4:09 pm , April 10, 2023
বিশেষ প্রতিবেদক ॥ বরিশাল নগরীর ফকির বাড়ি থেকে চরকাউয়া খেয়াঘাট প্রান্তে হেটে এসে হাফাচ্ছিলেন মাহফুজুর রহমান মাহিন। বললেন, ফকির বাড়ি থেকে হেটেই আসতে হয়েছে এই পর্যন্ত। সদর রোডের পুরোটা, চকবাজার, কাঠপট্টির মোড়, ফজলুল হক এভিনিউ থেকে সিটি করপোরেশন ভবন মোড় পর্যন্ত আধাঘন্টার বেশি হবে কোনো গাড়ি নড়ছেনা। এতো জ্যাম আগে কখনো দেখেননি বলে দাবী করলেন বরিশাল পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের শেষবর্ষের ছাত্র মাহিন। মাহিন আরো জানান, এতো ইজিবাইক ও অটোরিকশা নগরীতে আগে কখনো দেখেননি।
সকাল থেকেই বরিশালের অলিগলি থেকে প্রধান সড়ক সর্বত্র তীব্র যানজটে অস্থির নগরবাসী। নগরীর ২৪ নং ওয়ার্ড রুপাতলি হাউজিংয়ের বাসিন্দা মিরাজ মোল্লা জানান, এই যে রূপাতলী থেকে মেডিকেল মোড় বা আমতলা মোড়ের পানির ট্যাঙ্ক পর্যন্ত দীর্ঘ যানজট দেখছেন, এটা ওই ইজিবাইক আর অটোরিকশার জন্য। বহিরাগত ইজিবাইক ও অটোরিকশায় সয়লাব নগরী। এর উপর ফোরলেনের জন্য গর্ত করা হয়েছে রাস্তায় দুপাশে। এটাও যানজট বাড়িয়েছে। রমজানের ১৮তম দিনে শহরে মানুষের উপস্থিতি ক্রমশ বাড়ছে বলে জানালেন ট্রাফিক পরিদর্শক বিদ্যুৎ চন্দ্র দাস। তিনি বলেন, যানবাহনের অস্বাভাবিক চাপ বেড়ে গেছে। ঈদকে কেন্দ্র করে এ চাপ আরো বাড়তেই থাকবে। পাশাপাশি ইজিবাইক ও অটোরিকশাও তিন-চার গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে বলে জানান তিনি।
নগরীতে প্রতিদিন গড়ে ২০টি করে ব্যাটারিচালিত ও ১০ টি করে অটোরিকশা প্রবেশ করছে। ট্রাফিক বিভাগের মতে, বর্তমানে নগরীতে ব্যাটারিচালিত ইজিবাইক ও অটোরিকশার সংখ্যা প্রায় ১২ হাজার ছাড়িয়েছে। যেখানে বৈধ মাত্র ৩ হাজার ৫শ।
এদিকে নগরীর গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টগুলোতে কোথাও কোথাও কোনো ট্রাফিক পুলিশ না থাকায় বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি তৈরি করছে হলুদ ইজিবাইক ও বাতাসের গতিতে ছুটে চলা অটোরিকশাগুলো। শহরের ভিতর ফাঁকা পেলেই গতি নিয়ে পাল্লা দিচ্ছে সিএনজি ও অটোরিকশা।
অদক্ষ চালকের হাতে ক্রমশ বিপদজনক হয়ে উঠছে নগরীর সব সড়ক। শুধুমাত্র সদর রোড এলাকা ছাড়া নগরীর ২২ সড়কের অলিগলিতে এদের দাপট। যাত্রী থাক বা না থাক যত্রতত্র ঘুরে বেড়াচ্ছে এরা। যখন তখন ইচ্ছেমতো ব্রেক কষছে কিংবা ইউটার্ন নিতে গিয়ে যানজট তৈরি করছে। অভিযোগ পেলেও টাকা নিয়ে এদের ছেড়ে দিচ্ছে ট্রাফিক কনস্টেবলরা।
