাশ করতে পারেনি। ২০১৮ সালে নির্বাচনে অংশ নেয়ার পরে তাকে মিথ্যে মাদক মামলায় ফাঁসানো হয়েছিল। এই ওয়ার্ডে বিগত পাঁচ বছরে এমনই দুরবস্থা হয়েছিল যে খোদপ্রশাসনের সদস্যদের লাঞ্ছিত হতে হয়েছে বর্তমান কাউন্সিলর এর হাতে। রাজিব বলেন, তিনি নির্বাচিত হতে পারলে এসকল সমস্যা দূর করে ওয়ার্ডের উন্নয়ন ও সুশাসন প্রতিষ্ঠা করতে চান।আওয়ামী লীগ মনোনীত মেয়র প্রার্থী খোকন সেরনিয়াবাদ এর মত যোগ্য ব্যক্তির অধীনে ২১ নং ওয়ার্ড কে গড়তে চান মডেল ওয়ার্ড হিসেবে।
আওয়ামী লীগ মনা অপর এক প্রার্থী আবু মোহাম্মদ মুসা বলেন, বিগত পাঁচ বছরে সাধারণ বাসিন্দা তো দূরের কথা ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের নেতা হয়ে জনগণের সমস্যা নিয়ে তারাই কাউন্সিলরের কাছে যেতে পারেননি।তাকে ফোনেও পাওয়া যায় না। ওয়ার্ডের সাধারণ নাগরিক সমস্যার কোন সমাধানই হয়নি এই পাঁচ বছরে। আছে মশার উপদ্রব ও অপরিকল্পিত নগরায়নের চেষ্টা। মুসা বলেন, সংগঠন ও ব্যবসা-বাণিজ্য নিয়ে ব্যস্ত থাকায় বর্তমান কাউন্সিলর শেখ সাঈদ আহমেদ মান্নাকে বেশিরভাগ সময়ই পাওয়া যায়নি। দিনের বেলা তাকে পাওয়া যায় না এটি ওয়ার্ড এর প্রায় সকল বাসিন্দারা জানেন। নিজের বিষয়ে তিনি বলেন ওয়ার্ড এর ছেলে হিসেবে তার কোন খারাপ রেকর্ড নেই। এলাকার জনগণের ইচ্ছায় তিনি নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন। নির্বাচিত হতে পারলে বিগত পাঁচ বছরে তৈরি হওয়া ওয়ার্ডের সকল সমস্যার সমাধান করবেন। তিনি বলেন পরিবর্তনের সময় এসেছে। আগামীতে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী খোকন সেরনিয়াবাদ মেয়র নির্বাচিত হলে বরিশালের ব্যাপক উন্নয়ন সাধিত হবে। উন্নয়ন হবে তার ওয়ার্ড ২১ নং এর এমনটাই আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি। প্রার্থীদের অভিযোগ ও ওয়ার্ডের সার্বিক বিষয় নিয়ে সর্বশেষ আলাপ করা হয় বর্তমান কাউন্সিলর শেখ সাঈদ আহমেদ মান্নার সাথে। তিনি বলেন,২১ নং ওয়ার্ডে বেশিরভাগই সুশীল সমাজের বসবাস। এখানে শতকরা ৯০% এর বেশি ভোটারই শিক্ষিত। দৈনন্দিন সিটি কর্পোরেশন থেকে যে সুবিধাগুলো দেয়া হয় যেমন, নিয়ম মাফিক ময়লা পরিষ্কার করা, সময় মত সড়ক বাতি, প্রয়োজনে কিছু নাগরিক সুবিধা এর চাইতে বেশি ডিমান্ড শিক্ষিত ও সুশীল এই ভোটারদের নেই। তারা এলাকার পরিবেশ সুন্দর চায়। আমি তাদের চাহিদা পূরণ করেছি শতভাগ। মুসলিম গোরস্থানের পরিবেশ খারাপ ছিল। এটি ওয়ার্ড এর একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থান। সেখানে তিনগেটে ছয় জন গার্ড এবং চারজন মালি নিয়োগ করেছেন তিনি। নিউ গোরস্থান রোডের রাস্তা ও ড্রেনের কাজ চলমান রয়েছে জানান। এছাড়াও অক্সফোর্ড মিশন রোডের কাজও চলমান। ২১ নং ওয়ার্ডের আওতাধীন নবগ্রাম রোড ও কলেজ এভিনিউ প্রান্তের ও উন্নয়নমূলক কাজ হয়েছে। কে এফ ডব্লিউ প্রজেক্টের আওতায় হাতেম আলী কলেজ থেকে গোরস্থান রোড পর্যন্ত পানি নিষ্কাশনের জন্য হচ্ছে ড্রেন নির্মাণ। যারা বলে বিগত পাঁচ বছরে কোন কাজ হয়নি তাদের কাছে প্রশ্ন করে মান্না বলেন,যদি কোন কাজই না হয় তবে চলমান এ কাজগুলো আসলে কি হচ্ছে? অন্য সকল অভিযোগের বিষয়ে কাউন্সিলর শেখ সাঈদ আহমেদ মান্না বলেন,অন্য সম্ভাব্য প্রার্থীরা যা বলছে, যে সকল অভিযোগ করছে,তা শুধুমাত্রই নির্বাচনী অপকৌশল। তাকে হেও প্রতিপন্ন করার উদ্দেশ্যেই তারা এমনটা বলে বেড়াচ্ছে এবং তাদের নির্বাচনী প্রচারণা চালাচ্ছে। দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে কিছু সীমাবদ্ধতা তাকে জনগণের কাছ থেকে অনিচ্ছাসত্ত্বেও মাঝেমধ্যে দূরত্বে রেখেছে। কিন্তু তার মানে এই নয় যে জনগণের পাশে তিনি ছিলেন না। ভবিষ্যতে নির্বাচিত হলে জনগণের কল্যানেই কাজ করবেন বলে জানান তিনি।
এদিকে ২১নং ওয়ার্ড থেকে চারবার নির্বাচিত কাউন্সিলর ১৯৯৫ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত কাউন্সিলর ও সাবেক সাবেক দায়িত্ব প্রাপ্ত মেয়র আলতাফ মাহমুদ সিকদার মনোনয়ন ফরম কিনেছেন। তবে এখন পর্যন্ত তিনি কোন গণসংযোগ করেননি। আলতাফ মাহমুদ সিকদার জানান, প্রতিদিন তার ওয়ার্ডের বিভিন্ন পর্যায়ের নাগরিক তার বাসায় আসেন এবং তাকে নির্বাচন করার জন্য অনুরোধও করেন। তবে বরিশাল মহানগর বিএনপির একটি বড় পদে আসীন থাকার কারণে এখনও চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেননি। দল থেকে গ্রীন সিগন্যাল পেলে নির্বাচন করার সম্ভাবনা রয়েছে বলে তিনি আজকের পরিবর্তনকে জানিয়েছেন। তিনি জানান, দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে তিনি যাবেন না। আলতাফ মাহমুদ সিকদার নির্বাচনে অংশ না নিলে ২১ নং ওয়ার্ডের একটি বড় অংশ অক্সফোর্ড মিশন রোড থেকে কোন প্রার্থীই থাকছে না বলেই মনে করা হচ্ছে।
উল্লেখ্য ২১ নং ওয়ার্ডে বর্তমান ভোটার প্রায় ১১ হাজার । দুইটি কেন্দ্রে এই ওয়ার্ডে ভোট
অনুষ্ঠিত হবে। একটি হলো সৈয়দ হাতেম আলী কলেজ কেন্দ্র অপরটি নবআদর্শ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্র।