ভঙ্গুর অবকাঠামো, চিকিৎসক ও কর্মী সংকটে ধুঁকছে শতাধিক বছরের প্রাচীন জেনারেল হাসপাতাল ভঙ্গুর অবকাঠামো, চিকিৎসক ও কর্মী সংকটে ধুঁকছে শতাধিক বছরের প্রাচীন জেনারেল হাসপাতাল - ajkerparibartan.com
ভঙ্গুর অবকাঠামো, চিকিৎসক ও কর্মী সংকটে ধুঁকছে শতাধিক বছরের প্রাচীন জেনারেল হাসপাতাল

3:26 pm , March 25, 2023

বিশেষ প্রতিবেদক ॥ শতাধিক বছরের পুরনো দক্ষিণাঞ্চলের সর্ব প্রথম বেসরকারী ও সরকারী ‘সদর হাসপাতাল’ খ্যাত বরিশাল জেনারেল হাসপাতালটি ঝুঁকিপূর্ণ ভবন আর চিকিৎসক সংকটের মধ্যে নিজেই ধুকে ধুকে চলছে না চলার মত করে। গত সপ্তাহেও হাসপাতাল ভবনের ছাদের পলেস্তরা খসে পড়ে ৩ রোগী আহত হয়েছেন। ‘এ ধরনের দুর্ঘটনা নিত্য দিনের’ অভিযোগ করে ‘নিজেরাই নিরাপত্তা হীনতায় ভুগছেন’ বলে জানিয়েছেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক হাসপাতাল কর্মী ও একাধিক চিকিৎসক। পুরনো ৩টি দ্বিতল ভবন ভেঙ্গে সেখানে প্রায় ১৬ কোটি টাকা ব্যয়ে ১২ তলা ভীতের ওপর একটি দোতালা ভবন নির্মান কাজ শুরু হয়েছে সম্প্রতি। ওই ভবন নির্মানের পরে দক্ষিণাঞ্চলের প্রাচীন এ হাসপাতালটি আড়াইশ শয্যায় উন্নীত করার পরিকল্পনা রয়েছে বলে স্বাস্থ্য বিভাগ সূত্রে জানা গেছে। বর্তমানে ১শ শয্যার এ হাসপাতালে ৩৩ জন চিকিৎসকের মঞ্জুরীকৃত পদের বিপরীতে আছেন ২২ জনের মত। নার্সসহ অন্য সব পদেও জনবলের অভাবে এ হাসপাতালটি নিজেই চরম সংকটে। শতাধিক বছরের পুরনো এ হাসপাতালে ২টি ভবন এখনো কালের সাক্ষি হয়ে দাঁড়িয়ে  থাকলেও তা যথেষ্ট ঝুঁকিপূর্ণ। এ দুটি ভবনের একটিতে বহি:র্বিভাগ, অপরটিতে জরুরী বিভাগের কার্যক্রম চলছে। এছাড়া বর্তমানে একশ বেডের ইনডোরের ভবনটি নির্মিত হয় ২০০৪ থেকে ২০০৭ সালের মধ্যে। অপারেশন থিয়েটারসহ ইনডোরের সব চিকিৎসা কার্যক্রম ওই একটি ভবন করতে গিয়ে অনেকটাই নভিশ^াস অবস্থা। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ সহ জেলা সিভিল সার্জন আশা করছেন, বছর দুয়েকের মধ্যে নতুন ভবন নির্মিত হলে পরিস্থিতির কিছুটা ইতিবাচক পরিবর্তন হবে। এখনো বরিশাল মহানগরী ও সন্নিহিত বিশাল এলাকার জনগোষ্ঠী চিকিৎসা সেবার জন্য এ হাসপাতালটির ওপর নির্ভরশীল।
তবে ১২ তলা ভীতের ওপর নির্মানাধীন মাত্র দোতালায় কিভাবে আড়াইশ বেডের হাসপাতাল কার্যক্রম চলবে, তার কোন উত্তর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষেরও অজানা। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের স্থানীয় দায়িত্বশীল পর্যায় থেকে প্রাথমিক পর্যায়েই নির্মানাধীন ভবনটির অন্তত ৪ তলা নির্মানের দাবী জানান হয়েছে। কিন্তু স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় অর্থ বরাদ্ধ না করলে গণপূর্ত অধিদপ্তরের তেমন কিছু করার নেই বলে জানা গেছে। ফলে খুব সহসা শতাধিক বছরের প্রাচীন বরিশাল জেনারেল হাসপাতালটির অবস্থার খুব ইতিবাচক পরিবর্তন আশা করা যাচ্ছেনা।
