3:28 pm , March 15, 2023

আরিফ আহমেদ, বিশেষ প্রতিবেদক ॥ বরিশালের দুটিসহ সারাদেশের আরো ৫০টি মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের আজ (১৬ মার্চ) উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এর আগে ২০২১ সালের ১৩ জুন ও ২০২৩ সালের ১৬ জানুয়ারি ১০০টি মডেল মসজিদের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী। এনিয়ে মোট ১৫০ টি মসজিদের উদ্বোধন হচ্ছে সারাদেশে। পর্যায়ক্রমে আরো ৪১৪টি মসজিদের উদ্বোধন হবে। ২০১৪ সালের নির্বাচনী ইশতেহার অনুযায়ী সারাদেশে ৫৬৪টি মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র নির্মাণের ঘোষণা রয়েছে। যার ব্যয় ধরা হয়েছে ৮ হাজার ৭২৩ কোটি টাকা। এই মডেল মসজিদের ইমাম ও মুয়াজ্জিন সরকারি বেতনভুক্ত হবেন বলেও জানা গেছে। তবে বরিশালের ইমাম সমিতির নেতৃবৃন্দ ও সাধারণ ইমামদের দাবি দেশের সব মসজিদের ইমাম ও মুয়াজ্জিনকে সরকারি বেতনের আওতায় আনার।
সরেজমিনে ১৫ মার্চ বরিশাল সদরের আমতলা মোড়ের পানির ট্যাঙ্ক এলাকার বরিশালের কেন্দ্রীয় মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র ঘুরে দেখা গেছে চমৎকার দৃষ্টিনন্দন এই মসজিদের সবকাজই প্রায় শেষ হয়েছে। ভিতরে এখন পরিচ্ছন্নতার কাজ করছেন ১৫-২০ জন শ্রমিক।
এই মসজিদে একসঙ্গে প্রায় ১৫০০ নারী-পুরুষ পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করতে পারবেন। এছাড়াও বিয়ে থেকে শুরু করে প্রতিটি সামাজিক কর্মকান্ডের কেন্দ্রবিন্দু হবে বরিশাল নগরীর অত্যাধুনিক বহুতল এই মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র।
আধুনিক শৈলীতে নির্মিত এ মসজিদে থাকছে কোরআনের উপর গবেষনার সুযোগ। এছাড়া রাষ্ট্রীয় সকল কর্মকান্ডেও ভূমিকা রাখবে মসিজদটি। এমনভাবে মসজিদের সৌন্দর্য ফুটিয়ে তোলা হয়েছে যা রাত-দিন সমানভাবে নজর কাড়বে দর্শনার্থীদের। আর এ মসজিদগুলোকে মানবিক কেন্দ্র হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন বরিশালের ইমাম সমিতির নেতৃবৃন্দ।
আগামীকাল বৃহস্পতিবার প্রধানমন্ত্রীর উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে মুসুল্লীদের জন্য উম্মুক্ত করে দেয়া হচ্ছে বরিশাল জেলার ২টি মডেল মসজিদ। এরমধ্যে নগরীর আমতলা মোড় সিএন্ডবি কলোনীর জমিতে নির্মিত এবং আগৈলঝাড়ায় নির্মিত মডেল মসজিদ। জেলায় আরো ৯টি মডেল মসজিদের নির্মান কাজ চলমান রয়েছে। নগরীর সিএন্ডবি কলোনীর ৪৩ শতাংশ জমির উপর ১৪ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত হয়েছে চারতলা বিশিষ্ট এই মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র। ১০ হাজার ৩৯৬ বর্গফুট বিশিষ্ট মসজিদটির নিচতলায় গাড়ি পার্কিং ছাড়াও রাখা হয়েছে মৃত ব্যক্তির গোসল করানোর স্থান। দ্বিতীয়, তৃতীয় ও চতুর্থ তলায় নামাজের স্থানের পাশাপাশি নির্মিত করা হয়েছে ইমাম প্রশিক্ষন কেন্দ্র, গণশিক্ষা কেন্দ্র, সভাকক্ষ, অফিস কক্ষ, ইসলামিক চর্চা কেন্দ্র, গেষ্টরুম, মহিলা ও পুরুষদের জন্য নামাজের পৃথক স্থান, মক্তব, ইমাম ও মুয়াজ্জিন থাকার স্থান, মহিলা ও পুরুষদের পৃথক ওজুখানা, লাইব্রেরী। আযানের সুর যাতে নগরীর বড় একটি অংশে বসবাসকারী মানুষেরা শুনতে পারেন এ জন্য আটতলা উচ্চতা সম্পন্ন মিনারে স্থাপন হয়েছে সাউন্ড সিস্টেম। এর সাথে যুক্ত হয়েছে অত্যাধুনিক লাইটিং সিস্টেম।
