3:53 pm , March 9, 2023

নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ আমাকে একটু বাবাকে দেখতে দাও, আমি বাবাকে একটু দেখবো। দাফনের পূর্বে এমন আকুতি করেছেন পুরান ঢাকার সিদ্দিক বাজার ট্রাজেডিতে নিহত কাপড় ব্যবসায়ী মো. ইসাহাক মৃধার পাঁচ বছর বয়সী শিশু ছেলে আবরার জারিফ।
বুধবার দুপুর দুইটার দিকে মেহেন্দিগঞ্জ উপজেলার লতা ইউনিয়নের চর সন্তোষপুর গ্রামের বাড়িতে দাফন করা হয় তাকে। দুই সন্তানের জনক ইসাহাক মৃধা ওই গ্রামের মৃত দুলাল মৃধার ছেলে। ইসলামপুরের হাজী আহম্মেদ মার্কেটের কাপড় ব্যবসায়ী ছিলেন সে। তবে স্ত্রী সন্তানকে নিয়ে বাস করতেন নারায়নগঞ্জের ঢাকেশ^রী ২নং গলিতে। শ্যামপুর ইব্রাহিম টেক্সটাইল এলাকায় মায়ের দোয়া ডাইং ফ্যাক্টরীও রয়েছেন বলে জানিয়েছেন তার ভাই জহিরুল ইসলাম সজল।
তিনি বলেন, শবে-বরাতের জন্য একটু আগে দোকান বন্ধ করা হয়। বাসায় যাওয়ার জন্য ভাই ইসাহাক গুলিস্থান রওনা হয়েছিলেন। পথিমধ্যে দুর্ঘটনার শিকার হয় সে।
দুর্ঘটনার পর অজ্ঞাত এক লোক ভাবীর কাছে ফোন দিয়েছে। তাকে দ্রুত ঘটনাস্থলে আসার তাগিদ দেয়। তখন ভাবী তাকে বিষয়টি বললে তিনি ভাইয়ের নম্বরে কল করেন। তখন অজ্ঞাত ব্যক্তি ফোন রিসিভ করে শুধু দ্রুত যেতে বলেছে, কোন কারন বলেননি।
সজল বলেন, তারা গিয়ে দেখতে পেয়েছেন ফায়ার সার্ভিস সদস্যরা তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যাচ্ছেন। হাসপাতালে নেয়ার পর চিকিৎসক মৃত ঘোষনা করেছেন।
সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি করে ঢাকা জেলা প্রশাসক, মহানগর বিচারিক হাকিম ও পুলিশ কর্মকর্তারা সেখানে আদালত বসিয়ে বিনা ময়না তদন্তে লাশ হস্তান্তর করেছেন। এ সময় দাফন সম্পন্নের জন্য নগদ ৫০ হাজার টাকা দেয়া হয়েছে।
সজল বলেন, ফোন করা অজ্ঞাত ব্যক্তি মোবাইল ফোন সেট ও ভাইয়ের সাথে থাকা নগদ আট হাজার টাকাও ফেরত দিয়েছেন।
লাশ নিয়ে আসার পর গোসল করা ও জানাজা নামাজ আদায় করে সকাল ৬ টার দিকে ঢাকা থেকে ভাইয়ের মরদেহ নিয়ে রওনা দেন।
বেলা ১২ টার দিকে ইসাহাকের লাশ নিয়ে চর সন্তোষপুর গ্রামে নিয়ে আসা হয়। তখন লাশের পাশে গ্রামের অন্যান্য লোকসহ প্রতিবন্ধী বড় ছেলে ১৪ বছর বয়সী ইয়াসিন ও ৫ বছর বয়সী জারিফ ছিলো।
বাবাকে এক নজর দেখতে চাইলেও কেউ তাকে দেখাতে নিয়ে যায়নি। কারন দুর্ঘটনায় তার মুখমন্ডলে কাচের টুকরা বিদ্ধ হওয়ার ক্ষত ও আগুনে ঝলসানো। তাই সকলে তাকে নিবৃত রাখার চেষ্টা করেছে।
শিশু জারিফ বলেন, বাবা একসিডেন্ট করেছেন। আমি বাবাকে একটু দেখতে চাই। তাকে কোনভাবে শান্তনা দেয়া যায়নি। তখন তার নানী নুরজাহান বেগম এসে শান্ত করেন।
নুরজাহান বেগম বলেন, জারিফ বলছে তার বাবা তো নেই। তাকে কে জুতা কিনে দিবে।
জোহরের নামাজের পর মৃত ইসাহাক মৃধার মরদেহ দ্বিতীয় জানাজা দেয়ার জন্য একতা ডিগ্রি কলেজ মাঠে নেয়া হয়। সেখানে নেয়ার পর এক মসজিদের ইমাম ও ইসাহাক মৃধার ছোট ভাইয়ের অনুরোধে দ্বিতীয়বার জানাজা নামাজ হয়নি।
জানাজা দিতে আসা গ্রামবাসীদের নিয়ে মৃত ভাইয়ের জন্য দোয়া করে লাশ দাফন করা হয়েছে। ইসাহাক মৃধার মামা শফিকুল ইসলাম ফরিদ খান বলেন, ইসাহাক মৃধা চার ভাই। বাবা নেই। মা গ্রামের বাড়ীতে থাকেন। তাই প্রায়ই মায়ের সাথে দেখা করতে গ্রামে আসতো। গ্রামের সকলের সাথে তার সুসম্পর্ক ছিলো।