সদর হাসপাতালে পলেস্তারা খসে পড়ে আহত ৩ সদর হাসপাতালে পলেস্তারা খসে পড়ে আহত ৩ - ajkerparibartan.com
সদর হাসপাতালে পলেস্তারা খসে পড়ে আহত ৩

4:09 pm , March 22, 2023

আরিফ আহমেদ, বিশেষ প্রতিবেদক ॥  বরিশাল সদর হাসপাতালের পুরাতন ভবনের (লাল দালান) পলেস্টারা খসে পড়ে তিনজন আহত হবার সংবাদ পাওয়া গেছে। বুধবার দুপুর ১২ টার দিকে এ ঘটনা ঘটেছে বলে স্বীকার করেছেন কর্তব্যরত চিকিৎসক ডাঃ লুৎফর রহমান ও ফার্মাসিস্ট জেসন পলাশ বিশ্বাস।
পলাশ জানান, ভবনের দ্বিতীয় তলার ১৮ নম্বর কক্ষটি আউটডোর রোগী দেখার জন্য ব্যবহার করা হয়। বারোটার দিকে একজন রোগীসহ তিনজনকে নিয়ে ডা. লুৎফর রহমান একটি টেবিলে কর্মরত ছিলেন। হঠাৎ উপর থেকে পলেস্টারা ধ্বসে পড়ে। এতে একজন রোগী মারাত্মক আহত হয় এবং অন্য দুজনের শরীরে আঘাত লাগে।
ডা. লুৎফর রহমান নিজেও আহত হয়েছেন জানিয়ে বলেন, এই ভবন ব্যবহার অনুপযোগী হয়েছে আরো আগে। এটিকে পরিত্যক্ত ঘোষণা না করলে আমাদের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কাজ করতে হবে এখানে।
ঐতিহাসিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ এই হাসপাতালটিকেই বর্তমানে ২০০ শয্যার আধুনিক সদর হাসপাতাল হিসেবে নাম দেওয়া হয়েছে। নামেই এটি আধুনিক। বাস্তবে হাসপাতালের কোথাও আধুনিকতার ছিটেফোঁটাও নেই। টয়লেটগুলোতে দিনেই আলো জ্বলেনা, রাতের অবস্থা আরো করুণ। ভবনগুলোর পাশাপাশি  চিকিৎসা সরঞ্জামও দুর্বল এখানে। ভালো ডাক্তারতো দূরের কথা অভিজ্ঞ নার্সরাও এখানে বেশিদিন স্থায়ী হন না বলে অভিযোগ রয়েছে। এছাড়াও যারা দু চারজন আছেন তারাও এখান থেকে শেবাচিমে বদলীর জোর লবিং চালাচ্ছেন বলে জানা গেছে। এর আগে ২০১৯ সালে স্থাপত্য বিভাগের অনুমতিক্রমে বরিশাল জেনারেল (সদর) হাসপাতালের পুরাতন ৫টি ভবন ভেঙ্গে ফেলার নির্দেশ দেন তৎকালীন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ প্রতিমন্ত্রী ডাঃ মুরাদ হাসান। নতুন কিছু ভবনের নির্মাণ হলেও সেগুলো সম্পূর্ণ চালু হয়নি বলে জানা গেছে।
বিভিন্ন ইতিহাস গ্রন্থ, প্রবন্ধ থেকে সংগৃহীত তথ্যে জানা যায়, ১৮৪৭ সালে বরিশালে একটি চ্যারিটেবল ডিসপেনসারী প্রতিষ্ঠিত হয়। একজন সাব এ্যাসিস্টান্ট সার্জন এর পরিচালক ছিলেন। বরিশালের সদর হাসপাতাল তৈরির পূর্বে এটিই ছিল বরিশালের একমাত্র চিকিৎসালয়। বরিশালের সদর হাসপাতাল ভবন ১৯১০ সালে নির্মিত হয়। পূর্ববঙ্গের লেফটেন্যান্ট গভর্নর স্যার ল্যান্সলট হেয়ার ১৯১০ সালের ৫ ডিসেম্বর ভবনের ভিত্তি স্থাপন করেন এবং বাংলার গভর্নর লর্ড কারমাইকেল ১৯১২ সালের ১৩ জুলাই হাসপাতাল ভবন উদ্বোধন করেন। রাজাপুরের সাতুরিয়ার জমিদার মেহেরুন্নেছা ভবনের জন্য জমি প্রদান করেছিলেন। ১৯৪৩ সাল পর্যন্ত একটি কমিটি হাসপাতাল পরিচালনা করতো। ১৯৪৪ সালে কমিটির আবেদনের প্রেক্ষিতে সরকার হাসপাতালের সম্পূর্ণ দায়িত্ব গ্রহণ করে। ১৯৪৪ সালে  বঙ্গীয় জনস্বাস্থ্য সচিব মিঃ হ্যালন সদর ও সাব-ডিভিশনাল হাসপাতালগুলোকে তৃতীয় শ্রেণিভুক্ত করে এবং এ সময় সরকার বরিশাল সদর হাসপাতালে দায়িত্ব গ্রহণ করে। হাসপাতাল পরিচালনার জন্য একটি উপদেষ্টা কমিটি ছিল। সিদ্ধান্ত হয় সরকার হাসপাতালের সম্পদ হস্তান্তর করতে পারবে না। ১৯৪৪ খ্রিষ্টাব্দের ১৯ মার্চ ম্যানেজিং কমিটি প্রাদেশিক সরকারকে এই হাসপাতালের দায়িত্ব গ্রহণের জন্য অনুরোধ করে। জেলা বোর্ড ও পৌরসভা এতে অনুদান প্রদান করবে। এমপি বর্মণ এ সময় হাসপাতাল কমিটির সেক্রেটারি নিযুক্ত হন। সেসময় বরিশাল হাসপাতাল উন্নয়নের জন্য স্থানীয় সমাজসেবীরা এগিয়ে আসেন। ১৯২৫ খ্রিষ্টাব্দে বাইশারীর ইন্দ্রনাথ দত্ত তার মা গোলকমনির নামে লেবার ওয়ার্ড নির্মাণ করেন। ১৯৩৩ খ্রিষ্টাব্দে ঈশ্বরচন্দ্র সেন আলোকমনি মহিলা ওয়ার্ড প্রতিষ্ঠা করেন। কালী চন্দ্র ১৯৩৮ খ্রিষ্টাব্দে শশিমুখী অপারেশন থিয়েটার নির্মাণ করেন। ১৯৩৬ খ্রিষ্টাব্দে জ্ঞানচন্দ্র ঘোষ দস্তিদার কলেরা ওয়ার্ড নির্মাণ করেন। জমিদার বিনয় গুপ্ত ও ব্যরিষ্টার নলিনী গুপ্ত ১৯৩৮ খ্রিষ্টাব্দে তাদের পিতা জগৎচন্দ্র ও মাতা মুক্তাকেশীর নামে দু’টি পেয়িং ওয়ার্ড নির্মাণ করেন।

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন    
সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী মিরাজ মাহমুদ
 
বার্তা ও বানিজ্যিক কার্যালয়ঃ কুশলা হাউজ, ১৩৮ বীরশ্রেষ্ঠ ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর সড়ক,
সদর রোড (শহীদ মিনারের বিপরীতে), বরিশাল-৮২০০।
© প্রকাশক কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
Developed by NEXTZEN-IT