উল্লেখ্য, তৎকালীন বৃটিশ-ভারত যুগে ১৮৪৭ সালে একজন সাব এ্যাসিস্ট্যান্ট সার্জন এর পরিচালনায় বরিশাল শহরে একটি ‘চ্যারিটেবল ডিসপেনসারী’ প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে সমগ্র দক্ষিণাঞ্চলে অতি সীমিত সরকারী চিকিৎসা সেবা কার্যক্রম শুরু হয়। এর ৬৩ বছর পরে জনস্বার্থে স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গের উদ্যোগে বরিশালে একটি আবাসিক হাসপাতাল প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ গ্রহন করা হয়। শের ই বাংলা একে ফজলুল হকের নানা পরিবার রাজাপুরের সাতুরিয়ার জমিদার পরিবারের মেহেরুন্নেছা বেগমের প্রদত্ত জমিতে ১৯১০ সালের ৫ ডিসেম্বর বর্তমান বরিশাল সদর হাসপাতাল ভবনের ভিত্তি স্থাপন করেন পূর্ববঙ্গের লেফটেন্যান্ট গভর্নর স্যার ল্যান্সলট হেয়ার। নির্মান শেষে তৎকালীন বাংলার গভর্নর লর্ড কারমাইকেল ১৯১২ সালের ১৩ জুলাই ২০ শয্যা নিয়ে হাসপাতালের মূল ভবন উদ্বোধন করেন। পাশাপাশি কয়েকজন দানবীর এ হাসপাতাল এলাকায় আরো ৩টি দ্বিতল ভবন নির্মান করে দেন। যাতে লেবার ওয়ার্ড ও পেয়িং ওয়ার্ড সহ একসাথে ৫ টি ভবনে সব ধরনের চিকিৎসা কার্যক্রম চলছিল। ১৯৪৩ সাল পর্যন্ত একটি কমিটি হাসপাতাল পরিচালনা করত। ১৯৪৪ সালে কমিটির আবেদনের প্রেক্ষিতে বঙ্গীয় জনস্বাস্থ্য সচিব মি: হ্যালন এ সাব-ডিভিশনাল হাসপাতালকে তৃতীয় শ্রেণীভুক্ত করে সরকার বরিশাল সদর হাসপাতালের দায়িত্ব গ্রহণ করে। হাসপাতাল পরিচালনার জন্য একটি উপদেষ্টা কমিটি ছিল। সিদ্ধান্ত হয় সরকার হাসপাতালের সম্পদ হস্তান্তর করতে পারবে না। ১৯৪৪ সালের ১৯ মার্চ ম্যানেজিং কমিটি প্রাদেশিক সরকারকে হাসপাতালের দায়িত্ব গ্রহণের জন্য অনুরোধ করে। জেলা বোর্ড ও পৌরসভা হাসপাতালে অনুদান প্রদান করবে। এমপি বর্মণ এ সময় হাসপাতাল কমিটির সেক্রেটারি নিযুক্ত হয়েছিলেন। দেশ বিভাগের পরেও হাসপাতালটি সিভিল সার্জনের তত্ত্বাবধানে পরিচালিত হচ্ছিল। তবে জেলা প্রশাসকের নেতৃত্বে একটি হাসপাতাল পরিচালনা কমিটিও ছিল। ১৯৬৮ সাল থেকে ’৭৮ সাল পর্যন্ত বরিশাল মেডিকেল কলেজের চিকিৎসা সেবা কার্যক্রমে এ হাসপাতাকে যুক্ত করা হয়। ১৯৭৯ সালের শুরুর দিকে শের ই বাংলা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল নিজস্ব ভবনে স্থানন্তরের পরে ওই হাসপাতালেরই অংশ হিসেবে একই পরিচালকের নিয়ন্ত্রনে এটি পরিচালিত হতে থাকে। ২০১৬ সালের দিকে বরিশালের সিভিল সার্জনের তত্ত্বাবধানে হাসপাতালটি ছেড়ে দেয়া হয়। তবে ২০ শয্যার ডায়রিয়া ওয়ার্ড সহ এখনো ১’শ শয্যায় সীমিত রয়েছে বরিশাল জেনারেল হাসপাতাল। এসব বিষয়ে স্বাস্থ্য বিভাগের বরিশাল বিভাগীয় পরিচালক ডা. হুমায়ুন শাহিন খানের সাথে আলাপ করা হলে তিনি জানান, বরিশাল জেনারেল হাসপাতালের নির্মানাধীন ভবনটি দোতালার  পরিবর্তে আরো ঊর্ধ্বমুখি সম্প্রসারণে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ জানানো হয়েছে। পাশাপশি পুরনো দুটি ভবনের প্রয়োজনীয় মেরামত ও সংস্কারের ব্যাপারেও গণপূর্ত অধিদপ্তরের মাধ্যমে চেষ্টা চলছে বলেও জানান তিনি। চিকিৎসক সহ স্বাস্থ্য সেবা কর্মীর সংকট সর্বত্রই রয়েছে বলে জানিয়ে তিনি বলেন,  সব সময়ই স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ও মন্ত্রণালয়কে অবহিত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহনের অনুরোধ করা হয়।

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন    
সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী মিরাজ মাহমুদ
 
বার্তা ও বানিজ্যিক কার্যালয়ঃ কুশলা হাউজ, ১৩৮ বীরশ্রেষ্ঠ ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর সড়ক,
সদর রোড (শহীদ মিনারের বিপরীতে), বরিশাল-৮২০০।
© প্রকাশক কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
Developed by NEXTZEN-IT