স্বাধীনতার ৫২ বছরেও উপকূলভাগে নিরাপদ নৌ-যোগাযোগ নিশ্চিত হয়নি স্বাধীনতার ৫২ বছরেও উপকূলভাগে নিরাপদ নৌ-যোগাযোগ নিশ্চিত হয়নি - ajkerparibartan.com
স্বাধীনতার ৫২ বছরেও উপকূলভাগে নিরাপদ নৌ-যোগাযোগ নিশ্চিত হয়নি

3:29 pm , March 15, 2023

বিশেষ প্রতিবেদক ॥ দেশের দক্ষিণাঞ্চলসহ সমগ্র উপকূলভাগজুড়ে বৃহস্পতিবার রাতের প্রথম প্রহর থেকে দুর্যোগপূর্ণ মৌসুম শুরু হলেও নিরাপদ নৌ যোগাযোগ ব্যবস্থা প্রায় অনুপস্থিত। এমনকি স্বাধিনতার অর্ধ শতাব্দী পরেও উপকূলভাগের বিশাল জনগোষ্ঠীর জানমাল রক্ষার বিষয়টি এখনো অনেকটা উপেক্ষিত। অথচ দেশের অভ্যন্তরীণ ও উপকূলভাগে নিরাপদ নৌ যোগাযোগ নিশ্চিত করার লক্ষ্যে গত ২৫ বছরে সরকারি আর্থিক সহাতায় রাষ্ট্রীয় নৌ-বানিজ্য প্রতিষ্ঠান বিআইডব্লিউটিসি’র জন্য নতুন ১২টি সি-ট্রাক ছাড়াও ৩টি  উপকূলীয় নৌযান সংগ্রহ এবং আরো দুটি পুনর্বাসন ও আধুনিকায়ন করা হয়। কিন্তু ইজারাদারের মাধ্যমে পরিচালন এবং সুষ্ঠু মেরামত ও রক্ষনাবেক্ষনে চরম উদাসীনতায় ইতোমধ্যে ৪টি সিÑট্রাক নিলামে উঠেছে। ১৯৭২ সালের জানুয়ারীতে প্রেসিডেন্টের আদেশ বলে রাষ্ট্রীয় নৌ বানিজ্য প্রতিষ্ঠান বিআইডব্লিউটিসি গঠনের অন্যতম উদ্দেশ্য ছিল উপকূলীয় বিশাল জনগোষ্ঠীর জন্য নিরাপদ নৌ যোগাযোগ নিশ্চিত করা। এমনকি এ লক্ষ্যে বিশ^ ব্যাংকের সুপারিশে উপকূলীয় নৌ পথে যাত্রী পরিবহনে পরিচালন ব্যয়ের ওপর ভর্তুকি হিসেবে সরকার প্রতিবছর বিআইডব্লিউটিসি’কে ৫০ লাখ টাকা করে নগদ অর্থ সহায়তাও প্রদান করছে।
সরকারী সিদ্ধান্তনুযায়ী প্রতিবছর ১৬ মার্চ থেকে ১৫ অক্টোবর পর্যন্ত দেশের উপকূলভাগকে ‘ঝঞ্ঝা বিক্ষুব্ধ এলাকা’ হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। এসময়ে ‘বিশেষ কারিগরি ব্যবস্থা সম্বলিত’ উপকূলীয় নৌযান হিসেবে নিবন্ধিত ছাড়া অন্যসব নৌযানের চলাচল নিষিদ্ধ। উপকূলীয় নৌপথে এখনো বেসরকারী সেক্টরের অংশগ্রহণ খুবই নগন্য বিধায় রাষ্ট্রীয় নৌ বানিজ্য প্রতিষ্ঠাটিকে উপকূলীয় নৌযান সংগ্রহ ও পরিচালনে সরকার ব্যাপক আর্থিক সহায়তা প্রদান করে আসছে। এমনকি উপকূলীয় নিরাপদ নৌযোগাযোগ নিশ্চিত করার লক্ষ্যেই সরকারী অর্থায়নে ১৯৯৮, ২০০২ ও ২০০৯ সালে ৪টি করে ১২টি নতুন সি-ট্্রাক সংগ্রহ করে সংস্থাটি। এর বাইরে বরিশালÑচট্টগ্রাম রুটে বিদ্যমান ৪টি উপকূলীয় যাত্রিবাহী নৌযানের দুটির পুনর্বাসন ছাড়াও ২০০২ সালে চীনা ঋণে আরো একটি এবং ২০২১ সালে আরো দুটি উপকূলীয়  যাত্রিবাহী নৌযান সংগ্রহে সরকার আর্থিক সহায়তা প্রদান করে।
