3:32 pm , April 5, 2023
কেএম আজাদ রহমান, আগৈলঝাড়া প্রতিনিধি ॥ বরিশালের আগৈলঝাড়ায় ইরি-বোরো ধান চাষাবাদের সাথে জমির পতিত জায়গায় মিষ্টি কুমড়ার চাষ করে অনেক পরিবার স্বাবলম্বী হচ্ছে। যুগের পর যুগ অনাবাদি পরিত্যাক্ত জমি এখন আর ফেলনা জায়গা নয়। উপজেলার প্রত্যন্ত জনপদের বিলাঞ্চলের পতিত জমিতে কুমড়ার চাষ করে অনেকেই অর্থনৈতিক ভাবে স্বাবলম্বী হচ্ছে। উপজেলার বাহাদুরপুর, বাটরা, বারপাইকা, আস্কর, জলিরপাড়, ফেনাবাড়ি, রাজিহার, কোদালধোয়া, বাশাইল, সাহেবেরহাট, মোল্লাপাড়া, গৈলা, বাগধাসহ বিভিন্ন এলাকার পতিত জমিতে কুমড়ার চাষ হচ্ছে। উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার ৫টি ইউনিয়নের প্রতিটি এলাকাতেই মিষ্টি কুমড়ার চাষ হয়ে থাকে। এই অঞ্চলের মাটি উর্বর হওয়াতে চাষিরা কুমড়ার বেশ ভালো ফলন পেয়ে থাকেন। এসব জমিতে ইরি-বোরো ধান চাষাবাদের পাশাপাশি উঁচু পতিত জায়গা ফাঁকা না রেখে সাথী ফসল হিসেবে অল্প খরচে বেশী লাভবান করতে কৃষকদের মিষ্টি কুমড়া চাষে উৎসাহিত করছে উপজেলা কৃষি অফিস। পতিত জায়গায় মিষ্টি কুমড়া চাষে ফলন ভালো পাওয়া যায়। ইরি-বোরো জমিতে দেয়া সেচ সার দেয়ার কারনে মিষ্টি কুমড়া যেমন উৎপাদন হয় তেমনি মিষ্টি কুমড়ার পাতাও খাদ্য হিসেবে গ্রহণ করা হয়।
স্থানীয় কৃষক দীপক জয়ধর বলেন, আমি বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা কারিতাস থেকে তাদের দেওয়া ৫ প্যাকেট কুমড়ার বীজ দিয়ে চাষ শুরু করি এবং সফলতা পাই। আমার দেখাদেখি এখন অনেক কৃষক কুমড়া চাষ করছেন। কুমড়া চাষ করা কৃষক বীরেন ভদ্র, সাধন মৃধা, শম্পা রানী, মৃনাল পান্ডে, রমনি বকুলা, পরিমল মন্ডল, আরতী হালদার, অনিল বাড়ৈসহ অনেকেই পতিত জমিতে কুমড়া চাষ করে অনেকেই স্বাবলম্বী হয়েছেন।
সরেজমিন উপজেলার বাহাদুরপুর হাটে গিয়ে দেখা যায় প্রতিমন হাইব্রীড জাতের মিষ্টি কুমড়া প্রতি মন ৮শ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। প্রতিটি কুমাড়াই প্রায় ৩-৮ কেজি ওজনের।
এ অঞ্চলের উৎপাদিত কুমড়া এলাকার চাহিদা পূরন করে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে কিনে নিয়ে যাচ্ছেন পাইকাররা। চাষিরা জানান, আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এবছর ফলন ভালো হয়েছে। সরকারী সহায়তা পেলে তারা উৎপাদন আরও বাড়াতে পারবেন বলে আশা করছেন।
মিষ্টি কুমড়া চাষে উপজেলার কৃষকদের দিন দিন আগ্রহ বাড়ছে। এই অঞ্চলের উর্বর মাটি ও আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় কুমড়ার ভালো ফলন পাওয়া যায়। কৃষকরা অধিক ফলনের পাশাপাশি বাজারে বেশ ভালো দামে বিক্রি করে লাভবান হয়। এছাড়াও এর চাষে খরচ কম হয়, কীটনাশকের ব্যবহার কম। তাই অল্প খরচে বেশি আয়ের আশায় মিষ্টি কুমড়া চাষ করে থাকেন বেশির ভাগ চাষি।
