অদম্য শাহীন ফকির কারো বোঝা হতে চান না অদম্য শাহীন ফকির কারো বোঝা হতে চান না - ajkerparibartan.com
অদম্য শাহীন ফকির কারো বোঝা হতে চান না

3:17 pm , March 10, 2023

সাইদ মেমন ॥ শারিরীক অক্ষমতা দমিয়ে রাখতে পারেনি ত্রিশোর্ধ যুবক শাহীন ফকিরকে। বেঁচে থাকার তাগিদে অন্যর বোঝা হয়ে বাঁচতেও নারাজ সে। তাই নিজের ভরনপোষনে অর্থ আয়ে দোকান খুলে ব্যবসা করছেন মাত্র ১৮ ইঞ্চি উচ্চতার শাহীন ফকির।
কারো সাহায্যে ছাড়া কিছু করতে না পারলেও গত পাঁচ বছর ধরে একটি দোকান দিয়ে মোবাইল ব্যাংকিং ও শিশুদের চকোলেট, বিস্কুটসহ কয়েক ধরনের পন্য বিক্রি করে। তাকে সহায়তা করে দোকানের আশে-পাশের কিশোর ও তরুনসহ এলাকাবাসী।
জন্মের পর পোলিও আক্রান্ত হয়ে সম্পূর্ন অচল হয়ে পড়া শাহিন ফকির (৩২) মুলাদী উপজেলার চর কমিশনার এলাকার আবুল হাসেম ফকিরের ছেলে।
চতুর্থ শ্রেণির পর পড়াশোনা চালিয়ে নিতে না পারলেও কাজ-কর্ম করে নিজের আয়েই বেঁচে থাকার লক্ষ্য ঠিক করেছেন উদ্যমী শাহীন।
তার দোকানের অবস্থান বাড়ি থেকে আধা কিলোমিটার দুরত্বে বরিশাল সদর উপজেলার শায়েস্তাবাদ ইউনিয়নের হায়াতসার গ্রামে ফুলতলা বাজারের পূর্বে।
শাহীন ফকির জন্মের সাতদিন পর পোলিও রোগে আক্রান্ত হন তিনি। তার পর থেকে দুই পা অচল হয়ে পড়ে। সেই থেকে শারিরীকভাবে প্রতিবন্ধী হয়ে পড়েন তিনি। উচ্চতা কতটুকু কখনো পরিমাপ করেননি জানিয়ে শাহীন বলেন, অনেক বছর পূর্বে একজন পরিমাপ করেছিলো। সে জানিয়েছে তার উচ্চতা মাত্র ১৮ ইঞ্চি।
কোন লোকের সাহায্যে ছাড়া কিছু করতে পারেন না জানিয়ে বলেন, একটি জরাজীর্ন হুইল চেয়ার রয়েছে। সেই হুইল চেয়ারে বসে দোকানে ও বাসায় যাওয়া আসা করেন। তাকে আনা নেওয়া করার জন্য মাসিক পাঁচশ টাকা দিয়ে একজন লোক ঠিক করেছেন। সে প্রতিদিন সকাল সাড়ে ৯টায় নিয়ে আসেন ও রাত আটটায় বাসায় পৌছে দেন।
বাবা-মা, দুই ভাই, চার বোন ও ভাবি ভাতিজীকে নিয়ে যৌথ পরিবারে বাস করেন। তিন বোনের বিয়ে হয়েছে। এক ভাই মালয়শিয়া প্রবাসী।
শাহীন বলেন, বাইচ্যা থাকতে অইলে কাম কইররা খাওয়া লাগে, এছাড়া তো খাওয়া যায় না। আমার মতো মানুষ যারা তারা ভিক্ষা কইরা খায়। আমি ওই পথে যাইতে চাই না, ওটা ভালো পথ না। তাই করমো কইররা খাই।
এলাকার পোলাপানরা কাজকর্মে সাহায্যে করে। কোন সমস্যা হয় না। কাজ কর্ম করে বেঁচে থাকার লক্ষ্যে নিয়েছেন তিনি।
প্রতিদিন তার তিনশ’ টাকা আয় করেন। আয়ের টাকা নিজে ব্যয় করেন। তার শখ ব্যবসা বাড়ানো। আরো বড় করে দোকান করা।
ক্রিকেট তার প্রিয় খেলা জানিয়ে শাহিন বলেন, তার প্রিয় খেলোয়ার তামিম ইকবাল। জীবনে একবার হলেও তামিম ইকবালের সাথে সরাসরি দেখা করতে চান। তার জীবনের একটা লক্ষ্যই হচ্ছে তামিম ইকবালের সাথে একটিবার হলেও একটু কথা বলা।
