পবিত্র রমজান মাসে দান খয়রাতের ফজিলত পবিত্র রমজান মাসে দান খয়রাতের ফজিলত - ajkerparibartan.com
পবিত্র রমজান মাসে দান খয়রাতের ফজিলত

3:09 pm , March 29, 2023

মুফতি মাওঃ ডাঃ এম এ ছালাম ॥ সমস্ত প্রশংসা একমাত্র আল্লাহ পাকের যিনি আমাদেরকে নবীকুলের সরদারের অনুসরণ করার কারণে সম্মানিত করেছেন। রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, যখন রমজান মাস শুরু হয়, তখন আকাশের রহমতের সকল দরজা খুলে দেয়া হয়, জাহান্নামের সমুদয় দরজা বন্ধ করে দেয়া হয় আর শয়তানগুলোকে শৃঙ্খলে আবদ্ধ করা হয়। রমজান মাস সবর ও পরস্পরের সহানুভূতিশীলতার মাস। এ মাস কুরআন তিলাওয়াতের মাস, খানা-পিনা পরিবেশনের মাস এবং গরীব, মিসকীন, ইয়াতীম ও বিধবাদের প্রতি সহানুভূতি প্রদর্শনের মাস। সিয়াম পালনের মাধ্যমেই মানুষ সক্ষম হয়। হে ঈমানদার ও নেক আমলকারীগণ, নিশ্চয়ই ইসলাম আপনাদের মাঝে পারস্পরিক সহযোগীতার বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করেছে। এটি এজন্য করা হয়েছে যেন আপনাদের জীবন সৌভাগ্যপূর্ণ ও সন্তোষজনক হয়। কোন মানুষেরই আল্লাহকে ছাড়া অন্যের কাছে সাহায্য চাওয়া উচিত নয় এবং আল্লাহকে ছাড়া জীবন যাপন করা সম্ভব নয়। কাজেই কারো বিপদে আপদে দুঃখ-মুসিবতে অভাব দূরীকরণে একে অন্যের সাহায্য সহযোগিতায় এগিয়ে আসা এবং মহানুভবতা দেখানো দান-সদকার মধ্যে পরিগণিত। এসব অবস্থায় পারস্পারিক সাহায্য সহযোগিতা অত্যাবশকীয়। এরূপ মানুষের মধ্যে দৃঢ় করার অনেক কিছুর রয়েছে। হাদীসেও এমন অনেক কিছু উল্লেখ করা হয়েছে, নগদ অর্থ দানের সাথে এসবের কোন সম্পর্ক নেই। অথচ এ সব কিছু দান সদকা রূপে পরিগনিত। হে ঈমানদারগণ আপনারা ইহসান ও সদকার হাকিকত সম্পর্কে শুনুন। রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন সম্পদ থেকে দান করলে তা হ্রাস পায়না এবং বান্দাহ ক্ষমা করলে আল্লাহ একমাত্র তার ইজ্জতই বাড়ান। আর আল্লাহর উদ্দেশ্যে কেউ বিনয়ী হলে আল্লাহ তার মর্যাদা উচু করেন (মুসলিম)। রাসুল (সাঃ) আরো বলেছেন, হে মুসলিম রমনীগণ, তোমরা তোমাদের কোন প্রতিবেশীকেই তুচ্ছ মনে করো না বরং তাদেরকে উপঢৌকন দাও যদিও তা বকরীর কিয়োদাংশ গোশ্তও হয়। (বুখারী, মুসলিম) রাসুল (সাঃ) বলেছেন- প্রত্যেক সৎ কাজই সদকা। (বুখারী, মুসলিম) নবী করীম (সাঃ) আরও বলেছেন, তোমরা কোন ক্ষুদ্র নেক কাজকে তুচ্ছ মনে করো না যদিও তুমি তোমার বন্ধুর সাথে হাসিমুখে সাক্ষাৎ করো না কেন? তাও সদকারূপে গণ্য হবে। (মুসলিম) রাসুল (সাঃ) বলেছেন- আমার প্রতিটি সালামই মানুষের পক্ষে এক একটি সদকা। প্রতিটি দিন যাতে সূর্য উদয় হয় দু-ব্যক্তির মাঝে ন্যায় বিচার করলে তাও হবে সদকা। কোন লোক যদি তার সওয়ারীর উপর উঠার ব্যাপারে তার সাহায্য করে অর্থাৎ তার উপর সহজভাবে উঠে অথবা তার উপর মালামাল উঠায় তাও সদকা। ভাল কথা বলা তাও সদকা, নামাজের দিকে যেতে যতটি কদম দিবে তার প্রতিটি কদমই সদকা। রাস্তা থেকে কষ্টদায়ক বস্তু দূর করাও সদকা। (বুখারী ও মুসলিম)। রাসুল (সাঃ) আরো বলেছেন- নিশ্চয়ই প্রতিটি তাছবীহ পাঠ (সুবাহান আল্লাহ বলা) সদকা। প্রত্যেক তাকবীর অর্থাৎ আল্লাহু আকবর বলা তাও সদকা। প্রত্যেক হামদ অর্থাৎ আলহামদুলিল্লাহ বলা