2:55 pm , March 11, 2023

শামীম আহমেদ ॥ সহজলভ্যতার কারণে দিনদিন বৃদ্ধি পাচ্ছে প্লাস্টিকের ব্যবহার। যার মারাত্মক প্রভাব পড়ছে সোনালী ফসলের মাটি ও জীব-বৈচিত্রের উপর। জীব-বৈচিত্র্যকে রক্ষা ও গ্রামীণ জনপদ থেকে প্লাষ্টিক বর্জ্য মুক্ত এবং অপসারনের লক্ষ্যে অভিনব এক উদ্যোগ গ্রহণ করেছে দক্ষিণাঞ্চলের একমাত্র ডিজিটালখ্যাত বরিশালের গৌরনদী উপজেলার মাহিলাড়া ইউনিয়ন পরিষদের পুরস্কারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান সৈকত গুহ পিকলু।
ওই ইউনিয়নের ভিজিডি, ভিজিএফ, জেলেদের জন্য বরাদ্দের চালসহ সরকারি বিভিন্ন সুযোগ সুবিধার আওতায় থাকা সুফলভোগীদের খাদ্য সহায়তা নিতে হলে আগে প্লাষ্টিকের বর্জ্য জমা দিতে হচ্ছে। পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর যত্রতত্রভাবে বাড়ির চারিপাশে ফেলে রাখা এক ব্যাগ প্লাষ্টিক বর্জ্য জমা না দিলে সুফলভোগীদের ভাগ্যে জোটেনা খাদ্য সহায়তা। অভিনব এ উদ্যোগকে প্রথমদিকে নেতিবাচক হিসেবে নিলেও বর্তমানে সবাই বিষয়টিকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন। ফলে নিজেদের বসতবাড়ি ও বাড়ির আঙ্গিনা পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন রাখার স্বার্থে প্লাষ্টিক বর্জ্য ইউনিয়ন পরিষদে জমা দিয়ে খাদ্য সহায়তা গ্রহণ করছেন সুফলভোগীরা।
গত কয়েকদিন আগে সরেজমিনে দেখা গেছে, মাহিলাড়া ইউনিয়ন পরিষদ থেকে সরকারি খাদ্য সহায়তা নিতে আসা প্রত্যেক সুবিধাভোগীর হাতে একটি ব্যাগ ভর্তি প্লাষ্টিক বর্জ্য (বোতল)। এসব প্লাষ্টিক বর্জ্য ইউনিয়ন পরিষদে জমা দিয়ে তারা খাদ্য সহায়তা গ্রহণ করছেন।
ভিডব্লিউভি কার্ডধারী একাধিক সুবিধাভোগী নারীরা বলেন, বাজার থেকে যেসব পণ্য ক্রয় করা হয় তা অধিকাংশই প্লাষ্টিক বোতলের। এসব পণ্য ব্যবহারের পর বসতবাড়ির আশেপাশেই এগুলো ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকতো। যাতে পরিবেশ দূষন হতো। পরিত্যক্ত প্লাষ্টিকের বোতল প্রতিবন্ধীদের উন্নয়নে কাজে লাগানো হবে ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের এমন ঘোষনার পর থেকে নিজ উদ্যোগে আমাদের বসতবাড়ির পরিত্যক্ত বোতল সংগ্রহ করে পরিষদে জমা দিয়ে আমরা খাদ্য সহায়তা গ্রহণ করছি।
গৌরনদী উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও জাতীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত মাহিলাড়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সৈকত গুহ পিকলু বলেন, সরকারিভাবে ফিলিপাইনে শিক্ষা সফরে গিয়ে দেখেছি সেখানকার বারাঙ্গাইগুলো (ইউনিয়ন পরিষদ) থেকে উপকারভোগীরা নির্দিষ্ট প্লাষ্টিক বর্জ্য দিয়ে খাদ্য সহায়তা বা অন্যান্য সহায়তা গ্রহন করে। তারা পরিত্যক্ত প্লাষ্টিক রিসাইক্লিন করে আবার নতুন প্লাষ্টিক তৈরি করে। পরবর্তীতে সফর থেকে ফিরে আসার পর মাহিলাড়া ইউনিয়নকে একটি সবুজ ইউনিয়নে রুপান্তর করার লক্ষ্যে বিভিন্ন উপকারভোগীদের কাছ থেকে নির্দিষ্ট পরিমাণ পরিত্যক্ত প্লাষ্টিক বর্জ্য জমা নেওয়ার কার্যক্রম শুরু করেছি। তিনি আরও বলেন, উপকারভোগীদের কাছ থেকে গ্রহণ করা পরিত্যক্ত প্লাষ্টিকের বোতলগুলো শারিরিক প্রতিবন্ধীদের সহায়তার জন্য নির্মিত সমাজসেবা অধিদপ্তরের মুক্তা পানির কারখানায় সরবরাহ করা হয়। কারখানা কর্তৃপক্ষ পরিত্যক্ত বোতলগুলো রিসাইক্লিন করে নতুন বোতলে রুপান্তর করে। ফলে একদিকে যেমন পরিবেশ দূষণের হাত থেকে রক্ষা পাচ্ছে, তেমনি প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদেরও সহায়তা করা হচ্ছে।
গৌরনদী উপজেলা নির্বাহী অফিসার আশীষ কুমার বলেন, এটা নিঃসন্দেহে একটি ভাল উদ্যোগ। এর থেকে যেমন পরিবেশ রক্ষা পাবে, তেমনি গ্রামীণ এলাকাগুলো পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন থাকবে। মাহিলাড়া ইউনিয়নে উদ্যোগটি সফল হলে অন্যান্য ইউনিয়নগুলোতে এটা চালু করার জন্য উদ্বুদ্ধ করা হবে।