3:39 pm , March 16, 2023

অভিযোগকারীই পেলেন কমিটির তৃতীয় গুরুত্বপূর্ন পদ!
হেলাল উদ্দিন ॥ দীর্ঘ এক যুগেরও বেশী সময় দল ক্ষমতায় না থাকার পরও বর্তমানে রাজনৈতিক মাঠে দলটির নেতাকর্মীদের সবর উপস্থিতি জানান দিয়েছে নগর বিএনপির সাংগঠনিক শক্তির পরিধি।
নিষ্ক্রিয়, দল বিমুখ হয়ে হারিয়ে যাওয়া নেতাকর্মীদের আবার দলমুখি করা, বিলীন হয়ে যাওয়া ওয়ার্ড ও অঙ্গ সহযোগী সংগঠনগুলোর কমিটি গঠন করে পুনরুজ্জীবিত করা সবই সম্ভব হচ্ছে নগর বিএনপির বর্তমান কমিটির নেতৃত্ব্।ে যেখানে অগ্রনী ভূমিকা পালন করছেন নগর বিএনপির আহবায়ক মনিরুজ্জামান ফারুক ও সদস্য সচিব মীর জাহিদুল কবীর জাহিদ। কমিটির অন্যান্য সকল যুগ্ম আহবায়কদের সাথে পরামর্শ ও আলোচনা করে দলীয় সকল সিদ্ধান্ত গৃহীত হয় বলে স্বীকার করেছেন কমিটির সকল পর্যায়ের নেতাকর্মীরা। এমনকি বিশেষ ক্ষেত্রে ওয়ার্ড পর্যায়ের নেতাকর্মীদের মতামত গ্রহণ করা হয়। আহবায়ক কমিটি গঠন করার পর এভাবে সকল পর্যায়ের নেতাকর্মীদের মূল্যায়ন ও অগ্রাধিকার দিয়ে সুশৃঙ্খলভাবে পরিচালিত হচ্ছে বরিশাল নগর বিএনপি। দলটির সকল পর্যায়ের নেতাকর্মীদের ভাষ্য বিগত সময়ে বরিশালে বিএনপির একক আধিপত্য থাকলেও সাংগঠনিকভাবে নেতৃত্বের সুষম বন্টন, যোগ্য ও ত্যাগীদের মূল্যায়ন এবং বাধ্য নয় আন্তরিকতার টানে দল করার মত পরিবেশ পরিস্থিতিতি সৃষ্টি করেছে বর্তমান কমিটি। অথচ সম্প্রতি দলেরই একটি স্বার্থান্বেষী মহল নগর কমিটির নেতৃত্বের সফলতায় ঈর্ষান্বিত হয়ে গভীর ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছে। অর্থ বিনিয়োগ করে দল নামধারী ও বহিরাগতদের দিয়ে আন্দোলনের অপচেষ্টা চালাচ্ছে। গত দুদিন আগে ২ নং ওয়ার্ড কমিটি গঠন নিয়ে এরকম একটি ন্যাক্কারজনক ঘটনার অবতারনা হয়েছে।
ওই কমিটির সিনিয়র যুগ্ম আহবায়ক সুমনের অভিযোগ টাকার বিনিময়ে কমিটি দিয়েছে সদস্য সচিব মীর জাহিদ। টাকা না দেওয়ায় তাকে ভাল পদ দেওয়া হয়নি। অথচ অভিযুক্তই পেয়েছেন সিনিয়র যুগ্ম আহবায়কের পদ। যা একটি কমিটির তৃতীয় গুরুত্বপূর্ন পদ। তাহলে প্রশ্ন উঠে টাকা না দিয়েও এমন পদ কিভাবে পেলেন অভিযোগকারী সুমন। এমন প্রশ্নের জবাব দিয়েছেন ওই কমিটির আহবায়ক এবং সদস্য সচিব। আহবায়ক সামসুল আলম টুটু বলেন, ওই ছেলেকে আমি তেমন একটা চিনিও না। রাজনৈতিক ব্যাকগ্রাউন্ড (সম্পৃক্ততা) কেমন তাও জানি না। তারপরও যে কোনভাবেই হোক কমিটিতে সিনিয়র যুগ্ম আহবায়কের পদ দেওয়া হয়েছে হানিফুল ইসলাম সুমনকে। ২৩ সদস্য বিশিষ্ট কমিটি নিয়ে সবাই সন্তুষ্ট ও উৎফুল্ল ছিলো। কিন্তু সুমন একাই কমিটির বিরোধিতা করে। শুধু তাই নয় মহানগরের সদস্য সচিবসহ কয়েকজন নেতার বিরুদ্ধে ঘুষ গ্রহণের বিনিময়ে কমিটি গঠনের অভিযোগ আনে। যা আমাদের বিব্রত ও লজ্জিত করেছে। কারন আমাকে আহবায়ক নির্বাচিত করার জন্য মহানগরের কোন নেতাকে এক কাপ চা পর্যন্ত খাওয়াতে হয়নি। সেখানে ভাল পদ দেওয়ার জন্য সুমনের কাছে জাহিদ ভাই টাকা দাবী করেছে এমন অভিযোগ হাস্যকর ছাড়া কিছুই না।