একদিকে বরিশালে মনীষা চক্রবর্তীর ও মেয়রের সমর্থনে প্রতিদিন এখন গড়ে ১০/১২টি নতুন হলুদ ইজিবাইক শহরে আসছে বলে জানালেন পরিবেশ আন্দোলনের নেতা এনায়েত হোসেন শিবলু। তিনি বলেন, রেজিষ্ট্রেশন ও বিসিসির অনুমোদন জটিলতায় শহরে নতুন আসা ইজিবাইক ও অটোরিকশার হিসেব এখন আর কারো কাছে নেই। সিটি করপোরেশনের কল্যাণ সংস্থার স্টিকার নম্বরে ৮ হাজার সিরিয়াল। অন্যদিকে মনীষা চক্রবর্তীর সংগ্রাম পরিষদের ৬ হাজার সিরিয়াল। এই হিসেবে নগরীতে শুধু ইজিবাইক আছে ১৪ হাজার। তাহলে অটোরিকশা কতগুলো? সিএনজি, মাহেন্দ্র, ম্যাজিক ও পায়ে টানা রিকশাই বা কতগুলো।
সামাজিক আন্দোলনের নেতা ও বরিশাল অর্থনীতি সমিতির সভাপতি কাজী মিজানুর রহমান বলেন, এইসব ইজিবাইক ও অটোরিকশার কারণে দুর্ঘটনার শিকার হয়ে বরিশাল শের ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি আছেন অনেকে। গতদিনও একজন মৃত্যুবরণ করেছেন সড়ক দুর্ঘটনার শিকার হয়ে। তবে আমি বলবো ইজিবাইকের চেয়েও অটোরিকশাগুলো বেশি বেপরোয়া। তারউপর বিদ্যুৎ খরচ বিষয়টিও ভাবা উচিত বলে মনে করেন কাজী মিজানুর রহমান।
অটোরিকশা চালক মকবুল বলেন, তিনি তার অটোরিকশার জন্য প্রতিদিন ৭০ টাকা বিদ্যুৎ বিল দেন। তারপর ভাড়া দিতে হয় ৩০০ টাকা। ৩৭০ টাকা বাদ দিয়ে তবেই তার উপার্জন।
ইজিবাইক চালক ইয়াসিন মোল্লা বিদ্যুৎ বিল দেন প্রতিবার ৪০-৬০ টাকা। দিনে তিনবার তার বিদ্যুৎ খাতে সর্বনি¤œ ৮ ইউনিট করে ২৪ ইউনিট বিদ্যুৎ প্রয়োজন হয় বলে জানান তিনি। তার ইজিবাইকও ভাড়ায় চালিত। তিনি ভাড়া পরিশোধ করেন ৬০০ টাকা। অর্থাৎ ৭২০ টাকা বাদ দিয়ে তার উপার্জন করতে হয়। যে কারনে সকাল-সন্ধ্যা বিরতিহীন যাত্রী টানার প্রতিযোগিতা চলছে এই পরিবহনগুলোর মধ্যে।
উপ-পুলিশ কমিশনার (ট্রাফিক) এস এম তানভীর আরাফাত বলেন, শুধু বিদ্যুৎই নয়, এরা এখন শহরের যানজটেরও অন্যতম কারণ। তবে বিষয়টি সম্পূর্ণই সিটি করপোরেশন কর্তৃপক্ষের কাছে। এদের নিয়ন্ত্রণ করা না গেলে বড় দুর্ঘটনাই শুধু নয়, এই শহরই অচল হয়ে পড়বে।
আমরা এজন্য বেশকিছু লিখিত প্রস্তাবনা তাদের দিয়েছি। এখন সবটাই সিটি করপোরেশনের ইচ্ছা ও আন্তরিকতার উপর নির্ভরশীল।