বরিশাল কালেক্টর মসজিদের পেশ ইমাম ও খতিব হাফেজ ডা. মো. আব্দুল্লাহ আল মামুন জানান, এটি মসজিদ নয়, এটি হচ্ছে মানবিক কেন্দ্র। এখানে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ ছাড়াও বিয়ে থেকে শুরু করে সকল সামাজাকি এবং রাষ্ট্রীয় কর্মকান্ড পরিচালিত হবে। এমনকি কোরআন নিয়ে রিসার্স করা যাবে এখানে। কোরআন ও ইসলাম সম্পর্কিত যে কোন সমস্যা সমাধানের কেন্দ্র হচ্ছে এটি। ইসলামের উপর হাজার হাজার বই থাকবে এই মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্রে। থাকবে পাঠশালা। স্বাধীনতা পরবর্তী কোন সরকারের পক্ষ থেকে এ ধরনের মসজিদ নির্মাণ এটি প্রথম। এ জন্য তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ জানান।
মহানগর ইমাম সমিতির সাধারন সম্পাদক হাফেজ মাওলানা মাহমুদুল হাসান আনসারী বলেন, প্রথমবারের মত দেশের সকল জেলা ও উপজেলা শহরে সরকার থেকে নির্মিত মডেল মসজিদে ইমাম ও মুয়াজ্জিনসহ বিভিন্ন পদে লোক নিযোগ দেয়া হবে। যারা সরাসরি সরকারি তহবিল থেকে বেতন উত্তোলন করবেন। এ জন্য প্রধানমন্ত্রীর নিকট কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন তিনি।
তিনি আরো বলেন, দেশের সব মসজিদ ধর্ম মন্ত্রণালয়ের অধীনে এনে ইমাম ও মুয়াজ্জিনদের বেতন সরকারিভাবে প্রদান করা হোক। একই সাথে তাদের রাজস্ব খাত থেকে মাসিক বেতন অথবা সম্মানি দেয়ার দাবি জানান। এতে করে দেশের ইমাম ও মুয়াজ্জিনদের মাঝে যে অর্থ কষ্ট রয়েছে তা দূর হবে।
বরিশাল গণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী কামরুল হাসান বলেন, বরিশাল জেলা ও ১০ উপজেলায় ১১টি মডেল মসজিদ নির্মান করা হচ্ছে। জেলা পর্যায়ে ১৪ কোটি এবং উপজেলা পর্যাযে ১৩ কোটি টাকা অর্থ বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। জেলার ২টি মসজিদের নির্মান কাজ সম্পন্ন হয়েছে।
নির্বাহী প্রকৌশলী আরো বলেন, আগামীকাল সারাদেশে ৫০টি মডেল মসজিদের সাথে বরিশালের ২টি মসজিদ উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী। এরপর মুসল্লীদের জন্য মসজিদ ২টি খুলে দেয়া হবে। বাকী ৯টি মসজিদের কাজও দ্রুত সময়ের মধ্যে সম্পন্ন হওয়ার আশা প্রকাশ করেন তিনি।
ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান মেসার্স খান বিল্ডার্স ও মেসার্স পলি ইঞ্জিনিয়ারিং করপোরেশন মসজিদটি নির্মান কাজ করেছে। মোসার্স পলি ইঞ্জিনিয়ারিং এর দায়িত্বরত ঠিকাদার জিয়াউর রহমান বলেন, মসজিদটি সুনিপূনভাবে আধুনিক নির্মান শৈলীর মাধ্যমে নির্মান করা হয়েছে।