3:28 pm , April 17, 2023
বিশেষ প্রতিবেদক ॥ অর্থ বছরে প্রথম ৯ মাসে দক্ষিণাঞ্চলের ৬ জেলায় বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক প্রায় ৮৭০ কোটি টাকা কৃষি ও শস্য ঋন সহ সরকারের কারোনাকালীন প্রনোদনার আওতায় বিভিন্ন ধরনের ঋন বিতরণ করেছে। চলতি অর্থ বছরে ১ হাজার ৩৫২ কোটি টাকা ঋন বিতরণ লক্ষ্যমাত্রা বাস্তবায়নে সার্বিক কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে। চলতি অর্থ বছরের প্রথম ৬ মাসে দক্ষিণাঞ্চলে কৃষি ব্যাংক প্রায় ১৮ কোটি টাকা নীট মুনাফা অর্জনে সক্ষম হয়েছে। যা অর্থ বছর শেষে প্রায় ৫০ কোটি অতিক্রম করতে পারে। বিভিন্ন ধরনের ঋন বিতরণ ছাড়াও এ ব্যাংকটির মাধ্যমে প্রবাসীরা গত ৯ মাসে ১৫৯ কোটি টাকা দেশে পাঠিয়েছে। যা আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় প্রায় ১২% বেশী। বর্তমানে দক্ষিণাঞ্চলে রাষ্ট্রায়ত্ব এ বিশেষায়িত ব্যাংকটির মোট আমানত স্থিতির পরিমান প্রায় আড়াই হাজার কোটি টাকা। যা আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ৩০২ কোটি টাকা বেশী বলে জানা গেছে।
কৃষি নির্ভর দক্ষিণাঞ্চলের অর্থনীতি সচল রাখতে রাষ্ট্রায়ত্ব বিশেষায়িত এব্যাংকটি সরকারের করোনা প্রনোদনা প্যাকেজের আওতায় মাত্র ৪% থেকে ৭% সুদে চলতি অর্থ বছরের প্রথম ৯ মাসে প্রায় ১৫ হাজার উদ্যোক্তার মাঝে পৌনে ২শ কোটি টাকা ঋন বিতরণ করেছে। গ্রাম বাংলার এ ব্যাংকটি অর্থ বছরের প্রথম ৯ মাসে দক্ষিণাঞ্চলে প্রায় ১শ কোটি টাকা এসএমই ঋন বিতরণ করেছে। যা আগের বছরের একই সময়ের চেয়ে প্রায় ২০ কোটি টাকা বেশী।
এমনকি চলতি অর্থ বছরের প্রথম ৯ মাসে নতুন প্রায় ১৯ হাজার সহ দক্ষিণাঞ্চলে কৃষি ব্যাংকের একক ঋন গ্রহীতার সংখ্যা এখন সাড়ে ৪ লাখেরও বেশী। অর্থ বছরের প্রথম ৯ মাসে দক্ষিণাঞ্চলে ব্যাংকটির ১২৯টি শাখায় বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষ প্রায় ৩৫ হাজার নতুন সঞ্চয়ী ও চলতি হিসেব খুলেছেন বলে জানা গেছে।
দক্ষিণাঞ্চলের ৪২টি উপজেলার সুদূর পল্লী এলাকাতেও কৃষি ব্যাংক-এর সবগুলো শাখাই ইতোমধ্যে অনলাইন সুবিধার আওতায় এসেছে। ফলে এ অঞ্চলের ১২৯টি শাখাই এখন অন লইনে বিশে^র যেকোন প্রান্তের ব্যাংকিং সুবিধা প্রদান করছে। কৃষি ব্যাংক সারাদেশের মত দক্ষিণাঞ্চলেও করোনায় ক্ষতিগ্রস্ত মানুষকে ‘ঘরে ফেরা’ কর্মসূচীর আওতায় ৫ লাখ টাকা পর্যন্ত জামানত বিহীন ঋন প্রদান করছে। এ কর্মসূচীর আওতায় গত ৯ মাসে প্রায় ৭শ জনের মাধ্যে প্রায় ৬ কোটি টাকা ঋন বিতরণ করা হয়েছে।
দক্ষিণাঞ্চলে ব্যাংকটির প্রায় আড়াই হাজার কোটি টাকার আমানত স্থিতির মধ্যে অর্থ বছরের প্রথম ৯ মাসে নতুন সংগ্রহ হয়েছে প্রায় ১৪৭ কোটি টাকা। চলতি অর্থ বছরে আমানত সংগ্রহের লক্ষ্য ৫৮৫ কোটি। অর্থ বছরের প্রথম ৬ মাসে ব্যাংকটি নতুন প্রবর্তিত ৬টি স্কিমের আওতায় দক্ষিণাঞ্চলে গত ৯ মাসে প্রায় সাড়ে ১০ হাজার নতুন হিসেব খুলতে সক্ষম হয়েছে। ত্রৈমাসিক, মাসিক, মিলিয়নিয়ার, ডাবল, বিকেবি লাখপতি ও মাসিক মুনাফা প্রকল্পে গ্রাম বাংলার মানুষের আগ্রহ ক্রমশ বাড়ছে বলে জানিয়েছেন কৃষি ব্যাংকের বরিশালের বিভাগের প্রধান নির্বাহী ও জিএম সালাহ উদ্দীন রজিব।