উৎপাদিত ফসল জমি থেকেই বিক্রি করতে পারেন কৃষকরা। এতে কৃষকদের পরিবহনে বাড়তি খরচ করতে হয় না। উপজেলার বাহাদুরপুর গ্রামের অনিতা ভদ্র বলেন, বিগত ১০ বছর ধরে তিনি ইরি-বোরো জমির পাশের পতিত জায়গায় (আইল) কুমড়ার চাষ করছেন। গত বছর কুমড়া চাষ করে জমিতে বসেই প্রায় ৫০ হাজার টাকার মিষ্টি কুমড়া বিক্রি করেছেন। তিনি আরও বলেন, বাড়তি আয়ের এই টাকা দিয়ে তার ছেলে মেয়ের লেখা-পড়ার ব্যয়ভার পূরণ করছেন। এ বছর ফলন ভালো হওয়ায় আরো বেশি বিক্রি হবে বলেও জানান তিনি।
বাটরা গ্রামের রমনী সরকার বলেন, উৎপাদিত মিষ্টি কুমড়া বিক্রি করতে আমাদের চিন্তা করতে হয় না। বিভিন্ন এলাকার পাইকাররা এসে জমি থেকেই কিনে নিচ্ছেন। এতে আমরা দাম কিছু কম পেলেও, সময় ও শ্রম বেঁচে যাওয়ায় লাভ বেশিই পাচ্ছি। এছাড়াও প্রতিটি বাড়ির গৃহিনীরা তাদের বাড়ির আঙ্গিনায় পরিবারের চাহিদা মিটাতে ২-৪টি করে মিষ্টি কুমড়ার গাছ রোপণ করেন।
কৃষক দীপক জয়ধর বলেন, আমি প্রতি বছরের মতো এবছরও আমার পতিত জমিতে মিষ্টি কুমড়ার চাষ করেছি। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে ভালো ফলন পাওয়া যায়। ফলন বেশি পাওয়া গেলে দর কমে যায়। আর কম ফলন পেলে দাম বেশি থাকে। তবে এবছর কুমড়া বিক্রি করে লাভবান হতে পারছি।
গৈলা বাজারের ব্যবসায়ী মো. একলেস সরদার বলেন, আমি প্রতি বছরের মতো এবছরও বিভিন্ন কাঁচামালের পাশাপাশি মিষ্টি কুমড়ার ব্যবসা করছি। আড়তদারদের কাছ থেকে ২০ টাকা কেজি দরে কুমড়া কিনে পরিবহন খরচসহ ৩০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করেছি। বেশি লাভ না হলেও লোকসান হয়না, কিছু লাভ করতে পারি।
এ ব্যাপারে আগৈলঝাড়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা দোলন চন্দ্র রায় সাংবাদিকদের বলেন, প্রধানমন্ত্রী বলেছেন দেশের এক ইঞ্চি জমিও পতিত রাখা যাবে না। এরই ধারাবাহিকতায় উপজেলার পতিত থাকা জমিতে কম খরচে মিষ্টি কুমড়া চাষ করতে উৎসাহিত করা হচ্ছে কৃষকদের। চলতি বছর আগৈলঝাড়ায় ২৫ হেক্টর জমিতে বারোমাসী, বারি, মনিকাসহ স্থানীয় জাতের কুমড়া উৎপাদিত হয়েছে। আবহাওয়া কৃষকদের অনুকূলে থাকায় কৃষকরা অধিক ফলন পেয়েছে। এখানকার উৎপাদিত কুমড়া বেশ বড় এবং মিষ্টি। আমরা কৃষকদের সবসময় সহযোগিতা করে আসছি। এছাড়া আগামীতে কুমড়া চাষে কৃষকদের আগ্রহ বাড়াতে প্রশিক্ষন ও প্রনোদনাসহ সকল ধরনের সহায়তা দেয়া হবে বলে জানান তিনি।