কিন্তু এরপরেও ২০১১ সালের মধ্যভাগ থেকে বরিশালÑচট্টগ্রাম উপকূলীয় নৌপথে যাত্রিবাহী স্টিমার সার্ভিসটি বন্ধ রয়েছে। অথচ ২০০৯ সালে প্রায় ২০ কোটি টাকা ব্যায়ে এ রুটের দুটি  নৌযান পূণর্বাশন করা হয়। ইতোমধ্যে চীনা সাপ্লায়ার্স ক্রেডিট লাইনে প্রায় ৩০ কোটি টাকা ব্যয়ে একটি নতুন উপকূলীয় যাত্রিবাহী নৌযান সংগ্রহ করার পরে ইতোমধ্যে দু দফায় মেরামত ও পুনর্বাসনে আরো প্রায় ১৫ কোটি টাকা ব্যয় হয়েছে। প্রায় ৩৬ কোটি টাকা ব্যয়ে ২০২১ সালের মধ্যভাগে আরো দুটি নতুন উপকূলীয় নৌযান সংগ্রহ করা হয়েছে।
কিন্তু বরিশালÑচট্টগ্রাম রুটের কথা বলে সরকারী অর্থে এসব নতুন যাত্রিবাহী নৌযান সংগ্রহ সহ মেরামত ও পুনর্বাসন করা হলেও ২০১১ সালের মে মাস থেকে বরিশাল-ভোলা-হাতিয়া-সন্দ্বীপ-চট্টগ্রাম উপকূলীয় রুটে যাত্রিবাহী স্টিমার সার্ভিসটি বন্ধ রয়েছে। এমনকি নির্ধারিত সময়ের ৪ বছর পরে ‘এমভি তাজউদ্দিন আহমদ’ ও ‘এমভি আইভি রহমান’ নামের দুটি উপকূলীয় যাত্রিবাহী নৌযান সংগ্রহ করলেও বিআইডব্লিউটিসি বরিশাল-চট্টগ্রাম রুটে আর যাত্রি পরিবহন শুরু করেনি।
নির্ধারিত সময়ের ৪ বছর পরে নৌযান দুটি সংগ্রহ করার পরে দেখা যায় তুলনামূলকভাবে ছোট মাপের ইঞ্জিন সংযোজন করায় দুটি নৌযানেরই গতি অনেক কম। ফলে তা ভাটি মেঘনা অতিক্রম করে বরিশাল পর্যন্ত পৌঁছতে অনেক বাড়তি সময়ের প্রয়োজন হয় বিধায় সার্ভিসটি আর চালু করা হয়নি।
অপরদিকে বন্ধ হয়ে গেছে বরিশালÑভোলাÑলক্ষ্মীপুর এবং ভোলা ও লক্ষ্মীপুরের মধ্যবর্তী মির্জাকালুÑচর আলেকজান্ডার রুটের সিÑট্রাক সার্ভিসও। বরগুনার চরদোয়ানীর সাথে পিরোজপুরের বড়মাছুয়া হয়ে বাগেরহাটের সন্যাসী পর্যন্ত সিÑট্রাক সার্ভিসের মাধ্যমে অবহেলিত উপকূলীয় এলাকাটির সাথে রাজধানীর নিরাপদ নৌ যোগাযোগ প্রতিষ্ঠার দাবীও দীর্ঘদিনের।
এদিকে সংস্থাটির ১৪টি সি-ট্রাকের ৪টি বিক্রির ব্যবস্থা চূড়ান্ত করে ইতোমধ্যে ‘এসটি খিজির-৬’ নামের একটি নৌযান হস্তান্তর করা হয়েছে।  বিআইডব্লিউটিসি’র সর্বশেষ হিসেব অনুযায়ী  সি-ট্রাক ‘এসটি শেখ কামাল, শেখ জামাল, এসটি শেখ রাসেল, এসটি খিজির-৭, এসটি খিজির-৮ ও এসটি মিতালী’ দীর্ঘদিন ধরে সংস্থা বিভিন্ন পোতাঙ্গনে মেরামতের নামে পড়ে আছে। এছাড়া ‘এসটি খিজির-৫’ ভোলার ইলিশা থেকে মজু চৌধুরীর হাট রুটে চলছে।   ‘এসটি শহীদ আবদুর রব সেরনিয়াবাত’  তজুমদ্দিন ঘাটে পড়ে থাকার পরে গত দুদিন বিচ্ছিন্ন দ্বীপ মনপুরার সাথে ভোলার সষিগঞ্জ রুটে চলছে।