সদকা, প্রত্যেক তাহলীল অর্থাৎ লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ বলা সদকা। হযরত আনাস (রাঃ) রাসুল (সাঃ) হতে বর্ননা করেছেন- যে কোন মুসলমান কোন চারাগাছ রোপন করল অতঃপর তা থেকে (কোন ফল বা বস্তু) মানুষ বা পশুপাখি খেলো তা সদকা হিসেবে গণ্য হবে। (বুখারী মুসলিম)। রাসুল (সাঃ) বলেছেন- নিশ্চয়ই সদকা রবের ক্রোধকে দমন করে এবং অপমৃত্যুকে তুলে নেয়। (তিরমিযী) হযরত যাবের (রাঃ) হতে বর্ণিত তিনি বলেন- যে ব্যক্তি অনাবাদী জমীনকে আবাদ করল তাতে তার জন্য প্রতিদান রয়েছে। তার জীবিকা অন্বেষণকারী যা খেলো তা হবে তার জন্য সদকা। সামাজিক জীবনে সকল কল্যান কাজ ছোট হোক বা বড় হোক শরীয়তে তা সদকা।
পবিত্র কুরআন পাকে এরশাদ হয়েছে- আল্লাহ পরোপকারীদের পছন্দ করেন। আল ইমরান-১৪৮ আয়াত
তুমি ধৈর্য্যধারণ করো। নিশ্চয়ই আল্লাহ পরোপকারীদের শ্রমফল নষ্ট করেন না। সুরা-১১৫ নং আয়াত।
মানুষ স্বভাবতই অতিশয় অস্থির চিত্তা সে বিপদগ্রস্ত হলে হুতাশ করতে থাকে এবং ধনবান হলে কৃপণ হয়ে পড়ে। তবে তারা নয়, যারা নামাজ পড়ে, যারা তাদের নামাজে খুব নিষ্ঠাবান, যাদের সম্পদের মধ্যে একটি অংশ নির্ধারিত রয়েছে প্রার্থী ও অপ্রার্থীর এবং যারা কিয়ামত কে সত্য বলে জানে।
রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন- ক্ষুধার্তকে খাদ্য দান কর, রোগীর সেবা কর এবং বান্দীকে মুক্তি দাও, যদিও সে অন্যায়ভাবে বন্দী হয়ে থাকে। (বুখারী)
রাসুল (সাঃ) বলেছেন- আমার অনুবর্তীদের মধ্যে যে ব্যক্তি কারো অভাব পূরণ করে সন্তুষ্টি লাভ করে সে নিশ্চয়ই আল্লাহকে সন্তুষ্ট করে, যে আমাকে সন্তুষ্ট করে সে নিশ্চয়ই আল্লাহকেও সন্তুষ্ট করে এবং যে আল্লাহকে সন্তুষ্ট করে তিনি তাকে জান্নাতে স্থান দেন। (মিশকাত)।
রাসুল (সাঃ) বলেছেন- বিধবা ও দরিদ্রদের সাহায্য করা আল্লাহর পথে জিহাদ করা বা সারাদিন রোজা রাখা বা সমস্ত রাত্রি নামাজে দাড়িয়ে থাকার সমান (মুসলিম)।
যে ব্যক্তি তার ভাইয়ের দুঃখ দূর করতে চেষ্টা করে সে তাতে সফল হোক আর না হোক আল্লাহ তাকে ক্ষমা করবেন। (আবু দাউদ) মাহে রমজান মুমিন বান্দাদের জন্য নেক কামাই করার মৌসুম। কেননা এ মাসের একটি নফল ইবাদাত অন্য মাসের একটি ফরজ ইবাদাতের সমান এবং একটি ফরজ ইবাদাত অন্য মাসের সত্তরটি ফরজ এর সমান। এমনকি কোন রোজাদার ব্যক্তিকে ইফতার করালে তার সমপরিমাণ রোজার সওয়াব পাওয়া যাবে। তাই আসুন, এ মাসে আমরা অধিক পরিমাণ ইবাদাতে মশগুল থাকি এবং দান খয়রাত দিয়ে গরীব, অসহায়, বঞ্চিতদের পাশে দাড়াই। আল্লাহ আমাদের তাওফিক দান করুন। আমীন।

এই বিভাগের আরও খবর

আর্কাইভ

সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি রবি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০৩১  
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন    
সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী মিরাজ মাহমুদ
 
বার্তা ও বানিজ্যিক কার্যালয়ঃ কুশলা হাউজ, ১৩৮ বীরশ্রেষ্ঠ ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর সড়ক,
সদর রোড (শহীদ মিনারের বিপরীতে), বরিশাল-৮২০০।
© প্রকাশক কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
Developed by NEXTZEN-IT