সদস্য সচিব কাজী আরিফুজ্জামান (বারুদ) বলেন নগরীর ইতিহাসে এই প্রথম যোগ্য ও ত্যাগী নেতাদের দিয়ে ওয়ার্ড কমিটি হচ্ছে। এখানে অর্থ লেনদেনের কোন বিষয় নেই। তিনি বলেন, এখন পর্যন্ত নগরীর ৩০ টি ওয়ার্ডের মধ্যে ২৩ টি ওয়ার্ডের আহবায়ক কমিটি গঠন করা হয়েছে। দু একটি অভিযোগ ছাড়া কোন ওয়ার্ড থেকে অর্থ সংক্রান্ত কোন অভিযোগই আসেনি। তিনি বলেন, বিষয়টি আমরা দলীয়ভাবে সমাধান করার চেষ্টা করছি। আমি মনে করি সুমন অভিমান থেকেই এই অভিযোগ করেছে। এটা সম্পূর্ন ভুল বোঝাবুঝি। অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে বরিশাল নগর বিএনপির সদস্য সচিব মীর জাহিদুল কবির জাহিদ বলেন, কমিটি দিয়ে বানিজ্য করতে চাইলে অনেক বড় বড় নেতাদের কাছ থেকে বড় অংকের টাকা নিতে পারতাম। ওরমত ওয়ার্ড পর্যায়ের একজন নেতার কাছে পদ দেওয়ার কথা বলে টাকা চাইবো? তাও আবার এক লাখ। বিষয়টি আমাকে যেমন ব্যাথিত করেছে তেমনি আবার হাস্যরসেও ডুবিয়েছে। দলের নেতাকর্মীরা বিষয়টি নিয়ে খুব হাস্যরস করছে। তিনি বলেন, দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে ইতিমধ্যে সুমনকে শোকজ করা হয়েছে। জবাব পাওয়ার পর তার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত রোববার রাতে নগরীর চারটি ওয়ার্ড বিএনপির আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করে মহানগর বিএনপি। এরমধ্যে নগরীর ২নং ওয়ার্ডে সামসুল আলম টুটুলকে আহ্বায়ক ও কাজী আরিফুজ্জামানকে সদস্য সচিব এবং হানিফুল ইসলাম সুমনকে সিনিয়র যুগ্ম আহবায়ক করে ২৩ সদস্য বিশিষ্ট কমিটি গঠন করা হয়। রোববার রাতে জেলা ও মহানগর বিএনপি কার্যালয়ে চারটি ওয়ার্ডের কমিটির চিঠি সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ডের নেতাদের হাতে তুলে দেন মহানগর বিএনপির সদস্য ও দপ্তরের দায়িত্বপ্রাপ্ত জাহিদুর রহমান রিপন। ২ নং ওয়ার্ডের কমিটি ঘোষণার পর পরই উত্তেজিত হয়ে উঠেন ওই ওয়ার্ডের পদবঞ্চিতরা। এক পর্যায় ২ নম্বর ওয়ার্ডের নতুন কমিটির সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়কের দায়িত্ব পাওয়া হানিফুল ইসলাম সুমন উত্তেজিত হয়ে বিএনপি কার্যালয়ে চেয়ার ভাঙচুর এবং দপ্তরের দায়িত্বপ্রাপ্ত জাহিদুর রহমান রিপনকে মারধর করতে এগিয়ে যান। পরে উপস্থিত অন্যান্য নেতৃবৃন্দের হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে। সোমবার বিকালে পদবঞ্চিত নেতাকর্মীরা বিতর্কিত কমিটি বাতিলের দাবিতে নগরীর সদর রোডে বিক্ষোভ মিছিল করেন। এসময় তারা মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব মীর জাহিদুল কবির জাহিদের কুশপুত্তলিকা দাহ করে।