বাবুগঞ্জে আগাম টাকা দিয়ে ইট কিনে প্রতারিত হচ্ছে ক্রেতারা বাবুগঞ্জে আগাম টাকা দিয়ে ইট কিনে প্রতারিত হচ্ছে ক্রেতারা - ajkerparibartan.com
বাবুগঞ্জে আগাম টাকা দিয়ে ইট কিনে প্রতারিত হচ্ছে ক্রেতারা

4:25 pm , May 2, 2023

সাইফুল ইসলাম, বাবুগঞ্জ ॥ বাবুগঞ্জে আগাম ইট বিক্রি করে ক্রেতাদের সাথে প্রতারনার অভিযোগ উঠেছে একাধিক ভাটা মালিকের বিরুদ্ধে। ইট কিংবা টাকা না দিয়ে বছরের পর ক্রেতাদের সাথে প্রতারণা করছে বলে ভুক্তভোগীরা জানিয়েছেন। একাধিক ভাটা মালিক অন্যত্র ইট বিক্রি করে আত্মগোপনে রয়েছে। তথ্যনুসন্ধানে জানাগেছে, বাবুগঞ্জ উপজেলায় রয়েছে চলমান ছোট-বড় ২৪ টি ইটভাটা ও বর্তমানে বন্ধ রয়েছে প্রায় ১১ টি ইট ভাটা। ইট প্রস্তুত ও ভাটা স্থাপন (নিয়ন্ত্রণ) আইন ২০১৩ তে বলা হয়েছে লাইসেন্স ব্যতীয় ইটভাটা স্থাপন ও প্রস্তুত নিষিদ্ধ, জ্বালানী কাঠের ব্যবহার নিষদ্ধি, ইট প্রস্তুতের জন্য কৃষি জমি, পাহাড় বা টিলা কেটে ইট প্রস্তুতের জন্য উহা ব্যবহার করা যাবেনাসহ বেশ কিছু নিয়মনীতি রয়েছে। অনেকেই এই আইন মানছেন না। আবার বেশকিছু ইটভাটা পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র, ট্রেডলাইসেন্স ও নিয়মনীতি মেনেই ব্যবসা পরিচালনা করছেন।
আইনের ফাঁকফোকর থেকে অধিকাংশ ভাটা মালিকরা বেড়িয়ে আসতে পারলেও বেড়িয়ে আসতে পারেনি অগ্রিম ইট ক্রেতাদের টাকা আতœসাতের লক্ষ্য থেকে। এবার তথ্য অনুসন্ধানে বেড়িয়ে আসছে বেশ কিছুইট ভাটার মালিকদের ক্রেতা হয়রারি করে টাকা আতœসাতের অজানা কাহিনী।
প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক বাবার পেনশনের টাকা দিয়ে বাড়ি করতে ইট কিনতে আগাম টাকা দিয়েছেন মোঃ আনোয়ার হোসেন মাষ্টারের ছেলে শাহাবউদ্দিন বাচ্চু। দোয়ারিকা এলাকার বেষ্ট ও সায়েম ব্রিকস মালিককে ২০১৮ সালে বাজার মূল্য থেকে কিছু কমে অগ্রিম প্রায় ২০ লক্ষাধিক টাকা দেন। ভাটা মালিক দোয়ারিকা গ্রামের রব হাওলাদারের পুত্র মো. শামিম হোসেন ক্রয়কৃত ইট কিংবা টাকা কোনটিই দিচ্ছেন না। বিভিন্ন টালবাহানায় কালক্ষেপণ করেন। একসময় মুনাফাসহ প্রায় ৩০ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়ে পালিয়ে যান। এছাড়াও উপজেলার আবুল বাসার, কবির বিশ্বাস, জসিম উদ্দিন,আজগর হোসেন লালন,খোকন হাওলাদারসহ আরো প্রায় শতাধিক ক্রেতার কাছ থেকে বেষ্ট ব্রিকস ও চাঁদপাশা ইউনিয়নের ময়দানের হাট এলাকায় সায়েম ব্রিকস ২০২২ সালের শেষের দিকে স্থানীয়দের প্রায় ১২ থেকে ১৫ কোটি টাকা হাতিয়ে ইট ভাটা অন্য মালিকানায় হস্তান্তর করে পালিয়ে ভারতে অবস্থান করেছেন। তার স্ত্রী সন্তান ঢাকাতে শ্বশুরালয়ে অবস্থান করছেন বলে একটি সূত্রে জানাগেছে।