তাকে নিয়ে যারাই কোন ভিডিও করেন, তাদের সকলের মাধ্যমে তামিম ইকবালকে একবার হলেও তার সাথে দেখা করে, সেই অনুরোধ জানান।
তার হুইল চেয়ার জরাজীর্ণ জানিয়ে বলেন, একটি মোটর চালিত হুইল চেয়ার দরকার। এ রকম একটি চেয়ার উপহার হিসেবে পেলে খুশি হবেন তিনি।
শাহীন ফকিরের দোকানে থাকা তরুন রবিউল ইসলাম বলেন, তাকে আমরা সবাই সহায়তা করি। এলাকার সবাই তাকে ভালবাসে। আমরা নিজেরাও মাঝে মধ্যে বাড়ি থেকে নিয়ে আসি। আবার বাড়িতেও পৌছে দেই।
তরুন রাকিবুল ইসলাম বলেন, তাদের গ্রামে পাঁচ বছর ধরে দোকানদারী করেন শাহীন ফকির। যারা, নগদ, রকেট ও বিকাশে পাসওয়ার্ড মনে রাখতে পারে না, পাসওয়ার্ড তার কাছে রাখে। টাকা এলে উঠিয়ে দেন। সে খুব ভালো লোক। কাউকে সে ঠকায় না। কারো যদি টাকা লাগে, তাকে টাকা ধার দেয়। মানুষের সহায়তা তার প্রয়োজন। কিন্তু উল্টো সে মানুষকে সহায়তা করে।
রাকিবুল ইসলামের অনুরোধ শাহীন ফকিরের হুইল চেয়ারটি নষ্ট হয়ে গেছে। অনেকে দেয়ার কথা বললেও কেউ দেয় না। সে যেন নতুন একটি হুইল চেয়ার উপহার দেয়।
শাহীনের মা আলেয়া বেগম জানান, সাত দিন বয়সী শাহীন অনেক কান্নাকাটি করলে তাকে স্থানীয় পল্লী চিকিৎসকের কাছে নিয়ে গিয়েছিলেন। চিকিৎসক তাদের বরিশালে নিয়ে ‘বড় ডাক্তার’ দেখাতে বলেন।
কিন্তু অর্থনৈতিক সংকট এবং যাতায়াতের দুর্গমতার কারণে তাদের পক্ষে তা করা সম্ভব হয়নি।কিছুদিন পর শাহীনের হাত পা বেঁকে যেতে থাকলে তারা বরিশালে নিয়ে জানতে পারেন সে পোলিও আক্রান্ত হয়েছে।
আলেয়া বেগম আরও জানান, শাহীন নিজে কিছু করতে পারেন না। গোসল, বাথরুমসহ দৈনন্দিন সব কাজে তার অন্যের সহায়তা প্রয়োজন হয়।
তারপরও শাহীন কারো বোঝা না হয়ে নিজের আয়ে চলতে চায়, সেজন্য কষ্ট করে হলেও সে প্রতিদিন দোকানে যায়, বলে জানান তার মা আলেয়া বেগম।
শায়েস্তাবাদ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আরিফুজ্জামান মুন্না বলেন, শাহীন সরকারি প্রতিবন্ধী ভাতা পাচ্ছেন। “আমাদের হাতে তো খুব বেশি কিছু করার সুযোগ থাকে না, তবু তাকে সাধ্যমতো সহযোগিতা করার চেষ্টা করবো।”

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন    
সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী মিরাজ মাহমুদ
 
বার্তা ও বানিজ্যিক কার্যালয়ঃ কুশলা হাউজ, ১৩৮ বীরশ্রেষ্ঠ ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর সড়ক,
সদর রোড (শহীদ মিনারের বিপরীতে), বরিশাল-৮২০০।
© প্রকাশক কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
Developed by NEXTZEN-IT