‘এসটি সুকান্ত বাবু’ ও ‘এসটি-ভাষা শহিদ সালাম’ অন্য রুটের পরিবর্তে ইজারাদারের ইচ্ছায় এতদিন টেকনাফ-সেন্ট মার্টিন রুটে চলাচল করেছে। ১৫ মার্চ থেকে এসব নৌযানের সাগর পাড়ি দেয়া নিষিদ্ধ হলেও তা এখনো নিরাপদ পোতাঙ্গনে ফেরেনি বলে জানা গেছে। ইতোপূর্বে বরিশাল থেকে ভোলার ইলিশা ঘাট হয়ে লক্ষ্মীপুরের মজু চৌধুরীর হাট রুটে সংস্থাটির নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় ‘এসটি খিজির-৮’ চলাচল করলেও ইজারাদারের কাছে তুলে দেয়ার পরে তা সংকুচিত করে ইলিশাঘাট ও মজু চৌধুরীর হাট রুটে চলাচল করলেও এখন তা বন্ধ।
এমনকি এরুটের ‘খিজির-৫’ সি-ট্্রাকটি এতদিন বন্ধ ছিল। অভিযোগ রয়েছে, বরিশালÑভোলাÑলক্ষ্মীপুর রুটের জন্য ইজারা নিয়ে সংস্থাটির কতিপয় কর্মকর্তার যোগসাজসে বরিশালের পরিবর্তে ভোলা থেকে লক্ষ্মীপুর রুটে এতদিন সি-ট্রাক চালাত ইজারাদার। কিন্তু এখন তাও বন্ধ। এছাড়া ইজারাদারের ব্যবস্থাপনায় ‘এসটি শেখ ফজলুল হক মণি’ বয়ারচর-হাতিয়া রুটে নিয়মিত এবং ‘এসটি ভাষা শহিদ জব্বার’ বয়ারচর-ভাষানচর রুটে সপ্তাহে দুদিন যাত্রি পরিবহন করছে বলে জানা গেছে।‘
এসটি-খিজির-৭’ ২০২০ সালের ১৪ আগষ্ট থেকে ভোলার একটি বেসরকারী নৌ কারাখানায় মেরামতের নামে পড়ে আছে ।
জনগনের অর্থে সংগ্রহ করা এসব সিÑট্রাকগুলো যথাযথ মেরামত ও রক্ষনাবেক্ষনের মাধ্যমে সংস্থার নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় পরিচালন করলে তা উপকূলভাগে নিরাপদ নৌ যোগাযোগে নিরাপত্তা নিশ্চিত হতে পারত। এসব বিষয়ে বিআইডব্লিউটিসি’র দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা বলেন, আমরা চেষ্টা করছি উপকূলীয় নৌযোগাযোগ আরো নিরাপদ করতে। ইচ্ছে থাকলেও নানা সীমাবদ্ধতায় তা সম্ভব হচ্ছেনা। দায়িত্বশীল মহলের মতে, ‘অনেক এলাকাতেই সংস্থার নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় সি-ট্রাক সার্ভিস পরিচালন সম্ভব নয়’ বলে জানানো হয়েছে।

এই বিভাগের আরও খবর

আর্কাইভ

সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি রবি
 
১০১১১২
১৩১৪১৫১৬১৭১৮১৯
২০২১২২২৩২৪২৫২৬
২৭২৮২৯৩০৩১  
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন    
সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী মিরাজ মাহমুদ
 
বার্তা ও বানিজ্যিক কার্যালয়ঃ কুশলা হাউজ, ১৩৮ বীরশ্রেষ্ঠ ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর সড়ক,
সদর রোড (শহীদ মিনারের বিপরীতে), বরিশাল-৮২০০।
© প্রকাশক কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
Developed by NEXTZEN-IT