খানপুরা এলাকার ফাইভস্টার ব্রিকস এর মালিক আসলাম ও আতাহার এর বিরুদ্ধে অগ্রিম ইট বিক্রি করে ইট অথবা টাকা না দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। একই ভাবে দোয়ারিকা গ্রামের রানা ব্রিকসের মালিক রেজভি আহমেদ রানার বিরুদ্ধেও কয়েক কোটি টাকা আতœসাতের অভিযোগ উঠেছে। এ সংক্রান্ত মামলায় একাধিকবার জেল খেটে বর্তমানে রানা পলাতক রয়েছে বলে জানা গেছে। অপরদিকে মাধবপাশা ইউনিয়নের সাবেক ইউপি সদস্য মেঃ জহিরুল ইসলাম ফিরোজ মোল্লা জানান, তার আত্মীয় দোয়ারিকার সেরা ব্রিকসের মালিক সাহিন হাওলাদারের কাছে ১১ লাখ টাকার অগ্রিম ইট ক্রয় করেন, কিন্তু যথা সময়ে টাকা কিংবা ইট কোনটিই না দিয়ে পালিয়ে যায় ভাটা মালিক সাহিন হাওলাদার।
এছাড়াও বাবুগঞ্জের বেশ কিছু ইট ভাটার বিরুদ্ধে ১ নম্বর ইট ক্রয় বাবদ অগ্রিম টাকা দেওয়ার পরে ইট নেওয়ার সময় ২ নম্বর ইট দিয়ে প্রতারণা করার অভিযোগও করেন বহু ক্রেতা। অনেকের অভিমত ইট ভাটা মালিকপক্ষ অর্থ বৈভবে এলাকার প্রভাশালী হওয়ায় সাধারণ মানুষ তাদের কাছ থেকে ক্রয়কৃত ইট বুঝে নিতে হিমসিম খাচ্ছে। এ বিষয়ে ভূক্তভোগী ক্রেতারা প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃক্ষের সু-দৃষ্টি কামনা করছেন।
ভাটা মালিকদের বিরুদ্ধে এ সব অভিযোগের বিষয়ে কথা হয় বাবুগঞ্জ উপজেলা ইটভাটা মালিক সমিতির সভাপতি সোহরাব হোসেন রব হাওলাদারের সাথে।
তিনি বলেন, ইট ভাটা একটি শিল্প প্রতিষ্ঠান। এটি গড়ে তুলতে বর্তমানে নূন্যতম কোটি টাকার দরকার হয়। কিন্ত কিছু মানুষ ২০ কিংবা ৫০ লাখ টাকা নিয়েই কোন রকম পূর্ব অভিজ্ঞতা না নিয়েই অধিক মুনাফার লোভে ইট ভাটা গড়ে তুলে। ফলে বছর ঘুরতেই পুজি সংকট দেখা দেয়। তখন ক্রেতার কাছ থেকে অগ্রিম টাকা নিয়ে ৬ হাজার থেকে ৬ হাজার ৫শ টাকায় ইট বিক্রি করেন। যেখানে বর্তমান বাজারে প্রতি হাজার ইটের তৈরি খরচ প্রায় ৯ হাজার টাকা, সেখানে অধিক কম দামে আগেই ইট বিক্রি করায় বড় ধরণের লোকশানে পড়তে হয় ভাটা মালিকদের। আর এতে প্রতি বছর লোকসানে পড়তে হয় কয়েক কোটি টাকা। ফলে ঋণগ্রস্থ হয়ে পরে ভাটা মালিকরা এ কারণেই অধিকাংশ ভাটা মালিক পাওনাদারের চাপে ভাটা বিক্রি করে দেয় অথবা ক্রেতার সাথে সময় ক্ষেপণ করা শুরু করেন সর্বশেষ উপায়ন্ত না পেয়ে এলাকা ছাড়তে বাধ্য হয়।
ইট ভাটা মালিক সমিতির সভাপতি সোহরাব হোসেন রব হাওলাদার ক্রেতাদের অগ্রিম ইট ক্রয় করলে অধিক কমের কথা চিন্তা করে ইট ক্রয় না করে, বাজার দর যাচাই করে মানসম্মত ইট ও ব্যক্তি যাচাই করে ইট কেনার পরামর্শ দেন।
এ বিষয়ে বাবুগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার নুসরাত ফাতিমা বলেন, এ বিষয় লিখিত অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।
এয়ারপোর্ট থানার ওসি মোঃ হেলাল উদ্দিন জানান, এধরনের ভাটা মালিকদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে। আসামীরা পলাতক রয়েছে। আসামী গ্রেফতার পুলিশ তৎপর আছে।

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন    
সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী মিরাজ মাহমুদ
 
বার্তা ও বানিজ্যিক কার্যালয়ঃ কুশলা হাউজ, ১৩৮ বীরশ্রেষ্ঠ ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর সড়ক,
সদর রোড (শহীদ মিনারের বিপরীতে), বরিশাল-৮২০০।
© প্রকাশক কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
Developed by NEXTZEN-IT