ব্যাংকটি স্বল্প সুদে শস্য ঋন বিতরণের পাশাপাশি মাত্র ৪% সুদে মসলা জাতীয় ফসল আবাদে ২ কোটি ৬০ লাখ টাকা ঋন বিতরণ করেছে। করোনা মহামারীতে ক্ষতিগ্রস্ত ঘরে ফেরাদের জন্য প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ ঋনদান কর্মসূচীর আওতায় দক্ষিণাঞ্চলের বিপুল সংখ্যক মানুষের মাঝে কৃষি ব্যাংক মাত্র ৬% সুদে ঋন বিতরণের পাশাপাশি বিশেষ এসএমই কর্মসূচীর আওতায়ও ৪% সুদে আরো বিপুল সংখ্যক উদ্যোক্তার মাঝে ১শ কোটি টাকা ঋন বিতরণ করেছে বলে জানা গেছে।
একইভাবে যে কোন ক্ষুদ্র উদ্যোক্তার জন্য প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ প্রনোদনা কর্মসূচীর আওতায় দক্ষিণাঞ্চলের বিপুল সংখ্যক মানুষ বিশেষ ঋন সুবিধা লাভ করছেন। রাষ্ট্রীয় বিশেষায়িত এ বানিজ্যিক ব্যাংকটি ‘মুজিব শতবর্ষ’ উপলক্ষে নিজস্ব তহবিল ছাড়াও করোনা মহামারীতে সরকারী প্রনোদনা প্যাকেজের আওতায়ও সবগুলো ঋন বিতরণ করেছে।
তবে ব্যাংকটিতে অনাদায়ী ঋনের পারিমান প্রায় ২ হাজার ৮শ কোটি টাকা হলেও আদায়যোগ্য অনাদায়ী বা খেলাপী ঋনের পরিমান মাত্র ৯৫ কোটি টাকার মত। অনাদায়ী ঋনের একটি বড় অংশই মেঘনা ও তেতুলিয়া বেষ্টিত ভোলায়। দ্বীপ জেলাটির নদী ভাঙনে হাজার হাজার কৃষক সহ বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়ে পড়ায় তাদের অনেকেরই খোঁজ পাওয়া দুস্কর। যাদের অস্তিত্ব আছে, তারাও কৃষিজমি সহ ঘরবাড়ি নদী গর্ভে হারিয়ে উদ্বাস্তুতে পরিনত হয়েছেন। ফলে বাস্তুচ্যুত নিত্য অভাবী ওইসব মানুষের কাছ থেকে বকেয়া ঋন আদায় কষ্টকর। তারপরেও ইতোমধ্যে বিপুল পরিমান আদায়যোগ্য অনাদায়ী ঋন আদায় সম্ভব হয়েছে। এমনকি এ জেলাটিতে যারা ঋন পরিশোধ করেছেন তাদের নতুন করে ঋন প্রদান করেছে কৃষি ব্যাংক। ফলে অনেকেই পুনর্বাসিত হয়েছেন।
দেশের সর্ববৃহৎ বিশেষায়িত রাষ্ট্রীয় এ ব্যাংকটির লক্ষ্যে পৌঁছানোর ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় বাঁধা জনবল সংকট। এ অঞ্চলের ৪২টি উপজেলার ১২৯টি শাখা সহ বিভাগীয় ও আঞ্চলিক অফিসগুলোর জন্য কৃষি ব্যাংকের ১ হাজার ৬২৮ জনের মঞ্জুরিকৃত জনবলের মধ্যে ইতোপূর্বে কর্মরত ছিলেন মাত্র ৭২৩জন। সম্প্রতি নতুন নিয়োগপ্রাপ্ত ৮১ জনকে দক্ষিণাঞ্চলে পদায়ন করার পরেও বর্তমানে কর্মরত মাত্র ৮শ’র মত। এখনো শূন্য পদের সংখ্যা ৫০%-এরও বেশী। এমনকি ব্যাংকটির অনেক শাখাই মাত্র ৩জন কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়ে কাজ করছে। উপজেলা পর্যায়ে বেশীরভাগ শাখায়ই জনবল মাত্র ৩Ñ৫ জন। ফলে রাষ্ট্রীয় এ ব্যাংকটির সার্বিক কার্যক্রম যথেষ্ট ব্যাহত হচ্ছে। এ ব্যাপারে ব্যাংকটির বরিশাল বিভাগীয় জেনারেল ম্যানেজার সালাহ উদ্দীন রজিব জানান, এ অঞ্চলের কৃষি ও কৃষিÑঅর্থনীতি সচল রাখতে বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের প্রতিটি কর্মী নিরলস পরিশ্রম করছে। সরকারের নীতিমালা অনুযায়ী সব ধরনের ঋন বিতরণের সাথে আদায়ে অন্য যে কোন ব্যাংকের তুলনায় কৃষি ব্যাংক ভাল করছে বলেও দাবী করেন তিনি।