3:47 pm , April 12, 2023

বিশেষ প্রতিবেদক ॥ রূপাতলী বাসস্ট্যান্ডে বাস মালিক সমিতি ও শ্রমিক ইউনিয়নের অত্যাচারে অতিষ্ঠ তিন চাকার বাহনের চালকরা। চালকদের অভিযোগ বাস টার্মিনালের আশপাশের মাহেন্দ্র বা সিএনজি অটোরিকশা স্ট্যান্ডে এসে অযথাই হয়রানি করে বাস মালিক সমিতি বা শ্রমিক ইউনিয়নের নেতারা। তারা যখন তখন এসেই মাহেন্দ্র, সিএনজি ও ইজিবাইকসহ তিন চাকার যানবাহনের চাবি বা বিভিন্ন কৌশল তিনচাকার যানবাহন ধরে নিয়ে যায় ও ভিতরে নিয়ে আটকে রাখে। কেউ যেতে না চাইলে মারধর করারও অভিযোগ করেন মহেন্দ্র ও সিএনজি চালকরা। তবে এ অভিযোগ স্বীকার করে বাস মালিক ও শ্রমিক ইউনিয়ন নেতারা বলেন, মহাসড়কে ওদের চলাচল নিষেধ। তারপরও ওরা মহাসড়ক ব্যবহার করলেই ওদের গাড়ি জব্দ করার আদেশ রয়েছে। তবে এ আদেশ কে দিয়েছেন বা ট্রাফিকের কেউ জানে কিনা তার উত্তর দেয়ার প্রয়োজন বোধ করেনি কেউই। বুধবার সকালে একসাথে দশ বারোটি সিএনজি ও মাহেন্দ্র নিয়ে আটকে রাখে রুপাতলী বাস মালিক সমিতি ও শ্রমিক ইউনিয়নের নেতারা। এ সময় মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক কাউসার হোসেন শিপনের কিশোর বাহিনীকে লেলিয়ে দেয়া হয় মাহেন্দ্র ও সিএনজি চালকদের বিরুদ্ধে। সিএনজি চালক মেহেদী বলেন, আমি বাকেরগঞ্জের গোমা থেকে ভোলা রোড হয়ে শহরে প্রবেশ করি। আমার গাড়িতে কতগুলো ডাইশ রাখা ছিলো কোনো যাত্রী ছিলো না। রূপাতলী বাসস্ট্যান্ডের কিছুটা আগে কয়েকজন কিশোর হাত তুলে আমাকে থামায় ও গাড়িতে উঠে টার্মিনালের ভিতর একটু পৌছে দিতে বলে। আমি ওদের টার্মিনালের ভিতর পৌঁছে দিতেই ওরা আমাকে চড় দিয়ে গাড়ির চাবি নিয়ে যায় ও হাইওয়ে কেন ব্যবহার করেছি তা জানতে চায়। একই অভিযোগ করেন মহেন্দ্র চালক আলমগীর সোবহানসহ অনেকে। বাস মালিক সমিতির অফিসে কেউ নেই। শ্রমিক ইউনিয়নের কক্ষে টেলিভিশন দেখায় মগ্ন সাধারণ শ্রমিকরা। তাদের কয়েকজন জানালেন সভাপতি পরিমল দাস ঢাকায় আছেন সিএনজি ও মাহেন্দ্র আটক মালিক সমিতির কাজ, আমাদের না। এ সময় সহ-সভাপতি কালুকে অল্পসময়ের জন্য দেখা গেলেও কিছু সময় পরে অদৃশ্য হয়ে গেলেন। কয়েকজন কাউন্টার শ্রমিক টিকিট বিক্রি বন্ধ রেখে ছুটে এলেন মারমুখো আচরণে। তারা বললেন, ট্রাফিক পুলিশে এদের দিয়ে লাভ নেই। সব ঘুষ খোর। ১০ টাকা পেলেই ছেড়ে দেবে। তাই আমরা ধরে আটকে রাখছি সন্ধ্যার আগে ছাড়ার নির্দেশ নেই।
মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক কাউসার হোসেন শিপনকে ফোন করে পরিচয় দিতেই, যাচ্ছে তাই ভাষা ব্যবহার করে বললেন, সাংবাদিকতার আড়ালে সিএনজি ও মাহেন্দ্র ব্যবসা করবেন আর আপনাগো গাড়ি আটকানো হলেই ছুটে আসবেন, নিউজ করতে। যা খুশি করুন, মহাসড়কে তিনচাকার কোনো যানবাহন চলতে দেব না… বলেই ফোন কেটে দিলেন মালিক সমিতির এই নেতা।
সব শুনে ট্রাফিক ইন্সপেক্টর বিদ্যুৎ চন্দ্র দাস বললেন, সকাল সাতটার ঘটনা, আমরা আসার আগেই ঘটেছে। আমি ওদের মামলা দায়ের করতে বলেছি। পরে আমার অনুরোধে কয়েকটি ছেড়ে দিয়েছেতো। এটা তারা কেন করে তা আমরা জানিনা। তবে মহাসড়কেতো এগুলো চলাচল নিষেধ। বাইপাস সড়ক ব্যবহার করতে হলেও বরিশাল বিভাগে মহাসড়ক ব্যবহার করতে হবে বেশিরভাগ যানবাহনের? সেক্ষেত্রে তারা কি করবে? এ প্রশ্নের উত্তরে
মহানগরের উপ পুলিশ কমিশনার (ট্রাফিক) তানভীর আরাফাত বললেন, এ প্রশ্ন আসবে কেন? সড়ক, মহাসড়ক সকলের জন্য। তিনচাকার যানবাহন দূরপাল্লার যাত্রী বহন করে মহাসড়কে চলতে পারবে না। তাই বলে একদমই চলতে পারবেনা এটা কোথাও বলা হয়নি। এ ক্ষেত্রে বাস মালিক সমিতি বা শ্রমিকরা তাদের কি করে আটক করে? এটা অত্যন্ত অনৈতিক কাজ। বাস মালিক সমিতি বা শ্রমিক ইউনিয়ন নেতাদের কারোই এ ক্ষমতা নেই। সিএনজি ও মহেন্দ্র চালকরা মামলা করলেই এর বিরুদ্ধে কঠিন ব্যবস্থা নিতে পারবো আমরা। তারা যতক্ষণ আমাদের কাছে লিখিত অভিযোগ দেবেনা, কিছুই করার নেই আমাদের।