3:38 pm , March 18, 2023

আরিফ আহমেদ, বিশেষ প্রতিবেদক ॥ বরিশালের ৩০ গোডাউন এলাকায় নির্মাণ করা হচ্ছে বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ অত্যাধুনিক সাইলো। যার নির্মাণ কাজ শুরু হয়েছে ২০২২ সালের জুলাই মাসে এবং ২০২৩ সালের ২১ আগস্টের মধ্যে এর নির্মাণ শেষ হবার কথা।
২০২২ সালের ২৪ অক্টোবর খাদ্য মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার এমপি ৩০ গোডাউনে ৪৮ হাজার মেট্রিক টনের সাইলো নির্মাণ কাজ পরিদর্শন করে কাজের অগ্রগতি নিয়ে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন। কিন্তু বর্তমান অবস্থায় চলতি বছরতো দূরে থাক আগামী ২০২৪ সালের মধ্যেও এর কাজ শেষ হওয়া নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে। আর এজন্য বরিশালের সুশীল সমাজের নেতৃবৃন্দকে দায়ী করেছেন প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা। বিশেষ করে কীর্তনখোলা নদী তীরে জেটি নির্মাণের প্রতিবাদ জানাচ্ছেন নদী নিয়ে কাজ করা সংগঠনগুলো। তারা বিশ্ব নদী কৃত্য দিবসের কর্মসূচি এখানে পালন করে প্রতিবাদ জানিয়েছেন। এসময় নদী গবেষক রফিকুল আলম বলেন, নদী ও পানি আইন অনুযায়ী নদীর ভিতর কোনো স্থাপনা নির্মাণ করা যাবেনা। তাছাড়া তাদের জন্য অন্যরাও এসে একই সমান্তালে নদী দখল করবে। তখন তা আটকানো যাবেনা।
বরিশাল নগরীর ত্রিশ গোডাউন এলাকার পুরাতন কয়েকটি গোডাউন অপসারণ করে সেখানের নদীসংলগ্ন এলাকায় ৫২০ শতক জমির ওপর ৩১৩ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণ হচ্ছে এই সাইলো। নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হলে ২ বছরের জন্য একসঙ্গে ৪৮ হাজার টন চাল সংরক্ষণ করা সম্ভব হবে এই সাইলোতে।
খাদ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, যে কোনো দুর্যোগে খাদ্যসঙ্কট মোকাবেলায় সাইলোতে সংরক্ষণ করা চাল হবে বড় সহায়ক। খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার বলেছেন, বরিশাল বিভাগের ছয় জেলাসহ দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের খাদ্য নিশ্চিত করতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই সাইলো নির্মাণের নির্দেশ দিয়েছেন। তারই আন্তরিকতায় সরকারীভাবে দীর্ঘদিন মজুদ রাখার উপযোগী আধুনিক ও উন্নতমানের খাদ্য সংরক্ষণাগার নির্মাণের এই উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার সকালে সরেজমিনে ত্রিশ গোডাউন এলাকার এই বিশাল কর্মযজ্ঞ ঘুরে দেখা গেছে শ্রমিকদের ব্যস্ত কর্ম তৎপরতা। এই মুহুর্তে কন্ট্রোল রুম ও টেকনিক্যাল সাপোর্টার রুমের কাজ নিয়ে ব্যস্ত তারা।
প্রজেক্ট ম্যানেজার আব্দুর রহিম, প্রকল্প প্রকৌশলী আ জ ম ইফতেখার এবং এইচএসই ইঞ্জিনিয়ার সাজ্জাদ পারভেজ এর সাথে কথা বলে জানা গেল, এই সংরক্ষণাগারে পৃথক পৃথক ১৬টি বিনের মাধ্যমে একসঙ্গে ৪৮ হাজার টন চাল মজুদ রাখা যাবে। প্রতিটি বিনে তিন হাজার টন চাল ধারণ ক্ষমতাসম্পন্ন হবে এ সাইলো। বেশিরভাগ চাল আসবে নদীপথে। সেখানে জেটি থেকে কনভেয়ার বেল্টের মাধ্যমে অটোমোশনে সংরক্ষণাগারে এসে প্রতিটি বিনে মজুদ হবে চাল।
তবে প্রকল্প প্রকৌশলী আ জ ম ইফতেখার জানালেন, দুটো পথেই চাল লোড আনলোড করা যাবে। জেটি থেকে একটি আবার সড়ক পথে কন্টেইনার বা ট্রাক লড়িতেও চাল পরিবহনের পদ্ধতি এখানে যুক্ত হয়েছে।
প্রায় ছয় একর এলাকা ঘুরে নির্মাণ কাজের অগ্রগতি দেখতে গেলে চোখে পড়ে প্রাথমিক পাইলের কাজ শেষে ফাউন্ডেশন করে স্টিল স্ট্রাকচার নির্মাণও শেষ হয়েছে।
খাদ্য অধিদফতরের কারিগরি বিশেষজ্ঞ আবুল কালাম আযাদ বলেন, বিভাগের ছয় জেলায় স্থানীয় পদ্ধতিতে প্রায় ৯০ হাজার টন খাদ্য মজুদের ব্যবস্থা রয়েছে। অত্যাধুনিক খাদ্য মজুদের ক্ষেত্রে সাইলো হবে বাড়তি শক্তি। খরা, ঝড়, বন্যা ও জলোচ্ছ্বাসের পর খেতে ফসল ওঠা পর্যন্ত এই সাইলোর মাধ্যমে খাদ্য সহায়তা চালিয়ে যাওয়া সম্ভব হবে।
সাইলো প্রকল্পের প্রধান তনুশ্রী রঞ্জন দাস বলেন, সরকার ও বিশ্বব্যাংকের যৌথ অর্থায়নে নির্মিত আধুনিক খাদ্য সংরক্ষণাগার নির্মাণ কাজ বাস্তবায়ন করছে জয়েন্ট ভেঞ্চার অব কনফিডেন্স ইনফ্রাস্ট্রাকচার লিমিটেড বাংলাদেশ এবং দি জিএসআই গ্রুপ এলএলসি ও ইউএসএ নামের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। এটি সম্পূর্ণভাবে পরিবেশবান্ধব হচ্ছে। ২০২২ সালের ২২ জুন সাইলোর নির্মাণ কাজ শুরু হয়েছে। যা শেষ হবার কথা ছিলো ২০২৩ সালের ২১ আগস্ট।
তনুশ্রী রঞ্জন দাস আরো বলেন, জেটি নির্মাণের অনুমতি বিআইডব্লিউটিএর থেকে ২০১৭ সালেই পাশ করানো হয়েছে। এখানে যে জেটি হবে তা ১৩০ মিটার দীর্ঘ ও প্রস্ত হবে ৩০ মিটার। একসাথে দুটি লাইট জাহাজ ভীড়তে পারবে এ জেটিতে। স্বাভাবিকভাবেই এই অংশে কীর্তনখোলা নদীকে লাইট জাহাজ চলাচলের উপযোগী নদীর গভীরতা বজায় রাখতে হবে।
তিনি বলেন, নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে এ কাজ শেষ হচ্ছে না। স্থানীয় বিভিন্ন বাধা বিঘেœর কারণে। আগামী ডিসেম্বরের আগে কাজ শেষ করা যাবেনা। তবে ২০২৪ সালের শুরুর দিকেই এটির দায়িত্ব খাদ্য মন্ত্রণালয়ের কাছে হস্তান্তর করা হবে বলে জানান তিনি।